ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

খাতা পুনঃনিরীক্ষণে উঠে এসেছে এই চিত্র

সব বোর্ডেই এবার ভুলে ভরা এইচএসসি পরীক্ষার ফল

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

সব বোর্ডেই এবার ভুলে ভরা এইচএসসি পরীক্ষার ফল

বিভাষ বাড়ৈ ॥ এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষার খাতা পুনঃনিরীক্ষণে সকল বোর্ডেই এবার ফলে অসংখ্য ভুল ধরা পড়েছে। অনলাইনে খাতা পুনঃনিরীক্ষণে রেকর্ড সংখ্যক আবেদনের পর পরিবর্তন হলো অসংখ্য পরীক্ষার্থীর ফল। ১০ শিক্ষা বোর্ডে খাতা পুনঃনিরীক্ষণে আড়াই হাজারেরও বেশি পরীক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে, যাদের প্রত্যেকেরই ফল আগের তুলনায় ভাল হয়েছে। ফেল থেকে পাস ও জিপিএ-৫ এ দুটি ক্ষেত্রেই সংখ্যা সবচেয়ে বেশি পরিবর্তন হয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে। খাতা পুনঃনিরীক্ষণে ভুল ধরা পড়ায় এখানে ফল পরিবর্তন হয়েছে এক হাজার ৯ শিক্ষার্থীর। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১৫, ফেল থেকে পাস করেছে ২০৪ পরীক্ষার্থী। জানা গেছে, ইতোমধ্যেই খাতা পুনঃনিরীক্ষণের ফল প্রায় চূড়ান্ত করে এনেছে শিক্ষা বোর্ডগুলো। শনিবার রাত থেকে বোর্ডগুলো স্ব স্ব ওয়েবসাইটে ফল প্রকাশ শুরু করেছে। পুনঃনিরীক্ষণের আবেদনের সময় দেয়া টেলিটক মোবাইল নম্বরে এসএমএস পাঠিয়েও ফল জানা যাবে। এর আগে আটটি সাধারণ, একটি মাদ্রাসা ও কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে কাক্সিক্ষত ফল না পেয়ে এবার শিক্ষার্থীরা তিন লাখ ৩৩ হাজার ৩২২টি উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করে। যারা এবার ফল প্রকাশের পর ঘোষিত ফল নিয়ে আপত্তি তুলেছিলেন। গত ৮ আগস্ট ফল প্রকাশের পর ঢাকা বোর্ডেই এক লাখ ৪০ হাজার উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বোর্ডে ৫৫ হাজার, রাজশাহী বোর্ডে ৪০ হাজার, কুমিল্লা বোর্ডে ৩২ হাজার, যশোর বোর্ডে ৩১ হাজার, সিলেট বোর্ডে ১৭ হাজার, বরিশাল বোর্ডে সাড়ে ১৯ হাজার, দিনাজপুর বোর্ডে সাড়ে ২৭ হাজারের মতো উত্তরপত্র পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করেছে শিক্ষার্থী। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ১২ হাজারের মতো শিক্ষার্থী ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করে। কর্মকর্তারা বলছেন, এবারের আবেদনের সংখ্যা অন্য যে কোন বছরের তুলনায় বেশি। আগে কাক্সিক্ষত ফল অর্জন করতে না পারার কারণেই কেবল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করত শিক্ষার্থী। এবার কাক্সিক্ষত ফল না পাওয়া ও ফলে জিপিএ’র পাশাপাশি নম্বর বাড়ার আশাও একটি অন্যতম কারণ। অনেকে মনে করছে, জিডিএ পরিবর্তন না হলেও হয়ত মোট নম্বর বাড়তে পারে। ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান অধ্যাপক মাহাবুবুর রহমান বলছিলেন, নম্বর দেয়ার ফলে শিক্ষার্থীরা দেখতে পাচ্ছে তার জিপিএ কত এবং প্রাপ্ত নম্বর কত। এমনও আছে ৭৯ পেয়েছে, তার গ্রেড কিন্তু এ। আগে সে জানত না কত নম্বর পেয়ে এ গ্রেড পেয়েছে। এখন জানতে পারছে এবং পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদন করছে। এ কারণে অন্যবারের চেয়ে এবার পুনঃনিরীক্ষণের আবেদনের সংখ্যা বেড়েছে। এবার এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় পাসের হার দাঁড়িয়েছে ৭৪ দশমিক ৭০ শতাংশ, জিপিএ-৫ প্রাপ্তির সংখ্যা হয়েছে ৫৮ হাজার ২৭৬ জনে। পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তিসহ সকল সূচকেই আগের সাফল্যকে মøান করে দিয়ে দিয়েছেন এবারের