ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় গঠিত কমিটি কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া পর্যবেক্ষণ করবে

’১৭ সালের মধ্যে তিন লাখের কর্মসংস্থান সৌদি আরবে

প্রকাশিত: ০৬:১৯, ৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬

’১৭ সালের মধ্যে তিন লাখের কর্মসংস্থান সৌদি আরবে

ফিরোজ মান্না ॥ সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগের পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের গঠিত কমিটি। অভিযুক্ত জনশক্তি রফতানিকারক কোন প্রতিষ্ঠান কর্মী পাঠাতে পারবে না। অভিযোগবিহীন জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানই সৌদিতে কর্মী নিয়োগের সুযোগ পাবে। তারা মন্ত্রণালয় নির্ধারিত খরচের বাইরে বেশি টাকা নিতে পারবে না। যদি কোন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বেশি টাকা নেয়ার অভিযোগ ওঠে তাহলে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। বাতিল হবে জনশক্তি রফতানির লাইসেন্স। কর্মী পাঠানোর খরচ নিয়ন্ত্রণ করে সবকিছু নিয়মমাফিক হলে ২০১৭ সালের মধ্যে তিন লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে সৌদি আরবে। এদিকে, সৌদি আরবে কারও বিরুদ্ধে ভিসা কেনাবেচার অভিযোগ প্রমাণিত হলে ১৫ বছর কারাদ-ের আইন করা হয়েছে। কর্মী নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করতে উভয় দেশই শক্ত অবস্থান নিয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়, জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) এবং সৌদি আরবের বাংলাদেশ দূতাবাস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি বলেন, সৌদি আরবে কর্মী নিয়োগে সরকার নির্ধারিত খরচের চেয়ে বেশি টাকা নিলে ওই প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। শুধু লাইসেন্স বাতিলই করা হবে না, সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের মালিকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হবে। দীর্ঘ ছয় বছর পর সম্প্রতি সৌদি আরব সব খাতে বাংলাদেশের শ্রমবাজার উন্মুক্ত করেছে। কোন প্রকার অনিয়মের কারণে বাজার নষ্ট করতে দেয়া হবে না। সরকার যে টাকা নির্ধারণ করেছে তা যৌক্তিক। সরকারের সিদ্ধান্তের বাইরে কোন প্রতিষ্ঠান বা ব্যক্তি টাকা নিলে মন্ত্রণালয় চুপ করে বসে থাকবে না। প্রয়োজনে অভিযুক্ত প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিল করা হবে। আর পুরো বিষয়টি পর্যবেক্ষণে মন্ত্রণালয়ের কমিটি কাজ করবে। কী করে আরও বেশি লোকের কর্মসংস্থান হয়, সেটি খেয়াল রাখবে মন্ত্রণালয়। অভিযোগবিহীন জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানই সৌদিতে কর্মী নিয়োগে কাজ করবে। জনশক্তি রফতানিকারক প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সাড়ে ১২শ’। এখান থেকে ৫শ’র মতো প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স নিয়ে মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠান সৌদি আরবে কর্মী পাঠাতে যোগ্য হবে না। কর্মী নিয়োগ স্বচ্ছ করা হবে। এ নিয়ে কেউ যেন প্রশ্ন না তুলতে পারে। জনশক্তি রফতানির বিষয়টির নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ বিএমইটির মহাপরিচালক সেলিম রেজা বলেন, সম্প্রতি সৌদি আরব বাংলাদেশী কর্মীদের জন্য সব খাত উন্মুক্ত করেছে। এরপর সরকার সৌদি আরবে কর্মী পাঠানোর খরচ নির্ধারণের জন্য জনশক্তি রফতানিকারকদের সঙ্গে বৈঠক করে। ওই বৈঠকে বায়রাকে সৌদি আরবে কর্মী পাঠানোর একটি বাস্তবসম্মত খরচ নির্ধারণ করতে বলা হয়েছিল। পরে বায়রার কর্মকর্তারা নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সব মিলিয়ে জনপ্রতি ১ লাখ ৯৮ হাজার টাকা খরচ নির্ধারণের প্রস্তাব দেয় মন্ত্রণালয়কে। মন্ত্রণালয় এ প্রস্তাব যাচাই-বাছাই শেষে খরচ নির্ধারণ করেছে ১ লাখ ৬৫ হাজার টাকা। কেউ এ টাকার বেশি নিলে বা দাবি করলে দায়ী ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। আগ্রহী কর্মীদের প্রতিও এর বেশি টাকা না দেয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। সূত্র জানিয়েছে, দেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। বাজারটি ছয় বছর বন্ধ রাখার পর ২০১৫ সালের ১ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশ থেকে কর্মী নেয়ার ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে সৌদি আরব। তবে গত দেড় বছর নারী গৃহকর্মীদের পাশাপাশি শুধু গৃহ খাতের কর্মী নিয়োগ করেছে দেশটি। এ বছরের ১১ আগস্ট সব ধরনের কর্মী নিয়োগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ার ঘোষণা দেয় দেশটির শ্রম ও সমাজ উন্নয়ন মন্ত্রণালয়। এরপর সৌদি আরব থেকে পুরুষ কর্মী নিয়োগের চাহিদাপত্রও আসতে শুরু করেছে। কিন্তু সৌদি আরবে কর্মী যাওয়ার ক্ষেত্রে ১০ লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ নেয়ার অভিযোগ রয়েছে। এত খরচ দিয়ে একজন কর্মী সৌদি গিয়ে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে খরচ তুলতে পারেন না। ফলে আরও বেশি সময় কাজ করতে হতো তাদের। পরে তারা অবৈধ হয়ে পড়তেন। তাই নতুন করে খরচ নির্ধারণের বিষয়টি উঠে এসেছে। সরকার ও জনশক্তি রফতানিকারকরা বৈঠক করে নতুন খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় বলেছে, সম্প্রতি সৌদি আরবে নিযুক্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ ঢাকায় আসেন। তিনিসহ প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি, মন্ত্রণালয়ের সচিব, বিএমইটির মহাপরিচালক, জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সিজের (বায়রা) সঙ্গে বৈঠকে বসেন। ওই বৈঠকে গোলাম মসিহ বলেন, সৌদি আরবে যাওয়ার জন্য বিপুল অর্থ খরচ হয়। সৌদি সরকার বলেছে, এটি নিয়ন্ত্রণ না করলে বাজার আবার বন্ধ হয়ে যাবে। কাজেই এটি যে করেই হোক নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। রাষ্ট্রদূত গোলাম মসিহ বলেন, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, প্রবাসী কল্যাণমন্ত্রীসহ আমাদের সবার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সৌদি বাজার উন্মুক্ত হয়েছে। এবার যে করেই হোক আমাদের অভিবাসন খরচ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। যত সমস্যা হয়, তার মূল কারণ এ অতিরিক্ত খরচ। এ সমস্যার সমাধান করতে না পারলে আবার বাজার বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা আছে। তিনি বলেন, সৌদি সরকার বলেছে, তারা আইন করেছে, ভিসা কেনাবেচা করলে ১৫ বছরের কারাদ- দেয়া হবে। সৌদি আরব তাদের দেশে কর্মী নিয়োগের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে খেয়াল রাখবে। আমাদের দেশেও বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করতে হবে। খরচের বিষয়টি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ২০১৭ সালের মধ্যেই তিন লাখ কর্মীর কর্মসংস্থান হবে সৌদি আরবে।
×