ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

মুনতাসীর মামুন

মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচার থেকে সেলুন-বিউটিপার্লার গুরুত্বপূর্ণ?

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৮ আগস্ট ২০১৬

মানবতাবিরোধী অপরাধ বিচার থেকে সেলুন-বিউটিপার্লার গুরুত্বপূর্ণ?

মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার শুরু করে শেখ হাসিনা যেন একটি অপরাধ করে ফেলেছেন! জনগণ তাকে ম্যান্ডেট দিয়েছিল বিচারের, শুদ্ধ মনে তা শুরুও করেছিলেন। কিন্তু প্রথম দিন থেকেই দেখা গেল সবকিছুতে একটা ‘কিন্তু’ থেকে যাচ্ছে। প্রধান তদন্তকারী নিয়োগ করা হলো, দেখা গেল তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিল জামায়াতের, কি স্ক্যান্ডাল! কোথায় বিচার হবে সে স্থান নির্ধারণ নিয়ে শুরু হলো টানাপড়েন। তারপর প্রসিকিউটরদের নিয়ে। আপীল নিয়ে। শেখ হাসিনার নির্দেশে নিশ্চয় এসব টানাপড়েনের সৃষ্টি হয়নি। তিনি যাদের ওপর দায়িত্ব অর্পণ করেছিলেন তাদের সিদ্ধান্তসমূহই বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছে। এ কারণে, তাদের কিছু হয়নি, কিন্তু দায়টা সবসময় প্রধানমন্ত্রীকে নিতে হয়। এটা জানা কথা ছিল যে, বিচার শুরু মানে ভিমরুলের চাকে খোঁচা দেয়া বা বিদ্যমান ব্যবস্থা পরিবর্তনের চেষ্টা। বিচার না করা হলো স্ট্যাটাসকো বা বিদ্যমান ব্যবস্থা বজায় রাখা। স্টাবলিশমেন্ট সবসময় চায় বিদ্যমান ব্যবস্থা বজায় থাকুক। সরকারী দলের ভেতরেও একটি অংশ স্ট্যাটাসকো বজায় রাখার পক্ষপাতী। হেফাজতী তোষণ এর উদাহরণ। এতসব প্রতিবন্ধকতা সত্ত্বেও বিচার চলছিল। ষড়যন্ত্রও চলছিল। এদেশের বেশকিছু উল্লেখযোগ্যসংখ্যক মানুষ এদেশে বসবাস করলেও তাদের আনুগত্য পাকিস্তানের প্রতি। এদের অধিকাংশই বিএনপি ও জামায়াতের সমর্থক। ওদের সেকেন্ড ফ্রন্ট জঙ্গীরা তো আছেই। ২০০৯ থেকে এ পর্যন্ত এ দুটি দল বিচার ঠেকানোর জন্য মানুষ হত্যা থেকে স্কুল পোড়ানো কিছুই বাদ দেয়নি। আজ মির্জা ফখরুল কেঁদে ফেলেন। কি ভ-ামি! কত সহজেই এসব মানুষ ভুলে যায় কিভাবে মানুষের পর মানুষ তারা পুড়িয়েছিল। কিছুদিন আগেও তার নির্দেশে যারা খুন হয়েছেন, পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে তাদের চোখের পানি এখনও শুকায়নি। মির্জা ফখরুলরা এর প্রায়শ্চিত্ত না করলে আরও বহুদিন চোখের পানি ফেলতে হবে। পাকিস্তানী বাঙালী বা আটকেপড়া বাঙালী যারা এই বিচারের বিরুদ্ধে, তারা প্রকাশ্য ভায়োলেন্স ছাড়া আরেকটি হাতিয়ার ব্যবহার করছে। সে হলো টাকা। মানবতাবিরোধী অপরাধী মুজাহিদ-সৃষ্ট হাজারখানেক এনজিও, জামায়াত-বিএনপির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং ইসলামী ব্যাংক এই টাকার উৎস। তাদের জোরটা দেখুন। মানিলন্ডারিং করে তার কোন শাস্তি হয় না, কিন্তু শাস্তি দেয়ার চেষ্টা করা হয় অন্যান্য