ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আফগানিস্তানের সঙ্গে ইজ্জত রক্ষার, ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চমক দেখানো;###;রোকসানা বেগম

টাইগারদের সামনে ভিন্ন দুই চ্যালেঞ্জ

প্রকাশিত: ০৬:৫৫, ২১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

টাইগারদের সামনে ভিন্ন দুই চ্যালেঞ্জ

বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ব্যস্ততা শুরু হয়ে যাচ্ছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ দিয়েই ব্যস্ততার শুরু। এরপর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট খেলবে বাংলাদেশ। দুই সিরিজেই বাংলাদেশের সামনে ভিন্ন রকম চ্যালেঞ্জ অপেক্ষা করছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে এক রকম চ্যালেঞ্জ, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে আরেক রকম চ্যালেঞ্জ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজেদের প্রমাণ করার নেই। আছে লজ্জা থেকে নিজেদের রক্ষা করার চ্যালেঞ্জ। আফগানিস্তানের কাছে হারা মানেই হচ্ছে এর প্রভাব ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে পড়ে যেতে পারে। এ থেকে মুক্তির সঙ্গে ওয়ানডেতে যে বাংলাদেশ বাঘা বাঘা দলগুলোকে এখন প্রতিনিয়ত হারাচ্ছে, সেই সম্মান বজায়ও রাখতে হবে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে হারলেই লজ্জা মিলবে। কারণ, আফগানদের বিপক্ষে হারার মতো দল এখন বাংলাদেশ নয়। আফগানিস্তানকে উড়িয়ে দেয়ার মতো দল এখন বাংলাদেশ। হেরে গেলে হতাশা তাই বেশি হবে। যে হতাশা থেকে সবাইকে মুক্ত করে রাখার চ্যালেঞ্জের সিরিজও বাংলাদেশের। প্রথমবারের মতো আফগানিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। সেই সিরিজের ওপর সামনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজের অনেক কিছুই নির্ভর করছে। আফগানদের বিপক্ষে হারা মানে হচ্ছে, আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি হওয়া। আর জেতা মানে হচ্ছে, পুরো আত্মবিশ্বাস পুঁজি করেই ইংলিশদের বিপক্ষে নামতে পারা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য আরেক রকম চ্যালেঞ্জের। ইংল্যান্ড দল সর্বশেষ দুই ওয়ানডে ম্যাচেই বাংলাদেশের কাছে হেরেছে। দুটিই বিশ্বকাপের ম্যাচ। ইংল্যান্ড যে করে হোক এবার জিততে চাইবে। কিন্তু বাংলাদেশ তো নিজ দেশে যেন সিরিজে হারতেই ভুলে গেছে। ২০১৫ সালে টানা সিরিজ জিতেছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুইয়ে, পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারিয়েছে। এবার বাংলাদেশের সামনে দাঁড় হচ্ছে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। এ দলটিকেও যদি বাংলাদেশ হারিয়ে দিতে পারে, তাহলে দেশের মাটিতে আরও শক্তিশালী দল হয়ে উঠবে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সামনে ধারাবাহিকতা রক্ষার চ্যালেঞ্জ। আবার ইংল্যান্ডের নিয়মিত অধিনায়ক ইয়ন মরগান খেলতে আসেননি। দল একটু হলেও সমস্যায় পড়বে। এমন দলকে সিরিজে হারানোর সুযোগ এখনই। সেই সুযোগ বাংলাদেশকে কাজে লাগাতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জও বাংলাদেশের সামনে আছে। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজ খেলতে পেরে আফগানিস্তান দলের সবাই খুশি হবেন এটাই স্বাভাবিক। সেই আনন্দ আফগানিস্তান ক্রিকেট বোর্ডের চেয়ারম্যান নাসিমুল্লাহ দানিশ প্রকাশও করেছেন। বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বিপক্ষে খেলে আমাদের উন্নতি হবে। আমরা নিজেদের বুঝতে পারব। বাংলাদেশ এখন অনেক শক্তিশালী দল। আমরাও আরও উন্নত হতে পারব।’ বাংলাদেশ-আফগানিস্তান সিরিজ নিয়ে আলোচনা আছে। তবে সেই আলোচনা তুঙ্গে নয়। সবাই আসলে অপেক্ষায় আছে কখন ইংল্যান্ড দল আসবে এবং সিরিজ শুরু হবে। নিরাপত্তা নিয়ে ইংল্যান্ড দলের আসারই কথা ছিল না। অবশেষে তারা আসছে। শুধু নিয়মিত ওয়ানডে অধিনায়ক মরগান ও হেলস ছাড়া পুরো শক্তির দলই আসছে। তিনজন নতুন মুখও আছেন। যাদের নিয়ে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের বড়ই আশাও আছে। আফগানিস্তান দল এখনও ঘোষণা না করলেও ইংল্যান্ড দল এরইমধ্যে ঘোষণা হয়ে গেছে। দলে ১৯ বছর বয়সী ওপেনার হাসিব হামিদ, ব্যাটসম্যান বেন ডাকেট ও অলরাউন্ডার জাফর আনসারি হচ্ছেনÑ তিন নতুন মুখ। ১৫ সদস্যের ওয়ানডে ও ১৭ সদস্যের টেস্ট দল ঘোষণায় শক্তি ঠিকই বজায় রেখেছে ইসিবি। তিন নতুন মুখের চেয়েও চমক আছে দলে। সেটি হচ্ছে, ১১ বছর বছর পর দলে স্থান পেয়েছেন ৩৯ বছর বয়সী গ্যারেথ বেটি। তিন ওয়ানডে ও দুই টেস্ট খেলতে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশে পা রাখবে ইংল্যান্ড ক্রিকেট দল। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের তিন ওয়ানডে হবে যথাক্রমে ২৫ ও ২৮ সেপ্টেম্বর এবং ১ অক্টোবর। আর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৭, ৯ ও ১২ অক্টোবর যথাক্রমে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ২০ অক্টোবর প্রথম ও ২৮ অক্টোবর দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হবে। এবারের ইংল্যান্ড দলটির শক্তি বেশিই আছে। তা ব্রিটিশ দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের সাংবাদিক শিল্ড বেরি বুঝিয়ে দিয়েছেন। তার মতে, মরগান হেলস না এলেও বেশ শক্তিশালী দল নিয়েই বাংলাদেশে আসছে ইংল্যান্ড। ইংল্যান্ড দলে ডাকা হয়েছে ৩৮ বছর বয়সী স্পিনার গ্যারেথ ব্যাটিকে। প্রায় ১১ বছর আগে বাংলাদেশের বিপক্ষেই সর্বশেষ টেস্ট খেলেছিলেন ব্যাটি। তাঁর টেস্ট অভিষেকও হয়েছিল ঢাকায়, ২০০৩ সালে। ওয়ানডে সর্বশেষ খেলেছেন ২০০৯ সালে। অবশ্য তাঁর পক্ষে কথা বলছে ফর্ম। কাউন্টি ক্রিকেটে সারের হয়ে ৩১ গড়ে ৪১টি উইকেট নিয়েছেন এই অফ স্পিনার। বাংলাদেশে এলেও অবশ্য মঈন আলী ও আদিল রশিদের ‘ব্যাক-আপ’ হয়েই থাকতে হতে পারে। বাংলাদেশ সফর বলেই বাড়তি স্পিনার দলে চাইছে ইংল্যান্ড। ব্যাটির পাশাপাশি দলে আছেন ব্যাটির চেয়ে প্রায় দুই দশক কম বয়সী তরুণ ওপেনার হাসিব হামিদ। যদি প্রথম টেস্টের একাদশে থাকেন হামিদ, তবে ১৯ বছর বয়সী এ ব্যাটসম্যানই হবেন ইংল্যান্ডের কনিষ্ঠতম ওপেনিং ব্যাটসম্যান। ফর্মও অবশ্য বেশ ভাল যাচ্ছে তাঁর। সর্বশেষ ১৮টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে রান করেছেন ১ হাজারেরও বেশি। টেস্টে কুকের সঙ্গে অভিজ্ঞ মঈন আলী, জেমস এ্যান্ডারসন, গ্যারি ব্যালান্স, স্টুয়ার্ট ব্রড, স্টিভেন ফিন, জো রুট, বেন স্টোকস, ক্রিস ওকস আছেন। আর ওয়ানডেতে জস বাটলারের নেতৃত্বে থাকছেন মঈন, জনি বেয়ারস্টো, লিয়াম ডসন, প্লাঙ্কেট, আদিল রশিদ, জেসন রয়, স্টোকসরা। শক্তিশালী দলই হয়েছে। ইংল্যান্ড জাতীয় দলের নির্বাচক জেমস হোয়াইটেকার বলেন, ‘কোচ ও অধিনায়ককে বেশি অপশন দিতে টেস্ট দলে চার স্পিনার নেয়া হয়েছে। মঈন আলী ও আদিল রশিদতো আছেনই। জাফর আনসারি ও গ্যারেথ বেটিকেও রাখা হয়েছে। জাফর হচ্ছেন আমাদের সম্পদ। ব্যাট ও বলে দারুণ। আর বেটি হচ্ছেন অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। দেশের সেরা সেøা বোলার। বিশেষ করে উপমহাদেশে অনেক কার্যকর হতে পারে।’ মরগান না আসায় চতুর্দিকে সমালোচনা হচ্ছে। তার আসায় দল আরও শক্তিশালী হতে পারত। তবে তার পরিবর্তে জস বাটলারের উপর ওয়ানডের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। সেই বাটলার মরগানের পক্ষেই কথা বলেছেন। উইকেটরক্ষক ও ব্যাটসম্যান বাটলার মনে করেন, ‘মরগানের সিদ্ধান্ত ড্রেসিংরুমে কোন বিভাজন তৈরি করবে না। আমরা বেশ একতাবদ্ধ একটা দল এবং আমরা এ রকমই থাকব। দলে সবাই একে অপরের বেশ ভাল বন্ধু এবং আমরা এটা বজায় রাখতে চাই। আগামী বছর আমাদের এখানে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি আছে। তার দুই বছর পর আছে ক্রিকেট বিশ্বকাপ। ড্রেসিংরুমের সবাই এই শিরোপাগুলো জিততে চায়। দলের সবার লক্ষ্য এখন সেটাই।’ সঙ্গে যোগ করেন, ‘সে-ই এই দলের মূল অধিনায়ক। আমি আশা করি, যখন সে দলে ফিরবে, তখন আবার অধিনায়কের দায়িত্বটা গ্রহণ করবে। তার অধীনে আমরা চমৎকার উন্নতি করেছি। আমার চোখে, সে-ই দলের অধিনায়ক। সে আমাদের ঘুরে দাঁড়ানোর পেছনের অন্যতম বড় কারণ। সে আমাদের খেলার ধরনে নতুনত্ব এনে দিয়েছে এবং এই ধরনটাতেই আমরা আমাদের খেলা চালিয়ে যেতে চাই। দায়িত্ব নেয়ার পর গত ১৮ মাসে সে অসাধারণ কাজ করেছে। কিছু অশোভন সমালোচনা চলছে। ক্রিকেটই সব কিছু নয়। সে (মরগান) সেই সিদ্ধান্তটাই নিয়েছে, যেটা তার কাছে সঠিক মনে হয়েছে। কোন রকম চিন্তা-ভাবনা ছাড়া সে এই সিদ্ধান্তটা নেয়নি। তার নিজের যেটা সুবিধাজনক মনে হয়েছে, সে সেটাই ঠিক করেছে। এবং তার এই সিদ্ধান্তকে সবার সম্মান জানানো উচিত।’ মরগানের আসা, না আসা নিয়ে ইংল্যান্ড সমালোচনায় মুখোর। তা নিয়ে অবশ্য বাংলাদেশ দলের কারোর মধ্যেই কোন ভাবনা নেই। তাদের ভাবনায় যে শুধুই জয় আছে। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সিরিজে খেলতে নামার আগে আফগানিস্তানের বিপক্ষে সিরিজটি তাই প্রস্তুতিমূলক সিরিজ হিসেবেই নিতে পারে বাংলাদেশ। তবে কোনভাবেই হারা যাবে না। হারলেই সমালোচনায় বিদ্ধ হতে হবে। সেই চ্যালেঞ্জ তো আছেই। সঙ্গে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জেতার চ্যালেঞ্জও থাকছে। বাংলাদেশের সামনে ভিন্ন চ্যালেঞ্জই ধরা দিচ্ছে।
×