ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ঘিরে নেতাকর্মীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬

আওয়ামী লীগের কাউন্সিল ঘিরে নেতাকর্মীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক জাতীয় সম্মেলনের বাকি এখনও একমাস ৭ দিন। এর মধ্যে কাক্সিক্ষত পদ পেতে পদপ্রত্যাশীরা দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন। প্রভাবশালী নেতাদের পাশাপাশি সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন তারা। নিজেদের দৃশ্যমান করতে দলীয় কর্মসূচীতে অংশগ্রহণ বাড়িয়ে দিয়েছেন। এর পাশাপাশি সভাপতির ধানম-ির কার্যালয়ে যাতায়াত করছেন নিয়মিত। সম্মেলন সফল করতে গঠিত উপ-কমিটিগুলোর নিয়মিত বৈঠকে যারা সদস্য নন, এমন নেতারাও অংশ নিচ্ছেন। লক্ষ্য একটাই, যেভাবেই হোক দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগের ২০তম কাউন্সিলে গঠিত নতুন কমিটিতে নিজেদের নাম লেখানো। আওয়ামী লীগ নেতাদের চোখ এখন ২২-২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠেয় কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের দিকে। কে হচ্ছেন সাধারণ সম্পাদক? সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম কী ওই পদে আবারও নির্বাচিত হয়ে হ্যাট্রিক করবেন, নাকি এবার সাধারণ সম্পাদক পদে দেখা যাবে নতুন মুখ? কে বাদ যাচ্ছেন, কার পদোন্নতি হচ্ছে আবার নতুন কারা দলের সর্বোচ্চ এই নীতিনির্ধারণী ফোরামে নাম লেখাচ্ছেন- ইত্যাদি নানা প্রশ্ন ও কৌতূহল এখন আওয়ামী লীগের প্রবীণ-নবীন নেতাদের মুখে মুখে। কানাডা-নিউইয়র্ক সফর শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পরই কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের চূড়ান্ত প্রস্তুতির কাজ শুরু হবে বলে জানা গেছে। আর পেছানো নয়, তৃতীয় দফায় নির্ধারিত ২২-২৩ সেপ্টেম্বর কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অনুষ্ঠানের নির্দেশ দিয়েছেন দলটির সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রীর এমন নির্দেশের পরই নড়েচড়ে বসেছে দলটির নীতিনির্ধারক নেতারা। সে মোতাবেক কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের প্রস্তুতির কাজও শুরু হয়েছে। আগামী দু’তিন দিনের মধ্যেই সম্মেলনের আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতির পর্ব শুরু হবে। সম্মেলনের দিন যতই ঘনিয়ে আসছে দলটির পদে থাকা ও পদপ্রত্যাশী নেতাদের টেনশন যেন বেড়েই চলেছে। কেন্দ্রীয় নেতাদের একটি অংশ পদোন্নতির আশায় দিন গুনছে। অপর একটি অংশ কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বাদ পড়ার আশঙ্কায় ভুগছেন। সম্মেলনকে ঘিরে নেতাদের মধ্যে একদিকে যেমন পদ-পদবি হারানোর ভীতি কাজ করছে, অন্যদিকে চলছে পদোন্নতির জোর তদবিরও। বর্তমান কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদে থাকা নেতারা স্ব স্ব পদ টিকিয়ে রাখতে কিংবা পদোন্নতি পেতে দলটির প্রতিটি অনুষ্ঠানে তাদের এখন সরব উপস্থিতি। কাউন্সিলকে সামনে রেখে দীর্ঘদিন নিষ্ক্রিয় থাকা অনেক সাবেক ছাত্রনেতাদেরও আনাগোনা বেড়ে গেছে। শুধু ধানম-ির কার্যালয়ই নয়, দলের শীর্ষ নেতাদের ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান, বাসাবাড়িতেও পদপ্রত্যাশীদের যাতায়াত বেড়ে গেছে। নিজ নিজ কর্মী বাহিনীসহ গিয়ে নেতাদের নানাভাবে ‘নিজেদের জনপ্রিয় প্রমাণ ও দৃষ্টি আকর্ষণের’ চেষ্টা করছেন। এ ছাড়া প্রভাবশালী নেতারা যেখানে রাজনৈতিক কর্মসূচী রাখছেন, সেখানে নিজস্ব কর্মী বাহিনী দিয়ে ‘প্রটোকল’ বাড়িয়ে দিচ্ছেন পদপ্রত্যাশীদের কেউ কেউ। শুধু পদপ্রত্যাশীরাই নয়, সারাদেশের কোটি নেতাকর্মী ও সমর্থকদেরও কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের দিকেই মনোযোগ বেশি। আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়, ধানম-ির আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর রাজনৈতিক কার্যালয়সহ কেন্দ্রীয় নেতাদের অফিস, বাসা-বাড়িতে একই আলোচনা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বে এবার কারা আসছেন? সভাপতিম-লী, সাধারণ সম্পাদক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদে বড় ধরনের পরিবর্তন আসছে, নাকি সামান্য কিছু রদবদল হবে, এ নিয়ে গুঞ্জন-আলোচনা এখন সব পর্যায়ের নেতাদের মুখে মুখে। বিভিন্ন পর্যায়ের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে জানা গেছে, অক্টোবরে আওয়ামী লীগের ত্রি-বার্ষিক কেন্দ্রীয় সম্মেলনে দলীয় গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে ব্যাপক পরিবর্তন আসছে। সময়ের চাহিদার তাগিতে এবং প্রয়োজনীয়তার নিরিখে কাউন্সিলের মাধ্যমে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লী, সভাপতিম-লী, সাংগঠনিক সম্পাদক এবং কেন্দ্রীয় সদস্য সংখ্যার কলেবর বাড়ানো হচ্ছে। দলীয় সূত্রগুলো মনে করছে, আগামী কাউন্সিলের মাধ্যমে বর্তমান ৭৩ সদস্যবিশিষ্ট কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের কলেবর বৃদ্ধি করে ৮১ করা হতে পারে। ময়মনসিংহসহ নতুন কয়েকটি বিভাগ ঘোষণার কারণে বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদকের সংখ্যাও বাড়ানো হবে। এছাড়া দলের নিষ্ক্রিয় ও বয়সের ভারে ন্যুব্জ একাধিক সভাপতিম-লীর সদস্যকে সরিয়ে বেশ ক’জন নেতাকে দায়িত্ব দেয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে রাজনীতিতে সক্রিয় বর্তমান উপদেষ্টা পরিষদের দু’একজনকে সভাপতিম-লীতে দেখা যেতে পারে। সম্পাদকম-লীর দু’একটি পদ বৃদ্ধিসহ কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সদস্য সংখ্যা বাড়িয়ে বেশ কয়েকজন সাবেক তুখোর ছাত্রনেতাকে অন্তর্ভুক্ত করা হতে পারে। এদিকে দলের ২০তম কাউন্সিলের জোর প্রস্তুতি চলছে দলটিতে। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে জেলা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে কাউন্সিলরদের তালিকা আহ্বান করা হয়েছে। এ ছাড়াও সম্মেলনে শৃঙ্খলা বজায় রাখতে ২ হাজার স্বেচ্ছাসেবক নিয়জিত থাকবে বলে ইতোমধ্যে জানানো হয়েছে। সম্মেলন সফল করতে গঠিত ১১টি উপ-কমিটি ইতোমধ্যে নিজেদের মধ্যে কয়েক দফা বৈঠক করে প্রস্তুতির কাজ অনেকটা এগিয়ে নিয়ে গেছেন। ধারাবাহিকভাবে প্রায় সব কমিটিই বৈঠক করে প্রস্তুতির প্রাথমিক সব ধাপ চূড়ান্ত করেছে। সম্মেলনে দেশী-বিদেশী কয়েক হাজার অতিথি যেন আসতে পারেন সে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সম্মেলনের সাত দিন আগে থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানে আলোকসজ্জা করা হবে। এ ছাড়া জেলা-উপজেলা শহরগুলোর গুরুত্বপূর্ণ স্থান এবং দলীয় কার্যালয়ে তিন দিনব্যাপী আলোকসজ্জা ও জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ বাজানো হবে। ব্যানার-ফেস্টুন, পোস্টারের নমুনা, সম্মেলনের মঞ্চের নক্সাও ইতোমধ্যে চূড়ান্ত করা হয়েছে। শুধু সম্মেলনস্থল ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যান নয়, পুরো ঢাকা মহানগরীকে নান্দনিক সাজে সজ্জিত করারও প্রস্তুতি চলছে ক্ষমতাসীন দলটিতে। এক কথায় জাতীয় সম্মেলনকে স্মরণীয় ও জাঁকজমকপূর্ণভাবে পালনে জোর প্রস্তুতি চলছে দলটিতে। গতানুগতিক নয়, জাতীয় সম্মেলনকে সামনে রেখে দলটির ইতিহাস-ঐতিহ্যের পাশাপাশি সরকারের সাফল্যগাঁথা ইতিহাস এবং বিএনপি-জামায়াতের ভয়াল নাশকতা, ধ্বংসাত্মক কর্মকা- এবং ষড়যন্ত্রের রাজনীতি সম্পর্কে তথ্য-প্রমাণ ভিত্তিক পোস্টার-ব্যানার-সিডি-ভিসিডির মাধ্যমে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রচার চালাবে দলটি।
×