ব্যাংককে। ইসলামী ব্যাংক প্রতিবছর কয়েকশ কোটি টাকা জমা দেয় ইসলামী ব্যাংক ফাউন্ডেশনে। সে টাকা ব্যবহৃত হয় জঙ্গী পালনে। আমাদের অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও জামায়াতও নিষিদ্ধ হয়নি। জঙ্গী অর্থায়নের উৎস বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। মন্ত্রীদের গলাবাজি চলছে এক্ষেত্রে পুরোদমে, কাজের কাজ কিছুই হয়নি। আলবদর মীর কাশেম আলীকে গ্রেফতারের পর জানা গেল তার মুক্তির জন্য লবিং করতে মার্কিন এক লবিস্ট ফার্মকে ২৫ মিলিয়ন ডলার দেয়া হয়। কিভাবে সেই ২৫ মিলিয়ন দেয়া হলো বাংলাদেশ ব্যাংক তা তদন্ত করেনি। তখন থেকে আমরা বলেছি, এই টাকা এখন ব্যয় হবে বিচার বাধাগ্রস্ত করার জন্য। দেখা গেল, আন্তর্জাতিক ক্ষেত্র থেকে বাধা আসছে। দেশের অনেক টিভি চ্যানেলে এই বিচার নিয়ে বিতর্ক শুরু করল বা অপরাধের সমর্থকদের পাবলিক স্পেস দেয়া শুরু করল, এমনকি এক সময়ের এই অপরাধ বিচারে সোচ্চার ডেভিড বার্গম্যানও দেশে থেকেই বিচার নিয়ে প্রশ্ন তুললেন। বিচারালয়ে দেখা গেল, আপীলে অগ্রাধিকার পেল না জাতির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি। অন্যান্য দশ-পাঁচটা মামলার সঙ্গে তা মিলিয়ে ফেলা হলো। সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মামলার রায় নিয়ে তুলকালাম হয়েছিল। জনকণ্ঠ সম্পাদক আতিকউল্লাহ খান মাসুদ ও নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়কে কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হলো। মীর কাশেম আলীর আপীলের শুনানি শুরু হলেও এই গুজব রটে যে সহসা এর বিচার শেষ হবে না। ॥ দুই ॥ হ্যাঁ, সত্যি সত্যিই মীর কাশেমের শাস্তি বহাল থাকার পর রিভিউ নিয়ে বিতর্ক শুরু হয়েছে। অবশেষে আজ রবিবার শুনানী চলবে হবে বলে ঘোষণা করা হয়েছে। যে যাই বলুন, আমি মনে করি রিভিউ খারিজ হবেই এবং এসব জল্পনার শেষ হবে, হয়ত তিক্ত স্বাদ খানিকটা থেকে যাবে। গত কয়েকদিন এই বিচারকে কেন্দ্র করেই বেশকিছু ঘটনা ঘটছে। এক. রিভিউ শুনানি দীর্ঘায়িত করা যেদিন শুনানি সেদিনও তা স্থগিত করা, দুই. প্রধান বিচারপতি সরকারকে নির্দেশ দিয়েছেন অক্টোবরের মধ্যে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তর করা, তিন. জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন বলেছে, মীর কাশেমের বিচার ফের শুরু করতে, চার. আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় খবর এসেছে [এটিএন নিউজ এক্সট্রায় বিশদভাবে আলোচিত] কয়েকশ মিলিয়ন ডলারের তহবিল গঠন করা হয়েছে এই বিচার বানচালের। এত কাকতালীয় ঘটনা একসঙ্গে ঘটে না, আল্লার ইচ্ছা ছাড়া। এটা স্পষ্ট যে, টাকা বিদেশীরাও খাচ্ছে। এসব ঘটনার মধ্যে প্রধান বিচারপতির নির্দেশই সবচেয়ে বেশি প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করছে। প্রধান বিচারপতির প্রায় মন্তব্যেই