ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

শিক্ষকদের ক্লাস বর্জনেরঘোষণায় বিপাকে শিক্ষার্থীরা

শিক্ষক-কর্মচারী বিরোধ কেন্দ্র করে অস্থির স্টামফোর্ড ভার্সিটি

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ৩ অক্টোবর ২০১৬

শিক্ষক-কর্মচারী বিরোধ কেন্দ্র করে অস্থির স্টামফোর্ড ভার্সিটি

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেতন বকেয়া ও শিক্ষক-কর্মচারীদের বিরোধ কেন্দ্র করে অস্থিরতার মুখে পড়েছে রাজধানীর বেসরকারী স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি। দুই কর্মচারীর বহিষ্কার ও বকেয়া বেতন দাবিতে অনির্দিষ্টকালের ক্লাস বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন ভার্সিটির শিক্ষকরা। কর্মচারীরাও দুই শিক্ষকের বহিষ্কার দাবি করেছেন। ফলে বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। অবস্থা সামাল দিতে কর্তৃপক্ষ আগামী ১০ অক্টোবরের মধ্যে শিক্ষকদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিয়েছেন। তবে শিক্ষকরা দাবি পূরণের আগে ক্লাসে ফিরছেন না। শিক্ষকদের ক্লাস বর্জন এবং তাদের বকেয়া বেতনের বিষয়ে জানতে চাইলে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক হান্নান ফিরোজ জনকণ্ঠকে বলেছেন, শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে একটা ভুল বোঝাবুঝি হয়ে গেছে। আমরা একটু সময় চেয়েছি। আশা করি দু’দিনের মধ্যে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এখন আংশিক ক্লাস হচ্ছে দাবি করে চেয়ারম্যান বলেন, বেতন বকেয়া ইস্যুটি এখন নেই। শিক্ষকরা চান দুজন স্টাফের বহিষ্কার, আবার স্টাফরাও দুজন শিক্ষকের বহিষ্কার দাবি করেছেন। আশা করি দ্রুতই দুইপক্ষের ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে। তবে শিক্ষকরা বলছেন, বেতন বকেয়া পড়েছে। এটাই এখন বড় সমস্যা। সেই বেতন চাওয়ার ঘটনায় কিছু স্টাফ শিক্ষকদের সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেছেন। রবিবার পর্যন্ত ৫০ ভাগের কিছু বেশি শিক্ষকের বেতন দেয়া হয়েছে বলে জানান শিক্ষকরা। জানা গেছে, আগস্ট থেকে শিক্ষকদের নিয়মিত বেতন বন্ধ রয়েছে। প্রথম দফায় ১৫ সেপ্টেম্বর এবং দ্বিতীয় দফায় ২৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আগস্টের বেতন পরিশোধের জন্য সময় নেয় কর্তৃপক্ষ। সর্বশেষ ২৮ সেপ্টেম্বর বেতন পরিশোধ না করায় ২৯ সেপ্টেম্বর থেকে ক্লাস বর্জন শুরু করেন শিক্ষকরা। এক শিক্ষক জানান, ঈদের (ঈদ-উল-আযহা) সময়ও আমরা ঠিকমতো বেতন পাইনি। দেখা গেছে, কয়েকজনকে বেতনের কিছু অংশ দেয়া হয়েছে। অধিকাংশ শিক্ষকই তাদের বেতন পাননি। বোনাস প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যেখানে বেতনই পাওয়া যাচ্ছে না, সেখানে বোনাস তো বিলাসিতা! শুক্রবার বকেয়া বেতন দাবিতে শিক্ষকরা বিশ্ববিদ্যালয়টির ধানম-ির মূল অফিসে গিয়েছিলেন। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথাবার্তার একপর্যায়ে শিক্ষকদের সরাসরি জানিয়ে দেয়া হয়, এ বিষয়ে বেশি কথা বললে ক্যাম্পাস বন্ধ করে দেয়া হবে। সেখানকার স্টাফরা তাদের লাঞ্ছিত করেছে বলেও একাধিক শিক্ষক অভিযোগ করেছেন। এরপর শনিবার একই বিষয়ে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি টিচার্স এ্যাসোসিয়েশনের প্রায় ২০০ সদস্য নিজেদের মধ্যে আলোচনায় বসেন। সকাল দশটায় শুরু হয়ে দুপুর দুইটা পর্যন্ত চলে তাদের বৈঠক। বৈঠক সম্পর্কে স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটি টিচার্স এ্যাসোসিয়েশনের সেক্রেটারি সহযোগী অধ্যাপক শেখ নাহিদ নিয়াজী বলেন, এ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের নিয়ে বৈঠক হয়েছে। বেতন পরিশোধ না করা পর্যন্ত আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এদিকে বৃহস্পতিবার থেকে ক্লাস না হওয়ায় আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরাও। সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং ডিপার্টমেন্টের মামুন বলেন, গত ক’দিন ধরে আমাদের কোন ক্লাস ঠিকভাবে হচ্ছে না। সিডিউলে ক্লাস দেয়া আছে, তবে কোন টিচারই ক্লাস নিচ্ছেন না। শিক্ষকরা কেন ক্লাস নিচ্ছেন না, এ বিষয়ে ডিপার্টমেন্টে জানতে চেয়েছেন কিনাÑ এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শুনেছি টিচারদের কয়েক মাসের বেতন আটকে আছে। টিচারদের বেতন না দেয়ার কারণে তারা ক্লাস নিচ্ছেন না। বিবিএ ডিপার্টমেন্টের শিক্ষার্থী পিয়াস মনে করেন, এভাবে ক্লাস বন্ধ রেখে শিক্ষার্থীদের ক্ষতি করা হচ্ছে, যা কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। ক্লাস চালু রেখে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমেও সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে। শিক্ষকদের আলোচনার মাধ্যমে সমাধানের পথ খুঁজতে অনুরোধ জানান তিনি।
×