ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অবশেষে টাইগারদের স্বস্তির ব্যাটিং

প্রকাশিত: ০৬:২৪, ২ অক্টোবর ২০১৬

অবশেষে টাইগারদের স্বস্তির ব্যাটিং

মিথুন আশরাফ ॥ একজন অলরাউন্ডারকে দলে রাখা মানেই হচ্ছে, তাকে পর্যাপ্ত সুযোগ দিতে হবে। কিন্তু অলরাউন্ডার সাব্বির রহমান রুম্মনের বেলাতে ব্যতিক্রমই ঘটছিল। ওয়ানডেতে তাকে না ব্যাটিংয়ে ঠিকমতো সুযোগ দেয়া হচ্ছিল, না বোলিংয়ে। ব্যাটিংয়ে সাত নম্বরে নামান হচ্ছিল। আর বোলিংতো ঠিকমতো করানোই হচ্ছিল না। অবশেষে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে টিম ম্যানেজমেন্টের বোধোদয় হল। ব্যাটিংয়ে সাব্বিরকে তিন নম্বরে নামানো হলো। তাতেই মিলল ব্যাটিং ঝলক। আফগান বোলারদের তুলোধুনো করে ছাড়লেন সাব্বির। ৭৯ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় ৬৫ রান করলেন। যেন সাব্বিরের এ নৈপুণ্যেই আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠলো বাংলাদেশ। তাতে করে ব্যাটিংয়ে পুরনো বাংলাদেশেরই দেখা মিলল। ওপেনার তামিম ইকবালতো শতকই করে ফেললেন। ১১৮ রানের দুর্দান্ত ইনিংস উপহার দিলেন। ইনিংসটাকে কিছুটা বড় করার পর যে দীর্ঘ করা যাচ্ছিল না, সেটিও করে দেখালেন ব্যাটসম্যানরা। সৌম্য সরকার আউটের পর স্বাভাবিকভাবেই মাহমুদুল্লাহ রিয়াদেরই ব্যাটিংয়ে নামার কথা। কিন্তু তৃতীয় ওয়ানডেতে এসেই টিম ম্যানেজমেন্ট ম্যাচের ‘ছক’ পাল্টে দেয়। সাব্বিরকে ব্যাটিংয়ে নামিয়ে দেয়। তাতে সাফল্যও মিলে গেল। এরআগে ২৫টি ওয়ানডে খেলেন সাব্বির। কিন্তু নিয়মিত টি২০ ক্রিকেটে তিন নম্বরে ব্যাটিং করা এ ব্যাটসম্যান প্রথমবারের মতো ওয়ানডেতেও একই পজিশনে খেলতে নেমেই চমকে দিলেন। ব্যক্তিগত ১ রানের সময় একবার ক্যাচ আউট হওয়া থেকে বাঁচেন তামিম ইকবাল। এরপর আর কোন সুযোগই দিলেন না। তবে ব্যাট হাতে মারমুখীও হননি। যেমন সৌম্য আউট হওয়ার পর সাব্বির ব্যাট হাতে নামলেন, তামিম যেন বিধ্বংসী হয়ে উঠলেন। ষষ্ঠ ওভারে সৌম্য আউট হলেন। সপ্তম ওভারে তামিম-সাব্বির মিলে ১ রান নিলেন। যেন বোঝাপড়া করতেই এই একটি ওভার একটু বুঝে খেললেন। পরের ওভারেই তামিম ‘ধামাকা’ দেখা গেল। মিরওয়াইস আশরাফের ওভারে তিনটি বাউন্ডারি হাঁকালেন। এক ওভারের এমন নৈপুণ্যেই যেন আত্মবিশ্বাসী হয়ে ওঠাও হয়ে গেল। প্রথম পাওয়ার প্লেতে বাংলাদেশ ৩৯ রান যোগ করতে পারল। এগারোতম ওভারে গিয়ে সাব্বিরও বিধ্বংসী রূপ দেখিয়ে দিলেন। সবাই জানে, সাব্বির মারমুখী ব্যাটসম্যান। একবার সেই ধুন্ধুমার ব্যাটিং শুরু হলে চলতেই থাকে। দাওলাত জাদরানের করা ১১তম ওভারে একটি চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে দিলেন সাব্বির। তখনই যেন সবার বোঝা হয়ে গেল, ব্যাটিংয়ে আবার সেই পুরনো বাংলাদেশকেই মিলতে যাচ্ছে। যে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা দাপটের সঙ্গে ব্যাটিং করেছিলেন। সেই রূপ আবার ফিরে এসেছে। প্রথম দুই ওয়ানডেতে ব্যাটিংয়ের রূক্ষ চেহারা থেকে বের হয়ে গেছে বাংলাদেশ। তামিম-সাব্বির মিলেই বাংলাদেশকে বড় স্কোর গড়ার দিকে নিয়ে যেতে থাকলেন। একটু ধীরে খেলেন। আবার দুইজনই মারমুখী হন। আবার একটু ধীরে খেলেন। এভাবে করতে করতে রহমত শাহর করা ১৯তম ওভারের চতুর্থ বলে গিয়ে ১ রান নিয়ে ক্যারিয়ারের ৩৪তম অর্ধশতকও করে ফেলেন তামিম। ২১.