ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

মালয়েশিয়ায় বাজার খুলল, আজ থেকে কর্মী নিয়োগ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:০০, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৬

মালয়েশিয়ায় বাজার খুলল, আজ থেকে কর্মী নিয়োগ শুরু

ফিরোজ মান্না ॥ মালয়েশিয়ায় আজ (সোমবার) থেকে বেসরকারী পর্যায়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কর্মী নিয়োগ শুরু হচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলোকে প্রথম দফায় সাড়ে ৮ হাজার কর্মী পাঠানোর অনুমোদন দিয়েছে। আজ থেকেই এই সাড়ে ৮ হাজার কর্মী চাকরি নিয়ে মালয়েশিয়ায় যাবেন। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর উভয় দেশের কর্তৃপক্ষ দফায় দফায় আলোচনা করে বাজারটি খুলে দিয়েছে। সোর্স কান্ট্রি (উৎস দেশ) হিসেবে মালয়েশিয়া আগেই বাংলাদেশকে তালিকাভুক্ত করেছে। এখন যে কোন সেক্টরে কর্মী নিয়োগ করতে গেলে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ দেবে মালয়েশিয়া। মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বেশ কয়েক দফা জয়েন্ট ওয়ার্কিং কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার পর মালয়েশিয়ার পক্ষ থেকে কর্মী নিয়োগের ঘোষণা আসে। গত মাসের মাঝামাঝি সময়ে মালয়েশিয়া এ ঘোষণা দিলেও অতীতের অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে মন্ত্রণালয় বিষয়টি নিয়ে তেমন কোন আগ্রহ দেখায়নি। এর আগে মালয়েশিয়া নিয়ে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই আগ বাড়িয়ে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা না বলার কৌশল নেয় প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। বৈঠকে মালয়েশিয়া কর্তৃপক্ষ অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে বৈধপথে কর্মী নিয়োগের সিদ্ধান্তের কথা জানান। ছাত্র ভিসা, টুরিস্ট ভিসাসহ নানা মাধ্যমে দেশটিতে বৈধ কর্মীর চেয়ে অবৈধ কর্মীর সংখ্যা বাড়ছে। বিভিন্ন সময়ে আয়োজিত বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অবৈধ কর্মীদের বৈধ করে নেয়ার প্রস্তাব দেয়া হয়। তারা প্রস্তাবটি মেনে নিয়ে এখন নতুন করে বৈধপথে কর্মী নিয়োগের অনুমতি দিয়েছেন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে মালয়েশিয়া কয়েক হাজার কর্মীর নিয়োগের চাহিদা পাঠিয়েছে। বেসরকারী পর্যায়ে এই কর্মী নিয়োগ হবে। প্রথম ধাপে মন্ত্রণালয় থেকে সাড়ে ৮ হাজার কর্মী পাঠানোর অনুমোদন দেয়া হয়েছে। পর্যায়ক্রমে কর্মী নিয়োগ বাড়বে বলে আশা করা যাচ্ছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় এবং কুয়ালালামপুরে বাংলাদেশ হাইকমিশন কর্মী নিয়োগের বিষয়টি কঠোরভাবে মনিটর করবে। কোন প্রকার অনিয়ম করতে দেয়া হবে না। প্রবাসীকল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি সাংবাদিকদের বলেন, মালয়েশিয়ার সঙ্গে সম্প্রতি ইতিবাচক আলোচনা হয়েছে। তারা দফায় দফায় কর্মী নিয়োগের বিষয়ে বৈঠক করেছে। আমরা বলেছি, কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দিয়ে আবার কর্মী নিয়োগ বাতিল করা হলে কোন আলোচনার দরকার নেই। বাংলাদেশের দৃঢ় অবস্থানের বিষয়টি তারা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। এ কারণে মালয়েশিয়া দ্রুত সিদ্ধান্ত নিয়ে বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ দিচ্ছে। এদিকে কর্মী নিয়োগে প্রতারণা ঠেকাতে এবারই প্রথম কর্মীদের বায়ো-মেডিক্যাল ও বীমার আওতায় আনা হবে। এর আগে কর্মীদের বিদেশ যাওয়া নিশ্চিত হওয়ার আগেই স্বাস্থ্য পরীক্ষা সম্পন্ন করা হতো। তাতে অনেকেই আনফিট হওয়ায় বিদেশে যেতে পারত না। ওই কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষার সব টাকার অপচয় হয়েছে। বায়ো-মেডিক্যালের ফলে এবার আর টাকা অপচয়ের সুযোগ থাকছে না। এরই মধ্যে চূড়ান্ত হয়েছে এই প্রক্রিয়া। কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার মধ্যে করা ‘জিটুজি প্লাস’ চুক্তির আওতায় কর্মী নেয়ার পুরো প্রক্রিয়াই হবে অনলাইনে। এতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা থাকবে। সরকারের তথ্যভা-ারের পাশাপাশি বেসরকারী রিক্রুটিং এজেন্সিও কর্মী বাছাই করার সুযোগ পাবে। জনশক্তি রফতানিকারকরা কর্মী বাছাই করলেও তাদের মন্ত্রণালয় থেকে কর্মী নিয়োগের অনুমোদন নিতে হবে। অনুমোদন ছাড়া কেউ কর্মী পাঠাতে পারবে না। জানা গেছে, মালয়েশিয়া বাংলাদেশের বড় একটি শ্রমবাজার। কিন্তু হঠাৎ করে ২০০৯ সালে মালয়েশিয়া বাংলাদেশ থেকে কর্মী নিয়োগ বন্ধ করে দেয়। এরপর ২০১৩ সালে ‘জিটুজি’ (সরকারীভাবে) শুধু প্লান্টেশন খাতে কর্মী নিয়োগ শুরু করে। এ প্রক্রিয়ায় গত ৫ বছরে মাত্র ৭ হাজার কর্মী নিয়োগ করে তারা। ওই পদ্ধতি পরবর্তীতে বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে মালয়েশিয়া সরকারের একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়। ‘জিটুজি প্লাস’ নামে এই চুক্তির আওতায় (সরকারী-বেসরকারী) সেবা, নির্মাণ, কৃষি, প্লান্টেশন ও ম্যানুফ্যাকচারিং খাতে প্রতিবছর ৫ লাখ করে ৩ বছরে মোট ১৫ লাখ কর্মী নিয়োগের ঘোষণা দেয় মালয়েশিয়া। কিন্তু চুক্তি সইয়ের ২৪ ঘণ্টা যেতে না যেতেই মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্র ও উপ-প্রধানমন্ত্রী ড. আহমদ জাহিদ হামিদি বাংলাদেশসহ সব দেশ থেকে কর্মী নেয়া আপাতত বন্ধ রাখার ঘোষণা দেন। তবে, কয়েক মাসের মাথায় গত মে মাসে বিদেশী কর্মী না নেয়ার সরকারী সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে নেয় দেশটি। নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পরই দেশটি বৈধপথে কর্মী নিয়োগ শুরু করেছে। বাজারটি যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য জনশক্তি রফতানিকারকদের স্বচ্ছতার মধ্য দিয়ে কর্মী নিয়োগ করতে হবে। এই মুহূর্তে মালয়েশিয়ায় বিভিন্ন সেক্টরে ৫ থেকে ৬ কর্মীর প্রয়োজন রয়েছে। এই বিশালসংখ্যক কর্মী পাঠাতে পারলে দেশের রেমিটেন্স প্রবাহ অনেক বাড়বে। মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে কর্মী নিয়োগে স্বচ্ছতা রাখার জন্য জনশক্তি রফতানিকারকদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
×