ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বিশ্বের ব্যস্ততম বন্দরের তালিকায় ১১ ধাপ এগোল চট্টগ্রাম

প্রকাশিত: ০৫:৩০, ৮ অক্টোবর ২০১৬

বিশ্বের ব্যস্ততম বন্দরের তালিকায় ১১ ধাপ এগোল চট্টগ্রাম

হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ ক্রমশ উন্নয়নের দিকে ধাবমান বাংলাদেশের আমদানি-রফতানির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিবছর নিজকে নিজেই ছাড়িয়ে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বন্দর। মাত্র ৬ কন্টেনার দিয়ে আজ থেকে ৩৯ বছর আগে কন্টেনার পোর্ট হিসেবে যাত্রা শুরু করা এই বন্দর গত বছরে হ্যান্ডলিং করেছে ২০ লাখ টিইইউএস কন্টেনার। দক্ষতা ও প্রবৃদ্ধির বিবেচনায় যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিখ্যাত লয়েড’স লিস্টের সর্বশেষ জরিপে চট্টগ্রাম বন্দর এগারো ধাপ এগিয়ে বিশ্বের ব্যস্ততম বন্দরগুলোর তালিকায় ৭৬ নম্বরে উঠে এসেছে। পেছনে ফেলেছে পাকিস্তানের প্রধান সামুদ্রিক বন্দর করাচীসহ অনেক প্রাচীন ও প্রসিদ্ধ বন্দরকে। শুক্রবার বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যানের হাতে আনুষ্ঠানিকভাবে তুলে দেয়া হয় লয়েড’স এর দেয়া সনদ। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান। প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, আমরাই বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছিলাম। কিন্তু দীর্ঘ সময় আমাদের ক্ষমতার বাইরে রাখায় দেশের উন্নয়ন হয়নি। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ বাংলাদেশ এখন চাল রফতানি করে। আর পাকিস্তান রফতানি করে সন্ত্রাস। চট্টগ্রাম বন্দর অডিটোরিয়ামে শুক্রবার আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে তুলে ধরা হয় বন্দরের শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত এগিয়ে আসার ধারাবাহিকতা। উপস্থাপন করা হয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষিত রূপকল্প ‘ভিশন ২০২১’ বাস্তবায়নে দেশের শিল্পায়ন ও অগ্রগতিকে সেবা দিতে বন্দরের দক্ষতা এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে গৃহীত পরিকল্পনা ও চলমান প্রকল্পগুলো। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবালের সভাপতিত্বে এতে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন, নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য এমএ লতিফ এমপি ও বাংলাদেশে লয়েডস লিস্ট এর সমন্বয়ক ক্যাপ্টেন জিল্লুর রহমান ভুঁইয়া। মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন রেলপথ মন্ত্রণালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ফজলে করিম চৌধুরী এমপি, শামসুল হক চৌধুরী এমপি, মোস্তাফিজুর রহমান এমপি, ড. আবু রেজা নদভী এমপি ও নজরুল ইসলাম এমপি। উপস্থিত ছিলেন সরকারী পর্যায়ের সংশ্লিষ্ট পদস্থ কর্মকর্তা, শিপিং ও বিভিন্ন ট্রেডবডি তথা বন্দর ব্যবহারকারী সংস্থাগুলোর প্রতিনিধিরা। অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে বন্দরের শুরু থেকে এ পর্যন্ত এবং বে-টার্মিনাল ও মীরসরাইয়ে নতুন বন্দর নির্মাণসহ ভবিষ্যত পরিকল্পনার বিস্তারিত তুলে ধরেন বন্দর কর্তৃপক্ষের সদস্য (হারবার এ্যান্ড মেরিন) কমডোর শাহীন রহমান। নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, এই বাংলাদেশ যারা সৃষ্টি করেছিল তাদের ক্ষমতার বাইরে রাখা হয়েছে দীর্ঘ সময়। সে কারণেই দেশের উন্নয়ন হয়নি। তিনি বলেন, দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় এসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে মাত্র আট বছর অতিবাহিত হতে চলেছে। এর মধ্যেই বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার উন্নীত হয়েছে ৭ দশমিক ১ শতাংশে। বিদ্যুত উৎপাদন ৩ হাজার ৭শ’ মেগাওয়াট ছিল। এখন উৎপাদন ক্ষমতা উন্নীত হয়েছে ১৪ হাজার মেগাওয়াটে। খাদ্য ঘাটতি কাটিয়ে বাংলাদেশ এখন খাদ্য রফতানিকারক দেশে পরিণত হয়েছে। আমরা এখন নিম্নমাধ্যম আয়ের দেশ। