ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র হবেই

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২৮ আগস্ট ২০১৬

রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র হবেই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রামপালে তাপবিদ্যুত কেন্দ্রটি সুন্দরবনের কোনই ক্ষতি করবে না, সে ব্যাপারে বিস্তারিত তথ্যউপাত্ত ও প্রমাণ তুলে ধরে এ প্রকল্প সারানোর দাবি প্রত্যাখ্যান করেছেন। দেশবাসীকে তাঁর ওপর বিশ্বাস রাখার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমার ওপর বিশ্বাস রাখুন। আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যা। আমি এমন কোন কাজ আগেও করিনি, ভবিষ্যতেও করব না, যা দেশের এবং দেশের মানুষের সামান্যতম ক্ষতি করে। কোন ক্ষতি হলে আমি অন্তত রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র করতাম না। তাই রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়াদের অপপ্রচারে আপনারা বিভ্রান্ত হবেন না। বরং আসুন আমরা সকলে মিলে এই বাংলাদেশকে দারিদ্র্যমুক্ত, ক্ষুধামুক্ত, অসাম্প্রদায়িক জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা হিসেবে গড়ে তুলি।’ আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি। আমি জানি এটা অনেকেরই সহ্য হচ্ছে না। বাংলাদেশ কেন এগিয়ে যাবে, বাংলাদেশ কেন স্বনির্ভর হবে, মানুষ কেন ভাল থাকবেÑ এটা তাদের সহ্য হচ্ছে না। এজন্য একটা অজুহাত খোঁজার চেষ্টা করছে তারা। ২০১৩-১৫ সালে পেট্রোলবোমা মেরে এক শ’র বেশি মানুষ হত্যা করে, জঙ্গীদের মদদ দিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মানুষ মেরে, হলি আর্টিজান এবং শোলাকিয়ায় ন্যক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়ে ফায়দা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে বিএনপি নেত্রী এবার ভাবছেন একটা মওকা পাওয়া গেছে। রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রবিরোধী আন্দোলনকে উস্কে দিয়ে সরকারকে বেকায়দায় ফেলবেন। জনগণকে অত বোকা ভাববেন না। জনগণ আপনার দুরভিসন্ধি বোঝে। একটা নন-ইস্যুকে ইস্যু করে কেউ যদি বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চায়, তাহলে তা কঠোরহাতে দমন করতে আমরা পিছপা হব না। দেশের উন্নয়নের জন্য, মানুষের কল্যাণের জন্য যা কিছু ভাল মনে হবে, আমি সেগুলো করবই। দৃঢ়কন্ঠে তিনি বলেন, একটা কথা বলে রাখি, যদি এ বিদ্যুত কেন্দ্রের কারণে সুন্দবনের সামান্যতম ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকত, তাহলে আমিই হতাম প্রথম ব্যক্তি যে এটা স্থাপনের বিরোধিতা করত। শনিবার গণভবনে জনাকীর্ণ এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র এবং কিছু ভ্রান্ত ধারণার জবাব, এ বিদ্যুত কেন্দ্র যে সুন্দরবনের কোনই ক্ষতি করবে না তার তথ্যপ্রমাণ উপস্থাপন, আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে সম্প্রতি বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বিভিন্ন অভিযোগের জবাবের পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জে হলি আর্টিজান রেস্তরাঁয় জঙ্গী হামলার মূল হোতাসহ তিন জঙ্গী নিহত হওয়ার ব্যাপারে সাংবাদিকদের অসংখ্য প্রশ্নের প্রাণখোলা জবাব দেন। একই সঙ্গে বিশ্বের বহু উন্নত দেশে বন ও ঘনবসতি এলাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের ছবিও সংবাদ সম্মেলনে প্রদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী। সংবাদ সম্মেলনের প্রথমেই বিদ্যুত ও জ্বালানি প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু সূচনা বক্তব্য রাখেন। এরপর পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে রামপাল কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুত কেন্দ্রের বিষয়ে সবিস্তারে তুলে ধরেন বিদ্যুত বিভাগের পাওয়ার সেলের মহাপরিচালক মোহাম্মদ হোসাইন। তিনি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বনের কাছে বিদ্যুত কেন্দ্রের নজির দেখানোর পাশাপাশি সুন্দরবনে যে কোন দূষণ এড়াতে নেয়া পদক্ষেপগুলো তুলে ধরেন। এরপর রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের গুরুত্ব তুলে ধরে একটি প্রামাণচিত্র দেখানো হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চে উপস্থিত ছিলেনÑ তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ, বিদ্যুত সচিব মনোয়ারুল ইসলাম এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়ের সচিব কামাল উদ্দিন। সংবাদ সম্মেলনে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক, সিনিয়র সাংবাদিক ছাড়াও সরকারের মন্ত্রিসভার সদস্য, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য ও দলের সিনিয়র নেতারা উপস্থিত ছিলেন। অবশেষে থলের বিড়াল বেরিয়ে পড়েছে ॥ রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে কিছু বাম সংগঠনের আন্দোলনের পর বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার সমর্থনের দিকে ইঙ্গিত করে শেখ হাসিনা বলেন, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নিয়ে দেশের উন্নয়নবিরোধী একটি মহল বেশ কিছুদিন যাবত ভিত্তিহীন, কাল্পনিক ও মনগড়া বক্তব্য এবং তথ্য দিয়ে এ প্রকল্প সম্পর্কে মানুষের মনে এক ধরনের নেতিবাচক মনোভাব এবং ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা করে আসছিল। অবশেষে গত ২৪ আগস্ট থলের বিড়াল বেরিয়ে এসেছে। এতদিন অন্তরালে থেকে ইন্ধন যোগালেও ওই দিন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া প্রেস কনফারেন্সের মাধ্যমে এ অপপ্রচারে প্রকাশ্যে শামিল হয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের কাছে মনে হচ্ছে, হঠাৎ করে বিএনপির এ অপপ্রচারে প্রকাশ্যে যোগ দেয়ার পেছনে গভীর কোন ষড়যন্ত্র লুকিয়ে আছে। এ বিদ্যুত কেন্দ্র সম্পর্কে যদি কোন নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই থাকত, তাহলে তারা অনেক আগেই তা জনসম্মুখে প্রকাশ করত। এতদিন ধরে আন্দোলন চালানোর পেছনে বিএনপির ‘খোঁটার জোর’ ছিল বলেও মনে করেন। আন্দোলনে অর্থায়নের বিষয়ে তিনি বলেন, এই যে শত শত মানুষ জড়ো করে রোডমার্চ করে, সমাবেশ করে। এগুলো করতে টাকা দেয় কে? পকেটের পয়সা থেকে কেউ নিশ্চয়ই খরচ করে না। এরা বাংলাদেশবিরোধী শক্তির দাবার ঘুঁটি। বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য ফুয়েল লাগে, উনারা ফুয়েল কোথা থেকে পাচ্ছেন? বিরোধিতাকারীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্যাসের সঙ্কট দেখা দেয়ায় মূল্য এবং প্রাপ্যতার দিক থেকে কয়লা এখন সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য জ্বালানি। যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন, জাপান, ভারত তাদের মোট বিদ্যুতের ৪০ থেকে ৯৮ শতাংশ উৎপাদন করে কয়লা দিয়ে। অন্যদিকে, বাংলাদেশে কয়লা বিদ্যুতের পরিমাণ মাত্র ১ শতাংশের সামান্য বেশি। বাংলাদেশের অব্যাহত বিদ্যুত চাহিদা পূরণ এবং যৌক্তিক মূল্যে গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুত পৌঁছানোর জন্য রামপালে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী তাপবিদ্যুত কেন্দ্রসহ কয়েকটি প্রকল্প গ্রহণের কথা বলেন তিনি। শেখ হাসিনা আরও বলেন, রামপালে তাপবিদ্যুত কেন্দ্রের বিরোধিতাকারীদের মূল বক্তব্য হচ্ছে, এটি বিশ্বের সর্ববৃহৎ গরান বন সুন্দরবনের পরিবেশ ও প্রতিবেশ মারাত্মক হুমকির মুখে ঠেলে দেবে। আমি তথ্যউপাত্ত উপস্থাপন করে প্রমাণ করে দিব, বাস্তবায়নাধীন রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র সুন্দরবনের কোন ক্ষতি করবে না। আন্তর্জাতিকভাবে গভীর বনভূমির ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ না করার আইন থাকার কথা মনে