ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

‘তামিমের মৃত্যুতে পরিবার কলঙ্কমুক্ত হলো’

প্রকাশিত: ০৬:০৪, ২৮ আগস্ট ২০১৬

‘তামিমের মৃত্যুতে পরিবার কলঙ্কমুক্ত হলো’

সালাম মশরুর, সিলেট অফিস ॥ ‘তামিম উপজেলার কলঙ্ক ছিল, এই গ্রামের কলঙ্ক ছিল, সাম্প্রতিক সময়ে তার নামের সঙ্গে আমাদের গ্রাম, উপজেলার নাম প্রকাশের কারণে নিজেদের মধ্যে অস্বস্তি হতো’Ñ তামিমের মৃত্যুর খবরে স্বস্তি প্রকাশ করে এমন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এলাকার বাসিন্দা লুৎফুর রহমান। তামিম আহমেদ চৌধুরীর মৃত্যু সংবাদের প্রতিক্রিয়ায় তার চাচাত ভাই ফাহিম আহমদ চৌধুরী বলেন, ‘তামিমের মৃত্যুতে আমাদের পরিবার কলঙ্কমুক্ত হলো। এলাকার লোকের কাছে আমরা লজ্জায় মুখ দেখাতে পারিনি এতদিন। পুলিশ, র‌্যাব, সিআইডি, দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মিডিয়ার ফোনে আমাদের পরিবারের সদস্যদের ঘুম হারাম হওয়ার মতো অবস্থা ছিল।’ জঙ্গী তামিমের মৃত্যুর সংবাদে এলাকার লোকজন আনন্দিত। পরিবারের মতো এলাকার লোকজনও মনে করেন, তারা কলঙ্কমুক্ত হয়েছেন। তামিমের চাচাত ভাই ফাহিম জানান, তার বাবা নজরুল ইসলাম গত রবিবার মারা গেছেন। বাবার মৃত্যুতে তাদের পরিবার শোকে মুহ্যমান। সাম্প্রতিক সময়ে তামিমের দেশে ফেরার কোন খবর তাদের জানা নেই। তিনি কোনদিন তামিমকে দেখেননি। তাদের পরিবারের কারও সঙ্গে ফাহিমের পরিবারের যোগাযোগ ছিল না। ফাহিমের লাশ আনতেও পরিবারের কেউ যাবে না। তামিমের কানাডা প্রবাসী কোন স্বজন দেশে অবস্থান করছেন কিনাÑ এ বিষয়টিও তার জানা নেই বলে জানান ফাহিম। বিয়ানীবাজারের দুবাগ ইউনিয়নের বাসিন্দা ও বিয়ানীবাজার উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি নাজিম উদ্দিন জানান, তামিমের মৃত্যুর সংবাদ তারা বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে দেখেছেন। তার মৃত্যুতে এলাকার মানুষের কোন প্রতিক্রিয়া নেই। তার লাশ আনতে গ্রাম থেকে কেউ যাবে না। দুবাগ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম বলেন, ‘তামিমের মৃত্যুতে পরিবারসহ এলাকার লোকজন খুশি।’ এলাকার মানুষ জঙ্গীবিরোধী। তার লাশ আনতে গ্রাম থেকে কেউ যাবে না। এদিকে তামিমের চাচা নূরুল ইসলাম চৌধুরীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে ভাতিজার মৃত্যুর বিষয়টি তার জানা নেই বলে জানান। এমনকি তার বাবার পরিবারের সঙ্গেও তাদের কোন যোগাযোগ নেই। তামিম দেশে কোথায় অবস্থান করত সে বিষয়েও তারা অবহিত ছিলেন না। শুধু বিয়ানীবাজার নয়, জঙ্গী তামিমের মৃত্যু সংবাদে পুরো জেলার লোকজন স্বস্তি প্রকাশ করেছে। এ নিয়ে চলছে নানা আলোচনা। প্রাপ্ত তথ্যমতে, তামিম আহমদ চৌধুরীর জন্ম ১৯৮৬ সালের ২৫ জুলাই। তামিম আহমদ চৌধুরী সিলেটের বিয়ানীবাজারের দুবাগ ইউনিয়নের বড়গ্রামের শফিক আহমদ চৌধুরী ও খালেদা চৌধুরীর ছেলে। তামিম বিবাহিত ও তিন সন্তানের জনক। তারা তিন ভাই ও এক বোন। তামিম বছরতিনেক আগেও কানাডায় বাস করতেন। ২০১৩ সালের মাঝামাঝি তিনি সেখানকার পুলিশের বিরুদ্ধে নির্যাতনের অভিযোগ এনে বাংলাদেশে ফিরে আসার কথা জানিয়ে আত্মগোপনে চলে যান। তামিমের দাদা মজিদ চৌধুরী একাত্তরে শান্তি কমিটির সদস্য ছিলেন। তামিমের পরিবারের সঙ্গে জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। স্বাধীনতার বছর দুয়েকের মধ্যে তার বাবা শফিক আহমেদ চৌধুরী সপরিবারে কানাডা প্রবাসী হন। সেখানেই ৮০-এর দশকের মাঝামাঝি তামিমের জন্ম হয়। কয়েকবার তামিম পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে সিলেট সফর করলেও বিয়ানীবাজারে কেউ তাকে কখনও দেখেনি। তামিম চৌধুরী এক সময় কানাডার ওন্টারিওর উইন্ডসর শহরে থাকতেন। তামিমের পরিবারের সঙ্গে বাড়ির লোকজনেরও কোন যোগাযোগ নেই। সর্বশেষ তামিমের বাবা দেশে এসে গ্রামের বাড়ি না গিয়ে সিলেট শহরে অবস্থান করে আবার ফিরে গেছেন।
×