ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

বাতাসে আর্দ্রতার রেকর্ড ॥ ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি রাজধানীবাসীর

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ২৮ আগস্ট ২০১৬

বাতাসে আর্দ্রতার রেকর্ড ॥ ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তি রাজধানীবাসীর

বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতা বেশি থাকায় শনিবারও ঢাকায় অনুভূত হয় ভ্যাপসা গরম। গত দু’দিন ধরে আবহাওয়ার এমন অবস্থা বিরাজ করছে। তাপমাত্রা রয়েছে স্বাভাবিক অবস্থায়। কিন্তু গত দশ বছরে আগস্ট মাসে বাতাসে আর্দ্রতার পরিমাণ এত বেশি রেকর্ড হয়নি। শনিবার গত দশ বছরের রেকর্ড অতিক্রম করেছে আর্দ্রতা। এদিন ঢাকায় বাতাসের আপেক্ষিক আর্দ্রতার পরিমাণ ছিল ৯৫ শতাংশ। আর গত দশ বছরে ঢাকায় আগস্ট মাসে আর্দ্রতার পরিমাণ ৮৮ শতাংশের বেশি রেকর্ড হয়নি। ভ্যাপসা গরমে অস্বস্তিতে পড়েছে রাজধানীবাসী। ঘরে বাইরে সব খানেই বিরাজ করে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি। মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর কম সক্রিয় এবং উত্তর বঙ্গোপসাগরে মাঝারি অবস্থায় রয়েছে। তবে আগামী তিনদিনের মধ্যে দেশে বৃষ্টিপাতের প্রবণতা বৃদ্ধি পেতে পারে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বাতাসের আর্দ্রতা দ্বারা পরিমাপ করা হয়। দৈনন্দিন জীবনে আর্দ্রতা বলতে আপেক্ষিক আর্দ্রতাকে বোঝানো হয়। আপেক্ষিক আর্দ্রতা হলো কোন নির্দিষ্ট জায়গার বাতাসে থাকা জলীয় বাষ্পের আংশিক চাপ ও ওই তাপমাত্রায় জলীয় বাষ্পের সম্পৃক্ত বাষ্পচাপ। নির্দিষ্ট তাপে ও চাপে বাতাসে সর্বোচ্চ কি পরিমাণ জলীয় বাষ্প ধারণ করতে পারে তা সুনির্দিষ্ট। আপেক্ষিক আর্দ্রতা আবহাওয়ার পূর্বাভাসে একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আর্দ্রতা বেশি হলে বেশি গরম অনুভূত হয়, কারণ তা ঘামের মাধ্যমে শরীরের তাপ বের করে দেবার প্রক্রিয়াটির কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়। তাপ সূচক ছকে এই প্রভাব হিসাব করা হয়। মূলত কোন স্থানের বায়ু কতটুকু জলীয় বাষ্প আছে অর্থাৎ বায়ু কতখানি শুষ্ক বা ভিজা আর্দ্রতা দিয়ে তাই নির্দেশ করা হয়? বর্তমানে বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকায় ভ্যাপসা গরম অনুভূত হচ্ছে। শনিবার ঢাকার সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল স্বাভাবিক। এদিন সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় যথাক্রমে ৩৩.২ ও ২৭.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। এই তাপমাত্রায় অসহনীয় গরম অনুভূত হওয়ার কথা নয়। কিন্তু বাতাসে আর্দ্রতা ও দিনভর রোদ থাকায় ভ্যাপসা গরমে দুর্ভোগে পড়ে রাজধানীবাসী। রাজধানীর আকাশেও মেঘ ছিল না। দিনের অধিকাংশ সময় ছিল প্রখর রোদ। গরমে ব্যাহত হয় নগরবাসীর স্বাভাবিক কাজকর্ম। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞদের মতে, বাতাসে জলীয় বাষ্প এর মূল কারণ। বৈশাখ থেকে জ্যেষ্ঠ মাসে বাংলাদেশে কখনও কখনও কোথাও কোথাও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রী সেলসিয়াস বা তারও বেশি পর্যন্ত উঠে যায়। কিন্তু বাতাসে জলীয় বাষ্প কম থাকায় মানুষের শরীর থেকে ঘাম কম বের হয়। শরৎকালে অর্থাৎ ভাদ্র-আশ্বিনে তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রী সেলসিয়াস থেকে ৩৫ ডিগ্রী সেলসিয়াসের মধ্যে ওঠানামা করে। তারপরও বাতাসে প্রচুর জলীয় বাষ্প থাকায় গরম বেশি অনুভূত হয়। তাই অস্বস্তি বেড়ে যায়। আবহাওয়া অধিদফতরের সাবেক পরিচালক শাহ আলম বলেন, বৈশাখে তাপমাত্রা বেশি, কিন্তু বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ কম থাকে। অন্যদিকে, ভাদ্র-আশ্বিন মাসে তাপমাত্রা তুলনামূলক কম থাকলেও বাতাসে জলীয় বাষ্প খুব বেশি থাকে। তাই শরীর ঘেমে যায়। এই ঘাম না শুকালে গরম বেশি অনুভূত হয়। অস্বস্তি বাড়ে। আবহাওয়া বিশেষজ্ঞ শাহ আলম আরও বলেন, ভাদ্র মাসে আকাশে মেঘ থাকে। দিনের বেলা সূর্যের তাপ মেঘের বাধার কারণে ওপরে উঠতে পারে না। সব মিলিয়ে গরম সহজে কমতেও চায় না।
×