প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হচ্ছে। এটি অনভিপ্রেত। কারণ, এর ফলে সরকার ও সমাজে নানারকম বিভ্রান্তি ও অশান্তি সৃষ্টি হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক সমাজে সংখ্যালঘুরা প্রশ্নের সম্মুখীন হবেন। এতদিন বিভিন্ন নিয়োগ প্রমোশন নিয়ে কথা ওঠেনি। এখন উঠছে এবং ২০১৮ পর্যন্ত উঠবে। এবং তা সমাজে অস্থিরতা সৃষ্টি করবে। আদালতের কাজ সমাজে স্থিরতা বজায় রাখা, অস্থিরতা সৃষ্টি নয়। অস্থিরতা সৃষ্টি করে সাধারণত বিরোধী দল, যেমন এখন করছে বিএনপি-জামায়াত। উচ্চপদে যারা আসীন তাদের কাছে সবাই প্রজ্ঞা আশা করে। আমাদের কাছে নয়। প্রধান বিচারপতির এই নির্দেশ সিভিল সমাজে দারুণ ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। খাদ্য ও আইনমন্ত্রীর ক্ষুব্ধ বক্তব্যে বোঝা যাচ্ছে সরকারও ক্ষুব্ধ। এই চিঠি প্রকাশের পর পর প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিচার চলবেই। বিচার বন্ধে অনেক চাপ আসছে, ষড়যন্ত্র চলছে কিন্তু বিচার হবেই। বিভিন্ন সংগঠন ক্ষোভ প্রকাশ করছে। এই চিঠি প্রত্যাহার ছাড়া এই ক্ষোভ মিটবে না। বরং এই মেসেজই দেয়া হবে, সুপ্রীমকোর্ট এই বিচারে নাখোশ। আমরা জানি এটি ঠিক নয়। আদালতের বিচারকরা সামগ্রিকভাবে ৩০ লাখ শহীদের প্রতি দায়বদ্ধ। কিন্তু আদালত যেন প্রশ্নবিদ্ধ না হয় তা ‘ভ্রাতা বিচারকদের’ দেখা উচিত। কিন্তু সাধারণকে তো আর জনে জনে বোঝানো যাবে না। তখন যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে তা সামাল দেয়া কারও পক্ষে সম্ভব হবে না। কারণ এই বিচার হচ্ছে ৩০ লাখ শহীদ, ৬ লাখ নির্যাতিত নারী, অগণিত আহত, বঙ্গবন্ধু ও চার নেতা এবং সর্বোপরি মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের মানুষের কাছে দায়বদ্ধতা থেকে। এক্ষেত্রে রাষ্ট্রের তিন বিভাগে কোন নির্দেশই গুরুত্বপূর্ণ নয়। ইয়াহিয়া-ভুট্টোর নির্দেশ মানলে আর বাংলাদেশ হতো না। চিঠি নিয়ে যেহেতু এখন আলোচনা হচ্ছে সেটি নিয়ে বলি। উল্লিখিত অন্য বিষয়গুলো সত্য বটে তবে দালিলিক উদাহরণ দেয়া অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব নয় [মীর কাশেমের ২৫ মিলিয়ন জমা দেয়ার রিসিট ছাড়া]। সুপ্রীমকোর্টের চিঠিতে বলা হয়েছে, পুরাতন হাইকোর্ট ভবনের বিভিন্ন অংশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থাপনের জন্য অস্থায়ীভাবে বরাদ্দ করা হয়। তখন থেকে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনের বিভিন্ন অংশ আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্টে বর্তমানে পর্যাপ্ত স্থানাভাবে বিচারপতিগণের প্রয়োজনীয় চেম্বার ও এজলাসের ব্যবস্থা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া স্থান সঙ্কুলান না হওয়ার কারণে সুপ্রীমকোর্ট রেজিস্ট্রার অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রয়োজনীয়সংখ্যক চেম্বার