ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষ্ণাদের উজ্জীবিত করার চেষ্টায় বাফুফে

প্রকাশিত: ০৬:৪৬, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কৃষ্ণাদের উজ্জীবিত করার চেষ্টায় বাফুফে

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ শুধু গৌরবময় অতীত নিয়ে পড়ে থাকলে কখনই ভবিষ্যতের সাফল্যের সোপানে আরোহণ করা সম্ভব নয়। এজন্য প্রয়োজন বর্তমানকে সঠিকভাবে কাজে লাগান। আর ঠিক সেই কাজটিই করতে চলেছে দেশীয় ফুটবলের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন (বাফুফে)। সম্প্রতি এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের বাছাইপর্বে অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে নতুন দিগন্তে উপনীত হয়েছে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৬ জাতীয় মহিলা ফুটবল দল। সেই দিগন্তের শেষ সীমায় যেতে হলে তাদের আরও একটি অগ্নিপরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে। সেজন্য ইতোমধ্যেই এক বছরের একটি মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে বাফুফে। সে অনুযায়ী কর্মতৎপরতাও শুরু হয়েছে। দলে যুক্ত হচ্ছে ফিজিক্যাল ট্রেনার, ফিজিওথেরাপিস্ট ও গোলরক্ষক কোচ। মেয়েদের পড়ালেখার জন্য বাফুফে ক্যাম্পে রাখা হবে শিক্ষক। তারা পাবে মাসিক ভাতা। এক বছরে একাধিক আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচও খেলবে কৃষ্ণারা। ‘এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপে’র চূড়ান্ত পর্বের খেলা আগামী ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ থেকে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিত হবে। এই পর্বে বাংলাদেশ অনুর্ধ-১৬ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলসহ এশিয়ার শীর্ষ ৮টি দল অংশ নেবে। এ উপলক্ষে শুক্রবার থেকে বাংলাদেশ দলের আবাসিক প্রশিক্ষণ ক্যাম্প বাফুফে ভবনে শুরু হয়েছে। এই আবাসিক ক্যাম্পে বাংলাদেশ অ-১৬ জাতীয় মহিলা ফুটবল দলের ২৩ ফুটবলার দলের হেড কোচ গোলাম রব্বানী ছোটনের কাছে রিপোর্ট করে। শুক্র ও শনিবার মেয়েদের বিশ্রাম দেয়া হয়। আজ রবিবার থেকে মাঠে অনুশীলন শুরু করবে তারা। তবে শনিবার তারা পুরোপুরি বিশ্রামে ছিল না। তাদের ডাকা হয় বাফুফের বোর্ডরুমে। সেখানে মহিলা ফুটবল কমিটির কর্মকর্তাদের সঙ্গে তাদের জন্য অপেক্ষা করছিলেন বাফুফে সভাপতি কাজী মোঃ সালাউদ্দিন। সাক্ষাত-সভায় মেয়েদের সঙ্গে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা করেন তিনি। জানতে চান তাদের চাওয়া-পাওয়া নিয়ে। বিভিন্ন বিষয়ে তাদের উৎসাহও দেন তিনি। এ প্রসঙ্গে সালাউদ্দিন বলেন, ‘ওরা তো এখন স্টার। তবে এটা ওদের মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে। আজ ওদের সঙ্গে দেখা করে ওদের এটাই বোঝানোর চেষ্টা করেছি। আরও বলেছি, নিজেদের আরও ভালমতো প্রস্তুত কর, সামনে আরও বড় প্রেক্ষাপট, বড় চ্যালেঞ্জ। আমি ২০১৭ সালে থাইল্যান্ডে অনুষ্ঠিতব্য এএফসি অনুর্ধ-১৬ মহিলা চ্যাম্পিয়নশিপের মূলপর্বের আসরের কথাই বলছি।’ তিনি আরও যোগ করেন, ‘মেয়েদের আরও বলেছি, নিজেদের খেলা দিয়েই তোমরা এতদূর এসেছো। মিডিয়া তোমাদের স্টার বানিয়েছে ঠিকই। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তোমরা এখনও স্টার হওনি। ওই পর্যায়ে যেতে হলে তোমাদের আরও অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। আরও অনেক পরিশ্রম করতে হবে।’ কৃষ্ণারা কি কিছু চেয়েছে? ‘আমি জানি ওরা সবাই দরিদ্র পরিবার থেকে এসেছে। আমি ওদের কাছ থেকে জানার চেষ্টা করেছি ওরা কি ধরনের সুযোগ-সুবিধা চায় আমাদের কাছে। ওদের মূল চাওয়াটা অবশ্যই আর্থিক। অবশ্যই তারা নিজেদের যোগ্যতা দিয়ে এই আর্থিক সুবিধাটা আদায় করে নেবে এবং সেটা তারা পাবে ধীরে ধীরে, ধাপে ধাপে।’ এই যে বর্তমানে পুরুষ জাতীয় ফুটবল দলের অধঃপতন এবং বয়সভিত্তিক মহিলা ফুটবল দলগুলোর ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে এটাকে কোন চোখে দেখেন বাফুফে বস? ‘ক্লাব ফুটবলে আসলে যোগ্যতার চেয়ে পুরুষ ফুটবলরা বেশি অর্থ পারিশ্রমিক পাচ্ছে, ফলে খেলার প্রতি তাদের দায়বদ্ধতার অভাব আছে।’ কৃষ্ণাদের বর্তমান সাফল্যে অতি আত্মবিশ^াসী না হয়ে পা মাটিতে রাখারও পরামর্শ দিয়েছেন সালাউদ্দিন, ‘আরও বলেছি, তোমরা বয়সভিত্তিক জাতীয় দলে খেলে যে প্রচার ও খ্যাতি পেয়েছো স্রেফ একটা আসর খেলেই, সেই খ্যাতি-প্রচার পেতে আমাকে জাতীয় দলে ১৩ বছর খেলতে হয়েছে। জাতীয় দলে খেলার সময় আমি যেসব সুযোগ-সুবিধাগুলো পেতাম, আজ আমি জোর দিয়ে বলতে পারি, এখনকার জাতীয় দলের ফুটবলাররা তারচেয়েও অনেক বেশি সুযোগ-সুবিধা পাচ্ছে।’
×