ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশগুপ্ত

জয় বাংলা নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র রুখতে হবে এখনই

প্রকাশিত: ০৩:৫৬, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৬

জয় বাংলা নিয়ে নতুন ষড়যন্ত্র  রুখতে হবে এখনই

নানা বিষয়ে কুতর্ক করতে আমাদের জুড়ি নেই। কাজের কাজ ফেলে এসবে মেতে থাকা বাংলাদেশী বা স্বজাতির চরিত্র আমাদের অজানা নয়। সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ তাদের নাম পাল্টেছে। তাদের এই নাম পাল্টানো সেদেশের সে রাজ্যের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার। তাদের এই বিষয়টা আগে ভাবা উচিত হলেও তারা ভাবেনি। পূর্ববঙ্গ যখন বিলুপ্ত তখন আরেকটি বঙ্গের নাম কেন পশ্চিমবঙ্গ? সে যাই হোক তারা এতদিন পর সেটা ঠিক করে নিয়েছে। বেচারাদের ল্যাঠাও কম না। নাম বদলালেও এক নামে থিতু থাকতে পারবে না পশ্চিমবঙ্গ। হিন্দীতে বাঙ্গাল ইংরেজীতে নাকি নাম হবে বেঙ্গল। তা হোক। তাতে আমাদের কি যায় আসে? কিন্তু এ নিয়ে অহেতুক পানি ঘোলা করতে নেমে গেছে একদল সুশীল নামের মানুষ। যাদের কাজ হচ্ছে আমাদের নাক কেটে হলেও অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করা। ‘বাংলা’ নামটি ধারণ করায় নাকি আমাদের মূল সেøাগান জয় বাংলা পড়বে বিপদে। তাদের মতে, এখন জয় বাংলা বললে বোঝাবে ওই বাংলার কথা। না, এদের মূর্খ বা অবিবেচক ভাববেন না। এরা জ্ঞানপাপী। জেনে বুঝে এমন একটা তর্ক তোলার কারণ; জয় বাংলাকে অজনপ্রিয় ও অকার্যকর করে তোলা। প্রথম আলোর চাকুরে এক তরুণ লেখক ক’দিন আগে জনকণ্ঠের নাম ধরে লিখেছিল সামাজিক মিডিয়ায়। জনকণ্ঠ নাকি জনগণের নাড়ির স্পন্দন বোঝে না। বটেই, বাংলাদেশের মানুষের নাড়ি-ধমনী সব বোঝে শুধু তারা। তাদের বদলে যাবার স্রোতে এদেশের যেসব তারুণ্য পা দেয় না তাদের তারা ভাবে পথহারা। এদের নতুন পথটা কি? বাংলাদেশের সর্বনাশ করার জন্য একপায়ে খাড়া তারা। তাদের মূল কাজ জানতে হলে খুব দূরে যাবার দরকার পড়ে না। আওয়ামী লীগ যখন অনেকদিন পর আবার দেশ শাসনে; এলো এদের কি ভাবভক্তি। একুশে আগস্টের গ্রেনেড হামলার ওপর বিশেষ ক্রোড়পত্রও বের করেছিল তারা। তখনই প্রমাদ গুনছিলাম। আসল কারণ খুঁজছিলাম। বেশিদিন লাগেনি। পরের বছরই তারা তাদের আসল চেহারায় বেরিয়ে এলো। তাদের অন্তরে যে বিষণœতার একদিকে আছে প্রচ্ছন্ন পাকপ্রীতি আরেকদিকে আমাদের ইতিহাসকে কৌশলে বদলে দেয়ার ষড়যন্ত্র। এদের দুচোখের বিষ শেখ হাসিনা। কারণ তিনি স্পষ্টবাদী। তিনি রাখঢাক করে কথা বলেন না। আধা পাকি আধা বাংলাদেশী নিয়ে ককটেল বানান না তিনি। তাঁর মতামত তাঁর ভূমিকা জোরালো। তিনি বঙ্গবন্ধুকন্যা। আপোসহীন নেত্রীর তকমার আড়ালে আসলে যত আপোস। আর শেখ হাসিনা মূলত একজন সাহসী, দেশপ্রেমী মুক্তিযুদ্ধ আশ্রয়ী নেত্রী। তাঁর কাছ থেকে আঘাত পাবার কারণ সুবিধাবাদের ফাঁদে তিনি পা দেন না। এজন্য সব স্বার্থপর, সুবিধাবাদী মিডিয়া তলে তলে তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। এই তরুণ লেখকটিকে দিয়ে কারা এসিড টেস্ট করাচ্ছে সেটা বুঝতে খুব বেশি সময় লাগবে না। অচিরেই তা বেরিয়ে আসবে। শাহবাগের আন্দোলনের সময় জয় বাংলার নতুন শক্তি দেখছি আমরা। মানুষ এই ধ্বনিতে জেগে