ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কোহিনূর শম্পা

ভারতীয় টেনিসের প্রদীপ সানিয়া

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

ভারতীয় টেনিসের প্রদীপ সানিয়া

ভারতীয় টেনিসের আশার প্রদীপ হয়ে জ্বলছেন সানিয়া মির্জা। শনিবার প্যান প্যাসিপিক ওপেনেও চ্যাম্পিয়ন হলেন তিনি। চেক প্রজাতন্ত্রের বারবোরা স্ট্রাইকোভাকে সঙ্গী করে এই টুর্নামেন্টের শিরোপা জিতেন সানিয়া মির্জা। ইন্দো-চেকপ্রজাতন্ত্রের জুটি ৬-১ এবং ৬-১ সেটে হারান কানডার গ্যাব্রিয়েলা এবং স্পেনের মারিয়া জোশে মার্টিনা সানচেজকে। প্যান প্যাসিপিক ওপেন জয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ারের ৪০তম ডব্লিউটিএ শিরোপা নিজের শোকেসে তুললেন সানিয়া মির্জা। সম্প্রতি সুইজারল্যান্ডের টেনিস তারকা মার্টিনা হিঙ্গিসের সঙ্গে সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় সানিয়া মির্জার। তবে তাদের সমাপ্তিটা ঘটল অনেকটা অদ্ভুতভাবেই। টেনিস বিশ্বে ‘সান্টিনা’ জুটি নামেই বেশি পরিচিত ছিলেন তারা। এই জুটি গত বছরও টেনিস জগতে ঝড় তুলেছিল। উইম্বলডন-সহ নয়টি টেনিস টুর্নামেন্ট জিতেছিল এই জুটি। অবশেষে তাদের সম্পর্কের ইতি ঘটল। আর জুটি ভেঙে দেয়ার কারণ হিসেবে সানিয়া মির্জা জানিয়েছেন, শেষ পাঁচ মাসে তাঁরা একটি শিরোপাও জিততে পারেননি। আর সে কারণেই তাদের এমন সিদ্ধান্ত। মার্টিনা হিঙ্গিসের সঙ্গে সম্পর্কের ইতি টানার পর সানিয়া মির্জা নতুন করে জুটি বেঁধেছেন চেক প্রজাতন্ত্রের বারবোরা স্ট্রাইকোভার সঙ্গে। একত্রে জুটি বেঁধে তাদের প্রথম শিরোপা সিনসিনাত্তি ওপেন। এরপর প্যান প্যাসিপিক ওপেনে স্ট্রাইকোভা-সানিয়া দ্বিতীয় ট্রফি জিতলেন। একত্রে দ্বিতীয় শিরোপা জিতে দারুণ রোমাঞ্চিত তারা। পারফর্মেন্সের এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার প্রত্যয় ইন্দো-চেকপ্রজাতন্ত্রের জুটির। বিশ্বের অন্যতম সেরা টেনিস খেলোয়াড়; নিজ দেশেও সমান জনপ্রিয়। তারপরও সানিয়া মির্জার সমালোচনা থেমে নেই। তার দেশপ্রেম থেকে শুরু করে পোশাক-পরিচ্ছদ সবকিছু নিয়েই চুলচেরা বিশ্লেষণ করেন নিন্দুকেরা। গত বছর চার্টার্ড বিমান আর ৭৫ হাজার টাকার মেক আপ কিট না পেয়ে মধ্যপ্রদেশ সরকারের বার্ষিক ক্রীড়া পুরস্কার অনুষ্ঠানে যাননি ভারতের টেনিস তারকা সানিয়া মির্জা। এরপরই তার বিপক্ষে শুরু হয় বিতর্ক আর সমালোচনার ঝড়। সেই বিতর্কের ঠিকই জবাব দেন সানিয়া মির্জা। টেনিস সুন্দরীর এ্যাজেন্সির পক্ষ থেকে এক বিবৃতিতে বলা হয় ‘প্রতিশ্রুতি মতো গোয়ার অনুষ্ঠানে হাজির থাকার জন্য ভোপাল থেকে চার্টার্ড বিমান চেয়েছিল সানিয়া। সাধারণ বিমানে গেলে ৭ ঘণ্টারও বেশি সময় লেগে যেত। ফলে গোয়ায় সময় মতো পৌঁছানো সম্ভব হতো না।’ এভাবে নিজের সব ব্যাপারেই সতর্ক থাকেন তিনি। সমালোচনায় কান দেন না মোটেই। চলতি মৌসুমের শুরু থেকেই দারুণ উপভোগ করেছেন সানিয়া মির্জা। সুইস তারকা মার্টিনা হিঙ্গিসকে নিয়ে একের পর এক শিরোপা জিতেছেন তিনি। তবে মৌসুমের শেষ মুহূর্তে সেই যেন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন সানিয়া। তবে সানিয়া এসব নিয়ে মাথা ঘামাবার লোক নন। আর মাথায় নেতিবাচক এসব বিষয়কে স্থান দেন না বলেই একের পর এক সফলতা এসেছে তার। বিতর্ক বিষয়ে সানিয়া বলেন, ‘আমি সত্যিই এসবকে গুরুত্ব দিই না। আমি খুব একটা কাগজ পড়ি না। শুধু টেনিসে মন দিই। আমি সর্বদা সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করি আর সেটাই আমাকে সবচেয়ে আনন্দ দেয়। এদিকে অনেক বড় আশা নিয়েই রিও অলিম্পিকে খেলতে গিয়েছিলেন সানিয়া মির্জা। ভারত যখন পদক খরায় ভুলছিল, তখন আশা দেখিয়েছিলেন তিনি। অস্ট্রেলিয়ার সামান্থা স্টোসার ও জনাথস পারস জুটিকে সরাসরি সেটে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালেও জায়গা করে নিয়েছিল সানিয়া-বোপান্না জুটি। কোয়ার্টারে এসেই যেন খেই হারিয়ে ফেলেন সানিয়ারা। যে কারণে চেক প্রজাতন্ত্রের হ্রাদেকা-স্টেপানেকের কাছে ১-৬, ৫-৭ ব্যবধানে হেরে স্বপ্নভঙ্গ হয় তাদের। হারের পর কান্নায় ভেঙে পড়েন সানিয়া মির্জা। এর কারণটাও পরে জানান তিনি। কেননা বর্তমানে ২৯ বছর বয়সী এই টেনিস তারকার রিও অলিম্পিকই হয়ত হতে পারে ক্যারিয়ারের শেষ অলিম্পিক। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের সঙ্গে তিনি বলেছিলেন, ‘চার বছর পর আমি আবার অলিম্পিকে খেলব কি না সে বিষয়ে জানি না। তাই এখান থেকে বিদায়টা আমার জন্য খুবই হতাশার। ভাবতেই পারছি না। মারে-ওয়াটসনকে হারানোর পর আমরা ভাল ফর্মে ছিলাম। কিন্তু কী করে এমন হয়ে গেল, বুঝলাম না! ভেবেছিলাম অন্তত একটা পদক জিতে ফিরব। আমার ক্যাবিনেটে অনেক ট্রফি আছে। শুধু অলিম্পিক পদকটাই ছিল না। কিন্তু হলো না সেটাও। তাই কষ্ট বেড়ে গেল।’ ভারতীয় টেনিস সুন্দরী সানিয়া মির্জার হিন্দী ছবিতে অভিনয় করা নিয়ে গত এক দশক ধরেই জল্পনা চলছে। তবে হায়দরাবাদের সুন্দরী স্পষ্টই জানিয়ে দিলেন, তিনি খেলার জগতেই থাকতে চান।
×