ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ইসলামাবাদকে বাদ দিয়ে সার্কের বিকল্প চায় নয়াদিল্লী

দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতায় বড় বাধা পাকিস্তান

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ৫ অক্টোবর ২০১৬

দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতায় বড় বাধা পাকিস্তান

তৌহিদুর রহমান, নয়াদিল্লী থেকে ॥ দক্ষিণ এশিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতার ক্ষেত্রে পাকিস্তানই প্রধান বাধা বলে মনে করছে ভারত। সে কারণে পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে সার্কের বিকল্প একটি সংস্থা গড়ে তুলতে চাইছে দেশটি। এক্ষেত্রে বিমসটেকের পরিধি বাড়াতে চায় ভারত। নয়াদিল্লীতে সফররত বাংলাদেশের একটি সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের সদস্যদের এসব তথ্য জানিয়েছেন ভারতীয় কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র বিকাশ স্বরূপ বলেছেন, ঢাকা-দিল্লীর মধ্যে সুসম্পর্ক বিরাজ করছে। ভারতের অবজারভার রিসার্চ ফাউন্ডেশনের (ওআরএফ) কয়েক সিনিয়র ফেলোর সঙ্গে সোমবার রাতে সাংবাদিক প্রতিনিধি দলের মতবিনিময় হয়। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের সাবেক হাইকমিশনার ও ওআরএফের সম্মানিত ফেলো পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী, সিনিয়র ফেলো অশোক মালিক, নন্দন উনিকৃষ্ণানান সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন, আমরা (ভারত) অনেক চেষ্টা করেছি সার্ককে কার্যকর করার জন্য। তবে পাকিস্তানের জন্য সার্ক কার্যকর করা সম্ভব হচ্ছে না। এই অঞ্চল রেলওয়ে, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য পাকিস্তানকে প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। পাকিস্তান সে প্রস্তাব আটকে দিয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার সহযোগিতার জন্য যে কোন প্রস্তাব দেয়া হলেই পাকিস্তান তা আটকে দেয়। তাহলে কি করা যায়? সার্কের মধ্যে বেশি কিছু পজিটিভ আনতে পারছি না। তাহলে কি উপায়? তবে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে বিকল্প আশা করছি আমরা। এই অঞ্চলের আরেকটি সংস্থা বিমসটেকে আমরা আছি। তবে পাকিস্তান নেই। আফগানিস্তান ও মালদ্বীপ নেই। তবে বিমসটেকে এই দুই দেশকে আনতে হবে। এখন থেকে পাকিস্তানকে বাদ দিয়ে আঞ্চলিক সহযোগিতার কথা ভাবতে হবে। কেননা, তাদেরকে নতুন কোন সংস্থায় আনলে আবার সেই পুরনো সমস্যা দেখা দেবে। পিনাক রঞ্জন চক্রবর্তী বলেন বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমারকে ত্রিপক্ষীয় সহযোগিতার বিষয়টিও সামনে নিয়ে আসতে হবে। এই তিন দেশের মধ্যে যে কানেকটিভিটি আছে সেটা আরও বিস্তৃত করতে হবে। উত্তর-পূর্ব ভারত ও মিয়ানমারের মধ্যেও সহযোগিতা বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। ঢাকায় নিযুক্ত ভারতের সাবেক এই হাইকমিশনার বলেন, গ্যাস আমাদের চাই, আপনাদেরও (বাংলাদেশের) চাই। কয়লা আমাদেরও চাই, আপনাদেরও চাই। তবে বাংলাদেশ, ভারত ও মিয়ানমার তিন দেশ একত্রে বঙ্গোপসাগরে তেল-গ্যাস আহরণে কাজ করতে পারে। এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, চীন-জাপানের বিনিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগ নেই। চীন ভারতেও বিনিয়োগ করছে। তারা বিভিন্ন দেশেই বিনিয়োগ করে আসছে। চীন বাংলাদেশে বিনিয়োগ করে আসছে। তবে বঙ্গোপসাগরে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে চীনের প্রস্তাব ভেবে দেখতে হবে। একবার সমুদ্রবন্দর তাদের হাতে চলে গেলে সমস্যা হতে পারে। তাই এ বিষয়ে বাংলাদেশকে অনেক চিন্তা করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। রামপাল বিদ্যুত প্রকল্পের বিরোধিতা নিয়ে ভারত সরকারের কোন প্রতিক্রিয়া রয়েছে কিনা জানতে চাইলে পিনাক রঞ্জন বলেন, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের মাধ্যমে পরিবেশের কোন ক্ষতি হবে কিনা সেটা নিশ্চয় সমীক্ষা করা হয়েছে। বাংলাদেশ সরকারই সমীক্ষা করেছে। এটা বাংলাদেশের জাতীয় সিদ্ধান্ত। বাংলাদেশ সরকার চাইলে সেখানে হবে, না চাইলে হবে না। এটা নিয়ে আমাদের কোন বক্তব্য নেই। আবার এসব প্রকল্পের বিরোধিতা নিয়ে রাজনীতিও হয়ে থাকে। সেটাও চিন্তা করতে হবে। তিনি বলেন, ভারতেও কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প রয়েছে। এই বিদ্যুত প্রকল্প নিয়ে এখানের পরিবেশবাদীদেরও দাবি রয়েছে, ভারতে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প বন্ধ করতে হবে। তবে ভারতে যদি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত প্রকল্প বন্ধ হয়, তাহলে পুরো দেশ অন্ধকার হয়ে যাবে। ওআরএফের সিনিয়র ফেলো অশোক মালিক বলেন, প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে আঞ্চলিক যোগাযোগ বাড়াতে ভারত কাজ করছে। সে কারণে ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল ও ভুটান একযোগে বিবিআইএন চুক্তি করেছে। এর মাধ্যমে চার দেশের মধ্যে পণ্য আনা-নেয়া খুব সহজ হবে। এটা নতুন দিগন্ত সৃষ্টি করবে বলেও তিনি জানান।
×