ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ছন্নছাড়া ব্যাটিং

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ছন্নছাড়া ব্যাটিং

মিথুন আশরাফ ॥ ম্যাচ শুরু হওয়ার আগেই দিনটিতে ঠা-া ভাব এসে পড়ে। মেঘলা আকাশ। বৃষ্টি আসবে আসবে ভাব। বাংলাদেশের ইনিংসেও যেন ঠা-া ভাব চলে আসে। প্রথম ওয়ানডেতে ব্যাটিংয়ে করুণ দশা দেখা গেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে দ্বিতীয় ওয়ানডেতেও তাই দেখা গেল। ছন্নছাড়া ব্যাটিংই প্রদর্শন করলেন বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা। তাতে করে ২০৮ রানেই অলআউট হয়ে গেল বাংলাদেশ! বড় কোন ইনিংসের দেখা মিলল না। একজন ব্যাটসম্যানও অর্ধশতক করতে পারলেন না। তামিম ইকবাল (২০), সৌম্য সরকার (২০), মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ (২৫), মুশফিকুর রহীম (৩৮), সাকিব আল হাসান (১৭) ব্যর্থ হন। অভিষেক ওয়ানডেতেই যদি মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত (৪৫*) হাল না ধরতেন। তার সঙ্গে শেষ উইকেটে রুবেল হোসেন (১০) ৪৩ রানের জুটি গড়ায় সঙ্গ না দিতেন, তাহলে বাংলাদেশতো দুই শ’ রানও করতে পারত না! এমনই করুণ দশা হয়েছে ব্যাটসম্যানদের। শুরুতে পেসার মিরওয়াইস আশরাফ ও নবীন উল হক বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ছন্নছাড়া করে দেন। এরপর স্পিনার মোহাম্মদ নবী, রশিদ খান ও রহমত শাহ মিলে ব্যাটসম্যানদের ভোগান। লেগব্রেক গুগলি বোলার রশিদতো শেষ মুহূর্তে হ্যাটট্রিকের সুযোগই তৈরি করে ফেলেন। ৪৩তম ওভারের তৃতীয় ও চতুর্থ বলে তাইজুল ইসলাম (১০) ও তাসকিন আহমেদকে আউট করে দিয়ে হ্যাটট্রিকের আশা জাগান। কিন্তু রুবেল হোসেন তা হতে দেননি। বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানরা তবুও প্রথম ওয়ানডেতে দলকে ২৬৫ রানে নিয়ে যেতে পারেন। পরে সাকিব, তাসকিন ও রুবেলের দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৭ রানে জয়ও মিলেছে। দ্বিতীয় ওয়ানডেতেতো আরও বাজে অবস্থা হলো। উইকেট যে পুরোপুরি স্পিননির্ভর ছিল তা বোঝা গেছে। তবে উইকেটে ঘাসও ছিল। ম্যাচ শুরুর আগে উইকেট দেখে ধারাভাষ্যকার আতহার আলী খানই বলেছিলেন, ‘ব্যাটিং নির্ভর উইকেট।’ ব্যাটসম্যানরা ইনিংসটাকে বড় করার চেষ্টা করলেও পারতেন। কিন্তু তাড়াহুড়ো আর আফগান বোলারদের দুর্দান্ত বোলিংয়ে তা সম্ভব হয়নি। একটা সময়তো দুই শ’ রান করতে পারবে বাংলাদেশ, এমন বিশ্বাসই উড়ে যায়! ২০১৪ সালের নবেম্বর থেকেই ওয়ানডেতে দুর্দান্ত সাফল্য পাচ্ছে বাংলাদেশ। একটি সিরিজেও হারেনি। জিম্বাবুইয়ের পর পাকিস্তান, ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজে হারায়। গতবছর শেষেরদিকে আবারও জিম্বাবুইয়েকে হারায়। এই সময়ের মধ্যে আগে ব্যাট করে একবারই বাংলাদেশ দুই শ’ রানের নিচে গুটিয়ে গিয়েছিল। গতবছর দেশের মাটিতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে ১৬০ রানে গুটিয়ে যায় মাশরাফিবাহিনী। সেবারও কোন ব্যাটসম্যান অর্ধশতক করতে পারেননি। এরও চারবছর আগে বাংলাদেশ যে প্রথম ইনিংসে দুই শ’ রানের নিচে অলআউট হয়েছিল। সেটি ছিল ২০১১ সালের আগস্টে। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে হারারেতে ১৮৪ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। সেবার সাকিব ও মুশফিক অবশ্য অর্ধশতক করেছিলেন। সবার স্মৃতিতে যেন সেই ম্যাচগুলোই আসছিল। এবারও সেইরকম সম্ভাবনাই জাগে। বুধবার আফগানদের বিপক্ষে ১৬৫ রানেই ৯ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর দুই শ’ রান করাটাই কঠিন হয়ে পড়ে। ১৮০ রানের মধ্যেই না আবার অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ, সেই সম্ভাবনাই জোরালো হয়। তা হতে দেননি সৈকত ও রুবেল। দুইজন মিলে দুর্দান্ত ব্যাটিং করলেন। ১১৯তম বাংলাদেশ ক্রিকেটার হিসেবে ওয়ানডেতে অভিষেক হয় সৈকতের। ঘরোয়া লীগে টানা ভাল খেলতে থাকার ফল মিলে। সেই সৈকত প্রথম ওয়ানডে খেলতে নেমেই দেখালেন ব্যাটিং ঝলক। যেখানে সব আশা শেষ হয়ে যায়। শুধুই হতাশা সবার মধ্যে বিরাজ করে। সেখানে নতুন আশা নিয়ে যেন হাজির হন সৈকত। যে আফগান বোলাররা তামিম, সৌম্য, রিয়াদ, মুশফিক, সাকিবদের ভুগিয়েছেন, তারা সৈকতকে হার মানাতে পারেননি। ৪৯তম ওভারে গিয়ে বাংলাদেশ ২০০ রানও স্কোরবোর্ডে জমা করে ফেলে। ২০৮ রানও হয়ে যায়। তখন মনে করা হচ্ছিল, শেষ ওভারে আর ১০টি রান যোগ হতেই ২৩০ রানের কাছাকাছি বা তা হয়ে যাবে। কিন্তু চার বল বাকি থাকতেই ভুল বোঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে যান রুবেল। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে দলকে টেনে তোলা সৈকত ৪৫ বলে অপরাজিত ৪৫ রান করেন। আবার ৪টি চারের সঙ্গে দুটি ছক্কা হাঁকানোর মতো সাহসও দেখান! বাংলাদেশ ইনিংসে সবচেয়ে বেশি রানও সৈকতেরই। যে কাজটি ভুরিভুরি ওয়ানডে খেলে অভিজ্ঞ হওয়া ব্যাটসম্যানরা করতে পারেননি, তা অভিষেক ওয়ানডেতেই করে দেখান সৈকত। আর তার ব্যাটিংয়ে ভর দিয়েই বাংলাদেশের চেয়ে কম শক্তির দল আফগানিস্তানের বিপক্ষে দুই শ’ রানের কমে অলআউট হওয়া থেকে বাঁচে মাশরাফিবাহিনী। তা না হলে ব্যাটসম্যানদের ছন্নছাড়া ব্যাটিংয়ে আফগানদের বিপক্ষে দুই শ’ রানের কমে অলআউট হওয়ার লজ্জাই মিলতে যাচ্ছিল।
×