ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

পরীক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকদের ধৈর্যের পরীক্ষা

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ১ অক্টোবর ২০১৬

পরীক্ষার্থীদের নিয়ে অভিভাবকদের ধৈর্যের পরীক্ষা

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ কোন পরীক্ষাই এখন আর পরীক্ষা কেন্দ্রে সীমাবদ্ধ নেই। এটা এখন বিভক্ত। একটি কেন্দ্রের ভেতরে আরেকটি বাইরে! কেন্দ্রের ভেতরে পরীক্ষা দেন পরীক্ষার্থী আর বাইরে অভিভাবক। পরীক্ষার্থীরা যেখানে উত্তর লিখতে ব্যস্ত, কেন্দ্রের বাইরে তখন দাঁড়িয়ে বা বসে ধৈর্যের পরীক্ষা দেন প্রতিটি অভিভাবক। সন্তান বা স্বজন পরীক্ষার্থীর জন্য দীর্ঘ সময়ের অপেক্ষার প্রহর যেন শেষ হয় না অভিভাবকদের। তবুও তারা অপেক্ষা করেন। পরীক্ষার্থীরা বলছেন, অভিভাবক কেউ থাকলে মনের সাহস একটু বেশি কাজ করে। আর অভিভাবকরা বলছেন, অচেনা পরিবেশ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কারণে সঙ্গে আসেন তারা। উচ্চ শিক্ষা কিংবা স্বপ্নের চাকরির পরীক্ষায় পরীক্ষার্থীর সঙ্গে সাহসী বার্তা আর ভালবাসার মায়া নিয়ে ছায়ার মতো থাকে প্রতিটি অভিভাবক। শুক্রবার একাধিক পরীক্ষা কেন্দ্রের বাইরে অভিভাবকদের জটলা একটু বেশিই মনে হলো। বেশি হওয়াটাই স্বাভাবিক। কেননা, পরীক্ষার্থী একজন অভিভাবক দুইজন বা কোন ক্ষেত্রে আরও বেশি। কোন পরীক্ষার্থী এসেছেন বাবার সঙ্গে কেউ মায়ের সঙ্গে। কারও বাবা-মা দুজনই এসেছেন সন্তানের পরীক্ষায়। এছাড়া কোন কোন পরীক্ষার্থীর ভাই, বোন, স্বামী বা অন্যান্য স্বজনও এসেছেন সঙ্গে। শুক্রবার ছিল কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরীক্ষা। সকালে অনুষ্ঠিত হয় দুই ঘণ্টার বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। এছাড়াও বিকেলে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। অনেক পরীক্ষার কারণে পরীক্ষার্থীর সংখ্যাও যেমন বেশি তেমনি অভিভাবকের সংখ্যাও। আর ছুটির দিন হওয়ার কারণে অভিভাবকের আসতেও কোন আপত্তি ছিল না। এই অভিভাবকের সংখ্যাটা মূলত রাজধানী ও আশপাশ জেলার। দূর দূরান্ত থেকে আসা ভর্তি পরীক্ষার্থীরা মূলত দল বেধে এসেছেন। অবশ্য এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম বিসিএস পরীক্ষা। শুক্রবার সকালে ৩৭তম বিসিএস পরীক্ষার প্রিলিমিনারি সকাল সাড়ে নয়টার শুরু হয়ে পরীক্ষা চলে বেলা সাড়ে ১১টা পর্যন্ত। এতে অংশ নেন দুই লাখ ৪৩ হাজার ৪৭৬ জন পরীক্ষার্থী। ঢাকার ১২৩টি কেন্দ্রসহ ছয় বিভাগের ১৯০টি কেন্দ্রে এই পরীক্ষা হয়। আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘গ’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস ও ক্যাম্পাসের বাইরের মোট ৫৫টি কেন্দ্রে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয়। যেখানে ভর্তিচ্ছু আবেদনকারীর সংখ্যা ছিল ৪২ হাজার ১৪৭ জন। এছাড়াও একইদিন বিকেল ৩টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসসহ মোট ১২টি কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয় জবির ‘সি’ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা। এবার ‘সি’ ইউনিটে পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ২৭ হাজার ৮শ’ ২৫ জন। দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে শুধু ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন প্রায় ৭০ হাজার পরীক্ষার্থী। এর সঙ্গে বিসিএস প্রিলিমিনারি সংখ্যা যোগ করলে সংখ্যাটা তিন লাখ ছাড়িয়ে যাবে। যদিও কিছু বিসিএস প্রিলিমিনারি পরীক্ষার্থী ঢাকার বাইরে পরীক্ষা দিয়েছেন। ঢাকার বাইরে পরীক্ষায় অংশ নেয়া পরীক্ষার্থীরদের বাদ দিলেও রাজধানীতে অংশ নেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ও বিসিএস প্রিলিমিনারি মিলিয়ে সংখ্যাটা দুই লাখের ওপর। এত বিশাল বহরের পরীক্ষার্থীর সঙ্গে আবার যুক্ত হয়েছেন অভিভাবকও। তাই পরীক্ষা শেষে বিভিন্ন রাস্তায়ও দেখা গেল জনজট। অতিরিক্ত মানুষের চাপে দেখা দেয় রিক্সা ও গাড়ির সঙ্কট। তাই বাধ্য হয়েই নিকটবর্তী গন্তব্যে হেঁটে পথ পাড়ি দিয়েছেন অনেকেই। কলা ভবনের সামনে কথা হয় বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ইমতিয়াজ হোসেনের সঙ্গে। সঙ্গে আছেন স্ত্রীও। কেন্দ্রের ভেতরে একমাত্র মেয়ে তখন পরীক্ষায় উত্তর লেখায় ব্যস্ত। জনকণ্ঠের সঙ্গে তিনি বলেন, একমাত্র মেয়ে আর ছুটির দিন তাই এসেছি। অন্য সময় ওর মা সঙ্গে থাকেন বেশি। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের মধ্যে দেখা গেল সামাজিক বিজ্ঞান অনুষদ, কলা ভবন, কার্জন হল কিংবা ফুলার রোড কোথাও অভিভাবকের কমতি নেই। ঘেঁষাঘেঁষি করে ফুটপাথের ওপর বসে পড়েছেন। যারা বসার স্থান পাননি তারা দাঁড়িয়ে অপেক্ষার প্রহর গুণছেন পরীক্ষা শেষ হওয়ার। নগরীর প্রায় প্রতিটি পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনেই অভিভাবকদের প্রচ- ভিড় দেখা গেছে। অভিভাবকদের কেউ কেউ আবার আলাপচারিতায় মেতে উঠেছেন। অথচ কেউ কারও পরিচিত নন। শুধু পরীক্ষার কেন্দ্রে এসে সাময়িক পরিচয়ে বেশ আড্ডা জমিয়ে তুলেছেন তারা। শত আলোচনা আর আড্ডার মধ্যেও সন্তানের ভবিষ্যত নিয়ে বেশ চিন্তিত অভিভাবকরা। আর চিন্তিত হওয়াটাই স্বাভাবিক। কেননা, শিক্ষা জীবনের একটা অন্যতম পট পরিবর্তনের সময় এটি। স্বপ্নের বাস্তবায়নে উচ্চ শিক্ষার জন্য একটি ভাল প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার স্বপ্নটা সব শিক্ষার্থীর মনেই সুপ্ত থাকে। আর তা যদি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো বিশ্ববিদ্যালয় হয় তাহলে যেন কথাই নেই। স্বপ্নটা যে শুধু শিক্ষার্থীর তাও কিন্তু নয়। সন্তানকে উচ্চ শিক্ষার জন্য একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির আপ্রাণ চেষ্টা এবং স্বপ্ন থাকে প্রতিটি অভিভাবকেরও। কেননা, এই উচ্চ শিক্ষার পথই শিক্ষার্থীকে পথ দেখাবে পরবর্তী পথ চলার।
×