উঠেছিল বলেই রাজাকাররা মাথা তুলতে পারেনি। ঢাকাসহ সারাদেশে জয় বাংলার জয়ধ্বনিতে জেগে ওঠা মানুষকে সামাল দিতে না পারা জামায়াতীরা চলে গিয়েছিল পর্দার আড়ালে। সেখানে তারা কোটি কোটি ডলার খরচ করে ফাঁসি ঠেকানোর কোন চেষ্টাই বাদ দেয়নি। হেন কোন লবিং নেই তারা করেনি। ক’দিন আগে বাংলাদেশ ঘুরে যাওয়া মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি নিজেই ফোন করেছিলেন। উদ্দেশ্য, চাপ তৈরি করা। সে চাপ মানার নেত্রী নন শেখ হাসিনা। যাঁর জীবনে হারানোর বেদনা জীবন জয়ের শক্তি তিনি কি ভয় পেতে পারেন? বঙ্গবন্ধুও মানতেন না। এই আমেরিকা আর পাকিরা পেছনে না থাকলে খন্দকার মোশতাক বা সেনাবাহিনীর কিছু বিপথগামী সদস্য কোনদিনও জনককে মারতে পারত না। সে আমেরিকার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ফোনকেও পাত্তা না দেয়া জাতির পিতার কাছে নত হয়ে নিজের শ্রদ্ধার কথা জানিয়ে গেছেন কেরি। এর চেয়ে বড় বিজয় আর কি হতে পারে? এত কিছুর পরও যখন ষড়যন্ত্রকারীরা শেখ হাসিনার সরকারের বিরুদ্ধে কিছু করতে পারছে না তখন ওপার বাংলার নাম বদলানো নিয়ে নতুন নাটক করার জন্য নেমেছে মাঠে। জয় বাংলাকে এর আগে অনেকেই ঘায়েল করতে চেয়েছিলেন। খুব বেশিদিনের কথা না। অধুনা গ্রেফতার সাংবাদিক শফিক রেহমান এই সেøাগানটিকে ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন, জয় লম্বা বাংলা। তার এই ব্যঙ্গ ভাল ফল বয়ে আনেনি। আজ তিনি কারা অন্তরালে। এদেশের আইন ও বিচার নিয়ে যাদের মনে সন্দেহ ছিল তারা এখন বুঝতে পারছেন সবকিছু টাকায় কেনা যায় না, যায় না বোমা আগুনে স্তব্ধ করে দেয়া। বাঘের ওপরও টাগ আছে কোথাও। সে প্রকৃতি বা নিয়মের কাছে অসহায় নব্য রাজাকাররা এখন সুশীল নাম ধারণ করে যাবতীয় কুকর্মের জন্ম দেয়। এদের জন্ম-দুশমন আওয়ামী লীগ আর ভারত। তারা অন্তরে লালন করে সাম্প্রদায়িকতা। এখন তারা জয় বাংলা ও বাংলাদেশের নতুন সর্বনাশের ধান্দায় পশ্চিম বাংলার নাম পরিবর্তন নিয়ে নতুন খেলায় মাততে চাইছে। এর বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে আমাদের। ইতিহাসে এমন নামের মিল অনেক পাওয়া যাবে। সে পর্যন্ত না গিয়েও বলা যায় এরা কোনদিনও সফল হবে না। তবে ভয়ের ব্যাপার, এই নতুন প্রজন্মের ভেতর জয় বাংলা বিষয়ে নতুন বৈরিতা বা সন্দেহ ঢোকাবে তারা। অথচ জয় বাংলা বললে কোন্ দেশের কথা বোঝানো হয় সেটা শিশুও জানে। এ অবিনাশী সেøাগানের জন্ম হয়েছিল বিপ্লবের হাত ধরে। এর নাম মুক্তি। এর মূল চালিকা ছিল স্বাধীনতা আর বজ্রকণ্ঠের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। একে কোনভাবেই অপমানিত হতে দেয়া যাবে না। ওপার বাংলা আগেও বাংলাই ছিল। তাদের নাম পরিবর্তনের সঙ্গে জয় বাংলার কোন সম্পর্ক নেই। নতুন গজিয়ে ওঠা কথিত দেশপ্রেমী সুশীলদের এ এক নতুন চাল। কি আশ্চর্য! ফরহাদ মযহার বা মাহমুদুর রহমানকে একদা গালাগালে অভ্যস্তরাই এখন এসব কুকাজে লিপ্ত। জয় বাংলা অবিনাশী। এর চেতনা ও জয় অনিবার্য। তাই তাকে ঘায়েল করতে নতুন ষড়যন্ত্রের এই সাপকে শুরুতেই মেরে ফেলতে হবে। নতুবা গর্তে ঢুকিয়ে মাটি চাপা না দিলে বিএনপি-জামায়াতের হাত ধরে আবার দংশন করতে চাইবে। এখনই সাবধান হতে হবে। এখনই আইন ও হৃদয় দিয়ে রুখবার সময়।
×