করিয়ে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের এ বিদ্যুত কেন্দ্র সুন্দরবনের প্রান্ত সীমানা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে এবং বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ হতে প্রায় ৬৫ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এ এলাকার বায়ুপ্রবাহ সুন্দরবনের বিপরীত দিকে- এ তথ্য তুলে ধরে তিনি বলেন, সামান্য পরিমাণ ক্ষতিকারক বায়বীয় পদার্থও যদি নিঃসরণ হয়, তবে তা সুন্দরবনের দিকে নয়, উল্টোদিকে প্রবাহিত হবে। গত সাত বছরে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদন ॥ বিদ্যুত উৎপাদনে বিগত বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এবং পরবর্তীতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ব্যর্থতা এবং বর্তমান সরকারের সাত বছর মেয়াদে বিপুল পরিমাণ বিদ্যুত উৎপাদনের সফলতা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত স্থাপিত বিদ্যুত কেন্দ্রগুলোর প্রধান জ্বালানি প্রাকৃতিক গ্যাস। কিন্তু গ্যাসের মজুদ দ্রুত হ্রাস পাওয়ায় অদূর ভবিষ্যতে বিদ্যুত কেন্দ্রে আর গ্যাস সরবরাহ করা সম্ভব হবে না। মূল্য এবং প্রাপ্যতার দিক থেকে বিচার করলে কয়লাই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য জ্বালানি। তিনি বলেন, উন্নত দেশগুলো যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ফ্রান্স, জার্মানি, চীন, জাপান, পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত তাদের মোট বিদ্যুতের ৪০ থেকে ৯৮ শতাংশ উৎপাদন করে কয়লা দিয়ে। বাংলাদেশে কয়লা দ্বারা উৎপাদিত বিদ্যুতের পরিমাণ মাত্র ১ শতাংশের সামান্য বেশি (১.৩৩%)। তিনি বলেন, দেশের অব্যাহত বিদ্যুত চাহিদা পূরণ এবং যৌক্তিক মূল্যে গ্রাহকদের কাছে বিদ্যুত পৌঁছানোর জন্য সরকার দেশে বেশ কয়েকটি কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। রামপালে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী তাপবিদ্যুত কেন্দ্র এগুলোর মধ্যে একটি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, প্রথমেই আমাদের ঐকমত্যে আসতে হবে আমাদের বিদ্যুতের প্রয়োজন আছে কি-না। আমার মনে হয় না, দেশের কোন নাগরিকই এক মিনিট বিদ্যুতবিহীন অবস্থায় থাকতে চাইবেন। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, সরকার এসেছে, সরকার গেছে; বিদ্যুত উৎপাদনের কোন টেকসই পরিকল্পনা কেউ গ্রহণ করেনি। আর আমাদের সাবেক বিরোধী দল বিএনপির তো কোন কথাই নেই। ১৯৯১ সালের পর দু’দুবার সরকারে থেকেছে, কিন্তু এক মেগাওয়াট বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারেনি। বরং ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে শুধুমাত্র খাম্বা কেনাবেচার ব্যবসা করেছে। খাম্বা বেচাকেনায় নাকি লাভের পরিমাণ বেশি ছিল। এ খাতে হাজার হাজার কোটি টাকা লুটপাট ছাড়া আর কিছুই করেনি। তথ্য-প্রমাণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৯৬ সালে আমরা যখন সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেই তখন দেশে বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ১৬শ’ মেগাওয়াট। ১৯৯৬ সালের মাঝামাঝি আমরা সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নেই। ৫ বছর পর দায়িত্ব হস্তান্তরের সময় বিদ্যুত উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৪৩শ’ মেগাওয়াট। এরপর আবার বিএনপি ক্ষমতায় আসে। ২ বছর সামরিক-বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় থাকে। ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণের বিপুল ম্যান্ডেট নিয়ে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে আমরা পেলাম মাত্র ৩২শ’ মেগাওয়াট বিদ্যুত। সাত বছরেই ১১শ’ মেগাওয়াট নেই। চারদিকে বিদ্যুতের জন্য হাহাকার, অসহ্য লোডশেডিং। কলকারখানায় উৎপাদন বন্ধ। বিদ্যুতের অভাবে নতুন কলকারখানা স্থাপনের কোন উদ্যোগ নেই। ২০০৬ সালে খালেদা জিয়া চাঁপাইনবাবগঞ্জে বিদ্যুতের জন্য আন্দোলনরত গ্রামবাসীর ওপর গুলি চালিয়ে ১৪ জন মানুষকে হত্যা করেন। শেখ হাসিনা বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে ২৪ হাজার মেগাওয়াট এবং ২০৪১ সালের মধ্যে ৬০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত প্রয়োজন হবে। আমরা সেই লক্ষ্যমাত্রা ধরে স্বল্প এবং দীর্ঘ মেয়াদী পথনক্সা তৈরি করি। স্বল্প মেয়াদী পরিকল্পনার আওতায় আমরা কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট স্থাপনের উদ্যোগ নেই। কারণ একটি বড় প্লান্ট তৈরি করতে ৯/১০ বছর সময় লেগে যায়। আপনারা লক্ষ্য করেছেন, সে সময়ও একদল মানুষ এর বিরোধিতা করেছিল। তিনি বলেন, বিগত সাড়ে সাত বছরে আমরা বিদ্যুত উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ১৫ হাজার মেগাওয়াটে উন্নীত করেছি। ১০৫টির মতো বিদ্যুতকেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ৭৮ শতাংশ মানুষের কাছে বিদ্যুত পৌঁছে দেয়া হচ্ছে। ১ কোটি ১২ লাখ নতুন গ্রাহকে বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হয়েছে। তিনি বলেন, কুইক-রেন্টাল কোন স্থায়ী ব্যবস্থা নয়। দীর্ঘস্থায়ী বিদ্যুত উৎপাদন ব্যবস্থায় কয়লার ব্যবহার ছাড়া কোন উপায় নেই। অন্য বিকল্প পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র। আমরা সেদিকেও অগ্রসর হচ্ছি। রূপপুরে ২ হাজার ৪০০ মেগাওয়াটের পারমাণবিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের কাজ এগিয়ে চলছে। আমরা যখন স্থায়ী এবং টেকসই পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের দিকে যাচ্ছি, আবারও সেই মহল এর বিরোধিতা শুরু করেছে। তিনি আরও বলেন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য প্রয়োজন সস্তা পরিবহন ব্যবস্থা। সেজন্য কয়লা খনির কাছাকাছি অথবা সমুদ্র উপকূল বা গভীরতা-সম্পন্ন নদীর তীরে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করা হয়ে থাকে। আরেকটি বিবেচ্য দিক হচ্ছে যতদূর সম্ভব কমসংখ্যক মানুষের স্থানান্তর করা। আমরা প্রাথমিকভাবে যেসব কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের পরিকল্পনা করেছি সেগুলোর স্থাপিত হবে রামপাল, মাতারবাড়ি, পায়রা, আনোয়ারা, বাঁশখালী, খুলনা এবং মুন্সীগঞ্জে। দক্ষিণ কোরিয়া, মালয়েশিয়া, চীন এবং সিঙ্গাপুর এসব বিদ্যুত প্রকল্প নির্মাণে আর্থিক এবং কারিগরি সহায়তা করছে। রামপালে হবে অত্যাধুনিক আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুত কেন্দ্র ॥ রামপালে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের যৌক্তিকতা এবং পরিবেশ দূষণরোধে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহারের কথা দেশবাসীর সামনে তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটা কথা আমাদের স্মরণ রাখতে হবে উন্নত প্রযুক্তি অনেক অসম্ভবকে সম্ভব করতে সক্ষম হয়েছে। রামপালে আমরা আলট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করতে যাচ্ছি। একটি সাধারণ বিদ্যুত কেন্দ্রের কয়লা পোড়ানোর দক্ষতা যেখানে ২৮ ভাগ, সেখানে আলট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্লান্টের দক্ষতা ৪২ থেকে ৪৩ ভাগ। অর্থাৎ একই পরিমাণ কয়লা পুড়িয়ে আমরা দেড়গুণ বিদ্যুত পাব। সবচেয়ে গুণগত মানসম্পন্ন কয়লা এখানে ব্যবহার করা হবে। কয়লা আমদানি করা হবে অস্ট্রেলিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে। তিনি বলেন, দূষণ প্রতিরোধে সর্বাধুনিক যত ধরনের প্রযুক্তি পাওয়া যায় সেগুলো আমরা ব্যবহার নিশ্চিত করব। ফ্লু গ্যাস টেম্পারেচার, নাইট্রোজেন, সালফার-ডাই-অক্সাইড, কার্বন ডাই অক্সাইড ইত্যাদির নিঃসরণ পর্যবেক্ষণের জন্য রিয়েল টাইম কন্টিনিউয়াস এমিশন মনিটরিং সিস্টেম (সিইএমএস) থাকবে। যাতে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া