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁর পিতৃভূমি কেনিয়া সফরে গিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশকে অনুসরণ করতে। বন্দরের ক্রমশ উন্নয়ন প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে নৌমন্ত্রী বলেন, করাচী ছিল এক সময় পুরো পাকিস্তানের প্রধান বন্দর। এখন চট্টগ্রাম বন্দর ব্যস্ততার দিক থেকে করাচীকে পেছনে ফেলেছে। আমরা এখন চাল রফতানি করি, আর পাকিস্তান সন্ত্রাস রফতানি করে। পাকিস্তানের সন্ত্রাসীরা উপমহাদেশের বিভিন্ন দেশে ঢুকে সন্ত্রাসী কর্মকা- চালাচ্ছে। পাকিস্তানপন্থীদের প্রতি ইঙ্গিত করে নৌমন্ত্রী বলেন, ক্রিকেট খেলায় দেখি অনেকে পাকিস্তানের হারা-জেতায় আনন্দ ও দুঃখ প্রকাশ করে। কিন্তু আমাদের উচিত পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যে দেশই খেলুক সে দেশকে সমর্থন দেয়া। যে দেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছি তাদের সমর্থন করা যায় না। নৌমন্ত্রী এর আগে চট্টগ্রাম বন্দরে নবনির্মিত এনসিটি গেট-৩ এবং এনসিটি সিএ্যান্ডএফ শেড উদ্বোধন করেন। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন বলেন, সরকারের সদিচ্ছার কারণেই চট্টগ্রাম বন্দরের উন্নয়ন ঘটছে। বন্দরকে আরও এগিয়ে নিতে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে হবে। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলিয়ে দ্রুত পরিকল্পনা গ্রহণ করে এগিয়ে নিতে না পারলে এ সাফল্য ধরে রাখা যাবে না। তিনি বন্দর নিয়ে রাজনীতি থেকে বিরত থাকতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, রাজনীতিতে মত পথের ভিন্নতা থাকবে। মানুষের মধ্যে সম্প্রদায়গত পার্থক্যও থাকবে। কিন্তু বন্দরকে সকল বিরোধের বাইরে রাখতে হবে। এখানে কোন রাজনীতি থাকবে না, বন্দর এক মুহূর্তের জন্যও বন্ধ করা যাবে না। সংসদ সদস্য এমএ লতিফ বলেন, এতদিন দেশের উন্নয়ন না হওয়ার কারণ যারা ক্ষমতায় ছিলেন তাদের কোন ভিশন ছিল না। যারা এদেশ চায়নি তারাই ক্ষমতায় ছিল। তারা স্বাধীনতার সুফল জনগণকে ভোগ করতে দেয়নি। দেশ স্বাধীনের পূর্বে যে পাকিস্তানীরা আমাদের অশ্রাব্য ভাষায় গালাগাল করত সেই পাকিস্তান পুনঃপ্রতিষ্ঠার স্বপ্ন যারা দেখে তাদের দিয়ে দেশের উন্নয়ন আশা করা যায় না। তিনি সকলের প্রতি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান। চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এডমিরাল এম খালেদ ইকবাল জানান, বিশ্বে ৫ শতাধিক কন্টেনার পোর্ট রয়েছে। এর মধ্যে প্রতিবছর প্রধান ১শ’ বন্দরের র‌্যাংকিং প্রকাশ করে যুক্তরাজ্যভিত্তিক লয়েড’স লিস্ট। ২০১৫ সালের জরিপে দক্ষতা ও ব্যস্ততা বিবেচনায় চট্টগ্রাম বন্দর ১১ ধাপ এগিয়ে এসে ৭৬তম স্থান অর্জন করেছে, যা আগে অবস্থান ছিল ৮৭তম। তিনি বলেন, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে দেশের ৯২ ভাগ আমদানি-রফতানি কার্যক্রম পরিচালিত হয়। আর কন্টেনার আমদানি রফতানির ৯৮ ভাগই হ্যান্ডলিং হয় চট্টগ্রাম বন্দরে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বন্দরে হ্যান্ডলিং হয়েছে ১৮ লাখ টিইইউএস কন্টেনারেরও বেশি। বছর শেষে এবার ২২ লাখ টিইইউএস কন্টেনার হ্যান্ডলিং হবে বলে আমরা আশা করছি। প্রধানমন্ত্রী আমাদের স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন। আমরাও সে স্বপ্ন বাস্তবায়নে এগিয়ে চলেছি।
×