ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নির্ভরতায় সঞ্চয়পত্র

প্রকাশিত: ০৩:৫৫, ৭ অক্টোবর ২০১৬

নির্ভরতায় সঞ্চয়পত্র

সঞ্চয়পত্রের বিক্রি অস্বাভাবিক বেড়ে গেছে। মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত সবাই ঝুঁকছে সঞ্চয়পত্রের দিকে। ব্যাংক আমানতের সুদের হার কম এবং পুঁজিবাজারে দীর্ঘ মন্দার কারণে একটু বেশি লাভের আশায় সবাই ‘নিরাপদ বিনিয়োগে’ এপথের দিকে ঝুঁকছেন। সুদের হার কমানোর পরও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করলে এখনও অন্য যে কোন স্কিম থেকে বেশি মুনাফা পাওয়া যায়, সে কারণে বিক্রি বাড়ছে। আসলে মানুষের অর্থলগ্নির ক্ষেত্রগুলো সীমিত হয়ে আসার পর মধ্যবিত্তের কাছে সঞ্চয়পত্র হয়ে ওঠে বিনিয়োগের অন্যতম ক্ষেত্র। গত দুই মাসে সবচেয়ে বেশি বিক্রি হয়েছে পরিবার সঞ্চয়পত্র। এর পরেই রয়েছে তিন মাস অন্তর মুনাফাভিত্তিক ও পাঁচ বছর মেয়াদি সঞ্চয়পত্র। মূলত এই তিন ধরনের সঞ্চয়পত্রেই বিক্রি বেশি হচ্ছে। ২০১৫ সালে এই ধরনের পরিস্থিতিতে সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের সুদের হার গড়ে ২ শতাংশ করে কমানো হয়। গত বছরের এপ্রিল মাসের আগ পর্যন্ত ৫ বছর মেয়াদী এক লাখ টাকার পরিবার সঞ্চয়পত্র কিনলে প্রতি মাসে ১ হাজার ৭০ টাকা মুনাফা পেতেন গ্রাহক। এখন পাচ্ছেন ৯১২ টাকা। তারপরও বিক্রি কমছে না। সুদের হার কমলেও ব্যাংকে রাখার চেয়ে সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকে বেশি নিরাপদ মনে করছেন অনেকে। অন্যদিকে বিনিয়োগের নির্ভরযোগ্য কোন জায়গা নেই বলে প্রতিদিনই বহুসংখ্যক নারী আসছেন সঞ্চয়পত্র কিনতে। যাদের একটা বড় অংশ রয়েছে মধ্যবিত্ত পরিবারে। মূলত তাদের ওপর ভর করে প্রতিমাসেই লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে পরিবার সঞ্চয়পত্র বিক্রির হার। সর্বশেষ আগস্ট মাসে সঞ্চয়পত্র বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ২৯৭ কোটি টাকা, যা আগের বছরের তুলনায় বেড়েছে দেড় হাজার কোটি টাকার বেশি। সম্প্রতি জাতীয় সঞ্চয়পত্র অধিদফতরের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, ২০১৬-১৭ অর্থবছরের দুই মাসে এ খাতে নিট বিক্রি হয়েছে ৭ হাজার ৭৯৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। আগস্ট মাসে এ খাতে নিট বিক্রি হয়েছে ৪ হাজার ২৯৭ কোটি ২০ লাখ টাকা। একক মাস হিসেবে এটা সঞ্চয়পত্র বিক্রিতে নতুন রেকর্ডও। মধ্যবিত্ত জীবনে সাধ আর সাধ্যের টানাপড়েন প্রায় সব সময় লেগে থাকে। সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করে জীবিকা নির্বাহ করেন এমন মানুষের সংখ্যা আমাদের দেশে কম নয়। বিশেষ করে আয় হীন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। এরা তিল তিল করে নানাভাবে সঞ্চয় করেন। কখনও সম্পদ বিক্রির টাকা, কখনও বা পেনশন, এফডিআর অথবা প্রবাসী স্বজনের পাঠানো অর্থে আসে কিছু বিনিয়োগের সুযোগ। কিন্তু বিনিয়োগের সিদ্ধান্ত নেয়া তো সহজ নয়। পদে পদে তার ঝক্কি-ঝামেলা রয়েছে। থাকে লোকসান কিংবা প্রতারণার ঝুঁকি। অনেকেই চায় না এই ঝুঁকি নিতে। মুনাফা কম হলেও হন্যে হয়ে নিরাপদ বিনিয়োগের ক্ষেত্র খোঁজেন। তাদের জন্য সঞ্চয়পত্র হচ্ছে আদর্শ বিকল্প। মানুষ তাই সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করে আসছে। সঞ্চয়পত্র হলো স্বল্প আয়ের মানুষের নির্ভরতার জায়গা। এই আমানত তাকে নিরাপত্তা দেয়। এই একটি খাতে সাধারণ মানুষ চোখ বন্ধ করে বিনিয়োগ করে। সরকার সঞ্চয়পত্রে ঋণের সুদ বাড়িয়েছে দরিদ্র মানুষের সঞ্চয়ের কথা বিবেচনা করে। কিন্তু সঞ্চয়পত্র বিক্রি বেড়ে যাওয়ায় লাভ কমিয়ে দেয়া হয়। একথা সত্য যে, সঞ্চয়পত্র বিক্রি বাড়লে সরকারের সুদ ব্যয় বাড়ে, তাই সরকার সুদের হার কমায়। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ক্ষুদ্র আমানতকারীরা। তাই সঞ্চয়পত্রের সুদের হার আর না কমিয়ে মানুষকে সঞ্চয়ের দিকে ধাবিত করার পদক্ষেপ নেয়া সঙ্গত। এতে সরকারের দারিদ্র্য দূরীকরণের উদ্যোগে সাফল্য আসবে।
×