ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নাইক্ষ্যংছড়িতে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের বরাদ্দ ফেরত যাচ্ছে

জামায়াত নেতার দখলে খাস জমি

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ৯ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জামায়াত নেতার দখলে খাস জমি

স্টাফ রিপোর্টার, কক্সবাজার ॥ খাস খতিয়ানভুক্ত জমি থাকা সত্ত্বেও পার্বত্য নাইক্ষ্যংছড়িতে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ কাজ বাস্তবায়ন করা যাচ্ছে না। উপজেলা জামায়াতের আমির রফিক অস্তিত্বহীন এক সংস্থার নামে খাস জমি দখল করে রাখায় নাইক্ষ্যংছড়িতে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণকল্পে সরকারের বরাদ্দ দুই কোটি টাকা ফেরত যাচ্ছে। জামায়াতীরা ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের নামে ভুয়া দলিল করে গত ২৬ বছর ধরে ২০ শতক খাস জমি দখলে রেখেছে। সেখানে রাস্তা সংলগ্ন দোকান নির্মাণ করে ভাড়া আদায় করা হচ্ছে প্রতিমাসে। দোকানের পেছনে রয়েছে উপজেলা জামায়াতের আমির রফিকের বাসা। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণের জন্য উপজেলা পরিষদের পক্ষে সার্ভেয়ার নিয়োগ ও পরিমাপ শেষে জামায়াতীদের দখলকৃত ওই জমি সরকারের খাস খতিয়ানভুক্ত জায়গা বলে জানা গেছে। এছাড়া জমি বিক্রেতা নুরুল আলমও লিখিত অঙ্গীকার পত্রে জানান, উপজেলা জামায়াতের আমির রফিকের কাছে তিনি কোন জমি বিক্রি করেননি। জালিয়াতচক্র ১৯৯১সালে খতিয়ান সৃজনের সময় জমি বিক্রেতার পিতার নাম মৃত শামসুল আলমের স্থলে বদিউল আলম লিপিবদ্ধ করিয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে সরকার পার্বত্য বান্দরবান জেলায় ৩টি মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণকল্পে বরাদ্দ দিয়েছে। এদিকে দুই মাসের মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করতে ব্যর্থ হলে ডিসেম্বরে ফেরত যাবে দুই কোটি টাকার বরাদ্দ। জামায়াতের উপজেলা আমির মোঃ রফিক ওই জায়গায় দোকানঘর ভাড়া দিয়ে প্রতিমাসের আদায়কৃত টাকার একটি অংশ জামায়াত ফান্ডে জমা করে চলছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে রফিক এসব অভিযোগ সত্য নয় বলে দাবি করেছেন। নাইক্ষ্যংছড়িতে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণকল্পে সরকারের দেয়া দুই কোটি টাকা ফেরত যাচ্ছে জেনে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বুধবার ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গেছে, নাইক্ষ্যংছড়ির একমাত্র পর্যটন স্পট উপবনে পর্যটক যাতায়াতের উপসড়কের পাশে একদিকে সরকারী রেস্টহাউস, অপরদিকে মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণকল্পে নির্ধারিত ওই জায়গায় বসতি গেড়েছে উপজেলা জামায়াতের আমির রফিক। দোকানিরা জানান, রফিক তাদের কাছে ৪টি দোকান মাসিক হিসেবে ভাড়া দিয়েছেন। উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার রাজা মিয়া বলেন, খাসখতিয়ানভুক্ত জায়গাটি জামায়াতীদের দখলে থাকায় ভবন নির্মাণে ব্যর্থ হয়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে সরকারের দেয়া বরাদ্দ ফেরত যাওয়া খুবই দুঃখজনক। উপজেলা পর্যায়ে বাণিজ্যিক গুরুত্বপূর্ণ উপযুক্ত জমি থাকা সত্ত্বেও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণার্থে ভবন নির্মাণ না হওয়ায় পার্বত্য এলাকাসহ কক্সবাজারে মুক্তিযোদ্ধা এবং স্বাধীনতা পক্ষের লোকজনের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এএসএম শাহেদুল ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেন, মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করতে জায়গা চিহ্নিত করে ইতোপূর্বে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পত্র প্রেরণ করা হয়েছে। কমপ্লেক্স নির্মাণের জন্য প্রায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ এসেছে। তবে ওই জায়গাটি ইসলামী সমাজকল্যাণ পরিষদের নামে দাবি করে দখলে রেখেছেন রফিক। এ নামে কোন সংস্থার অস্তিত্ব নাইক্ষ্যংছড়িতে নেই বলে ইউএনও শাহেদুল আরও জানান, সরকারী খাস জায়গার দখল ছেড়ে দিতে মঙ্গলবার নাইক্ষ্যংছড়িতে মাইকিং করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবন নির্মাণ করা সম্ভব না হলে আগামী ডিসেম্বরে ওই বরাদ্দের ২ কোটি টাকা ফেরত যাবে।
×