ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সজাগ হোন

প্রকাশিত: ০৩:৩৭, ৬ অক্টোবর ২০১৬

মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সজাগ হোন

মাত্র কয়েক মাস আগেও সকলের মনে এই শঙ্কাটিই দানা বাঁধছিল যে, আসলে বাংলাদেশে হচ্ছেটা কি? তখন চারদিকেই শুধু এলোমেলো কর্মকাণ্ডের পদধ্বনি। বিএনপির মোসাদ কানেকশন, জঙ্গীদের বাড়বাড়ন্ত, হলি আর্টিজান ও শোলাকিয়ার ঈদের জামাতে জঙ্গী হামলায় কিছু দেশী-বিদেশী নাগরিকের প্রাণহানি, ঢাকায় একাধিক জঙ্গী আস্তানায় পুলিশী হামলায় মার্কামারা জঙ্গীর মৃত্যুর ঘটনা, উপনির্বাচন নিয়ে নানা বুজরুকি আরও কত কী! এসব আলামত দৃষ্টে স্পষ্টই প্রতীয়মান হচ্ছিল যে, একটা বেসামাল পরিস্থিতি সৃষ্টির বেপরোয়া চক্রান্ত চলছে দেশী-বিদেশী কুচক্রীদের ইন্ধনে। এদিকে সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকার, সরকারপ্রধান, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ইত্যাদি বিষয়ে যে ধরনের কুৎসিত, অশ্রাব্য ও অসভ্য উক্তি এবং মন্তব্য দেখতে পাওয়া যায় তাতে এ কথা মনে করার যথেষ্ট কারণ আছে যে, দেশের তথা সমাজের এক বড় অংশের মানুষের মধ্য থেকে শুভবুদ্ধি, বিচার-বিবেচনাবোধ ও দেশপ্রেমমূলক চেতনা সম্পূর্ণভাবে লুপ্ত। নইলে অর্বাচীনও যেখানে অতি সহজেই সত্য ও মিথ্যাকে শনাক্ত করতে সক্ষম সেখানে এরা ‘লেখাপড়া জানা’ মানুষ হয়েও কি করে এমন ভিত্তিহীন ও বানোয়াট কথাবার্তা বলতে পারে তা সত্যিই বোঝা দুষ্কর! সত্যি বলতে গোটা বিশ্বেই আজ যারপরনাই মিথ্যা আর মতলবী স্বার্থের বেসাতি চলছে। বাংলাদেশ এ থেকে মুক্ত থাকবেই বা কি করে! তবু, এই মিথ্যাচার থেকে জাতিকে যতটা পারা যায় দূরে রাখার জন্য সরকার ও সমাজের বিবেকবান মানুষদের এগিয়ে আসতে হবে বৈকি! যুদ্ধাপরাধীদের ব্যাপারে, অর্থাৎ, তাদের দ্বারা সংঘটিত অপরাধসমূহ সম্পর্কে দেশে-বিদেশে বিশ্বাসযোগ্য তথ্য-প্রমাণাদি উপস্থাপনের এবং ব্যাপকভিত্তিক গণসংযোগ গড়ে তোলার প্রয়োজন ছিল এবং এখনও তা রয়েছে; যদিও সেটা শুরু“থেকেই করাটা বাঞ্ছনীয় ছিল। এ ব্যাপারে কেন কোন প্রকার কার্যকর ও অর্থবহ উদ্যোগই এ যাবতকাল নেয়া হলো না, তা এক পরম বিস্ময়ই বটে! বাংলাদেশ সরকার ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কে ইউটিউবে যেসব অশ্লীল-অশ্রাব্য বক্তব্য আর ফুটেজের ছড়াছড়ি দেখতে পাওয়া যায় তাতে প্রমাণ হয় যে, বাংলাদেশের এক অংশের মানুষের মধ্যে বুদ্ধি-বিবেচনা, সত্যাসত্য নির্ণয়ের চেতনা আর আত্মসম্মানবোধ সম্পূর্ণভাবে বিলুপ্ত আজ। এই মানুষরা অসভ্যতার চূড়ান্ত পর্যায়ে উপনীত, আর তাই এরা মনুষ্য পদবাচ্য হতেই পারে না। এই অসভ্যরা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করে বেড়ায় যে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে নাকি দেশে ইসলাম বিপন্ন! এরা নিজেদের পবিত্র ধর্ম ইসলামের ‘খাদেম’ বলে জাহির করে অথচ বিচার-বিশ্লেষণে প্রমাণিত যে, ইসলামের সঙ্গে এদের কোন প্রকার সংযোগই নেই। শেখ হাসিনা ভুয়া ও ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে দুনিয়াবী মতলব হাসিলের কাজে মশগুল একশ্রেণীর ভ--প্রতারকের বিরুদ্ধে দৃঢ় অবস্থান গ্রহণ করায় এই মতলববাজরা ভীষণ বেকায়দায় পড়ে গেছে আর তাই তাদের আজ ত্রাহি ত্রাহি রব উঠেছে! বিএনপি বা জামায়াতের নেতাকর্মীদের মুখে সর্বক্ষণ ইসলামের গালভরা বুলি শুনতে পাওয়া যাবে, কিন্তু এদের অধিকাংশের ব্যক্তিগত জীবনাচারের তত্ত্ব-তালাশ নিলে দেখা যাবে যে, তা যাবতীয় অনৈসলামিক কর্মকাণ্ডে ঠাসা। ব্যক্তিগত, সামাজিক বা রাষ্ট্রীয় জীবনের সবক্ষেত্রেই তাদের এই ইসলামের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ চেহারাটাই ফুটে উঠবে। ইসলাম যে শুধু জোব্বাজাব্বা পরিধান আর নামাজ-রোজা পালনের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, এই কথাটা এদের বোঝাতে গেলেই বিপদ। সঙ্গে সঙ্গে এরা সবাই মিলে আপনাকে মুরতাদ বা ইসলামের ঘোরতর দুশমন হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য উঠেপড়ে লাগবে। আর সোশ্যাল মিডিয়ায় এদের দ্বারা নিয়োজিত দালালরা একযোগে আপনার বিরুদ্ধে ওদের শেখানো বুলি আওড়াতে থাকবে অশ্লীলতার পরাকাষ্ঠা দেখিয়ে। একই সঙ্গে এদের দ্বারা নিযুক্ত একশ্রেণীর মাদ্রাসা শিক্ষক, মসজিদের ইমাম আর ‘মৌলানা-মৌলভী’ নামধারী কিছু মুখচেনা লোক মিলাদের অনুষ্ঠানে বা ওয়াজ-নসিহতের নামে আওয়ামী লীগের শাসনাধীনে দেশে ইসলাম গেল বলে জিকির তুলতে থাকবে, যেমনটা কিনা সেই পাকিস্তানী আমলে এদের পূর্বসূরিরা হরহামেশাই তুলত। ইসলাম যে পরনিন্দা, পরচর্চা, গিবত, মিথ্যাচার, ভিন্ন ধর্মের মানুষের প্রতি বিদ্বেষ এবং দুনিয়াবীর যাবতীয় মোহগ্রস্ততা পছন্দ করে না এই সার সত্যটি থেকে এরা বহু দূরে অবস্থান করে ইহকালের মজা লুটতেই ব্যস্ত থাকে। পরকাল এদের কাছে ঈমানের অঙ্গীভূত নয়, বরং কেবল একধরনের ভান মাত্র! মহানবী হযরত মুহম্মদ (দ.) এর কয়েকটি অমোঘ বাণী এ ক্ষেত্রে বিশেষভাবে স্মর্তব্য। আল্লামা আল মামুন আল সোহরাওয়ার্দীর ‘ংধুরহমং ড়ভ ঢ়ৎড়ঢ়যবঃ (ংস)’ পুস্তিকায় বর্ণিত রসুলের (দ.) এই বাণীগুলো একজন প্রকৃত মুসলমানের স্বরূপ মেলে ধরে। যেমন : ‘এই দুনিয়া একজন প্রকৃত ঈমানদারের জন্য দোজখবিশেষ আর অবিশ্বাসীদের জন্য বেহেশত সমতুল্য।’ অর্থাৎ, যে বা যারা দুনিয়ায় সর্বক্ষণ মশগুল থাকে আর মুখে ধর্মের বুলি কপচায় তারা প্রকৃত আল্লাহ বা ইসলামে বিশ্বাসী নয়। রসুল (দ.) আরও বলছেন, ‘জ্ঞানীর নিদ্রা সত্তর বছরের ইবাদতের চাইতেও শ্রেয়।’ তিনি এখানেই থেমে থাকেননি, বলেছেন, ‘জ্ঞানীর কলমের কালি শহীদের রক্তের চাইতেও মূল্যবান।’ এমনি আরও অনেক হাদিসের উল্লেখ করা যাবে যাতে কিনা মহানবীর (দ.) জীবনাদর্শ ও ইসলামের মর্মবাণী তথা তার মানব প্রেমের উদার মূর্তি দিব্যরাগে ফুটে ওঠে। ওয়াজ-নসিহতের নামে একশ্রেণীর লোক ধর্মের নাম ভাঙ্গিয়ে নারীদের বিরুদ্ধে যেভাবে কুৎসামূলক ও অবজ্ঞাসূচক কথা বলে পুরুষদেরকে নারীদের হেয় প্রতিপন্ন করতে শেখায় সেই মূর্খের দল জানেই না যে, ইসলাম নারীদের প্রথম দিয়েছে মুক্তি, নরসম অধিকার। ইসলাম বলছে, ‘নারীর ওপর যেমন নরের অধিকার আছে, নরের উপরও তদ্রƒপ নারীর অধিকার আছে’। সুতরাং, ঐ ওয়াজ-নসিহতকারীরা মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে এসব মৌলিক বিষয়ে যে বুজরুকি ফলায় তা আল্লাহ ও তার রসুলের প্রতি অবজ্ঞামূলক। এই ধর্ম ব্যবসায়ীরা শরিয়ার নামে সমাজে এমনসব আজগুবী ও প্রকৃত ইসলাম ধর্মবিরোধী এবং স্বেচ্ছাচারী কর্মকাণ্ডকে ‘জায়েজ’ বলে প্রতিষ্ঠা করতে চায় যা সকল বিচারেই পরিত্যাজ্য! যাবজ্জীবন কারাদ-প্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী দেলোয়ার হোসেন সাঈদী ওয়াজ-নসিহতের নামে এ দেশে যত নারী বিদ্বেষ ছড়িয়েছে তার তুলনা খুব কমই মেলে। তার ও তার মতো অন্যসব গাফেল আলেম নারীর বিরুদ্ধে এমন সব রিরংসামূলক বক্তব্য নিয়ে হাজির হয় যা এদের মনের সুপ্ত কামুকতা ও অশ্লীলতার উলঙ্গ প্রকাশ ছাড়া কিছু নয়। এই জাতীয় আত্মপ্রতারক এবং দুনিয়ায় সর্বক্ষণ মশগুল স্বঘোষিত আল্লামারা এ দেশের সরলপ্রাণ ও ধর্মভীরু মানুষদের ঈমান-আকিদা নিয়ে সর্বদা কটাক্ষ করেছে এবং সমাজে বিদ্বেষ-বিসম্বাদ সৃষ্টি করে ফিরেছে পবিত্র ধর্ম ইসলাম সম্পর্কে একাদিক্রমে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে। আল্লাহপাক এই জাতীয় মোনাফেকদের কাফের-বেদ্বীনের চাইতেও ভয়ঙ্কর বলে আখ্যা দিয়েছেন এবং অনেক বেশি নিন্দা করেছেন এদের। মোনাফেকরা আল্লাহপাকের দৃষ্টিতে সবচাইতে খারাপ প্রাণী। যার যার ধর্ম তার তার কাছেÑ বলে সকল ধর্মমতের প্রতি যেখানে শ্রদ্ধাশীল থাকার নির্দেশ দিচ্ছেন সেখানে এসব বুজদিলরা অন্য ধর্মমতের প্রতি বিদ্বেষ ও ঘৃণা পোষণ করতে শেখাচ্ছে। মানুষ হত্যা করে বেহেশ্তে যাবার যে পথ এরা বাতলাচ্ছে তা যে কত বড় মিথ্যাচার ও অধর্ম এরা সেটা বুঝতে অক্ষম। পবিত্র আল কোরানে বুঝিবা এদের উদ্দেশেই আল্লাহপাক বলছেন যে, ‘উহাদের ডাকিও না, উহারা আসিবে না। উহাদের দিলের মধ্যে মোহর মারিয়া দিয়াছি আর উহাদের কানের মধ্যে সীসা ঢালিয়া দিয়াছি।’ যারা ইসলামকে কেন্দ্র করে নানান ফেতনা-ফ্যাসাদ সৃষ্টি করে আর নফসের কাছে সম্পূর্ণভাবে বন্দী হয়ে সমাজ-সংসারে অশান্তি, অনৈক্য ও বিভেদ সৃষ্টি করে তারা ধর্মদ্রোহী বৈ অন্য কিছু নয়! মনে রাখা দরকার যে, ধর্ম সর্বদাই ‘বর্মসম সহনশীল’। কিন্তু যারা সহনশীলতার পরিবর্তে ধর্ম নিয়ে বাড়াবাড়ি করে তারা অধর্মাচারী মাত্র! আমাদের বাংলাদেশ ইতিহাসের বহু চড়াই-উতরাই পার হয়ে এক অসাধারণ অসাম্প্রদায়িক সমাজ চেতনার জন্ম দিয়েছে, যার দরুন এখানে বিভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানুষের সহাবস্থান বাঙালী জাতি ও তার সংস্কৃতিকে এক ইস্পাতদৃঢ় ভিতের ওপর দাঁড় করিয়েছে অনায়াসে। সেই পাকিস্তান রাষ্ট্রটি ’৪৭-এ প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকেই এই ভিতটিকে নড়িয়ে দেবার প্রয়াস-প্রচেষ্টাই লক্ষ্য করা গেছে বাঙালী জাতিসত্তা ও তার সংস্কৃতি বিরোধী এক কায়েমীস্বার্থবাদী অপশক্তির দ্বারা। কিন্তু আমাদের হাজার