যাবে। পাশাপাশি অন্যান্য দূষণ নিয়ন্ত্রণকারী যন্ত্রপাতি বসানো হবে। তিনি বলেন, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রে ইএসপি থাকবে যা উদগীরণকৃত ফ্লাই এ্যাসের ৯৯ দশমিক ৯৯ শতাংশ ধরে রাখতে সক্ষম হবে। এই ছাই সিমেন্ট ফ্যাক্টরিতে ব্যবহৃত হবে। একইভাবে এফজিডি স্থাপনের ফলে ৯৬ শতাংশ সালফার গ্যাস শোষিত হবে। এই সালফার গ্যাস থেকে জিপসাম সার তৈরি হবে। রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের চিমনির উচ্চতা হবে ২৭৫ মিটার। এই চিমনি দিয়ে যে কার্বন-ডাই-অক্সাইড বের হবে তা বিদ্যুত কেন্দ্রের ১ দশমিক ৬ কিলোমিটারের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে। অন্য যে সমস্ত গ্যাস সামান্য পরিমাণে বের হবে সেগুলোর ঘনত্ব বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার স্বীকৃত মাত্রার চেয়ে অনেক কম থাকবে। যারা বলেন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র পরিবেশ এবং প্রতিবেশের ক্ষতি করে, তাদের একটু বড়পুকুরিয়া বিদ্যুত কেন্দ্র ঘুরে আসার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বড়পুকুরিয়া একটি সাব-ক্রিটিক্যাল পাওয়ার প্লান্ট। সাব-ক্রিটিক্যাল এবং আলট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল প্লান্টের মধ্যে বিশাল ব্যবধান রয়েছে। সাব-ক্রিটিক্যালের তুলনায় সুপারক্রিটিক্যালে ৪০ শতাংশ কার্বন, সালফার ও নাইট্রোজেন গ্যাস নিঃসরণ কম হয়। আল্ট্রা-সুপারক্রিটিক্যাল প্লান্টে যে কোন দূষণের মাত্রা শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনা সম্ভব। তিনি বলেন, বড়পুকুরিয়া কয়লা খনির কয়লা দিয়ে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ শুরু করি ২০০০ সালে। খালেদা জিয়া ২০০১ সালে ক্ষমতায় এসে তা বন্ধ করেননি। তখন পরিবেশের জন্য তো মায়াকান্না করেননি। বরং ফুলবাড়িতে ওপেনপিট কয়লা খনির বিরুদ্ধে আন্দোলনরত মানুষের ওপর গুলি করে আধা ডজন মানুষ হত্যা করেছিল খালেদা জিয়া। প্রমাণ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাব-ক্রিটিক্যাল প্লান্ট ব্যবহার করলেও ঘনবসতি এবং সবুজে ঘেরা বড়পুকুরিয়া এলাকায় বিগত দশ বছরে পরিবেশ এবং জনজীবনে কোন বিরূপ প্রভাব পড়েনি। উল্টো সেখানকার জমি আরও ঊর্বর হয়েছে। ফসল ভাল হচ্ছে। তিনি বলেন, বিশ্বের বহুদেশে বনভূমির মাঝখানে, শহরের মধ্যে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপন করে বিদ্যুত উৎপাদন করা হচ্ছে। এ সময় দেশের বনভূমির কাছাকাছি এবং ঘনবসতি এলাকায় স্থাপিত কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্রের উদাহরণ এবং ছবি প্রদর্শন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া কোল পাওয়ার প্লান্ট, ক্ষমতা ১৩০০ মেগাওয়াট। ন্যাশনাল পার্কের এক কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থিত। ২০১৫ সালে ওয়েস্ট ভার্জিনিয়ার মোট বিদ্যুতের ৯৪ শতাংশ কয়লা থেকে উৎপন্ন হয়েছে। কুয়াং নিন বিদ্যুত কেন্দ্র, ভিয়েতনাম, ১২০০ মে.ওয়াট। হ্যালং বে (উইনেস্কো ঐতিহ্য) এর মাত্র ৬ কিলোমিটার দূরে। ইসোগো বিদ্যুত কেন্দ্র, ইওকোহোমা, জাপান, ১২০০ মেগাওয়াট, আবাসিক এলাকার সন্নিকটে। তাইচুং বিদ্যুত কেন্দ্র, তাইওয়ান, ৫৫০০ মেগাওয়াট, শহরের প্রাণকেন্দ্রে। জলিং বিদ্যুত কেন্দ্র, জার্মানি, ৫০০ মেগাওয়াট, এ্যামপার নাটুরা ২০০০-এর বিশেষায়িত সংরক্ষিত এলাকা থেকে মাত্র ৫০০ মিটার দূরে। হেইলব্রোন হ্যাফেন বিদ্যুত কেন্দ্র, জার্মানি, ৭৫০ মেগাওয়াট, শহর সংলগ্ন এবং নদী তীরবর্তী। ক্রাফটওয়ার্ক-মুরবার্গ বিদ্যুত কেন্দ্র, জার্মানি, ১৬০০ মেগাওয়াট, শহর সংলগ্ন এবং নদীর তীরে। রেইনহফেন ড্যাম্ফক্রাফট বিদ্যুত কেন্দ্র, জার্মানি, ১৪৬২ মেগাওয়াট এটাও শহর সংলগ্ন এবং নদীর তীরবর্তী। তিনি বলেন, এরকম শত বিদ্যুত কেন্দ্রের উদাহরণ দেয়া যাবে যেগুলো