পরীক্ষার্থীরা। গত বছর পাস করেছিল ৬৯ দশমিক ৬০ শতাংশ, জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৪২ হাজার ৮৯৪ জন। গত বছরের তুলনায় পাসের হার বেড়েছে পাঁচ দশমিক ১০ শতাংশ, জিডিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ১৫ হাজার ৩৮২ জন। আটটি সাধারণ, একটি কারিগরি ও একটি মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে এবার ১২ লাখ তিন হাজার ৬৪০ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাস করেছে আট লাখ ৯৯ হাজার ১৫০ জন। এবার শতভাগ পাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা যেমন বড়েছে, তেমনি কমেছে শতভাগ ফেল করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। গ্রেডিং পদ্ধতি চালু হওয়ার পর বন্ধ ছিল শিক্ষার্থীদের নম্বর প্রদান প্রক্রিয়া। ১৪ বছর পর এবার থেকে আবার গ্রেড পয়েট এভারেজের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়েছে বিষয় ভিত্তিক প্রাপ্ত নম্বরও। জানা গেছে, ফল প্রকাশের পর থেকেই ছিল অনলাইনে খাতা পুনঃনিরীক্ষণের জন্য আবেদনের সুযোগ। আবেদন গ্রহণ করে এখন পর্যাক্রমে ফল প্রকাশ করছে বোর্ডগুলো। যেখানে ফলাফলের ব্যাপক পরিবর্তনের চিত্রই ধরা পড়েছে। শনিবার শিক্ষা বোর্ডগুলোর চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকের অফিসে আলাদা আলাদাভাবে টেলিফোনে যোগাযোগ করে ফল পরিবর্তনের তথ্য পাওয়া গেছে। শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরাও স্ব স্ব বোর্ডে গিয়ে ফল জানতে পারছেন। খাতা পুনঃনিরীক্ষণ শেষে ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডে পরিবর্তন হয়েছে রেকর্ড সংখ্যক এক হাজার ৯ পরীক্ষার্থীর ফল। যাদের মধ্যে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১৫ জন পরীক্ষার্থী। আগে ফেল করলেও তাদের মধ্যে ২০৪ জন এবার পাস করেছে। যশোরে পরিবর্তন হয়েছে ১৪৩ জন পরীক্ষার্থীর ফল, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪১ জন। আগে ফেল করলেও এখন পাস করায় ভাগ্য খুলেছে ৩৯ জন পরীক্ষার্থী। চট্টগ্রাম শিক্ষা বোর্ডেও পরিবর্তন হয়েছে অনেক পরীক্ষার্থীর ফল। এখানে মোট ৩২৮ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩৯ জন। এছাড়া আগে ফেল করলেও আপত্তি তুলে পাস করেছে ৮৬ জন পরীক্ষার্থী। মাদ্রাসায় পরিবর্তন হয়েছে ১০৫ জনের ফল, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮ জন, আর ফেল থেকে পাস করেছে ৩৯ জন পরীক্ষার্থী। বোর্ডগুলো বলছে, এভাবে রাজশাহী, কুমিল্লা, দিনাজপুরসহ অন্যান্য বোর্ডেও প্রায় একই হারে ফল পরিবর্তন হয়েছে খাতা পুনঃনিরীক্ষণে। ভুল ধরা পড়া সম্পর্কে প্রায় একই তথ্য দিয়েছেন বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা। তারা বলেছেন, সবচেয়ে বেশি ভুল পাওয়া গেছে বৃত্ত ভরাটে। যেমন দেখা গেছে, একজন ৮৫ পেয়েছে সেখানে উল্টো ৫৮ বৃত্ত ভরাট করা হয়েছে। আবার দেখা গেছে, ১৩টি প্রশ্নের উত্তর দিল কেউ। একটির উত্তরের নম্বর হয়ত মোট নম্বরের সঙ্গে যোগই করা হয়নি। কোন কারণে হয়ত যোগ করার সময় ১২টি প্রশ্নের উত্তরের প্রাপ্ত নম্বর যোগ করা হয়েছে। এখন ঠিকভাবে যোগ করার সময় পরীক্ষার্থীর মোট নম্বরও বেড়ে গেছে। কিন্তু কেন বিশাল এই সংখ্যা পরিবর্তন? এই প্রশ্নের উত্তরের সংশ্লিষ্ট সকলেই বলছেন, তাড়াহুড়ো করে ফল প্রকাশের কারণেই খাতায় ব্যাপক ভুল হচ্ছে। যার মূল্য দিচ্ছে শিক্ষার্থীরা। মূলত তিন ধরনের ভুল ধরা পড়েছে। এক. কিছু খাতায় নম্বরের যোগফল ঠিক ছিল না। দুই. কিছু উত্তরের নম্বরও যোগ করা হয়নি। আর তিন. ওএমআর ফরমে বৃত্ত ভরাটেও ভুল।
×