বছরের সহনশীল সমাজ মানস বার বার সেই অপপ্রয়াস ব্যর্থ করে দিয়েছে। তবু ঐ ধুরন্ধররা তাদের ফণা কিন্তু গুটিয়ে নেয়নি, বরং নিত্য নতুন অজুহাত খাড়া করে বার বার বাঙালী মুসলমানের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের ওপর ছোবল মারার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বিকৃত ওয়াহাবী মতাদর্শের অনুসারী এই ধর্ম ব্যবসায়ীরা বাঙালী জাতিসত্তাকে ‘হিন্দুয়ানী’ বলে আখ্যায়িত করে এর ইসলামীকরণের নামে আমাদের ভাষা ও সংস্কৃতিতে এক কৃত্রিম মুসলমানত্ব আরোপের অবিরাম চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে সেই পাকিস্তান আমল থেকে। আর পাকিস্তান রাষ্ট্রটি সৃষ্টির পর থেকে পূর্ববাংলার মুসলমানদের ‘সাচ্চা মুসলমান’ বানাবার এক অযাচিত ও বলদর্পী প্রয়াস লক্ষণীয় হয়ে ওঠে জনভিত্তিহীন শাসকশ্রেণীর মাঝে। আর এর বিরুদ্ধেই তেইশ বছরব্যাপী রাজনৈতিক সংগ্রামে শামিল হতে হয় বাংলার আপামর জনগোষ্ঠীকে। রসুলুল্লাহ (দ.) নিজেকে ‘মক্কী’ এবং ‘মাদানী’ বলে পরিচয় দিতে ভালবাসতেন। মাতৃভাষার প্রতি তার গভীর অনুরাগের কথা সুবিদিত। অথচ, ইসলামের নাম ভাঙ্গিয়ে ব্যবসায় মগ্ন জাহেলরা অন্য কোন জাতিগোষ্ঠীর সভ্যতা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের বিপরীতে মধ্যপ্রাচ্যের-বিশেষ করে সৌদি আরবের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে ইসলামী সংস্কৃতি বলে চাপিয়ে দিতে বদ্ধপরিকর। এতে করে বিভিন্ন দেশের মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ ও বিভ্রান্তির পাহাড় রচিত হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একজন অত্যন্ত পাবন্দ মুসলমান হওয়া সত্ত্বেও এবং তাঁর সরকার ইসলামের নিশ্চিত খেদমদগার হওয়ার পরও ঐ ধর্ম ব্যবসায়ীরা তাঁর এবং তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে মিথ্যা অপপ্রচার চালায় নিছক নিজেদের মতলবী স্বার্থ হাসিলের হীন উদ্দেশে। সোশ্যাল মিডিয়ায় ও টক শোতে যারা বেশুমার এই অপকর্ম করে চলে তারা সত্যের নয় তারা ঐ মোনাফেকদের কেনা গোলাম মাত্র! ইসলামের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে সেই শুরু থেকেই এই জাতীয় ধর্ম ব্যবসায়ীদের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যাবে। আর কারবালার মর্মন্তুদ ঘটনা প্রবাহের পর মতাদর্শগত দ্বন্দ্ব ইসলামকে ছিন্ন ভিন্ন করে দেয়ার উপক্রম করে। কারবালায় যারা রসুলের (দ.) প্রিয়তম দৌহিত্র হযরত হোসেন (রা.) ও তার নিরীহ ও নিষ্পাপ পরিবারবর্গকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল তারাই যখন ইসলামের ‘মশাল বরদার’ রূপে নিজেদের জাহিরের সুযোগ পেয়ে যায় তখন ক্ষমতাকে জায়েজ করার জন্য তারা নানান দুরভিসন্ধি ও মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে মোনাফেকির চূড়ান্ত করেছে। ইসলামের অধ্যাত্মবাদের স্থলে দুনিয়াবী নানান বিলাস-বৈভবের প্রতি অতিশয় প্রাধান্য ও গুরুত্ব প্রদান তখন থেকেই শুরু এবং এতদুদ্দেশ্যে নানান