ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

৮৯ বছর পর কারাবিধি সংশোধনের উদ্যোগ, কমিটি গঠন

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৬

৮৯ বছর পর কারাবিধি সংশোধনের উদ্যোগ, কমিটি গঠন

আরাফাত মুন্না ॥ প্রায় ৮৯ বছর পর কারা বিধি সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সুপ্রীমকোর্ট। ইতোমধ্যে এ বিষয়ে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। কমিটি কারা বিধি যাচাই-বাছাই করে প্রতিবেদন দেয়ার পর প্রধান বিচারপতির সুপারিশক্রমে বিধি সংশোধনের কাজ শুরু করবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। সুপ্রীমকোর্টের একটি দায়িত্বশীল সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে। জানা গেছে, বাংলাদেশে প্রথম কারাগার স্থাপিত হয়েছিল ১৭৮৮ সালে ঢাকায়। প্রথম দিকে এটাকে বলা হতো ক্রিমিনাল ওয়ার্ড। কিন্তু কারাগারের ব্যবস্থাপনার বিধান সম্বলিত একটি বিধি তৈরি করা হয়েছিল ১৮৬৪ সালে। এরপর ওই বিধি সাতবার সংশোধন করা হয়েছে। সর্বশেষ সংশোধন হয় ১৯৩৭ সালে। ব্রিটিশ শাসন অবসানের পর পাকিস্তানের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালে স্বাধীন হয় বাংলাদেশ। এরপর ইতোমধ্যে প্রায় অর্ধ শতাব্দী কেটে গেছে। কিন্তু নির্বাহী আদেশে কারাবিধির কিছু কিছু ক্ষেত্রে পরিবর্তন ও সংশোধন হলেও, এতে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন পরিবর্তন হয়নি। আরও জানা গেছে, ২০০৬ সালে চার দলীয় জোট সরকারের সময় কারা বিধি সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছিল। মন্ত্রিপরিষদে দফায় দফায় বৈঠক করার পর সর্বশেষ তা আর হয়নি। সম্প্রতি সুপ্রীমকোর্ট এই কারা বিধি সংশোধনের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এর অংশ হিসেবে একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি কারা বিধির খুঁটিনাটি বিষয় যাচাই-বাছাই করে দেখবে। এ কারা বিধিতে কি ধরনের সংশোধন আনা যেতে পারে এ কমিটি ওই ধরনেরই একটি প্রতিবেদন পেশ করবে বলে সুপ্রীমকোর্ট সূত্র জানিয়েছে। সুপ্রীমকোর্টের এই কমিটির সুপারিশের ভিত্তিতেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কারা বিধি সংশোধন করবে বলে সুপ্রীমকোর্ট সূত্র জানায়। এই কমিটিকে কারাগারে জরিমানার বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বলেছে সুপ্রীমকোর্ট। বিশ্বব্যাপী অপরাধ আইনে যখন বৈপ্লবিক সব সংস্কার আনা হচ্ছে, তখন বাংলাদেশের অপরাধ আইনে পরিবর্তন আসছে একেবারে ঢিমেতালে। কারা ব্যবস্থার উন্নয়ন, বন্দীদের শাস্তির চেয়ে সংশোধনের ওপরই আধুনিক রাষ্ট্রের কারাগারগুলোয় বেশি জোর দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের বিদ্যমান আইনে কারাগারের পরিবেশ উন্নত করার যে প্রচেষ্টা রয়েছে, তা একদিকে যেমন অপর্যাপ্ত অন্যদিকে এর প্রয়োগের অভাবে কারাবন্দীদের মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে প্রতিনিয়ত। সম্প্রতি প্রধান বিচারপতি কারাগার পরিদর্শন করার পর এসব টুকিটাকি বিষয় চোখে পড়ে। তারপর তিনি কারা বিধির দিকে নজর দেন। সে হিসেবে প্রধান বিচারপতির সুপারিশক্রমে সংশোধন হচ্ছে কারাবন্দীদের জরিমানা আদায় সংক্রান্ত একশ’ ৩৬ বছর আগের (১৮৮০ সালের) বিধান। প্রধান বিচারপতির নির্দেশে জেল কোডের শত বছরেরও বেশি পুরনো এই নিয়ম সংশোধন করতে কাজ করছে সর্বোচ্চ আদালত। হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার সাব্বির ফয়েজ বলেন, একটি কমিটি করে দেয়া হয়েছে। জনগণের স্বার্থে জরিমানা আদায়ের বিষয়টি সহজ করার জন্য কমিটি কাজ করছে। তাদের সুপারিশের আলোকে পরবর্তী ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাঁচ সদস্যের এই কমিটিতে প্রধানের দায়িত্ব পালন করছেন হাইকোর্ট বিভাগের রেজিস্ট্রার আবু সৈয়দ দিলজার হোসেন। সদস্য হিসেবে রয়েছেন অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (অর্থ ও উন্নয়ন) মোঃ যাবিদ হোসেন, স্পেশাল অফিসার বেগম হোসনে আরা আক্তার, অতিরিক্ত রেজিস্ট্রার (সার্বিক) এসএম এরশাদুল আলম, ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন) মোঃ আজিজুল হক এবং সহকারী রেজিস্ট্রার (অর্থ) মোঃ ইসমাইল হোসেন। ১৮৮০ সালের হাইকোর্ট বিভাগের জরিমানা আদায় সংক্রান্ত নির্দেশনা অনুযায়ী কারাবিধির ৫৩৩ ধারায় বলা আছে, ‘কারা তত্ত্বাবধায়ক অথবা কারা পরিদর্শক জরিমানার অর্থ গ্রহণ করতে পারবেন না। এক্ষেত্রে কারা কর্তৃপক্ষ জরিমানা প্রদানের জন্য কারাবন্দীর প্রতিনিধি বা আত্মীয়স্বজনকে জরিমানার নির্দেশ প্রদানকারী আদালতে পাঠাবেন।’ সম্প্রতি রেজিস্ট্রার জেনারেলের কাছে কারা কর্তৃপক্ষের পাঠানো চিঠিতে বলা হয়, কারাবন্দীরা সাধারণত আগে কারাদ- ভোগ করেন এবং কারাদ- উত্তীর্ণ হওয়ার কাছাকাছি সময়ে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করেন। কিন্তু সাজাপ্রাপ্ত অধিকাংশ বন্দীর প্রতিনিধি বা আত্মীয়স্বজনদের আদালতে গিয়ে জরিমানার অর্থ পরিশোধ করা কঠিন হয়। অনেক সময় আইনজীবীর শরণাপন্ন হতে হয়। আবার কখনও মামলার নথি খুঁজে পাওয়া যায় না। এতে অনেক সময়ই জরিমানা আদায় সম্ভব হয় না। জানা গেছে, কয়েক মাস আগে প্রধান বিচারপতি গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার পরিদর্শনে গেলে তখনই তাকে বিষয়টি জানিয়েছিল কারা কর্তৃপক্ষ। তারই ধারাবাহিকতায় সুপ্রীমকোর্টে এই চিঠি পাঠানো হয়।
×