ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অভিমত ॥ এখন শুধুই এগিয়ে চলা

প্রকাশিত: ০৪:০৭, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

অভিমত ॥ এখন শুধুই এগিয়ে চলা

পরিবর্তন ভাল হতে পারে আবার খারাপও হতে পারে। তবে সকল পরিবর্তনই পরিবর্তন। প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে পরিবর্তনের অনিবার্যতা আমরা কেউই অস্বীকার করতে পারি না। বাংলাদেশের জনগণকে প্রায়শই আমরা জেগে উঠতে বলি। তারা যেন তাদের সর্বোচ্চ শক্তি-সামর্থ্য দিয়ে উঠে দাঁড়ায়। কোন শক্তি একটি জাতির উত্থান অথবা পতন ঘটায়। কোন কোন বিষয় একটি দেশকে শক্তিশালী করে গড়ে তোলে। এটা আমাদের ভাবতে হবে। তিনটি বিষয় একটি জাতিকে সুদৃঢ় ও সংহত করে- বিগত সাফল্যের গৌরব, একতা এবং যৌথভাবে পদক্ষেপ গ্রহণের সক্ষমতা। একটি জনগোষ্ঠী অথবা জাতিকে উন্নতির শীর্ষ চূড়ায় আরোহণ করতে হলে অবশ্যই অতীতের মহান নায়কদের মনে রাখতে হবে; অতীতের গৌরবময় আন্দোলন ও বিজয়কে মনে রাখতে হবে। ব্রিটিশ জাতি যদি উন্নতির চরম শিখরে উঠে থাকে তাহলে তা সম্ভব হয়েছে লর্ড নেলসন অথবা ডিউক অব ওয়েলিংটনের মতো নেতাদের গৌরবময় সাফল্য ধরে রাখার আকাক্সক্ষার কারণে। জাতীয়তাবোধের উদাহরণ দিতে গেলে জাপানের নাম এক নম্বরে উঠে আসে। জাপানীরা এক মানুষ, এক দেশ, এক সং¯ৃ‹তিতে বিশ্বাসী একটি জাতি। শুধু এই জাতীয়তাবোধের কারণেই তারা একটি ‘অপমানজনক সামরিক পরাজয়’কে আজ অর্থনৈতিক বিজয় হিসেবে রূপ দিতে পেরেছে। পৃথিবীতে যত জাতিই উন্নতি লাভ করেছে তারা একটি লক্ষ্যে সব সময় সচেতন থেকেছে। জাপানের মতো জার্মানির মানুষও তাদের লক্ষ্যে অবিচল ছিল। মাত্র তিন দশকের মধ্যে জার্মানিতে দু’দুবার বিপর্যয় এসেছে। কিন্তু জার্মানদের উন্নতির লক্ষ্য থেকে সরে আসেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ভস্মাবশেষ থেকে জার্মানি আবার অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক শক্তিশালী দেশ হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে। জার্মানি যদি এত বিপদ কাটিয়ে উন্নত দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে তাহলে একাত্তরে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে ওই সময়ের প্রবল পরাক্রমশালী পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে বিজয় ছিনিয়ে আনা বাংলাদেশ তা পারবে না কেন? আমাদের দুর্ভাগ্য, ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শক্তি বাঙালীকে অতীত গৌরবময় ইতিহাসকে তুলে আনার মতো সুযোগ সন্ধানী চেতনা দেয়নি। ৪৫ বছরে আমাদের ভেতরে ঐতিহাসিক চেতনা কেন্দ্রীভূত করার উল্লেখযোগ্য কোন প্রচেষ্টা করা হয়নি। স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর থেকে গত ৩৮ বছরে দেশের বিভিন্ন ধর্মের মৌলিক শিক্ষা গ্রহণের সুযোগ আমাদের ঘটেছে। এর মাধ্যমে আমরা একটা বিষয় বুঝতে পারি, যে কোন ধর্মেরই মূল প্রতিপাদ্য বিষয় হলো মানুষের আত্মিক উন্নয়ন সাধন করা। আমরা যদি অতীতের গৌরবময় ঐতিহ্যকে ধারণ না করে ইতিহাসের দিকে না তাকাই, যদি অনিবার্য সাফল্যের বিশ্বাস নিয়ে ভবিষ্যতের দিকে না তাকাই তাহলে হতাশা, দুঃখ, অভাব আর নৈরাশ্য ছাড়া আর কী অপেক্ষা করতে পারে? প্রত্যেক নাগরিককে সমান নিরাপত্তার ছত্রছায়ায় রাখার অঙ্গীকার নিয়ে বাংলাদেশের সংবিধান প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বিভেদ ভুলে যাওয়ার সময় এখন আমাদের সামনে। আমাদের প্রধান লক্ষ্য হওয়া উচিত কী করে আমরা ঐক্যবদ্ধ হতে পারব, উন্নত রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারব- তার উপায় খুঁজে বের করা। উন্নত বাংলাদেশের লক্ষ্য শহরে শহরে এ দেশটা ছেয়ে ফেলা নয়। বরং প্রযুক্তিকেন্দ্রিক টেলিমেডিসিন, টেলিএডুকেশন, ই-কমার্স আর আউট সোর্সিং চালুর মাধ্যমে গ্রামগুলোকে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির আওতায় নিয়ে আসা। দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টিতে কার্যকর প্রযুক্তি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, কৃষি বিজ্ঞান, দুগ্ধ ও তাঁত শিল্পোন্নয়ন এবং জৈবপ্রযুক্তি ও জৈববিজ্ঞানের সমন্বয় থেকে নতুন বাংলাদেশের উদ্ভব হবে। যেখানে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এই চেতনা ধারণ করে তাদের কাজ করবে। ব্যক্তি ও রাজনৈতিক দলের স্বার্থের চেয়ে জাতীয় স্বার্থ অনেক বড়। এতে গ্রাম ও শহরের বৈষম্য হ্রাস পাবে। গ্রামে আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি সুবিধা পৌঁছে গেলে শহরপ্রিয় মানুষও গ্রামের উন্নত দ্রব্যসামগ্রীর জন্য গ্রামের দিকে মনোযোগী হবে। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের শক্তি এখন আমাদের ভেতরে। ঐতিহাসিক চেতনা, মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ আর আত্মনির্ভরশীল বাংলাদেশ গঠনের মতো সুযোগ্য রাষ্ট্রনায়কোচিত নেতৃত্বের মাধ্যমে দেশরতœ শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধুর মতো আবারও বাঙালীকে ঐক্যবদ্ধ করার উল্লেখযোগ্য প্রচেষ্টা গ্রহণ করেছেন। আমাদের গৌরবময় অতীত- স্বাধীনতা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ, বঙ্গবন্ধুর মতো দুনিয়া কাঁপানো নেতৃত্ব আমাদের সঙ্গে প্রবহমান। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী প্রতিটি নাগরিককে এটি শুদ্ধ বিশ্বাসে পরিচর্যা করতে হবে। তবেই সব ষড়যন্ত্রের জাল ছিন্ন করে বঙ্গবন্ধুকন্যার নেতৃত্বে প্রগতি ও উন্নয়নের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে আর স্থিতিশীল প্রযুক্তিমুখী বাংলাদেশ গড়তে একবিংশ শতাব্দীর ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত আধুনিক, উন্নত ও স্বনির্ভর বাংলাদেশ নির্মাণের সংগ্রামে আত্মনিয়োগ করে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাকে বাস্তবায়ন করতে পারব। [email protected]
×