ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

আগাম প্রস্তুতির পরও বিপর্যয়ের মুখে হজ ব্যবস্থাপনা

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৪ আগস্ট ২০১৬

আগাম প্রস্তুতির পরও বিপর্যয়ের মুখে হজ ব্যবস্থাপনা

আজাদ সুলায়মান ॥ আগাম প্রস্তুতি নেয়ার পরও বিপর্যয়ের মুখে পড়েছে হজ ব্যবস্থাপনা। একের পর এক ঘটছে কেলেঙ্কারি। কিছুতেই লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না দুর্নীতিবাজ হজ সিন্ডিকেটের। একের পর এক বাতিল করতে হচ্ছে বিমানের ডেডিকেটেড ফ্লাইট। শনিবার থেকে আর কোন ফ্লাইট বাতিল হবে না-এমন ঘোষণা দেয়ার পরদিন রবিবারই সেটাও ঘটেছে। বিমানমন্ত্রী ও ধর্মমন্ত্রীর ঘোষণার সঙ্গে বাস্তব অবস্থার কোন মিল নেই। মাঠ পর্যায়ে ভুক্তভোগী হজযাত্রীদের ক্ষোভ-অভিযোগের শেষ নেই। সর্বশেষ অনুসন্ধানে দেখা যায়, প্রকৃতপক্ষে বিমান মন্ত্রণালয়, ধর্ম মন্ত্রণালয়, হাব, আশকোনা হজ অফিস, বিমান ও সৌদিয়ার মধ্যে সমন্বয়ের অভাবের কারণেই বর্তমান সঙ্কট সৃষ্টি। কেউ কাউকে মানছে না-কেউ কাউকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। যাত্রীদের জিম্মি করে উড়োজাহাজের টিকেটের অতিরিক্ত দাম আদায়, শর্ট প্যাকেজ আর লং প্যাকেজের বাণিজ্য রক্ষা করতে গিয়ে ফ্লাইট বাতিল করে অন্যের ওপর দায় চাপানো, আশকোনা অফিসে রিপ্লেসমেন্ট ও ডিও ইস্যুতে বখশিশ আদায়, বিমান ও সৌদি এয়ারের কর্মকর্তাদের টিকেট মনোপলি করার মতো অভিযোগ এখন সবার মুখে মুখে। অভিযোগ থেকে মুক্ত থাকতে পারছে না কোন পক্ষই। হজ এ্যাসোসিয়েসন্স অব বাংলাদেশ (হাব) প্রকাশ্যে বার বার সংবাদ সম্মেলন ডেকে ধর্ম সচিব আব্দুল জলিল ও হজ পরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামালকে শীর্ষ দুর্নীতিবাজ উল্লেখ করে তাদের অপসারণে চব্বিশ ঘণ্টার আল্টিমেটাম দেয়। একদিন র্প আরেক সংগঠন হাব সমন্বয় পরিষদ ধর্ম সচিব ও হজ পরিচালকের পক্ষ নিয়ে হাবের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ আনে। একই ভাবে এবারের হজ বিপর্যয়ের জন্য হাবকে দায়ী করে ধর্ম সচিব বলেছেন- এক লাখ হজযাত্রীকে জিম্মি করে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার জন্য এজেন্সিগুলো একের পর এক কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করছে। কারণ তারা নিশ্চিত-বর্তমান সরকারেরর প্রধানমন্ত্রী হজকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে সব দাবির প্রতি গুর্ত্বু দেন। প্রধানমন্ত্রীর এ উদারতার সুযোগকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে হাব একের পর একে পর ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে। সঙ্কটের সূচনা ॥ এসব অভিযোগ সম্পর্কে খোঁজ নিয়ে জানা যায়- প্রথমবারের মতো এবার সৌদি সরকার ই-হজ ম্যানেজমেন্ট বাধ্যতামূলক করায় বাংলাদেশ সরকারও তা মেনেই আগাম প্রস্তুতি নেয়। গত মার্চ থেকেই শুরু হয় প্রি রেজিস্ট্রেশন। সৌদি আরব সরকারী ব্যবস্থপনায় ১০ হাজার ও বেসরকারী ব্যবস্থাপনায় ৯১ হাজার ৭শ’ ৭৮ হজযাত্রীর কোটা নির্ধারণ করে দেয়। অর্থাৎ কোটা অনুযায়ী ১ লাখ ১ হাজার ৭ শত ৭৮ জন এবার হজ করার সুযোগ পাবেন। এতে দেখা যায় ১ লাখ ৪০ হাজার হজগমনেচ্ছু প্রি রেজিস্ট্রেশন করেন। ধর্ম মন্ত্রণালয় সিদ্ধান্ত নেয় প্রি রেজিস্ট্রেশনের সিরিয়াল অনুযায়ী এবার কোটার ১ লাখ এক হাজার ৭ শ’ ৭৮ জনই হজে যাবেন। বাকিরা অগ্রাধিকার পাবেন আগামী বছরের হজে। এ অবস্থায় সরকারী ব্যবস্থাপনায় হজযাত্রীর টাকা জমা দেন মাত্র ৫ হাজার ২শ’ জন। এতে সরকারী কোটার আরও ৪ হাজার ৮ শ’ বাকি থাকে। তখনই হজ এজেন্সি সংগঠন হাব এই ৪৮০০ যাত্রী নিয়েও গতবারের মতো এবারও দুর্নীতি করার জন্য একটি সিন্ডিকেট গড়তে সক্রিয় হয়। এটা আঁচ করতে পেরে হাইকোর্টের দ্বারস্থ হয় হাবের পাল্টা সংগঠন হাব সমন্বয় মঞ্চ। এতে হাইকোর্ট রুলিং দেয় Ñএই ৪৮ শ’ কোটা পূরণ করা হবে প্রি রেজিস্ট্রেশনের সিরিয়ালের ভিত্তিতে। এদিকে সৌদি সরকারের নির্দেশ মোতাবেক ১৪৩ টি হজ এজেন্সির মাধ্যমে এদের হজে পাঠানোর দায়িত্ব দেয়া হয়। কিন্তু ধর্র্ম মন্ত্রণালয় তড়িত পদক্ষেপ নিতে না পারায় ১৪৩ টি হজ এজেন্সির কাজ বিঘিœত হয়। এজেন্সিগুলোর অভিযোগ হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী এই ৪৮০০ যাত্রীকে সৌদি পাঠানোর প্রক্রিয়া শেষ করা যেত মাত্র একদিনেই। যা করতে সময় লেগেছে তিন সপ্তাহেরও বেশি। এজেন্সিগুলোর অভিযোগ Ñবিমানের ফ্লাইট বাতিল হবার অন্যতম প্রধান কারণ এই কোটা নিয়ে গাফিলতি করা। এ বিষয়ে হাব সমন্বয় পরিষদের আহ্বায়ক রুহুল আমিন মিন্টু জানান- গত বারের মতো এবারও হাজীদের জিম্মি করে ১ শ’ কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনায় মেতে ওঠে হাব সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। তার মধ্যে হজ প্যাকেজ ঘোষণার পরই এক লাখ হজযাত্রীর জন্য ৭০০ টাকার লাগেজ কেনে ১৯০০ টাকা ধার্য করে। হাজীদের কাছ থেকে এ টাকা নিয়ে নেয় প্যাকেজের ফাঁদে ফেলে। শুধু এই খাত থেকে হাব হাতিয়ে নেয় ১২ কোটি টাকা। এরপরের খাত রিপ্লেসমেন্ট বাণিজ্য। প্রি রেজিস্ট্রেশনের হজযাত্রী বাদ দিয়ে সেই কোটায় বেশি টাকা নিয়ে অন্যের কাছে বিক্রির জন্য অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে রিপ্লেসমেন্ট বাণিজ্য করার জন্য আশকোনায় হজ পরিচালকের ওপর চাপ সৃষ্টি করা হয়। তিনি প্রকৃত কারণ (যেমন গুরুতর অসুস্থ ও মৃত্যুজনিত কারণ) ঢালাও রিপ্লেসমেন্ট দিতে রাজি না হওয়ায় তার ও ধর্ম সচিবের অপসারণ চেয়ে আল্টিমেটাম দেন হাব সভাপতি ইব্রাহিম বাহার ও সাধারণ সম্পাদক শেখ আব্দুল্লাহ। মিন্টু বলেন- দুর্নীতির পরের খাত হচ্ছে টিকেট বাণিজ্য। শর্ট প্যাকেজ ও লং প্যাকেজের নামে হজযাত্রীদের সুবিধা প্রদানের কথা বলে টিকেট প্রতি ৪/৫ হাজার অতিরিক্ত আদায় করছে হাব। এজেন্সিগুলো