ফেরকা ও ফেতনা-ফ্যাসাদের সূচনা। সুতরাং, রসুলের (দ.) ওফাতের পরপরই যে অন্তর্দ্বন্দ্ব শুরু হয় তা-ই পরে শাখা-প্রশাখায় বিস্তার লাভ করে মতলববাজদের প্রত্যক্ষ মদদে। ঐ মতলববাজরা পরবর্তীকালে দুনিয়াময় ছড়িয়ে গিয়ে মুসলিম সমাজে কালে কালে অনৈক্য, বিভেদ ও বিভ্রান্তি ছড়ানোর মওকা পেয়ে যায়। লক্ষণীয় এই যে, প্রয়াত জামাত নেতা গো. আযম কোন মওলানা ছিলেন না, অথচ, মিথ্যা ও চাতুরামির মাধ্যমে জামায়াত তাকে এ দেশের সরলপ্রাণ মানুষের কাছে একজন ‘বিশিষ্ট আলেম’ বানিয়ে দিয়েছে। এসব জামায়াতী নেতার ছেলেমেয়েরা দেশী-বিদেশী আধুনিক ও ইংরেজী স্কুলে পড়লেও দেশে মাদ্রাসাভিত্তিক অনাধুনিক শিক্ষার প্রসারের ব্যাপারে সদা সোচ্চার। আর এর কারণ এই যে, মাদ্রাসায় পড়ুয়া এ দেশের হতদরিদ্র কোমলমতি ছেলেমেয়েদের ইসলামের নামে নিজেদের হীন ও মতলবী স্বার্থ উদ্ধারের কাজে ব্যবহার করা। আবার, আধুনিক শিক্ষাঙ্গনেও এরা ইদানীং হানা দিয়েছে। বেহেশতে যাবার অলীক স্বপ্ন এদের চোখে মেলে ধরে কি ভয়ঙ্কর আত্মঘাতী মানুষে পরিণত করছে এদেরকে! যা ইসলাম কস্মিনকালেও সমর্থন করেনি এবং করে না। ইসলাম ও পবিত্র কোরানের হেফাজতকারী আল্লাহপাক স্বয়ং, সুতরাং, ইসলাম রক্ষার নামে এই হিংসাত্মক তৎপরতা কোনভাবেই মুসলমানরা মেনে যে নেবে না তা তো বলাই বাহুল্য! এ দেশের মানুষ আজ তাই এই অপকর্মকারী ও অধর্মাচারী সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ফুঁসে উঠেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সুযোগ্য নেতৃত্বে। ইসলাম ভোগে নয়, ত্যাগে বিশ্বাস করে। জবরদস্তিতে নয় সম্প্রীতি ও সৌহার্দ্যে বিশ্বাসী। ঔদার্যে, সহনশীলতায় আর মানব প্রেমের ঐশী প্রেরণায় ইসলাম সদা উজ্জ্বল। এই সহজ সত্যটি ধর্ম ব্যবসায়ীরা জেনেও না জানার ভান করে! যাই হোক, এখন ইসলামের অসাম্প্রদায়িক রূপ এবং মহানবীর (দ.) সত্যনিষ্ঠা, মানবপ্রেমের অসংখ্য উদাহরণ আর দুনিয়ায় তার মোহমুক্ত অতি সাধারণ জীবনাচারের কাহিনীসমূহের ব্যাপক প্রচার দরকার। একই সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকার সম্পর্কিত মিথ্যাচারের জবাব অত্যন্ত যুক্তিসঙ্গতভাবে ও যোগ্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে। এই সরকারের সফলতাসমূহ এবং বিগত সরকারগুলোর নানা ব্যর্থতা এবং গণবিরোধী কার্যাবলী তাৎপর্যপূর্ণভাবে উপস্থাপন করার উদ্যোগ নিতে হবে যোগ্য ব্যক্তিদের মাধ্যমে। সংশ্লিষ্ট মহল এসব বিষয়ে পরামর্শ চাইলে আমাদের পক্ষে তা দেয়া কঠিন কোন ব্যাপার হবে না। আমরা মনে করি, এসব ব্যাপারে হেলায় সময়ক্ষেপের কোন অবকাশ নেই। সুতরাং, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ ক্ষেত্রে আমি অবিলম্বে সমাজহিতৈষীদের মধ্যে ব্যাপক সংস্কৃতি চেতনা ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের উদ্যোগ কামনা করব। মনে রাখতে হবে যে, কেবলমাত্র শুভ সাংস্কৃতিক কার্যক্রমই পারে এই অশুভ শক্তিকে পর্যুদস্ত করতে। লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক
×