ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

তাজকিয়া নুর মুন

বোলার সাকিবের অনন্য রেকর্ড

প্রকাশিত: ০৬:৪২, ২৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বোলার সাকিবের অনন্য রেকর্ড

বল হাতে অনন্য এক রেকর্ড গড়েছেন সাকিব-আল হাসান। যেটি গ্রেট মুত্তিয়া মুরলিধরন, শেন ওয়ার্ন, কোর্টনি ওয়ালস কিংবা ওয়াসিম আকরামেরও নেই! আফগানিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে দুই শিকারের পথে বাংলাদেশের হয়ে তিন ভার্সনেই সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক বনে গেছেন সেন সেশনাল টাইগার অলরাউন্ডার। বিশ্ব ক্রিকেটের ইতিহাসে এটি এক বিরল ঘটনা। গ্রেট অনেক বোলারই টেস্ট-ওয়ানডে বা ওয়ানডে-টি-২০তে নিজ নিজ দেশের হয়ে সর্বোচ্চ শিকারি, কিন্তু একাধারে তিন ধরনের ক্রিকেটে নয়। টেস্ট আর টি-২০তে বেশ আগে থেকেই সাকিব বাংলাদেশের সবার ধরাছোঁয়ার বাইরে ছিলেন। ২০৮ শিকারে এবার উঠে গেলেন ওয়ানডের চূড়ায়ও। ছাড়িয়ে গেলেন আবদুর রাজ্জাককে। ২০৭ উইকেট নিয়ে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি ছিলেন রাজ্জাক একা। প্রথম ম্যাচে নিজের তৃতীয় বলেই আফগানিস্তানের শাবির নুরিকে এলবিডবিউ করে সাকিব ছুঁয়ে ফেলেন রাজ্জাককে। প্রথম ও দ্বিতীয় স্পেলে উইকেট ছিল ওই একটিই। তৃতীয় স্পেলে রহমত শাহকে ফিরিয়ে ভাঙেন আফগানদের বড় জুটি, সঙ্গে রেকর্ডটিও একার করে নেন। টেস্টে সাকিবের শিকার ১৪৭টি, দুইয়ে থাকা মোহাম্মদ রফিকের ১০০টি। টি-২০ সাকিব নিয়েছেন ৬৫ উইকেট। তার পরে থাকা রাজ্জাকের শিকার ৪৪টি। জাতীয় দলে বিতর্কিতভাবে উপেক্ষিত থাকায় রাজ্জাকের আন্তর্র্জাতিক ক্যারিয়ার আপাতত থমকে আছে। ওয়ানডেতেও তাই সাকিব ধরাছোঁয়ার বাইরে চলে যাওয়াটা কেবলই সময়ের ব্যাপার। বাংলাদেশের হয়ে ২০৩ উইকেট নিয়ে মাশরাফি অবশ্য তাড়া করছেন সাকিবকে। তবে মাশরাফির চেয়ে সাকিবের ক্যারিয়ার অনেক লম্বা হবে প্রায় নিশ্চিতভাবেই। সাকিবের অর্জন অবশ্যই দারুণ। তবে এটাও বিবেচনায় রাখতে হবে, আন্তর্জাতিক টি-২০ আবির্ভাব ২০০৫ সালে। গ্রেটদের অনেকেই খেলতে পারেনি এই সংস্করণ। টেস্ট ও ওয়ানডেতে দেশের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট আছে আরও সাতজনের। সবাই গ্রেট ক্রিকেটার। বাংলাদেশের এখনকার বোলিং কোচ ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোর্টনি ওয়ালশ, পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম, ভারতের অনিল কুম্বলে, দক্ষিণ আফ্রিকার শন পোলক, ইংল্যান্ডের জেমস এ্যান্ডারসন, জিম্বাবুইয়ের হিথ স্ট্রিক। অফস্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরন তার নিজের দেশ শ্রীলঙ্কার হয়ে তো বটেই, দুটিতেই বিশ্ব রেকর্ডের অধিকারী! এদের মধ্যে টি-২০ খেলতে পেরেছেন কেবল তিনজন। তাদের দুজন, মুরালিধরন ও শন পোলক আবার টি-২০ পেয়েছেন ক্যারিয়ারের শেষ বেলায়, দুজনই খেলেছেন ১২টি করে। এ্যান্ডারসনও খেলতে পেরেছেন মাত্র ১৯টি। তাতে অবশ্য সাকিবের অর্জনের মাহাত্ম্য কমছে না। অন্যদের না খেলা তো তার নিয়ন্ত্রণে নেই! নিজে যেটি পারতেন, সেটি করেই উঠেছেন গৌরবের চূড়ায়। তিন সংস্করণেই দেশের সেরা! ‘ভাল লাগছে। তবে তিন ফরম্যাটে সর্বোচ্চ রান স্কোরার হলে আরও ভাল লাগত। ব্যাটসম্যানরা শেষ ১ বছরে দল এত ভাল খেলছে যে আমার ব্যাটিংয়ের সুযোগ হচ্ছে না খুব একটা। সেটা না হলে হয়ত ব্যাটিংয়েও তিন ফরম্যাটে সবচেয়ে বেশি রান থাকত!’ সর্বোচ্চ উইকেটের অনন্য রেকর্ড গড়ার পর মজা করে বলেন সাকিব। তিনি আরও যোগ করেন,‘অবশ্য্যই ভাললাগে অর্জনগুলো। তবে আল্টিমেটলি ফোকাস থাকে দলে কতটা অবদান রাখতে পারি এবং দলের প্রয়োজনের সময় কতটা ভাল খেলতে পারি তার ওপর।’ এমনিতে নিজের রেকর্ড নিয়ে খুব বেশি মাথা কখনই ঘামান না সাকিব। বিশ্ব ক্রিকেটে দেশের হয়ে প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে তিন ফরম্যাটেই সর্বোচ্চ উইকেট নেয়ার নজির গড়েও যেমন উচ্ছ্বাসে ভেসে যাওয়া নেই। বরং শুনিয়েছেন আরও বড় স্বপ্নের কথা, ‘যদি রান ও উইকেট দুটিতেই তিন ফরম্যাটে সবার ওপরে থাকতাম, তাহলে অনেক বড় অর্জন মনে হতো। এক সময় তো দুটাতে আমিই সর্বোচ্চ ছিলাম রানে। গত ১ বছরে ওরা এত ভাল খেলছে যে আমি ৩০-৪০ রানের বেশি করার সুযোগ পাইনি। তবে সুযোগ আছে। দেখা যাক, ক্যারিয়ার শেষ হতে হতে কোন অবস্থায় যাই!’ ব্যাটে-বলে তিন ফরম্যাটেই সেরা হওয়া এমনিতে অবিশ্বাস্য শোনাতে পারে। তবে সাকিবের জন্য সেটা করতে পারাটা কিন্তু অসম্ভব কিছু নয়। টেস্টে ২ হাজার ৮২৩ রান নিয়ে এখন তিনি আছেন তিনে। ৩ হাজার ২৬ রান হাবিবুল বাশারের, তামিম ইকবালের রান ৩ হাজার ১১৮। ওয়ানডে ও টি-২০তে তামিমের ঠিক পরেই সাকিব। ওয়ানডেতে তামিমের (৪ হাজার ৭৯৩) থেকে খুব একটা পিছিয়ে নেই সাকিব (৪ হাজার ৪৪৬)। টি-২০তে তো দুজন একদমই পিঠেপিঠি, তামিমের রান ১ হাজার ১৫৪, আর সাকিবের ১ হাজার ১০৩। তিন ফরম্যাটেই রানে সবার ওপরে ওঠা তাই ধরাছোঁয়ার বাইরে নয়। উইকেটে টেস্টে ও টি-২০তে সাকিবের ধারেকাছে কেউ নেই। ওয়ানডেতে মাশরাফি খুব কাছে থাকলেও ক্যারিয়ারের বাস্তবতায় একসময় সাকিব অনেকটা এগিয়ে যাবেন নিশ্চিতভাবেই। সাকিবের স্বপ্ন পূরণ হওয়া তাই খুবই সম্ভব! তবে আদতে রেকর্ডের চেয়ে দলের হয়ে অবদান রাখাই যে তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ, সেটা জানিয়ে দিলেন আরও একবার, ‘আশা করি, আমরা এভাবে অবদান রেখে যেতে থাকব। আমি, তামিম, মুশফিক ভাই, আমাদের তিনজনেরই তিন ফরম্যাটে অনেক রান করা আছে। আশা করি, যত দিনই খেলি, বাংলাদেশের হয়ে তিনজন এভাবেই আরও অবদান রাখতে থাকব। আল্টিমেটলি কেউ সামনে থাকবে, কেউ সেকেন্ড হবে, কেউ থার্ড; ওসব নিয়ে আমার ভাবনা নেই। গুরুত্বপূর্ণ হলো দলের জন্য অবদান রাখতে পারা।’ আর কঠিন ম্যাচ জয় সম্পর্কেও দারুণ জবাব সাকিবের,‘যে পরিস্থিতি ছিল, আফগানিস্তানেরই জেতা উচিত ছিল। আমার মনে হয়, অভিজ্ঞতার ঘাটতির কারণে ওরা পারেনি। আর আমাদের অভিজ্ঞতা কাজে লেগেছে। আমাদের অনেক খেলোয়াড় আছে যারা অনেকগুলো ওয়ানডে খেলেছে। আমরা জানি কিভাবে জিততে হয়। আসলে আমাদের কাজ তো মনে করা নয়। আমাদের কাজ ‘করা’; ভাল করে কাজটা করা। আর বিশ্বাস রাখা যে, করতে পারব। এই চেষ্টাটা ছিল। সবাই অনেক দিন পরে খেলেছে। সবার জন্য তাই কাজটা কঠিন ছিল।’
×