ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

সন্ত্রাস ও সার্কের ভবিষ্যত

প্রকাশিত: ০৪:১৭, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সন্ত্রাস ও সার্কের ভবিষ্যত

প্রতিষ্ঠার ৩৭ বছরেও একটি কার্যকর সংস্থায় পরিণত হতে না পারার ব্যর্থতায় জর্জরিত দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে। অথচ স্বপ্ন ছিল এই প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের মতো একটা ঐক্যবদ্ধ সফল প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সে স্বপ্ন স্বপ্নেই মিলিয়ে গেছে। ইইউ দূরে থাক, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংগঠন আসিয়ানের কাছাকাছি দাঁড়াতে পারেনি সার্ক। সাতটি দেশের সমন্বয়ে গঠিত সার্ক পরে আফগানিস্তান সংযুক্ত হয়ে আট জাতির সংস্থায় পরিণত হয়। প্রতিষ্ঠার পর থেকে সার্কের আওতায় কমপক্ষে পঁচিশটি চুক্তি এবং শতাধিক ঘোষণা হলেও এসবের অধিকাংশই বাস্তবায়িত হয়নি। যেমন, বাণিজ্য বাড়াতে সাপটা ও সাফটার মতো চুক্তি করা হলেও দক্ষিণ এশিয়ায় আন্তঃবাণিজ্য বেড়েছে মাত্র পাঁচ দশমিক আট শতাংশ। অথচ আসিয়ানের ক্ষেত্রে এই হার পঁচিশ শতাংশ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ক্ষেত্রে ষাট শতাংশের বেশি। বহু আগেই সার্ক ফুড ব্যাংক গঠনের প্রস্তাব পাস হয়। কিন্তু আজও তা অনুমোদন করেনি। ২০০২ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়াকে দারিদ্র্যমুক্ত করার ঘোষণা থাকলেও তা থেকে গেছে অধরাই। এমনিতেই সার্কের দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতার চেয়ে বৈরিতার দিকটিই বেশি লক্ষণীয়। সন্ত্রাসবাদ দমন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলা; দারিদ্র্য দূরীকরণসহ অধিকাংশ লক্ষ্য পূরণেই ব্যর্থ হয়েছে সার্ক। অথচ এসব জাতীয় ও আঞ্চলিক সমস্যা মোকাবেলায় সার্কের শক্তিশালী ভূমিকা থাকতে পারত। অনেকের অভিযোগ, পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রটি সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদী রাষ্ট্রের তকমা ধারণ করে প্রতিবেশী দেশগুলোতে যেভাবে জঙ্গীবাদী তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে, তাতে বৈরিতা বেড়েই যাচ্ছে। বিভিন্ন সময় বাংলাদেশে জঙ্গী সম্পৃক্ততায় পাকিস্তানের সম্পৃক্ততা এবং যুদ্ধাপরাধীদের শাস্তি কার্যকরের পর তাদের পক্ষে পাকিস্তান সংসদে প্রস্তাব পাসসহ খেতাব প্রদানের ঘটনা বাংলাদেশসহ মুক্তিকামী বিশ্ববাসীকে ক্ষুব্ধ করেছে। বিগত সময়ে ভারত ও বাংলাদেশে যত জঙ্গী হামলা ঘটছে, তার নেপথ্যে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থার জডিত ও পৃষ্ঠপোষকতার বিষয়টিও সর্বজনবিদিত। সম্প্রতি কাশ্মীর ইস্যু নিয়ে পাকিস্তান যা করছে, তাতে দেশ দুটিতে রীতিমতো যুদ্ধ পরিস্থিতি বিরাজ করছে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে অভিযোগ, আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে সন্ত্রাস, সহিংসতা ও আন্তঃরাষ্ট্রীয় অপরাধসমূহ মোকাবেলার ক্ষেত্রে দেশটি সার্ক সদস্য দেশগুলোকে সহযোগিতা করছে না। বরং নানাভাবে সন্ত্রাসী কর্মকা-ে সম্পৃক্ত হচ্ছে। এসব কারণে বাংলাদেশ, ভারত, ভুূটান ও আফগানিস্তান আগামী ৯ ও ১০ নবেম্বর পাকিস্তানে অনুষ্ঠেয় সার্ক সম্মেলনে অংশ নিতে অসম্মতি জানিয়েছে। নেপাল, মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা নিশ্চুপ। তাই দৃশ্যত ১৯তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হতে পারছে না। ফলে সংস্থাটি সঙ্কটের পথেই এগুচ্ছে এবং তা পাকিস্তানের কারণেই। সার্বিক দিক বিবেচনায় এখন সময় এসেছে সার্ক সম্পর্কে নতুন করে চিন্তা-ভাবনার। বিশেষত সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃত পাকিস্তানের ভূমিকা কোনভাবেই আঞ্চলিক সহযোগিতার পক্ষে নয়। বরং বৈরিতার নিদর্শন হিসেবেই প্রতিভাত। সার্ক সম্মেলন স্থগিত হওয়া কোন নতুন ঘটনা নয়। এর আগে ছয়বার নানা কারণে তা স্থগিত হয়েছে। তবে এবারের কারণটি ভিন্ন। আঞ্চলিক সহযোগিতা ও সন্ত্রাস একসঙ্গে চলতে পারে না। এই সত্যটি পাকিস্তানের বোধোদয় না হওয়া পর্যন্ত সার্ক সচল হতে পারবে বলে মনে হয় না।
×