বনাঞ্চলে বা ঘন বসতি এলাকায় স্থাপন করা হয়েছে। কোন দেশে কেউ এসব নিয়ে এমন হৈচৈ করে না। কিন্তু আমাদের দেশের জ্ঞানপাপীরা হৈচৈ করছে। এরা কারা? এরা নিজেরা ভাল কিছু করতে পারে না, আবার কেউ ভাল কিছু করতে গেলে তাতে বাধা দেয়। রামপালে সুন্দরবনের কথা বলে বিরোধিতা করছে, কিন্তু আনোয়ারায় সে সুন্দরবন নেই। কিন্তু সেখানেও বিরোধিতা করছে কেন? এদের কথা শুনতে গেলে তো কোন উন্নয়ন কাজই হাতে নেয়া যাবে না। তিনি বলেন, কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট যদি এতই দূষণ সৃষ্টি করত, তাহলে জাপানের মতো দেশ নতুন নতুন কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট তৈরির উদ্যোগ নিত না। ক’দিন আগে জাপান সরকার ৭০০০ মেগাওয়াট ক্ষমতাসম্পন্ন কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে। চীনে প্রায় ৩০০ কয়লাভিত্তিক পাওয়ার প্লান্ট নির্মাণ কাজ চলছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সুন্দরবন সংরক্ষণের জন্য আমিই প্রথম ব্যাপক পদক্ষেপ নিয়েছি। আজকে যে সুন্দরবন আমরা দেখছি ১০০ বছর আগেও এর ব্যাপ্তি অনেক বড় ছিল। ছোট হতে হতে আজকে এ পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। সুন্দরবন কি বিদ্যুত কেন্দ্র স্থাপনের জন্য এভাবে সঙ্কুচিত হয়েছে? তিনি বলেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি বা দূষণ ভৌগলিকভাবে সীমাবদ্ধ নয়। বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধির কোন কারণ সুদূর আমেরিকায় ঘটলে, তার প্রভাব আমাদের এখানেও পড়বে। তাহলে আমেরিকা, জাপান, চীন, ভারতকে বলুন, কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ বন্ধ রাখতে। তিনি বলেন, আমাদের নেয়া পদক্ষেপের ফলে সুন্দরবনের আয়তন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। গাছের ঘনত্ব বাড়ছে। উপকূল এলাকায় সবুজবেস্টনী সৃষ্টি করা হয়েছে। নতুন জেগে উঠা চরে বৃক্ষ রোপণ করে সেগুলোর ভূমিক্ষয় রোধ করার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণে আমরা আইন তৈরি করেছি। বাঘ সংরক্ষণে টাইগার এ্যাকশন প্লান গ্রহণ করেছি। আমাদের বিভিন্ন কার্যক্রমের ফলে দেশে বনভূমির পরিমাণ ২০০৫-০৬ সালের ৭-৮ শতাংশ হতে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১৪-১৫ সালে ১৭.০৮ শতাংশ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, পরিবেশ সংরক্ষণে আধা ডজনের বেশি আইন করেছি। পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণের জন্য আমরা সংবিধানে মৌলিক পরিবর্তন এনেছি। সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীতে ১৮ ক নামে একটি নতুন ধারা সংযোজন করেছি। গঙ্গার পানি প্রত্যাহারের ফলে দেশের পশ্চিমাঞ্চল বিশেষ করে রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়ায় মরুকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল। বিএনপি সরকার এ ব্যাপারে কিছুই করেনি। আমরা ১৯৯৬ সালে সরকার পরিচালনার দায়িত্ব নিয়ে ভারতের সঙ্গে গঙ্গার পানি চুক্তি সম্পাদন করে পানির ন্যায্য হিস্যা আদায় করি। ফলে ঐ অঞ্চলে মরুকরণ প্রক্রিয়া বন্ধ হয়েছে। আমরা গড়াই নদীতে ক্যাপিটাল ড্রেজিং শুরু করেছিলাম ২০০১ সালে। বিএনপি এসে তা বন্ধ করে দেয়। ২০০৯ সালে আবার তা শুরু করেছি। তিনি বলেন, পরিবেশের নাজুকতা সম্পর্কে সামান্য হলেও আমার যেমন ধারণা আছে, তেমনি বিজ্ঞান-প্রযুক্তির ক্ষমতার উপরও আমার পূর্ণ আস্থা আছে। প্রযুক্তিকে আপনি অস্বীকার করতে পারেন না। কয়লা পোড়ালে ক্ষতিকর পদার্থ নিঃসরণ হবে- এ নিয়ে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু আমরা এমন সব অত্যাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করছি, যেগুলো ক্ষতিকারক পদার্থগুলোকে পরিবেশে ছড়াতে দিবে না। উল্টো সেগুলোর কোন কোনটিকে রাসায়নিকভাবে পরিবর্তন করে মানুষের উপকারী বস্তুতে পরিণত করা হবে। অসংখ্য প্রশ্নোত্তরে প্রধানমন্ত্রী যা বলেন ॥ একজন বেসরকারী টেলিভিশনের সিইও প্রশ্ন করেন যে পরিবেশ বাণিজ্য, রাজনীতি চলছে এবং অসংখ্য পরিবেশজীবীও সৃষ্টি হয়েছে। এদের বিরোধিতার দিকে না তাকিয়ে গৃহীত প্রকল্পগুলো সুষ্ঠুভাবে নির্মাণে নজরদারির জন্য একটি পৃথক অথরিটি গঠন করবেন কি না? এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যে সকল প্রকল্প হাতে নেই তার প্রতি নজরদারি সবসময়ই রাখি যাতে কাজগুলো দ্রুত শেষ হয়। পরিবেশের দিকে সবচেয়ে গুরুত্ব দিয়েই আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে এসব প্রকল্পে। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যত্রতত্র শিল্প, কল-কারখানা স্থাপনের প্রবণতা বন্ধে ইতোমধ্যে আমরা একশ’টি অর্থনৈতিক জোন তৈরি করে দিচ্ছি। এসব জোনের প্রতিটিতে জলাদার থাকতে হবে, বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের ব্যবস্থা থাকতে হবে। আর আমরা যত্রতত্র শিল্প-স্থাপনা নির্মাণ করতে দেব না, করতে হলে এসব ইকোনমিক জোনেই করতে হবে। একটি দৈনিকের সম্পাদক প্রশ্ন করেন রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে পানি ঘোলা করার অগেই জাতির সামনে সবকিছু পরিস্কার করা উচিত ছিল। কিন্তু এখন প্রধানমন্ত্রীর দেশপ্রেম নিয়ে প্রশ্ন তোলা হচ্ছে। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের মানুষ এখন অনেক সচেতন, মিথ্যাচার করে জনগণকে আর বিভ্রান্ত করা যাবে না। আর এই বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে জাতীয় সংসদে অনেক আগেই আমি তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরেছিলাম। তিনি বলেন, আইনেই রয়েছে সুন্দরবনের ১০ কিলোমিটারের মধ্যে কোন শিল্প-কারখানা নির্মাণ করা যাবে না। রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র তো ১৪ কিলোমিটার দূরে। এক্সিম ব্যাংক টাকা বন্ধ করলে নিজেদের টাকাতেই করব ॥ আরেকটি বেসরকারী টেলিভিশনের সিইও প্রশ্ন করেন, অপতথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করতে হয় সঠিক তথ্য দিয়ে। শোনা যাচ্ছে ১৭৭টি সংস্থা ভারতের এক্সিম ব্যাংকের কাছে চিঠি দিয়েছে অর্থ বরাদ্দ না দিতে। তাই এ বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ নিয়ে বিকল্প কোন চিন্তা আছে কি না। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমিও শুনেছি কিছু সংগঠনগুলো নাকি চিঠি দিচ্ছে। কারা করছে আমরা খোঁজ-খবর নিচ্ছি। শেষ পর্যন্ত যদি ওই ব্যাংক টাকা না দেয় তবে বিকল্প ব্যবস্থা করব। তাও না হলে নিজেদের অর্থ দিয়েই করব। আমরা কী নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু করছি না? আমরা কি পিছিয়ে যাওয়ার মানুষ নাকি? তখন বিরোধিতাকারীরা কী করে দেখব। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি বাংলাদেশ সফর প্রসঙ্গে দু’জন সিনিয়র সাংবাদিক প্রশ্ন করেন যে, জন কেরি এদেশ সফরে আসছেন। এই পররাষ্ট্রমন্ত্রীই একজন যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি না দিতে ফোন করে তদ্বির করেছিলেন। সামনে আরেক যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসির রায় কার্যকরের অপেক্ষায় রয়েছে। এ সফর নিয়ে কী ভাবছেন? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বাংলাদেশ সফরে আসছেন। উনি আসার পর কী বলবেন, কী আলোচনা হয় পরে তা আপনাদের (সাংবাদিক) জানাব। রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের বিরোধিতাকারীদের সঙ্গে আলোচনা করবেন কি না, একটি টেলিভিশন চ্যানেলের হেড অব দ্য নিউজের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তবে কী আমি সব কুইক রেন্টাল বিদ্যুত কেন্দ্র বন্ধ করে দেব? সবাই হ্যারিকেন জ্বালিয়ে থাকুন। আর তাদের (আন্দোলনকারী) ডেকে বোঝালেও তাদের কানে পানি যাবে না। কারা কী কারণে এসব করছে তা আমি জানি। আর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা হয়নি কে বলল? আমাদের বিদ্যুত প্রতিমন্ত্রী তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে, রামপালে নিয়ে যেতে চেয়েছে। কিন্তু কাজে আসেনি। আসলে বর্তমান সরকারের অগ্রযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করাই এই আন্দোলনের প্রধান লক্ষ্য বলেও মন্তব্য করেন প্রধানমন্ত্রী। বামদল টুকরো হতে হতে অনু-পরমাণুতে পরিণত হয়েছে ॥ একটি বেসরকারী টেলিভিশন চ্যানেলের প্রধান বার্তা সম্পাদক প্রশ্ন করেন- কিছু বাম সংগঠন আন্দোলনের সঙ্গে এখন বিএনপির মতো দল যোগ দিয়েছে। ভারতবিরোধী ইস্যু নতুন করে সামনে আনা হচ্ছে কি না? এই প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, কিছু বাম দল আছে সব সময় উল্টো রাজনীতি করতে গিয়ে টুকরো হতে হতে এখন অনু-পরমাণুতে পরিণত হচ্ছে। এরা যদি জিয়াউর রহমানের সময় কোদাল হাতে নিয়ে সমর্থনে নেমে না পড়ত তবে আজ স্বাধীনতাবিরোধীরা মন্ত্রী হতে পারত না, বিচার হতো। তিনি বলেন, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রে উৎপাদিত বিদ্যুত ভারত নেবে না, আমরাই নেব। যেহেতু ভারত এই বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণে অর্থায়ন করছে, তাই এই বিদ্যুত বিক্রি করে যা আসবে তা দু’দেশ ভাগ করে নেবে। ভারতবিরোধিতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশে থাকলে ভারত বিরোধিতা, আর ভারতে গেলে তাদের (বিএনপি) পায়ে ধরা- এটাই তো তাদের চরিত্র। শান্তি চুক্তির সময় বিএনপি নেত্রী বলেছিলেন, এটা হলে ফেনী পর্যন্ত ভারত হয়ে যাবে। তখন আমি বলেছিলাম, তবে তো বিএনপি নেত্রী বাংলাদেশ নয়, ভারতের লোকসভার এমপি হবেন। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, স্থল সীমান্ত চুক্তির বিষয়ে জিয়া-এরশাদ-খালেদা জিয়ারা কী কোন কথা ভারতকে বলার সাহস দেখাতে পেরেছিলেন? আমরা পেরেছি। ভারতের কাছ থেকে সব ন্যায্য হিস্যা আমরাই আদায় করেছি, অন্য কেউ পারেনি। তিনি বলেন, আসলে এরা দেশের স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না। করলে কী যুদ্ধাপরাধীদের দায়ে যাদের ফাঁসির রায় কার্যকর হয়েছে তাদের মন্ত্রী বানাত? তাদের ছেলেমেয়েদের দলে পদবী দিয়ে পুরস্কৃত করত? ঢাকায় বসে আন্দোলন কেন? একটি দৈনিকের সিনিয়র সাংবাদিক প্রশ্ন করেনÑ যারা আন্দোলনের নামে দেশের ক্ষতি করছে তাদের সামাজিকভাবে বয়কট করা উচিত কি না? জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আন্দোলন করছেন তারা ঢাকায় কেন? লংমার্চ করতে গিয়ে রামপাল না গিয়ে খুলনা থেকে ফেরত এসেছেন এটাও আমাদের জানা আছে। আন্দোলনকারীদের উচিত রামপালে গিয়ে আন্দোলন করা, সেখানকার জনগণকে বোঝানো। সেখানে গেলেই তারা বুঝতে পারবে সেখানকার জনগণ কী চায়। তিন জঙ্গী খতমে দেশ আরেকটি ফাঁড়া থেকে রক্ষা পেল ॥ দুটি বেসরকারী টিভি চ্যানেলের সিনিয়র দু’জন সাংবাদিক নারায়ণগঞ্জে তিন জঙ্গী নেতা নিহত হওয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া জানতে চান। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে নারায়ণগঞ্জে অভিযান চালায়। সেখানে থাকা জঙ্গীদের আত্মসমর্পণের আহ্বান জানালেও তারা জবাবে আক্রমণ করে, গুলি চালায়। অভিযানের সময় গুলশানে জঙ্গী হামলার মূল হোতাসহ তিন জঙ্গী খতম হয়েছে। এতে দেশের মানুষ কিছুটা হলেও কলঙ্কমুক্ত হয়েছে। দেশ আরেকটি ফাঁড়া থেকে রক্ষা পেল। কিন্তু তাদের অনেক দোসর আছে যারা এসব জঙ্গী নিহত হলে মায়া কান্না করে। কিন্তু দেশের মানুষ জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের ব্যাপারে আজ ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, ব্যাপক গণসচেতনতার সৃষ্টি হয়েছে। জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকলে এদেশে জঙ্গী-সন্ত্রাসীদের কোন ঠাঁই হবে না। তিনি নারায়ণগঞ্জের ঘটনায় আইন-শৃঙ্খলাবাহিনীকে ধন্যবাদও জানান।
×