দফতরের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না। ভবিষ্যতে বিষয়টি আরও প্রকট হবে বিধায় জরুরীভিত্তিতে বিচারপতিগণের চেম্বার ও এজলাস এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস হিসেবে ব্যবহারের নিমিত্ত প্রয়োজনীয় স্থানের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। বিচারপতিগণের চেম্বার ও এজলাস এবং কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অফিস হিসেবে ব্যবহারক্রমে বিদ্যামন প্রকট স্থানাভাব দূরীকরণার্থে সম্পূর্ণ পুরাতন হাইকোর্ট ভবনটি বাংলাদেশ সুপ্রীমকোর্ট কর্তৃক বুঝে পাওয়া একান্ত অপরিহার্য। চিঠিতে আরও বলা হয়, প্রধান বিচারপতির সঙ্গে আইনমন্ত্রীর এ বিষয়ে মৌখিক আলোচনা হয়েছে। এমতাবস্থায় আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অন্যত্র স্থানান্তর করে আগামী ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সুপ্রীমকোর্টেকে পুরাতন হাইকোর্ট ভবনটির দখল স্থানান্তরের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশক্রমে অনুরোধ করা হলো। [জনকন্ঠ ২৪-০৮-২০১৬] অন্যদিকে ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেছেন, আমরা এ ঘটনায় অত্যন্ত ক্ষুব্ধ। সুপ্রীমকোর্টের আরও প্রচুর জায়গা আছে যেখানে ভবন নির্মাণ করে সমস্যা দূর করা যায়। একদিন বিচার শেষে জার্মানি ও জাপানের মতো পুরাতন হাইকোর্ট ভবনও গণহত্যাকারী বিচারের জাদুঘরে পরিণত করা হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বড় অর্জন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। এটা বানচাল করার ষড়যন্ত্র কোনভাবেই বরদাস্ত করব না। আইনমন্ত্রী এ্যাডভোকেট আনিসুল হক বলেছেন, সুপ্রীমকোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে ট্রাইব্যুনাল স্থানান্তরের বিষয়ে আলাপ আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। [ঐ] সুপ্রীমকোর্টের জায়গার অভাব এটি সর্বজনবিদিত। অবকাঠামো সম্পূর্ণ না করে বিচারক নিয়োগ দেয়ায় এবং কর্মপরিধি বৃদ্ধি পাওয়ায় এই সঙ্কটের সৃষ্টি। আদালত দাবি করছে, সড়ক ভবন থেকে শুরু করে পুরনো হাইকোর্ট ভবন পর্যন্ত এলাকাটি তাদের। ব্রিটিশ বা পাকিস্তান আমলে বরাদ্দকৃত বন্দর, রেলওয়ে, সেনাবাহিনী, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতিকে যত্রতত্র জমি বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। যে যার জমি নিজস্বই মনে করে এবং তা থেকে এক পাও সরতে রাজি নয় যদিও জমি সব সরকারের। বাংলাদেশে ধর্ম আর জমির মহিমা বেশি। এর ফলে, শহরের পরিবৃদ্ধি জটিল হয়ে পড়ছে। এ সমস্ত জমি যে প্রতিষ্ঠানের কাজে আসে তা নয়, জমির যথোচিত ব্যবহারের ফলে অনেক জমি উদ্বৃত্ত থাকতে পারে যার ফলে শহরের অবকাঠামো বা রাস্তাঘাট নির্মাণে সুবিধা হয়। আমজনতার লাভ হয়। ঢাকা শহরের যত ফ্লাইওভারই করুন, উত্তর-দক্ষিণে দুটি সেনা (সীমান্ত) নিবাস থাকলে শহরের যানজট নিরসন হবে না। সুপ্রীমকোর্ট হাইকোর্ট বিভাগের রায় অনুযায়ী উল্লিখিত জমি সুপ্রীমকোর্টের কিন্তু ঐতিহাসিক পটভূমির সঙ্গে তা খাপ খায় না। মুঘল আমলে আজ যেখানে হাইকোর্ট তা ছিল অভিজাত আবাসিক এলাকা সুজাতপুর। মুঘল শাসন অপসৃত হলে ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমল পর্যন্ত এ জমি ছিল জঙ্গলাকীর্ণ এবং খাস। মুঘলরা ঢাকার আবাসিক যে জমি দিয়েছিলেন তা ছিল লাখেরাজ। ১৮৪০ থেকে বিশ শতকের গোড়া পর্যন্ত এসব লাখেরাজ জমি নিয়ে কেন মামলা মোকদ্দমা হয়েছিল। তা নিষ্পত্তি হয়েছিল কিনা জানি না। জমির বিষয়টি এমনই যে একেক আমল যেতে পারে কিন্তু জমির মালিকানা অপরিবর্তিত থাকে যদি না সরকার হস্তক্ষেপ করে। এ কারণেই অনেক ধরনের রেকর্ডের সৃষ্টি। ১৯০৫ সালে যখন ঢাকা রাজধানী হিসেবে ঘোষিত হয় তখন এই সম্পূর্ণ এলাকাটি নিয়ে নেয়া হয় রাজধানীর জন্য। অর্থাৎ জমিটি খাস-ই ছিল। তখন গবর্নরের বাসভবন হিসেবে পুরনো হাইকোর্ট ভবন নির্মিত হয়। বাসস্থানের অনুপযোগী মনে হওয়ায় গবর্নর এখানে কখনও বাস করেননি। ভবনটি প্রায় পরিত্যক্ত ছিল। ১৯০৮ সালে ঢাকা কলেজ পুরনো ঢাকা থেকে স্থানান্তরিত হয় কার্জন হলে। গবর্নরের ভবনটিও পায় কলেজ। বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমানের কেমেস্ট্রি ভবনটি দেয়া হয় কলেজের বিজ্ঞান ভবনের জন্য। ঢাকা হল নির্মিত হয় ছাত্রদের জন্য। কলেজ অধ্যক্ষের জন্য নির্মিত হয় রমনা গার্ডেনে একটি ইমারত যা কিছুদিন আগেও ছিল। কার্জন হলের সামনের রাস্তাটির নামকরণ হয় কলেজ রোড। ১৯২১ সালে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হলে পুরো নীলক্ষেত এলাকা তো বটেই, প্রেসক্লাব ও বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যন্ত এর সীমা নির্ধারণ করা হয়। ঢাকা কলেজ সীমিত থাকে পুরনো হাইকোর্ট ভবনে। ১৯৪৭ সালের পর সরকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জমির অনেকাংশ রিকুইজেশন করে নেয় ক্ষতিপূরণ না দিয়ে। ক্ষতিপূরণ দেয়ার অবশ্য কথা ছিল। তখন হাইকোর্ট স্থাপনের জন্য গবর্নরের বাসভবনটি বরাদ্দ দেয়া হয়। জমির রেকর্ড পরিবর্তিত হয়েছিল কিনা জানা নেই। হয়ে থাকলে, এরশাদ আমলে [খুব সম্ভব] এখানে প্রতিরক্ষা দফতর স্থাপন করা যেত না। শিশু একাডেমি নির্মাণ করা যেত না। অর্থাৎ এসব জমি সরকারেরই ছিল নির্দিষ্ট কারও নামে নয়। হাইকোর্ট ভবন পরে স্থানান্তরিত হয়। এতদিন এসব নিয়ে কখনও প্রশ্ন ওঠেনি। হঠাৎ এক মামলার পরিপ্রেক্ষিতে বলা হলো, সড়ক দফতর থেকে শিশু একাডেমি পর্যন্ত সব জমি হাইকোর্টের। রমনা গার্ডেন উৎখাত করে সড়ক ভবন করা হয়েছিল। কারণ, জমি নিশ্চয় ছিল সরকারের না হলে তখনও হাইকোর্ট আপত্তি জানাত। বিস্তর ক্ষতি হলেও সড়ক ভবন স্থানান্তর করা হয়। রেকর্ডপত্র সব সঠিকভাবে পরীক্ষা করলে এই ঐতিহাসিক বিবর্তনের সত্যতা মিলবে। (চলবে)
×