ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে সংসদে বিল পাস

প্রকাশিত: ০৮:০৪, ৪ অক্টোবর ২০১৬

অবসরপ্রাপ্ত বিচারকদের সুযোগ-সুবিধা বাড়িয়ে সংসদে বিল পাস

সংসদ রিপোর্টার ॥ অবশেষে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করে সংসদে পাস হলো সুপ্রীমকোর্ট জাজেস (ছুটি, পেনশন ও সুবিধাদি) (সংশোধন) বিল। সংসদের সপ্তম অধিবেশনে বিলটি উত্থাপনের পর প্রায় এক বছর চার মাস পর সোমবার জাতীয় সংসদের দ্বাদশ অধিবেশনে বিলটি পাস হয়েছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী আনিসুল হক বিলটি পাস করার প্রস্তাব করেন। বিলটি সর্বসম্মতভাবে পরে কণ্ঠভোটে পাস হয়। আনীত জনমত যাচাই-বাছাই এবং সংশোধনী প্রস্তাবগুলো কণ্ঠভোটে নাকচ হয়ে যায়। এই বিলটি ২০১৩ সাল থেকে কার্যকর হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এর আগে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ট্রাস্ট বিল- ২০১৬ উত্থাপন করেন। পাসহওয়া বিলের রিপোর্টে বিলটি পাসে বিলম্বের কারণ হিসেবে সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলের মতামত পেতে বিলম্ব হওয়াকে দায়ী করা হয়। এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী বলেন, সুপ্রীমকোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল আসেননি এই অভিযোগ সত্য নয়। বরং রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম বৈঠকে এসেছিলেন এবং তাঁর মতামত নিয়েই বিলের রিপোর্টটি চূড়ান্ত করা হয়েছে। বিলম্ব হলেও তিনি বৈঠকে এসেছিলেন। বিলটি পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং মতামত গ্রহণ করেই আনা হয়েছে। আর বাস্তবতার নিরিখেই ভাতা বাড়ানো হয়েছে। মন্ত্রী জাতীয় পার্টির ফখরুল ইমামের আনীত একটি সংশোধনী প্রস্তাব গ্রহণ করেন। সংসদীয় কমিটি ২০১৫ সালে চারটি ও চলতি বছর তিনটি বৈঠক করে বিলটি চূড়ান্ত করে। তবে বিলে সুপ্রীমকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতিরা সুপ্রীমকোর্ট জাজেস (লিভ, পেনশন এ্যান্ড প্রিভিলেজ) অর্ডিন্যান্সে ইতোপূর্বে ১৯৮৪, ৮৫, ’৯০, ৯৩ ও ২০০১ সালে আনীত সংশোধনী সম্পর্কে কোন কিছু উল্লেখ করা হয়নি। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রী তাঁর ব্যাখ্যায় বলেন, আদালতের নির্দেশে সামরিক শাসনামলে জারি যেসব অর্ডিন্যান্স বাতিল হয়ে যায়, অর্ডিন্যান্সটি তার একটি। এজন্য আইনের কার্যকারিতা অব্যাহত রাখতে ২০১৩ সালে এ সংক্রান্ত রাষ্ট্রপতি একটি অধ্যাদেশ জারি করেছেন। তারই আলোকে বিলটি প্রণীত হয়েছে। বিচারপতিদের মাসিক পেনশনের পরিমাণ ’৯৩ সালের সংশোধিত এ্যাক্ট বলে নির্ধারিত ৫ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে চলতি সংশোধনীতে সাড়ে ৮ হাজার টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বিল ২০১৩ সাল থেকে কার্যকর হবে বলেও উল্লেখ করা হয়েছে। এজন্য বিচারক অবসরে গেলে, পদত্যাগ করলে বা পদচ্যুত হলেও পেনশন পাওয়ার যোগ্য হবেন। তবে পাঁচ বছর কম হলে পেনশন পাবেন না। এক্ষেত্রে বিচারপতিদের পেনশন নির্ধারিত হবে মোট চাকরিকালীন মাসের হিসেবে গুণ করে প্রতিমাসে ২৫০ টাকা হারে। তবে এ হিসেবে কেউ ৮ হাজার ৫শ’ টাকার বেশি পাবেন না। একইভাবে বিলে বিচারপতিদের বয়সানুপাতে পেনশন সুবিধার হার বন্টন করা হয়েছে। সেক্ষেত্রে বিলে বিচারপতিদের অবসরের বয়স ৪৫ বছরের কম হলে প্রাপ্যতার হার ২৩০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৬০ টাকা হারে, অবসরকালীন বয়স ৪৫ বছরের বেশি কিন্তু ৫০ বছরের কম হলে প্রাপ্যতার হার ২১৫ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৪৫ টাকা হারে এবং অবসরকালীন বয়স ৫০ বছর বা তার বেশি হলে পেনশনের হার ২০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৩০ টাকা করা হয়েছে। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়, সুপ্রীমকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারকরা সুপ্রীমকোর্ট জাজেস (লিভ, পেনশন এ্যান্ড প্রিভিলেজ) অর্ডিন্যান্স ১৯৮২ অনুযায়ী বাধ্যতামূলক সমর্পিত পেনশন প্রাপ্ত হন। সরকার ২০১৩ সনের ডিসেম্বরে সরকারী কর্মচারীদের অবসর পরবর্তী জীবনের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে বাধ্যতামূলক সমর্পিত পেনশনের বিপরীতে প্রদত্ত আনুতোষিকের হার বৃদ্ধি করে। তবে সুপ্রীমকোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারকগণের উক্ত আনুতোষিক হার এখনও বৃদ্ধি করা হয়নি। এমতাবস্থায় উক্ত উদ্দেশ্য পূরণে সুপ্রীমকোর্ট জাজেস (লিভ, পেনশন এ্যান্ড প্রিভিলেজ) এ্যাক্ট ২০১৬ বিলটি আনা হয়। বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ট্রাস্ট বিল উত্থাপন ॥ এর আগে কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ট্রাস্ট বিল- ২০১৬ উত্থাপন করেন। বিলটি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আগামী ২১ দিনের মধ্যে সংসদে রিপোর্ট দেয়ার জন্য কৃষি মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে প্রেরণ করা হয়েছে। বিলের উদ্দেশ্য ও কারণ সংবলিত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, কৃষিতে উচ্চ উৎপাদনশীলতা অর্জন অথবা গবেষণা বা উদ্ভাবন, কৃষি বিষয়ক নতুন দিকনির্দেশনা উদ্ভাবন, কৃষি উন্নয়নের জন্য গবেষণাধর্মী কোন পুস্তক বা নিবন্ধ প্রকাশ, পরিবেশ সংরক্ষণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা বা নতুন প্রযুক্তির উদ্ভাবন অথবা পরিবেশ দূষণ হতে জন-জীবন রক্ষায় ভূমিকা, কৃষি উন্নয়নে জৈব প্রযুক্তি, হাইব্রিড বীজ উৎপাদনে, টিস্যু কালচার, পরিবেশ বান্ধব এবং টেকসই কৃষি ব্যবস্থায় সহায়ক প্রযুক্তি উদ্ভাবন বিষয়ে বিশেষ অবদানের জন্য কোন ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা সমবায় সমিতিকে পুরস্কার প্রদান, তহবিল গঠন ও পরিচালনা এবং আনুষঙ্গিক ব্যবস্থাদি গ্রহণ সংক্রান্ত আইন করা সমীচীন বিধায় ‘বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার ট্রাস্ট আইন প্রণয়ন করা হয়েছে।
×