৪ ওভারে গিয়ে তামিম যখন ১ রান নেন, পুরো সিরিজজুড়ে বাংলাদেশও সর্বোচ্চ জুটিও (৮৪ রান) গড়ে ফেলে। তামিম-সাব্বির জুটি এগিয়ে যেতে থাকে। তবে দলের স্কোরবোর্ডে ২২ ওভারে ১০৯ রান হওয়ার পর টানা চার ওভার কোন বাউন্ডারি হয়নি। ২৭তম ওভারে গিয়ে আবারও জ্বলে ওঠেন দুই ব্যাটসম্যান। তামিম একটি বাউন্ডারি মারার পর সাব্বিরও বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধশতক তুলে নেন সাব্বির। ৩০তম ওভারে গিয়ে ১৫৭ রান করে ফেলে বাংলাদেশ। সাব্বিরও এরমধ্যে গতবছর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে করা ওয়ানডে ক্যারিয়ারের সর্বোচ্চ ইনিংসকে (৫৭ রান) টপকে যান। ৩১তম ওভারের প্রথম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ৬৫ রানও স্কোরবোর্ডে জমা করেন। তামিমের সঙ্গে ১৪০ রানের বড় জুটিও হয়ে যায়। তখনই সাব্বিরের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটে। আউট হয়ে যান সাব্বির। আউট হওয়ার আগে দলকে বড় স্কোরেই রেখে যান। ১৬৩ রান করে ফেলে তখন বাংলাদেশ। মূলত সাব্বির এসে যে দুর্দান্ত ব্যাটিং শুরু করেন, সেটিই তামিমকেও আরও আত্মবিশ্বাসী করে তোলে। সেই আত্মবিশ্বাসে তামিমতো শতকই করে ফেললেন। ক্যারিয়ারের সপ্তম ওয়ানডে শতক করলেন। যা কিনা ওয়ানডেতে বাংলাদেশী কোন ব্যাটসম্যানের সবচেয়ে বেশি শতক করার রেকর্ড। শেষ পর্যন্ত ১১৮ বলে ১১ চার ও ২ ছক্কায় ১১৮ রান করে থামলেন তামিম। বাংলাদেশকে অবশ্য দুই শ’ রানের বেশি স্কোরেই রেখে যান। ২১২ রানে গিয়ে আউট হন তামিম। এরপর ১৭ রান করে সাকিব আল হাসান, আবারও ব্যর্থ হওয়া মুশফিকুর রহীম (১২), অভিষেক ওয়ানডেতেই ঝলক দেখান মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (৪), সাড়ে আট বছর পর আবার আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে ব্যাট হাতে নামা বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বয়সী ক্রিকেটার মোশাররফ হোসেন রুবেল (৪) দ্রুতই আউট হয়ে যান। একটা সময় মনে হচ্ছিল, তিন শ’ রানের ওপরে করবে বাংলাদেশ। কিন্তু মাঝখানের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় সেটি হয়নি। ৪০ ওভারে বাংলাদেশের স্কোরবোর্ডে ৩ উইকেটে ২১৫ রান জমা ছিল। সেখান থেকে শেষ ১০ ওভারে ৬৪ রান যোগ করে বাংলাদেশ। ৫ উইকেটও হারায়। শেষ মুহূর্তে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (৩২*) যে ব্যাটিং ঝলক দেখান, তাতেই বড় স্কোর করা সম্ভব হয়। নাহলে আরও কমেই শেষ হতো বাংলাদেশের ইনিংস। শেষ পর্যন্ত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ২৭৯ রান করে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এখন পর্যন্ত খেলা ম্যাচগুলোতে সবচেয়ে বড় স্কোর এটি। আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম দুই ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের খুঁজেই পাওয়া যাচ্ছিল না। কোনভাবেই আফগান বোলারদের বিপক্ষে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারছিলেন না। তৃতীয় ওয়ানডেতে গিয়ে পুরনো রূপে ফিরলেন ব্যাটসম্যানরা। আফগানদের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ২০৮ রান করেছিল বাংলাদেশ। প্রথম ওয়ানডেতে ২৬৫ রানেই থেমে যায়। এরআগে গতবছর শেষ ওয়ানডে সিরিজে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে প্রতিটি ম্যাচেই হেসে খেলে ২৫০ রান করে ফেলেছে বাংলাদেশ। গতবছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে একটি ম্যাচে আগে ব্যাট করে ১৬০ রান করা ছাড়া আর কোন ম্যাচেই ২৪০ রানের নিচে স্কোর ছিল না। ২৫০ রানতো অনায়াসেই করেছে। তিন শ’ রানের স্কোরও দেখা গেছে। সেই বাংলাদেশই ১০ মাস ওয়ানডে ক্রিকেট না খেলে যেন নেতিয়ে পড়েছিল। অবশেষে আবার সেই ব্যাটিং নৈপুণ্যের ধারাবাহিকতায় ফিরেছে। ব্যাটিংয়ে সেই পুরনো রূপেই ফিরেছে বাংলাদেশ।
×