ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

কলেজ পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে বিশ্বব্যাংক ৮শ’ কোটি টাকা দিচ্ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৬

কলেজ পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার মানোন্নয়নে বিশ্বব্যাংক ৮শ’ কোটি টাকা  দিচ্ছে

আনোয়ার রোজেন ॥ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজ শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রায় ৮শ’ কোটি টাকা ঋণ সহায়তা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। কলেজ পর্যায়ে উচ্চশিক্ষার গুণগত মান নিশ্চিত করতে পাঁচ বছর মেয়াদী প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার। সরকারের ‘কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের’ (সিইডিপি) আওতায় স্বল্পসুদে এ ঋণ দেবে সংস্থাটি। অনার্স এবং মাস্টার্স পড়ানো হয় এমন প্রায় ৭শ’ সরকারী-বেসরকারী কলেজের শিক্ষাদান এবং শিক্ষার পরিবেশ উন্নয়নে এ অর্থ ব্যয় হবে। ঋণের অর্থে কলেজ শিক্ষা খাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার ও কৌশল নির্ণয়, কলেজগুলোর ব্যবস্থাপনা সক্ষমতা শক্তিশালীকরণ, বেসরকারী কলেজের শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি উন্নত করা এবং সরকারী ও বেসরকারী কলেজের অনার্স ও মাস্টার্স কোর্সের প্রশিক্ষণ শিক্ষা পদ্ধতি উন্নত হবে। এছাড়া প্রকল্পের আওতায় সরকারী কলেজে শিক্ষকের শূন্য পদ পূরণ এবং ১৬ হাজারেরও বেশি শিক্ষক ও কলেজ প্রশাসনের কর্মকর্তার নিবিড় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাও করা হবে। এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে একটি ঋণচুক্তি সই হতে যাচ্ছে। এতে সরকারের পক্ষে সই করবেন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব কাজী শফিকুল আযম, বিশ্বব্যাংকের পক্ষে ভারপ্রাপ্ত কান্ট্রি ডিরেক্টর জাহিদ হোসেন। চুক্তিসই অনুষ্ঠানটি হবে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে। বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয় ও ইআরডি সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ২০২১ সালের মধ্যে মধ্য আয়ের দেশে উন্নীত হতে হলে দক্ষ ও তথ্য-প্রযুক্তি জ্ঞানে সমৃদ্ধ মানসম্পন্ন গ্র্যাজুয়েট দরকার। দেশে অনার্স পড়–য়া মোট শিক্ষার্থীর তিন ভাগের দুই ভাগ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত কলেজের। তাই এসব শিক্ষার্থীকে দক্ষ ও যোগ্য করে গড়ে তোলার বিকল্প নেই। প্রকল্পের অর্থ যেন যথাযথভাবে শিক্ষা ও শিক্ষার্থীর মান উন্নয়নেই ব্যবহৃত হয় সেদিকে বিশেষ নজর দিতে হবে। এজন্য প্রকল্পটির ওপর কার্যকর মনিটরিং ও নির্দিষ্ট মেয়াদ অন্তর মান যাচাইয়ের ওপর জোর দিতে বলেছেন শিক্ষা সংশ্লিষ্টরা। এছাড়া তাদের পরামর্শ, প্রকল্পের আওতায় কলেজ ও প্রশিক্ষণের জন্য শিক্ষক বাছাইয়ের ক্ষেত্রে যেন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করা হয় এবং শহর ও গ্রামের কলেজের মধ্যে যেন বৈষম্য করা না হয়। সূত্র জানায়, প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের কলেজ পর্যায়ে শিক্ষার মানোন্নয়নে সহায়তা দিতে রাজি হয়েছে বিশ্বব্যাংক। এজন্য চলতি বছরের ৩ জুন বিশ্বব্যাংক পর্ষদ ১০ কোটি মার্কিন ডলার (প্রতি ডলার ৮০ টাকা হিসেবে প্রায় ৮শ’ কোটি টাকা) ঋণ অনুমোদন দেয়। একই মাসের ২৮ তারিখ এ সংক্রান্ত ‘কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টটি’ জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) চূড়ান্ত অনুমোদন পায়। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে এক হাজার ৪০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে যোগান দেয়া হবে ২৪০ কোটি টাকা। বাকি ৮শ’ কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক। বিশ্বব্যাংক সূত্রে জানা গেছে, সহযোগী সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট এ্যাসোসিয়েশন (আইডিএ) থেকে নামমাত্র সুদে বাংলাদেশকে এ অর্থ দেয়া হচ্ছে। শর্ত অনুযায়ী, এ ঋণের বার্ষিক লোন চার্জ দিতে হবে দশমিক ৭৫ শতাংশ। গ্রেস পিরিয়ড পাওয়া যাবে ছয় বছর। গ্রেস পিরিয়ডসহ ঋণ পরিশোধে সরকার সময় পাবে ৩৮ বছর। ২০২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পের সার্বিক দিক সম্পর্কে জানতে চাইলে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মোল্লা মাহফুজ আল হাসান জনকণ্ঠকে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান সমস্যা সেশনজট দূর করতে ইতোমধ্যে অনেক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। এর ফলে ২০১৮ সালের মধ্যভাগ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সেশনজটমুক্ত হবে বলে আশা করা হচ্ছে। সেশনজটের পর এখন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে কলেজ শিক্ষার মানোন্নয়নের প্রতি। ‘কলেজ এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট’ এ ক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা রাখবে। তিনি বলেন, প্রকল্পের আওতায় কার্যক্রম অনেক। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় দিকটি হলো প্রায় ১৬ হাজার শিক্ষকের প্রশিক্ষণ। পাঁচ বছর ধরে এ প্রশিক্ষণ চলবে। এসব শিক্ষকের মধ্য থেকে ‘মাস্টার ট্রেনার’ তৈরি হবেন, যারা আবার অন্য শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ দিতে পারবেন। এর সুফল পাওয়া যাবে দীর্ঘমেয়াদে। যা কলেজ শিক্ষার গুণগত মানে বড় ধরনের ইতিবাচক পরিবর্তন আনবে। এছাড়া প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে বাছাই কলেজগুলো ‘ইনস্টিটিউশনাল ডেভেলপমেন্ট গ্র্যান্ট’ দেয়া হবে। যাতে তারা টিচিং, লার্নিং থেকে শুরু করে ল্যাব, লাইব্রেরিসহ সবক্ষেত্রে উন্নতি করতে পারে। প্রতিযোগিতা হলে মফস্বল ও গ্রামাঞ্চলের কলেজগুলো প্রকল্প সুবিধার বাইরে থেকে যেতে পারে। তবে কলেজ বাছাইয়ের ক্ষেত্রে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা অনুসরণ করা হবে জানিয়ে রেজিস্ট্রার বলেন, সরকারী-বেসরকারী, শহর-গ্রাম এবং মহিলা কলেজ-সাধারণ কলেজের ক্ষেত্রে কোন বৈষম্য হবে না। গ্রাম ও শহরের মধ্যে সমতা বজায় রাখা হবে। গ্রামের কলেজগুলোও মান উন্নয়নের সুযোগ পাবে।
×