ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকেশ্বরী ও রামকৃষ্ণ মিশনে মন্দির পরিদর্শনকালে শেখ হাসিনার মন্তব্য

এ দেশের সকল ধর্মের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করবেন

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ৯ অক্টোবর ২০১৬

এ দেশের সকল ধর্মের মানুষ ঐক্যবদ্ধভাবে বসবাস করবেন

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, দেশে ধর্মের নামে কোন সন্ত্রাসী কার্যক্রম বরদাশত করা হবে না। সন্ত্রাসী ও জঙ্গীদের স্থান হবে না বাংলাদেশে। জঙ্গীবাদ এবং সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে সরকার সব সময়ই কঠোরভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে, নিচ্ছে এবং আগামীতেও নেবে। শনিবার বিকেলে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের বৃহৎ ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গাপূজা উদযাপন উপলক্ষে লালবাগের ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির পরিদর্শন এবং হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশ সব ধর্মের মানুষের জন্য। এখানে যার ধর্ম সে স্বাধীনভাবে সম্মানের সঙ্গে পালন করবে। ধর্ম নিরপেক্ষতার নীতি নিয়ে বাংলাদেশের গড়ে ওঠার ইতিহাস তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের মহান স্বাধীনতা সংগ্রাম-মুক্তিযুদ্ধে এদেশের প্রতিটি ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের মানুষ এক হয়ে যুদ্ধ করে এদেশকে স্বাধীন করেছে। সকলের রক্ত একাকার হয়ে মিশে গেছে এ দেশের মাটিতে। মুসলিম, হিন্দু, খ্রীস্টান, বৌদ্ধ সকলে এদেশের স্বাধীনতার জন্য রক্ত দিয়েছে। তাই সকল ধর্মের মানুষ তাদের এই দেশটাতে ঐকবদ্ধভাবে বসবাস করবেন- এটাই আমাদের প্রত্যাশা। তিনি বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদানকারী দল। তাই এই দল যখন রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসে তখনই দেশের উন্নয়ন হয়। কারণ মানুষের কল্যাণ চিন্তাটাই আমাদের কাছে সব থেকে বড় বিষয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইসলাম শান্তির ধর্ম, সৌহার্দ্যরে ধর্ম, ভ্রাতৃত্বের ধর্ম। এখানে কিন্তু জঙ্গীবাদের আসলে কোন জায়গা নেই। কিন্তু যারা এই সন্ত্রাস সৃষ্টি করে তারা ধর্মবিরোধী কাজই করে। ধর্মের অবমাননা করে। তাই বাংলাদেশে ধর্মের নামে কোন সন্ত্রাসী কর্মকা- চলতে দেয়া হবে না। শেখ হাসিনা বলেন, এখানে সকলে যার যার ধর্ম সে সে পালন করবে এবং করে। সেই পরিবেশটাই আমরা তৈরি করতে চাই- ধর্ম যার যার উৎসব সকলের। আমরা বাংলাদেশীরা সেটাই মানি এবং সকলে মিলে যে কোন উৎসব উদযাপন করি। কাজেই সকলের তরে সকলে আমরা, আমরা মানবের তরে। তাই সকলে মিলে আসুন আমরা এই দেশকে গড়ে তুলি। এই দেশ যত উন্নত হবে, সমৃদ্ধশালী হবে বিশ্ব সভায় ততই আমরা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সংঘাত চাই না, সমৃদ্ধি-উন্নতি চাই। যে উন্নতির ছোঁয়া একদম গ্রামের তৃণমূল মানুষ পর্যন্ত পাবে। শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের ইসলাম ধর্মে স্পষ্ট বলা রয়েছে- ‘লাকুম দিনুকুম ওয়ালিয়াদিন’ অর্থাৎ যার যার ধর্ম তাঁর তাঁর কাছে। সবাই নিজস্ব মত ও পথ অনুযায়ী শান্তিপূর্ণভাবে ধর্মকর্ম পালন করবে। তিনি বলেন, সকল ধর্মেই কিন্তু শান্তির কথা বলা হয়েছে, মানবতার কথা, মানবকল্যাণ, মানব উন্নয়নের কথা বলা হয়েছে। কাজেই এটা আমাদেরও মেনে চলতে হবে। ধর্মের নামে কোন অপকর্ম সহ্য করা হবে না। নিজের ধর্ম পালনের পাশাপাশি অন্যের ধর্মের প্রতি সম্মান দেখাতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই বাংলাদেশটা সকল ধর্মের জন্য। সবাই এখানে শান্তিপূর্ণভাবে