ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কঠোর ব্যবস্থা নিন

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ৮ অক্টোবর ২০১৬

কঠোর ব্যবস্থা নিন

৭ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী কুড়িগ্রামে আনুষ্ঠানিকভাবে এই কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন। এর অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হলো অতি দরিদ্র মানুষ, প্রতিবন্ধী, দিনমজুর, অসহায়, দুস্থ, বিধবা ও বয়োবৃদ্ধ, বিবাহবিচ্ছেদের শিকার দরিদ্র নারী, তাদের প্রত্যেককে প্রতিমাসে ১০ টাকা কেজি দরে ৩০ কেজি চাল দেয়া। সে সময়ে প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, অতি দরিদ্র মানুষ যাতে না খেয়ে না থাকে, সে জন্যই এ গণমুখী কর্মসূচী। এটা বর্তমান সরকারের কোন নির্বাচনী মেনিফেস্টো কিংবা রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি ছিল না বরং এটি ছিল একটি নির্বাচনী জনসভায় প্রদত্ত বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর রাজনৈতিক বক্তব্য। সে সময়ে বিএনপি-জামায়াত জোটের দায়িত্বশীল মহল থেকে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করা হয়েছিল। তবে প্রধানমন্ত্রী যে তাঁর বক্তব্যে আন্তরিক ও দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন, তা তিনি প্রমাণ করে ছাড়লেন এর বাস্তবিক প্রয়োগের মাধ্যমে। তবে সরকারের এই গণবান্ধব কর্মসূচীকে শুরুতেই প্রশ্নবিদ্ধ করতে যেন উঠেপড়ে লেগেছে মুষ্টিমেয় কিছু ব্যক্তি। যাদের মধ্যে রয়েছে প্রশাসনের একটি অংশ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও কতিপয় ডিলার। ইতোমধ্যে যেসব অভিযোগ মাঠপর্যায় থেকে উঠে এসেছে, তা হলো সংশ্লিষ্টদের যোগসাজশে চাল আত্মসাত, মৃত ব্যক্তিদের নামে একাধিক কার্ড বরাদ্দ, দরিদ্র ও অসহায়দের বাদ দিয়ে চেয়ারম্যান-মেম্বার- প্রভাবশালীদের আত্মীয়স্বজনদের কার্ড বিতরণ। টাকার বিনিময়ে কার্ড, দলীয় কোন্দল ও প্রভাবে তা নিয়ে পরিবর্তন ইত্যাদি। বহু স্থানে কার্ড পেয়েছেন স্বয়ং ডিলারও। অনেক স্থানে সেপ্টেম্বর মাসের বরাদ্দকৃত চাল এখনও বিতরণ করা হয়নি, এমন অভিযোগও আছে। এর পাশাপাশি চাল আত্মসাত, বেশি দামে বিক্রি, ট্রাক জব্দসহ বিভিন্ন স্থানে কয়েকজনকে গ্রেফতারের খবরও আছে বৈকি! একেই বলে ‘গরিবের বরাদ্দ মেরে খাওয়া’। তবে দেশে এই ট্র্যাডিশন পুরনো। দুর্নীতিপরায়ণ ও লুটেরা শ্রেণীর কিছু লোক, যিনি প্রশাসন থেকে প্রভাবশালী, ডিলার কিংবা জনপ্রতিনিধি, তিনি যেই হোন না কেন, বরাবরই এহেন কাজ করে আসছে। বর্তমান জননন্দিত সরকারের আমলেও তারা এমন করবে, তাতে আর বিচিত্র কি! গত কয়েকদিন ধরে গণমাধ্যমে লেখালেখি, সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশসহ বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে বিতর্ক দেখা দিলে শেষ পর্যন্ত হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করতে হয়েছে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীকে। যিনি দরিদ্রবান্ধব এই কর্মসূচীর উদ্যোক্তা। গত বুধবার জাতীয় সংসদে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধানমন্ত্রী সতর্ক করে দিয়ে বলেন, চাল বিতরণ ও অতি দরিদ্রদের তালিকা প্রণয়নে অনিয়ম পাওয়া গেলে জড়িতদের বিরুদ্ধে নেয়া হবে কঠোর ব্যবস্থা। প্রয়োজনে ডিলারশিপ বাতিল করা হবে। ছাড় দেয়া হবে না জনপ্রতিনিধিদেরও। এর পাশাপাশি তিনি এও বলেছেন যে, যতদিন প্রয়োজন হবে ততদিন এই কর্মসূচী অব্যাহত থাকবে। প্রধানমন্ত্রীর এই হুঁশিয়ারি সময়োচিত। মাঠ পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে সরকারের ১০ টাকা কেজি দরে চাল ‘দরিদ্রবান্ধব কর্মসূচী’টি সাফল্যের মুখ দেখবে নিশ্চয়ই। মানুষ আশা করব, যেসব স্থানে এই কর্মসূচী বাস্তবায়নে ইতোমধ্যে অনিয়ম-অব্যবস্থা হয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে প্রমাণসাপেক্ষে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
×