ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

প্রকাশিত: ০৫:৫৮, ২৬ আগস্ট ২০১৬

বায়ান্ন বাজার তিপ্পান্ন গলি

মোরসালিন মিজান ॥ বিয়োগব্যথার আগস্ট। জাতির জনককে হারানোর মাস এবং ঠিক এ মাসেই চিরবিদায় নিলেন মুহিতুল ইসলাম। হ্যাঁ, বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের বিচার সম্পন্ন করে জাতিকে কলঙ্কমুক্ত করার ক্ষেত্রে ঐতিহাসকি ভূমিকা রেখেছিলেন তিনি। মামলার বাদী হয়ে অত্যন্ত সাহসের সঙ্গে লড়েছিলেন। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মামলাটি দায়ের করা হয়। চলে দীর্ঘদিন। পুরোটা সময় ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করেন। পিতার ঋণ শোধ করতে হবে- এ ছিল ব্রত। দীর্ঘ বিচার প্রক্রিয়া শেষে ঋণ তিনি শোধ করতে সক্ষম হন। তার মামালার প্রেক্ষিতে পাঁচ আসামির মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়। এমন গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার জন্য দেশবাসীর কাছে বিশেষ সম্মানের পাত্র হয়ে ছিলেন মুহিতুল। পেয়েছিলেন হৃদয় নিংড়ানো ভালবাসা। আর তার পর বৃহস্পতিবার পৃথিবী ছেড়ে চলে যাওয়া। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকাবস্থায় বিকেল ৩টার দিকে মুত্যু হয় এ দেশপ্রেমিকের। ৬৩ বছর বয়সী মুহিতুলের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে শহর ঢাকার সর্বত্র শোকের ছায়া নেমে আসে। স্বজন হারানোর ব্যথা বাজে বুকে। মৃত্যুদিনে সবাই তার অবদানের কথা স্মরণ করেন। জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার দিন ধানম-ির আক্রান্ত বাড়িতেই অবস্থান করছিলেন রাষ্ট্রপতির রিসিপসনিস্ট কাম রেসিডেন্ট পিএ মুহিতুল ইসলাম। সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলেন তিনি। নতুন প্রাণ পাওয়া মানুষটি বঙ্গবন্ধুপ্রেমের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপনে সক্ষম হন। আলোচনা আড্ডায় এসব কথা অনিবার্য হয়ে আসে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুর বাকি খুনীদেরও দ্রুত দেশে ফিরিয়ে এনে রায় কার্যকরের দাবি তোলা হয়। এটি করা সম্ভব হলে মুহিতুলের আত্মা শান্তি পাবে বলে মনে করেন তারা। কাজী নজরুল ইসলাম এ্যাভিনিউর পরীবাগ অংশে একটি দুর্ভোগ খুব পুরনো। এখানে যে ফুট ওভারব্রিজটি নির্মাণ করা হয়েছে সেটি স্থানীয়দের কাজে এসেছে বটে। কিন্তু নতুন সমস্যারও সৃষ্টি করেছে। ফুট ওভারব্রিজের একটি প্রান্ত প্রায় গিলে খেয়েছে পরীবাগের ফুটপাথ। মারাত্মক সরু হয়ে যাওয়া ফুটপাথটি অনেক কষ্টে পথচারীরা ব্যবহার করেন। একজন একজন করে আসা-যাওয়া করতে হয়। এ যখন অবস্থা তখন প্রতিকারের চিন্তা বাদ দিয়ে ফুটপাথের ওপর স্থাপনা নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। স্টেনলেস স্টিল দিয়ে ঘিরে ফেলা হচ্ছে ওভারব্রিজের নিচের অংশটুকু। এর ফলে হাঁটার পথটি আরও কমে এসেছে। এমন কা-জ্ঞানহীন কাজ কারা করছেন? কেন করছেন? জানতে চাইছেন পথ দিয়ে নিয়মিত আসা-যাওয়া করা মানুষ। সমস্যাটি তুলে ধরা হলো। উত্তর দেয়ার কেউ কি আছেন? এবার জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ইস্যুটি। প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে অল্পই। বেশি থাকছেন রাস্তায়। তাদের হল চাই। হলের দাবিতে চলছে আন্দোলন। গত কয়েকদিনের আন্দোলনের খবর জানেন সবাই। কিন্তু ফল কী হবে? না, উত্তর আসছে না কোন। ফলে দুর্ভোগ বাড়ছে নগরবাসীর। এমনকি শিক্ষার্থীরা পল্টনে এসে রাস্তায় বসে পড়ছে। এর পর আর স্বাভাবিক থাকে যানচলাচল? তবু শিক্ষার্থীদের বুঝিয়ে বলার কেউ যেন নেই। সমস্যাটির পূর্বাপর খুঁজতে গিয়ে জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পূর্বে জগন্নাথ কলেজ ছিল পূর্ববঙ্গের মানুষের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। এ কলেজের ছাত্র এবং শিক্ষকদের নিয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ছাত্র-শিক্ষকের পাশাপাশি বহু মূল্যবান বই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারে স্থানান্তর করা হয়। ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার পর জগন্নাথ কলেজের স্নাতক শিক্ষা বন্ধ হয়ে যায়। ইন্টারমিডিয়েট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ রাখা হয় শিক্ষা কার্যক্রম। ২০০৫ সালে এসে জগন্নাথ কলেজকে পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা দেয় সরকার। রাতারাতি বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়ে যায় বটে, ছাত্রাবাস মেলে না। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় দেশের একমাত্র বিশ্ববিদ্যালয় যেটির কোন হল নেই। এক সময় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটির আবাসিক হল ছিল ১১টি। এখন সবই বেদখল হয়ে গেছে। এ অবস্থায় হলের দাবিতে আন্দোলন চলছিল। বর্তমানে তা বেড়ে কয়েকগুণ হয়েছে। ঢাকার একেবারে প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত বসুন্ধরা সিটি শপিংমল। অভিজাত এ মার্কেটে নিয়মিত শপিং করেন রাজধানীবাসী। কিন্তু সামনে একটি ঈদ রেখেও মার্কেটটি বন্ধ। কারণ আবারও অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটেছে এখানে। রবিবার বেলা ১১টার দিকে আগুন লাগার খবর পাওয়া যায়। দুই ঘণ্টার চেষ্টায় দুপুর সোয়া ১টার দিকে আগুন কিছুটা নিয়ন্ত্রণে আনে ফায়ার ব্রিগেড। এর পর অনেক রাত পর্যন্ত ভবনের ভেতর হতে ধোঁয়া বের হতে দেখা যায়। তবে এবারই নয়, এ পর্যন্ত কয়েকবার একই শপিংমলে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। ২০০৯ সালের ১৩ মার্চ ভবনের উপরের দিকে ভয়াবহ আগুনে সাতজনের মৃত্যু হয়। আহত হন শতাধিক। ওই বছরেরই আগস্টে এবং ২০১৫ সালের ৩ সেপ্টেম্বর বসুন্ধরা সিটিতে অগ্নিকা-ের ঘটনা ঘটে। কেন বারবার এমনটি হচ্ছে? এ প্রশ্ন তুলছেন মার্কেটে শপিং করতে আসা মানুষজন। এ ব্যাপারে কর্তৃপক্ষকে আরও সচেতন হওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা। তা না হলে যে কোন সময় বড় বিপর্যয়ের মুখে পড়তে হতে পারে বলে আশঙ্কা তাদের। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হকও কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করে দেন। এখন দেখার বিষয়, নিরাপদে কেনাকাটার সুযোগ কতটা নিশ্চিত করতে পারে কর্তৃপক্ষ।
×