ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আত্মহত্যা করছে কেউ, কারওবা গা ঢাকা দেয়ার চেষ্টা

যেভাবে জঙ্গী উত্থান পতনও সেভাবে- পালাবার পথ নেই

প্রকাশিত: ০৬:০৯, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

যেভাবে জঙ্গী উত্থান পতনও সেভাবে- পালাবার পথ নেই

মোয়াজ্জেমুল হক ॥ কথিত জিহাদের প্রচার চালিয়ে আকস্মিক যে উত্থান ঘটেছিল- সে জিহাদে জড়িত সন্ত্রাসীরা এখন বিভিন্নভাবে মরছে, কেউ আত্মহত্যা করছে আবার অনেকে আত্মরক্ষার্থে পালিয়ে বেড়াচ্ছে। গত ১ জুলাই ঢাকার গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয়, শোলাকিয়ায় পরে কল্যাণপুরের ঘটনা দেশজুড়ে এক ধরনের ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছিল। মানুষ হত্যার নামে কথিত এই জিহাদ বন্ধে সরকার সর্বমুখী কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের পর পরিস্থিতি এখন পুরোপুরিভাবে পাল্টে গেছে। পুলিশ সদর দফতরের দায়িত্বশীল সূত্র মতে, টার্গেট কিলিং থেকে শুরু করে অতি সাম্প্রতিক জঙ্গী তৎপরতার মাধ্যমে দেশী-বিদেশী, মন্দিরের পুরোহিত-সেবায়েত, গির্জার যাজক হত্যার যে প্রবণতা শুরু হয়েছিল তা এখন আর নেই। গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত সব বাহিনী এসব ঘটনা নিয়ে এত তৎপরতা চালায় যে, এতে ধর্ম রক্ষার নামে সহিংস সন্ত্রাসী তৎপরতা খুব বেশি দূর এগোতে পারেনি। এসব অপকর্মের সঙ্গে যারা জড়িত ছিল তারা এখন মরছে, প্রাণ রক্ষার্থে কোন না কোনভাবে গা ঢাকা দিয়ে রয়েছে। এরপরও এরা একে একে ধরা পড়ছে। রেহাই নেই। সরকার সুনির্দিষ্টভাবে বলে দিয়েছে এসব ঘটনায় জড়িতরা কোন অবস্থাতেই রেহাই পাবে না। এদিকে পুরুষ সঙ্গীদের সন্ত্রাসী তৎপরতার পর নারী জঙ্গীদের আটক ও তথ্য উদঘাটনে বেরিয়ে এসেছে নতুন আরেক আপদ। তবে এদের সংখ্যা দেশজুড়ে খুব বেশি নয় বলে পুলিশ ধারণা করছে। পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক বুধবার জনকণ্ঠকে জানান, জঙ্গীবিরোধী তৎপরতা জোরালো হওয়ায় এখন নারী জঙ্গীও ধরা পড়ছে। এদের পোষ্যরাও পার পাচ্ছে না। ধরা পড়ার পর তাদের ভবিষ্যত কি হবে তা আঁচ করতে পেরে কেউ কেউ আত্মহত্যার পথও বেছে নিয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, আজিমপুরে পুলিশী অভিযানের সময় তেহজীব করিম ওরফে শমসের উদ্দিন নামের এক জঙ্গী আত্মহত্যা করেছে। পুলিশের তথ্য অনুযায়ী সে নিজের গলা কেটে আত্মহত্যা করেছে। পুলিশ সূত্রে আরও জানানো হয়, জঙ্গী তৎপরতা, গোপন আস্তানা, অস্ত্র ও গোলাবারুদের কাজ কারবার সবই এখন গোয়েন্দাদের নজরদারির জালে রয়েছে। তারা আশা করছেন, এভাবে জঙ্গীবিরোধী অভিযান অব্যাহত রাখা গেলে জঙ্গীদের সকল আস্তানা যেমন গুটিয়ে যাবে তেমনি তাদের সন্ত্রাসী কর্মকা-েরও বিস্তৃতি ঘটার কোন আশঙ্কা থাকবে না। কারণ ইতোমধ্যে যেসব জঙ্গী নেতা ও মাঠ পর্যায়ের আত্মঘাতী স্কোয়াডের সদস্যরা গ্রেফতার হয়ে রিমান্ডে তথ্য দিয়েছে তা থেকে অনেক কিছু পরিষ্কার হয়ে গেছে। জঙ্গীপনায় জড়িতদের আদ্যোপান্ত ফাঁস হয়ে গেছে। এখন ওরা পালানোর পথ ছাড়া আর কিছুই চিন্তা করতে পারছে না। ইতোপূর্বে যেসব জঙ্গী জিহাদী কার্যক্রম বলে ধর্মীয় মনোভাবাপন্ন মানুষের সহানুভূতি অর্জনের চেষ্টা করেছিল তাও ব্যর্থ হয়ে গেছে। দেশে জঙ্গী দমনে যে তৎপরতা শুরু হয়ে এ পর্যন্ত চলে এসেছে তা শক্তিশালী রাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে প্রশংসা অর্জন করেছে। পুলিশ সূত্রে ইতোপূর্বে নিশ্চিত করা হয়েছে, বিভিন্ন ব্যানারে জঙ্গী গোষ্ঠীর যে অবস্থান ঘোষণা করা হয়েছিল মূলত এদের সকলের পূর্বের অবস্থান জামায়াত শিবিরের সঙ্গে সম্পৃক্ত। বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপি নানাভাবে নানা গোপন তৎপরতায় সরকারকে বেকায়দায় ফেলার জন্য হেন অপকর্ম করেনি যা আর বাকি রয়েছে। তাদের এসব অপকর্মে যুক্ত ছিল জামায়াত শিবির। জামায়াত শিবিরই যখন অকৃতকার্য হয়ে যায় তখন বিভিন্ন নামে জঙ্গী গোষ্ঠীর উত্থান হয়েছে বলে জানান দেয়া হয়। সে জঙ্গীরাও এখন ব্যর্থ হয়ে পালাবার পথ খুঁজছে। এ জঙ্গীদের মধ্যে ইংরেজী মাধ্যমে পড়ুয়া ও বিত্তবান পরিবারের সদস্যদের সম্পৃক্ততা সকলকে বিস্মিত করেছে। ভেতরে ভেতরে জঙ্গীবাদের নামে সন্ত্রাসী তৎপরতার বিস্তৃতি ঘটাতে এরা অর্থ ও অস্ত্রশস্ত্রে যোগানও পেয়েছে। সরকার ব্যাংকিং চ্যানেলসহ যেসব পথে অর্থের যোগান হয় সেসব ক্ষেত্রে কঠোর নজরদারি আরোপ করায় ওই জাতীয় অর্থের যোগান ব্যাপকভাবে হ্রাস পেয়েছে। এছাড়া আইনশৃখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তৎপরতায় প্রতিবেশী দুই দেশ থেকে অস্ত্র সরবরাহের রুটেও ধস নেমেছে। সূত্র জানায়, দেশে এসব সন্ত্রাসী কর্মকা- ও জঙ্গীবাদের নেপথ্যে অপরাজনীতি জড়িত। অপরাজনীতির সঙ্গে যারা প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে জড়িত তাদের কারণে এসবের উত্থান ঘটেছিল। তবে সরকারের কঠোর মনোভাব ও কার্যকর পদক্ষেপের ফলে তা আর বেশি দূর এগোতে পারেনি। এখন সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদে জড়িতরাই পালানোর পথেই এগোতে তৎপর বলে সূত্রসমূহের অভিমত।
×