তাই মানতে বাধ্য। এখন এমন অবস্থা দেখা দিয়েছে-এতদিন ফ্লাইট খালি গেলেও আগামী সপ্তাহ থেকে সব যাত্রীর চাপ একত্রে পড়বে। তখন দশ হাজার টাকা বেশি দিয়েও বিমান ও সৌদিয়ার টিকেট মিলবে না। মিন্টু বলেন-চক্রটিই কৃত্রিম সঙ্কট তৈরি করে সরকারকে বিব্রতকর অবস্থায় ফেলানোর জন্য ঠা-া মাথায় এখনও সক্রিয়। পদে পদে এক লাখ হজযাত্রীর পকেট কাটার ধান্ধায় সক্রিয় এই হাব। এ সব অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে অভিযুক্ত হাব মহাসচিব শেখ আব্দুল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন-যারা এ ধরনের অভিযোগ তুলছে তাদের কোন বৈধতা নেই। তারা সচিব ও মন্ত্রীর লোক। উনাদের দালালি করে কিছু ফায়দা নেয়ার চেষ্টায় লিপ্ত। হাজীদের লাগেজ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেয়ার অভিযোগ ঠিক নয়। হাব সভাপতি ইব্রাহিম বাহার বলেন- যারা নিজেরাই সৌদিতে গিয়ে বাড়ি ভাড়ার সময় দুর্নীতি করেছেন তারা কি করে এখন এ ধরনের বুলি আওড়াচ্ছেন। তারা একের পর এক মিথ্যাচার করছেন। সঙ্কট হবে না শেষ পর্যন্ত ॥ এ বিষয়ে হজ অফিসের পরিচালক ড. আবু সালেহ মোস্তফা কামাল জনকণ্ঠকে বলেন-হজ নিয়ে এবার তেমন সঙ্কট তৈরির চেষ্টা করা হলেও বাস্তবে সেটা সম্ভব হবে না। কারণ ইতোমধ্যেই এক লাখ ১ হাজার ৭৮৭ হজযাত্রীর মধ্যে ৮৫ হাজারের ভিসা হয়ে গেছে। বাকি ১৫ হাজার ভিসা হয়ে যাবে আগামী চারদিনেই। এ ছাড়া মঙ্গলবার পর্যন্ত ৫৬ হাজার যাত্রী সৌদি চলে গেছেন। কাজেই সঙ্কট তৈরির চেষ্টা করলেও অশুভ মহল সফল হতে পারবে না। শেষের দিকে কিছুটা হয়ত চাপ পড়বে সেটা পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নিতে হবে। কেন এত ফ্লাইট বাতিল ॥ শনিবারের পর আর কোন হজ ফ্লাইট বাতিল হবে না-বিমানমন্ত্রীর এমন ঘোষণার পরও রবিবার যাত্রীর অভাবে আরও একটি ফ্লাইট বাতিল করেছে বিমান। এদিন সকাল ৭টায় বিমানের ৪১৯ আসনবিশিষ্ট একটি ফ্লাইট বাতিল করে বিমান। এ নিয়ে মোট ১৪টি হজ ফ্লাইট বাতিল করা হলো। এ সব ফ্লাইটে ৬ হাজার হজযাত্রী সৌদি আরবে যাওয়ার কথা ছিল। বাতিল হওয়া হজ ফ্লাইটগুলোর জন্য সৌদি সিভিল এ্যাভিয়েশনের কাছে আরও ২০টি শ্লট দেয়ার আবেদন করেছে বিমান। তবে মঙ্গলবার পর্যন্ত সৌদি সরকার শ্লটের বিষয়ে অনুমোদন দেয়নি। এতগুলো ফ্লাইট বাতিলের নেপথ্যে খোঁজ নিয়ে জানা যায়- হজযাত্রীদের সামনে দুটো অপশন। একটি বিমান অপরটি সৌদিয়া। যাত্রীদের প্রথম পছন্দ সৌদিয়া। তার প্রথম কারণ সৌদিয়ার ঢাকা থেকেই যাত্রীদের ফিরতি কনফার্মেশন টিকেটের বোডির্ং কার্ড ধরিয়ে দেয়া হয়, যা বিমান দেয় না। এতে ফেরার সময় বিমানের যাত্রীরা জেদ্দা এয়ারপোর্টে এসে চরম ভোগান্তি শিকার হন। তখন এদের কাছ থেকে জেদ্দা কাউন্টারেও অতিরিক্ত পয়সা আদায় করা হয়। দ্বিতীয় কারণ হচ্ছে সৌদিয়ার তুলনায় বিমানের টিকেটের দাম প্রায় ৭ হাজার টাকা বেশি। বিমান ডলারের দাম নির্ধারণ করেছে ৮০ টাকা হারে সৌদিয়া তা করেছে ৭৮ টাকায়। বিমানের যাত্রীদের কাছ থেকে আরও চার হাজার টাকা আদায় করা হয় সিটি চেকের নামে, যা সৌদিয়া যাত্রীদের লাগে না। ফ্লাইট বাতিলের আরও একটি কারণ হচ্ছে- টিকেট বুকিংয়ের সময় সিট বাতিলের গ্যারান্টি ক্লজ না রাখা। সৌদিয়ার টিকেটের বুকিং বাতিল করা হলে তিন শত ডলার জরিমানা গুনতে হয়। আর টিকেট বাতিল করলে পুরো টাকাই গুনতে হয়। এ কারণে সৌদিয়ার টিকেটের বুকিং কিংবা সিট বাতিলের সাহস দেখায়নি কোনযাত্রীই। বিমানের ক্ষেত্রে এমন কোন কঠিন শর্ত নেই। বুকিং বাতিল করলেও এজেন্সিগুলোর কাছ থেকে কোন জরিমানা আদায় করা হচ্ছে না। এ সম্পর্কে একজন শীর্ষ ট্রাভেল এজেন্ট জনকণ্ঠকে বলেন- বিমানের টিকেট নিয়ে একজন বিতর্কিত কর্মকর্তা যেভাবে দুর্নীতির সিন্ডিকেট গড়েছেন- তার জন্য এখন খেসারত দিতে হচ্ছে ব্যবস্থাপনা পরিচালককে। মতিঝিল অফিসের শীর্ষ কর্মকর্তার একক সিদ্ধান্তেই এবার সব টিকেট বিতরণ করা হয়েছে। তিনি ব্যক্তিগত ফায়দা লোটার জন্য এমন কিছু এজেন্টকে বিপুল পরিমাণ টিকেট দিয়েছেন যাদের হাতে নিজস্ব কোন হজযাত্রী ছিল না। আবার যাদের হাতে বিপুলসংখ্যক হজযাত্রী ছিল, কিংবা যারা যাত্রী সংগ্রহ করতে সক্ষম তাদের টিকেট দেয়া হয়েছে প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম। এ কারণেই প্রয়োজনের সময় যাত্রী না পাওয়ায় একের পর এক ফ্লাইট বাতিল করতে হয়। অভিযোগ আছে, বিমানের মতিঝিল সেল্স অফিসের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা ও বিমানের একজন ডিজিএম পুরো টিকেট বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত। তার নেতৃত্বে ৩০টি ট্রাভেল এজেন্টের একটি সিন্ডিকেট এই বছর টিকেট নিয়ে ‘লুটপাট’ করেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, বিমানের ওই ডিজিএমের নেতৃত্বে মতিঝিল অফিসের সিন্ডিকেট প্রতিটি টিকেটের জন্য ‘ঘুষ হিসেবে’ অতিরিক্ত দুই হাজার টাকা নিয়ে বিক্রি করেছে। এখন ট্রাভেল এজেন্টরা আরও ৫ হাজার টাকা বেশি যোগ করে বাজারে টিকেটের দাম হাঁকাচ্ছে। এতে ৭ হাজার টাকা বেশি দরে হজযাত্রীদের বিমানের টিকেট ক্রয় করতে হচ্ছে। অর্থাৎ এই টিকেটের মূল্য দাঁড়াচ্ছে ১ লাখ ২৮ হাজার ২৩১ টাকা। যদিও বিমানের টিকেট বিক্রির কথা ছিল ১ লাখ ২১ হাজার ২৩১ টাকায়। কিন্তু হজ এজেন্সিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কোন ট্রাভেল এজেন্ট থেকে এই টাকায় হজের টিকেট মিলছে না। সৌদিয়ার টিকেট নিয়েও মনোপলি ॥ বিমানের মতো সৌদিয়াও ৫০ হাজার টিকেট ছেড়ে দিয়েছে মাত্র শীর্ষ তিনটি প্রতিষ্ঠানের কাছে। সানজেরী, সানসাইন ও কাজী এয়ারের মাধ্যমেই সব টিকেট ছাড়া হয়েছে বাজারে। এদের কাছ থেকে ৮ শতাধিক এজেন্ট টিকেট কিনে নিতে বাধ্য। তখন তাদের কাছ থেকে টিকেট প্রতি ৪/৫ হাজার টাকা করে রাখা হয়। সৌদিয়ার টিকেট মাত্র তিনটি শীর্ষ এজেন্টের মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার ঘটনায় বিমান মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। এ সম্পর্কে বিমান মন্ত্রী রাশেদ খান মেনন জনকণ্ঠকে বলেন-তদন্তে যদি দেখা যায় এ অভিযোগ সত্য তাহলে সৌদিয়ার বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। জানতে চাইলে সানজেরীর মালিক শেখ আব্দুল্লাহ জনকণ্ঠকে বলেন- সৌদিয়ার টিকেট মনোপলির সঙ্গে জড়িত হয়েছি এমন প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। প্রমাণ ছাড়া অভিযোগ করা ঠিক নয়। বিমানের এমডি যা বলেন ॥ জানতে চাইলে বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোসাদ্দিক আহম্মেদ জনকণ্ঠকে বলেন, হজ নিয়ে যারাই অনিয়ম-দুর্নীতি করেছে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। এটা কোনভাবেই সহ্য করা হবে না। বিমানের টিকেটের যে দাম তার বেশি যদি কোন ট্রাভেল এজেন্ট বিক্রি করে তাহলে আগামী বছর তাদের হজের টিকেট দেয়া হবে না। একই সঙ্গে যদি কোন ট্রাভেল এজেন্টের বিরুদ্ধে হজের টিকেট বেশি দামে বিক্রি করার অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে ওই এজেন্সিকে টিকেট প্রতি ১৫শ’ টাকা যে কমিশন দেয়ার কথা সেটাও দেয়া হবে না। ইতোমধ্যে হজের টিকেট নিয়ে বিমানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে কোন ঘুষ বাণিজ্য হয়েছে কিনা তার তদন্ত শুরু হয়ে গেছে। তদন্তে কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এদিকে অতিরিক্ত শ্ল্ট না পেলে কিভাবে বাকি যাত্রী পাঠানো হবে জানতে চাইলে কাপ্টেন মোসাদ্দিক আহমেদ বলেন-শ্লট আনতেই হবে। না আনলে ম্যাসাকার হয়ে যাবে। এর জন্য চেষ্টা চলছে। এটা অবশ্যই আমাদের জন্য বড় উদ্বেগের বিষয়। তবে ইনশাল্লাহ হয়ে যাবে। শাস্তি পাচ্ছে ৫৫টি এজেন্সি ॥ একের পর ফ্লাইট বাতিলের জন্য বিমান দায়ী করছে কয়েকটি ট্রাভেল এজেন্সির একটি সিন্ডিকেটকে। এ বিষয়ে বিমান প্রকাশ্যেই ঘোষণা দিয়েছে-কিছুতেই বরদাশত করা হবে না এসব এজেন্সির ব্যর্থতা বা উদাসীনতা। এসব এজেন্সিকে টিকেট বিতরণ করা হয়েছে হজ ফ্লাইট শুরুর অন্তত দুই সপ্তাহ আগে। তারপরও কেন তারা যাত্রী সংগ্রহ করতে পারছে না এটা অবশ্যই বড় ধরনের রহস্য। এদের উদ্দেশ্য হয় বিমানকে বিপর্যয়ের মুখে ঠেলে দেয়া না হয় যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা হাতিয়ে নেয়া। এতগুলো ফ্লাইট বাতিল হওয়ায় বিমান উদ্বেগ প্রকাশ পরবর্তী ৭২ ঘণ্টার মধ্যে টিকেট সংগ্রহ করার তাগিদ দেয় বিমান। কিন্তু তাতেও সাড়া না দেয়ায় এখন বিমানের আরও ৪টি ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে। এরপর বিমান আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য এ ৫৫টি এজেন্সি সতর্ক বার্তা পাঠিয়েছে। বিমানের জনসংযোগ শাখা প্রেরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মতে-ঢাকা, চট্টগ্রাম ও সিলেটের