ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

খানজাহানের প্রাচীন রাস্তা

বিরল প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন- উন্মুক্ত হচ্ছে এ মাসেই

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

বিরল প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন- উন্মুক্ত হচ্ছে এ মাসেই

বাবুল সরদার ॥ প্রায় সাড়ে ছয়শ’ বছরের পুরনো ‘খানজাহানের প্রাচীন রাস্তা’ পর্যটক ও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত হচ্ছে। প্রাচীন এই রাস্তাটি শতাধিক বছর ধরে মাটির নিচে চাপা পড়ে ছিল। দেশে আবিষ্কৃত একমাত্র প্রাচীন এই রাস্তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ প্রত্ননিদর্শন। বাগেরহাট জাদুঘরের কাস্টোডিয়ান মোঃ গোলাম ফেরদৌস জানান, সেপ্টেম্বরের শেষনাগাদ দেশী-বিদেশী দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করে দেয়া হবে এই রাস্তা। সাউথ এশিয়া ট্যুরিজম ইনফ্রাস্ট্রাকচার ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্টের আওতায় এডিবির অর্থায়নে ২০১৫ সালের জানুয়ারি থেকে প্রাচীন এই রাস্তার সংস্কার কাজ শুরু হয়। সংস্কার কাজ শেষে প্রতœতত্ত্ব অধিদফতরকে হস্তান্তর করা হবে। শের শাহ সুরির আমলে নির্মিত ‘গ্র্যান্ড ট্রাঙ্ক রোড’ এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন সড়ক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু এর চেয়ে শত বছর আগে নির্মিত হয় খানজাহানের এই প্রাচীন রাস্তা। ১৫ মাসব্যাপী সংস্কার কাজের ইন্টারন্যাশনাল কনজারভেশন স্পেশালিস্ট হিসেবে কর্মরত ছিলেন শ্রীলঙ্কার প্রখ্যাত কনজারভেশন আর্কিটেক্ট ড. নিলানকুরে। কনজারভেশন আর্কিওলজিস্ট ছিলেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের প্রাক্তন মহাপরিচালক মোঃ শফিকুল আলম। ইতোমধ্যে রাস্তাটি ব্যবহার ও ভারি যানবাহন চলাচল থেকে বিরত থাকার অনুরোধ জানিয়ে দুপাশে বসবাসকারীদের গণচিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়া, সরকারী গেজেট বিজ্ঞপ্তির আলোকে বিকল্প সড়ক স্থাপন, রাস্তা রক্ষণাবেক্ষণ পরিচর্যার কাজে প্রয়োজনীয় জনবল নিযুক্ত করা, রাস্তার দু’প্রান্তে টহল চৌকি বসানোর পাশাপাশি পুরাকীর্তি সম্পর্কে স্থানীয় জনসচেতনতা সৃষ্টিতে অধিদফতরের আঞ্চলিক দফতর, খুলনায় প্রস্তাবনা সম্বলিত একটি আবেদনপত্র পাঠানো হয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন। সংস্কার কাজ শুরুর আগে খননের মাধ্যমে প্রাচীন রাস্তাটি উন্মোচন করা হয়। ৯৫৭ মিটার দৈর্ঘ্য ০.২৭ মিটার প্রস্থবিশিষ্ট এ রাস্তার খনন কাজে নেতৃত্ব দেন প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোঃ শফিকুল আলম। তিনি বলেন, ‘উন্মোচিত স্থাপত্য কাঠামোর মধ্যে প্রাচীন কালভার্ট, নিরাপত্তা চৌকি, প্রবেশ দ্বারসহ ১৫ শতকের বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রত্নবস্তু এবং কৌতূহলোদ্দীপক প্রাচীন স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।’ প্রাচীন এই রাস্তাটি সংরক্ষণের জন্য একটি বিকল্প রাস্তা তৈরির বিষয়ে জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় আলোচনা হয়। বিকল্প রাস্তা নির্মাণ না হলে প্রাচীন ঐতিহ্যের নিদর্শনটি রক্ষা করা দুষ্কর হবে বলে। মোঃ গোলাম ফেরদৌস জানান, দেশের একমাত্র প্রাচীন সড়ক নিদর্শনটিকে ২০১১ সালে সরকার সংরক্ষণ বিজ্ঞপ্তি জারি করে এর সংরক্ষণভার প্রত্নতত্ত্ব অধিদফতরের ওপর ন্যস্ত করে। প্রায় সাড়ে ছয়শ’ বছর পূর্বে নির্মিত দেশের কোথাও এমন প্রাচীন সড়কের অস্তিত্ব নেই।
×