বাস করবে। যার যার ধর্ম সম্মানের সঙ্গে পালন করবে, একজন অপর জনের ধর্মের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করবে। সুন্দরভাবে মানুষ বাঁচবে, উন্নত জীবন পাবেÑ সেটই আমি আশা করি। প্রধানমন্ত্রী দুর্গাপূজার মহাসপ্তমীর দিনে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, সারাদেশে বিপুল উৎসাহের সঙ্গে দুর্গাপূজা উদযাপিত হচ্ছে। উন্নত, সমৃদ্ধ ও শান্তিময় বাংলাদেশ গড়তে সবাইকে প্রার্থনা করার আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, আমি এতটুকু চাই আপনারা প্রার্থনা করবেন আমাদের এই দেশটার যেন উন্নতি হয়। দেশের মানুষ যেন শান্তিতে বসবাস করে। আমরা বাংলাদেশ যেন দক্ষিণ এশিয়ায় একটি উন্নত সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বঙ্গবন্ধুর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। মহান স্বাধীনতার স্থপতি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের কথা স্মরণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতার স্বপ্ন ছিল সকল ধর্মের মানুষ তার ধর্ম স্বাধীনভাবে পালন করবে। সকলে মিলেমিশে এ দেশে বাস করবে। বাংলাদেশ হবে উন্নত-সমৃদ্ধ ও দারিদ্র্যমুক্ত। বিকেল ৩টা ৫ মিনিটে ঢাকেশ্বরীতে পৌঁছান প্রধানমন্ত্রী। এরপরই তিনি পূজা ম-প পরিদর্শন করেন। পরে মন্দির প্রাঙ্গণে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি ও বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ আয়োজিত শারদীয় শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অনুষ্ঠানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র সাঈদ খোকন, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির সভাপতি ডিএন চ্যাটার্জী, কমিটির সাধারণ সম্পাদক শ্যামল কুমার পাল, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল, হাজী মোঃ সেলিম এমপি, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেনগুপ্ত প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা এইচ টি ইমাম, খাদ্যমন্ত্রী এ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম, আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, ঢাকেশ্বরী মন্দিরের সেবায়েত প্রদীপ কুমার চক্রবর্তীসহ মন্দিরে আগত ভক্তরা উপস্থিত ছিলেন। ঢাকেশ্বরী মন্দিরে শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠান শেষে প্রধানমন্ত্রী গোপীবাগের রামকৃষ্ণ মঠ ও রামকৃষ্ণ মিশনে চলে যান। সেখানেও তিনি প্রথমে পূজা উৎসব পরিদর্শন করেন। এরপর যোগ দেন আয়োজিত শারদীয় শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে। এতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, আজকের দিন থেকে এ দেশের প্রতিটি ধর্মের প্রতিটি উৎসব সবাই উদযাপন করবে। ধর্ম যার যার, উৎসব আমাদের সবার। তিনি বলেন, সারাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে শারদীয় দুর্গাপূজা পালিত হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী এ সময় তার সরকারের আমলে বিভিন্ন উন্নয়নের কথা তুলে ধরে বলেন, বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। প্রত্যেক ধর্মের মানুষ, প্রতিটি উৎসব যেন শান্তিপূর্ণভাবে যেন পালন করতে পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে চাই। আওয়ামী লীগের অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, সমগ্র বাংলাদেশে উৎসবমুখর পরিবেশে যার যার ধর্ম শান্তিপূর্ণভাবে পালন করবে, এটাই আমাদের নীতি। প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের তথ্যমতে, সারাদেশে ২৯ হাজার ৩৯৫টি পূজা ম-পে এবারের দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
×