অভিযুক্ত এজেন্সিগুলো হচ্ছে-মেসার্স সায়মন ওভারসিজ, সুরেশ্বর ট্রাভেল, এয়ার কনফিডেন্স ট্যুরস এ্যান্ড ট্রাভেল, কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, কে জেড এল ট্রাভেল এ্যান্ড ট্যুর, হাসেম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, আলবিদ এয়ার ট্রাভেল, ট্রাভেল বিজনেস লি., মুনা ট্রাভেল, ইমা ওভারসিজ, সানসাইন ট্রাভেল এয়ার, গ্রীন এয়ার ইন্টারন্যাশলাল, রায়হান ট্রাভেল ইন্টারন্যাশনাল, নূর হজ ট্রাভেল এ্যান্ড ট্যুর, আল জুবায়ের ট্রাভেল এজেন্সি, মাসুম এয়ার ট্রাভেলস, আল আরাফা ওভারসিজ, আল খায়ির ট্রাভেল এ্যান্ড ট্যুর, ভেনিস ট্যুরস এ্যান্ড ট্রাভেল, মীমস ট্রাভেল এ্যান্ড ট্যুর লি., সালামত ট্রাভেল এ্যান্ড ট্যুরস, ব্রিটানিয়া এভিয়েশন, বেস্ট ফ্লাই ইন্টা., এয়ার কনসার্ন, তান ট্রাভেলস, রয়েল এয়ার সার্ভিস সিস্টেমস, ইসলামিয়া ওভারসিজ লি., স্টার ট্যুর এ্যান্ড ট্রাভেল, গোল্ডেন বেঙ্গল ট্যুরস এ্যান্ড ট্রাভেলস, ওভারসিজ লিংক, সানজারী ট্রাভেলস এ্যান্ড ট্যুরস, ভেলেনসিয়া এয়ার ট্রাভেল, ডাইনেস্টি ট্রাভেল, বারিধারা ওভারসিজ লি., ইস্ট ওয়েস্ট ট্রাভেলস এ্যান্ড ট্যুরস, কাজী ট্রাভেল, সবুজ বাংলা ইন্টা., রয়েল এয়ার সার্ভিস, গাল্ফ ট্রাভেল, কেয়া এন্টারপ্রাইজ, ড্রিম স্কাই ইন্টা., আল হীরা ট্রাভেল, মহিম ট্রাভেল লি., হাসনাইন ট্যুরস এ্যান্ড ট্রাভেলস, লাব্বাইক ট্রাভেল, আল ঈমাম কাফেলা ট্যুরস এ্যান্ড ট্রাভেলস, দারুল ঈমাম ইন্টা., আল মানসুর এয়ার সার্ভিস, লতিফ ট্রাভেল লি., বিডি ওভারসিজ সার্ভিস, এলাইট ট্রাভেল, যাত্রিক ট্রাভেল, সিটি ওভারসিজ, সাইমন ওভারসিজ ও সুমা ইন্টা. (ওভারসিজ) অনুকূলে আসন বরাদ্দ করে। আরও ১১ হাজার কোটা ॥ এদিকে হাব সমম্বিত পরিষদের নেতৃবৃন্দ মঙ্গলবার বিকেলে সচিবালয়ে ধর্ম সচিবের সঙ্গে দেখা করে সৌদি আরব থেকে আরও এগারোহাজার কোটা অতিরিক্ত আনার জন্য দাবি জানান। সচিব আব্দুল জলিল তাৎক্ষণিক জেদ্দায় বাংলাদেশ হজ কনস্যুলেটে ফোন করে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার জন্য নির্দেশ দেন। মঙ্গলবার রাতে নেতৃবৃন্দ আবার ধর্মমন্ত্রী অধ্যক্ষ মতিউর রহমানের বাসায় বৈঠক বসেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রী জেদ্দায় ফোন করে অতিরিক্ত কোটার অগ্রগতি জানতে চান। এ বিষয়ে রেজাউল করিম উজ্জ্বল জনকণ্ঠকে বলেন-এ বছর সিরিয়া, ইরান, ইরাকসহ মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ থেকে লোকজন হজ করতে যাবে না। এতে ৭ লাখ হাজী কম হবে। এ অবস্থায় সৌদি সরকারের কাছে যে দেশই কোটা চাবে তারাই পাবে। ইতোমধ্যে পাকিস্তান ও ভারত প্রায় ৬০ হাজার নতুন কোটা আদায় করে নিয়েছে। বাংলাদেশ চাইলে আরও ৫০ হাজার কোটা আনতে পারে। ্এটা নির্ভর করছে সরকারের দেনদরবারের ওপর। এটা হলে বাংলাদেশের প্রিরেজিস্ট্রেশনভুক্ত বাকি ৪০ হাজার হজযাত্রীও হজ করার সুযোগ পাবেন।
×