ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:০৩, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ এক ধাপ এগিয়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে আগের বছরের তুলনায় এক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। ১৩৮টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এখন ১০৬। আগের বছরে ১০৭তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের (ডব্লিউইএফ) প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক অবস্থার ওপর জরিপ চালিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ করে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরাম (ডব্লিউইএফ)। বুধবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এই প্রতিবেদন প্রকাশ করে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি)। সংস্থাটি বলছে, অর্থনৈতিক সূচকে বাংলাদেশ এগিয়েছে। তবে বৈশ্বিক তুলনায় তা সন্তোষজনক নয়। মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় আসতে হলে আরও এগোতে হবে। এজন্য প্রশাসনিক কর্মকা-ে উন্নতি ও দুর্নীতি দূর করারও তাগিদ দেয়া হয়েছে প্রতিবেদনে। দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থার এখনও উন্নতি হয়নি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সিপিডি। অনুষ্ঠানে সিপিডির অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রতিবেদনটি তুলে ধরেন। বক্তব্য রাখেন সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. মুস্তাফিজুর রহমান। উপস্থিত ছিলেন গবেষণা সহযোগী কিশোর কুমার বসাক প্রমুখ। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে ভারত এগিয়েছে। দেশটির অবস্থান এ বছর ৩৯তম। গত বছর এই অবস্থান ৫৫তম ছিল। অন্যদিকে পাকিস্তান ১২৬তম অবস্থান থেকে এ বছর ১২২তম অবস্থানে পৌঁছেছে। এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের মধ্যে মালয়েশিয়ার অবস্থান সবচেয়ে ভাল। দেশটির অবস্থান এবার ২৫তম। এছাড়া চীনের অবস্থান ২৮তম, থাইল্যান্ডের ৩৪তম ও ইন্দোনেশিয়ার অবস্থান ৪১তম। সিপিডির নির্বাহী পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, আমরা এখন নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে আছি। আমাদের লক্ষ্য, উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়া। এ ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতার সক্ষমতা বাড়াতে হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগোচ্ছে। কিন্তু যে গতি দরকার, তা নেই। আমরা হাঁটছি আর অন্যরা দৌড়াচ্ছে। মোট ১২টি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে। বাংলাদেশে এ প্রতিবেদন তৈরিতে ৭৯টি মাঝারি এবং বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের মতামত নেয়া হয়েছে। প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ও অবকাঠামো খাতে উন্নতি হওয়ায় বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে এক ধাপ এগিয়েছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, প্রাতিষ্ঠানিক খাত, অবকাঠামো, স্বাস্থ্য ও শিক্ষা খাতে উন্নতি হয়েছে। তবে যে হারে উন্নতি হওয়ার প্রয়োজন ছিল সে হারে উন্নতি হয়নি। ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশ করতে হলে অর্থনীতির বিভিন্ন সূচকে যে হারে উন্নতি হচ্ছে তার গতি বাড়াতে হবে। এর জন্য মানসম্মত বিনিয়োগ এবং উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে। আর উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করতে হলে কারিগরি শিক্ষা এবং কর্মমুখী শিক্ষা ও প্রশিক্ষণে জোর দিতে হবে। দক্ষতা উন্নয়নে যেসব সূচক রয়েছে তার উন্নতির পরামর্শ দেয় সিপিডি। এ বছর মূল্যস্ফীতি সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয় প্রতিবেদনে। পাশাপাশি উৎপাদনও বেড়েছে উল্লেøখযোগ্য হারে। উৎপাদন খাতে এসএমই খাতের এখনও উন্নয়ন করার সুযোগ আছে। তবে ব্যাংক সুদ হারও এখনও বেশি রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। এর ফলে উৎপাদন খরচ বাড়ছে। আর এর প্রভাব পড়ছে প্রতিযোগিতার সক্ষমতার ওপর। বাংলাদেশে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ওপর সাধারণ মানুষের মাঝে যে ধারণা ছিল তার কোন পরিবর্তন হয়নি বলে বিশ্ব প্রতিযোগিতা রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে। সর্বশেষ ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জরিপে ৫৩ শতাংশের মতে, বাংলাদেশের গণমাধ্যমের স্বাধীনতার অবস্থা ‘খারাপ’। এমতাবস্থায় বিশ্বে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের ব্যবসায় উন্নয়নে স্বাধীন গণমাধ্যম নিশ্চিত করতে হবে রিপোর্টে বলা হয়েছে। বিশ্ব প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের সুশাসন দুর্বল অবস্থানে রয়েছে বলে রিপোর্টে তুলে ধরা হয়েছে। এক্ষেত্রে বিচার প্রক্রিয়ায় সরকারের প্রভাব, জনগণের অর্থের অবৈধ ব্যবহার, কোম্পানির দুর্বল নৈতিকতা, আমদানি-রফতানিতে ঘুষ, কর প্রদানে ঘুষ, বিচারের রায় পেতে ঘুষ প্রদান ইত্যাদি খারাপ অবস্থানে রয়েছে। অবকাঠামোগত বিষয়ের মধ্যে বাংলাদেশের সাধারণ অবকাঠামো, রাস্তাঘাট ও রেলওয়ে অধিকতর খারাপ অবস্থায় রয়েছে বলে তথ্য প্রকাশ করা হয়। আর এক ধাপ কমে বিমানবন্দর, নৌপথ ও পানি সরবরাহ খারাপ অবস্থায় রয়েছে। বাংলাদেশের ব্যবসায় অবকাঠামোর পরে দ্বিতীয় সমস্যা হিসেবে রয়েছে দুর্নীতি। এরপর রয়েছে- অর্থায়নে সীমাবদ্ধতা, সরকারের আমলাতান্ত্রিক জটিলতা, শিক্ষিত শ্রমের অপর্যাপ্ততা, উচ্চ করহার, নীতি গ্রহণে অস্থিরতা, কর আইনের জটিলতা, অপরাধ ও চুরি ইত্যাদি। প্রতিবেদনে বলা হয়, বাংলাদেশের ব্যবসায়ীরা মনে করছে অর্থনীতির সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা খাত হলো আর্থিক খাত। অনিয়ম, দুর্নীতি এবং সম্প্রতি সংগঠিত বিভিন্ন প্রকার কেলেঙ্কারি আর্থিক খাতকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। উন্নতির হওয়ার বিপরীতে আর্থিক খাত ধীরে ধীরে নিচে নেমে গেছে। আর ব্যবসার প্রতিযোগিতার সক্ষমতায় প্রভাব ফেলেছে। প্রশাসনিক কর্মকা-ে উন্নতি ও দুর্নীতি দূর করারও তাগিদ দেয়া হয় প্রতিবেদনে। দুর্বল মনিটরিংয়ের কারণে পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থার এখনও উন্নতি হয়নি বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। পুঁজিবাজার ইনসাইডার ট্রেডিং দ্বারা নিয়ন্ত্রিত বলে বিশ্ব প্রতিযোগিতা রিপোর্টে তুলে ধরা হয়। এছাড়া পুঁজিবাজারের মাধ্যমে অর্থ উত্তোলন কঠিন হওয়ায় দেশের আর্থিক খাতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে তথ্যে উল্লেখ জানানো হয়। রিপোর্টে দেশের আর্থিক খাতের উন্নয়নের স্বার্থে এসব সমস্যা সমাধান করা দরকার বলে সুপারিশ করা হয়। একই সঙ্গে এই রিপোর্টে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনকে (বিএসইসি) শক্তিশালী করার কথা বলা হয়।
×