ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রাহাত হাসান

তারুণ্যের সুদূরপ্রসারী ভাবনা

প্রকাশিত: ০৭:০২, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৬

তারুণ্যের সুদূরপ্রসারী ভাবনা

তারুণ্যের সময়কে বলা হয় স্বর্ণ সময়। জীবনের পথ পরিক্রমার বীজ এ সময় হতেই সূচিত হয়ে থাকে। সঠিক সিদ্ধান্ত এবং পথচলা ভবিষ্যতের পাথেয় হয়ে দাড়ায়। তবে অনেকেই এসময়ে ভুল করে বসে। সিদ্ধান্ত নিতে তাড়াহুড়ো করে ফেলে। যার ফলে নিজের অজান্তেই নিয়ে ফেলে ভুল সিদ্ধান্ত। যা তার জীবনের জন্য অনেক সময় হুমকি হয়ে দাড়ায়। অথচ একটু সাবধানতা অবলম্বন করলেই সাজানো যায় নিজের জীবন। আর তারুণ্যের এ সময়ই হচ্ছে জীবনের মোড় ঘুড়িয়ে নেয়ার উত্তম সময়। এক. ক্যাম্পাসে আমার চার সেমিস্টারের এক ছোট ভাই, তার সমসেমিস্টারের অন্য বিভাগের একটি মেয়েকে মাত্র দুই মাসের পরিচয়ে বিয়ে করে। সে তার পরিবার, বন্ধু-বান্ধব কাউকে না জানিয়ে, কোন কিছু না ভেবে আবেগের বসবর্তী হয়ে একক সিদ্ধান্তে বিয়ে করে। মাত্র কয়েক মাস তারা ভাল সময় পার করতে পারে। কয়েকমাস পর থেকেই শুরু হয় তাদের নানান ঝামেলা। প্রথমত তাদের খরচ চলতো বাড়ি থেকে পাঠানো টাকায়। ফলে তারা টাকার অভাবে পরে। এই অভাব থেকেই তাদের সব ঝামেলার শুরু হয়। শেষ পর্যন্ত তারা আর একসঙ্গে থাকতে পারেনি। মেয়েকে তার পরিবার অন্যত্র বিয়ে দিয়ে দেয়। দুই. আমার ক্লাস বন্ধু তন্ময়। ক্লাসের মেধাবী ছাত্র। খুব ভালভাবেই এমএসএস শেষ করে। পেশা হিসেবে সঠিক বিষয় নির্ণয় করতে না পেরে তাকে অনেক কিছুই হারাতে হয়েছে। তার একই সময় দুটি চাকরি হয়। একটি ছিল প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক, অন্যটি ছিল সরকারী ব্যাংকের ক্যাশিয়ার। সে সারাজীবন বাড়ি থেকে অনেক আরামে জীবন পার করবে, এমন চিন্তা থেকে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের চাকরিটা নেয়। কিন্তু এখন সে ভাল থাকতে পারছে না। সে তার ভালবাসার মেয়েটিকেও হারিয়েছে। তার পছন্দের যোগ্য মেয়েকেও সে এখন বিয়ে করতে পারছে না নানা সমস্যার জন্য। সে শুধু একটি কথাই বলে ব্যাংকের চাকরিটাই তার জন্য যোগ্য ছিল। উপরের দুটি বিষয়ই জীবনের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। এ রকম আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। যার সিদ্ধান্ত নিতে ভুল হলে সারাজীবন তার কুফল বয়ে বেড়াতে হয়। জীবনের কোন বিষয় কার কাছে কতটা গুরুত্বপূর্ণ তা নির্ভর করে তার চিন্তাচেতনার ওপর। তার অবস্থানের ওপর। তবে কিছু বিষয় কিন্তু সবার ক্ষেত্রেই গুরুত্ব পায়। যেমন আপনি পড়ালেখা করতে চান কোন বিষয়ে কোন প্রতিষ্ঠানে। তা কিন্তু আপনাকে সঠিক সিদ্ধান্তই নিতে হবে। না হলে আপনি জীবনের সার্বিক লক্ষ্যে পৌঁছাতে পারবেন না। কোন এক প্রতিষ্ঠান থেকে কোনভাবে শিক্ষাজীবন শেষ করলেই হয় না। তাই এসব সিদ্ধান্ত ভেবেচিন্তে নিন। কারণ এই সিদ্ধান্তে ভুল হলে তার কুপ্রভাব সারাজীবন থাকে। জীবনের আর একটি সিদ্ধান্ত খুবই ভেবেচিন্তে নেবেন। তা হলো বিয়ে। বিয়ে একটি সামাজিক ধর্মীয় নীতি যা প্রত্যেক মানুষকেই করতে হয়। বিয়ের ক্ষেত্রে বেশিসংখ্যক মানুষই আবেগী হয়ে কাজ করে। কিন্তু মনে রাখবেন বিয়ে এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যা সারাজীবনের সঙ্গে জড়িত থাকে। সে বিষয়ের সঙ্গে সারাজিবনের সুখ জড়িত। সেই বিষয়টি অবশ্যই সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে করাই উত্তম। ভেবেচিন্তে কিছু না করে আবেগে পড়ে কোন কাজ করলে তার ফলাফল ভাল হয় না। আমি লেখার শুরুতেই বাস্তব উদাহরণে উল্লেখ করেছি। কাজের ক্ষেত্রে কিছু মানুষের ভাবনা এমন। কাজ করা দরকার করে ফেলি। এতো সামনে পেছনে ভাবার সময় তাদের নেই। এসব চিন্তাধারার মানুষগুলো বেশি আবেগী। তাই চিন্তাভাবনাগুলো এমন। এসব মানুষ কোন কাজেই তেমন সফল হতে পারে না। জীবন চলার পথে সফল হতে চাইলে আপনাকে অবশ্যই বুঝে চলতে হবে। জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয় কি, গুরুত্বহীন বিষয় কি। আমার চারপাশে কিছু মানুষকে দেখি তারা প্রয়োজনের থেকে অপ্রয়োজনীয় বিষয় নিয়েই বেশি ব্যস্ত থাকে। তাই বলছি। জীবনের জন্য প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় বিষয়গুলো বুঝতে শিখুন। মানুষের জীবন খুব ছোট। যা কিছু করার আপনাকে এক জীবনেই করতে হবে। তাই সময়ের দাম দিন। প্রত্যেক সময়কে কাজে লাগান। ছবি : রুহুল আমিন বাবু
×