ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

হল দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের পথযাত্রা পুলিশী বাধায় পণ্ড ॥ সংঘর্ষে আহত ২০ জন

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ২৩ আগস্ট ২০১৬

হল দাবিতে জবি শিক্ষার্থীদের পথযাত্রা পুলিশী বাধায় পণ্ড ॥ সংঘর্ষে আহত ২০ জন

জবি সংবাদদাতা ॥ রাস্তা অবরোধ করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের দখল হয়ে যাওয়া হল পুনরুদ্ধার ও নতুন হলের দাবিকে কেন্দ্র করে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ হয়েছে। সংঘর্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য, শিক্ষার্থী ও পথচারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। সংঘর্ষকালে পুরান ঢাকায় ছিল তীব্র যানজট। এমন ঘটনার পারপ্রেক্ষিতে আন্দোলনকারীরা আগামী মঙ্গল ও বুধবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটিতে ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে। সোমবার সকাল আটটার দিকে বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের শহীদ মিনার চত্বরে জড়ো হয়। সেখান থেকে মিছিল বের করে ক্যাম্পাসে মহড়া দেয়। ক্যাম্পাস থেকে মিছিল নিয়ে রাস্তায় বের হওয়ার চেষ্টা করলে প্রথমে পুলিশের বাধার মুখে পড়ে। বাধা উপেক্ষা করে বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাসের সামনের রাস্তা অবরোধ করে অবস্থান নেয়। এ সময় পুলিশ লক্ষ্মীবাজার, রায়সাহেব বাজার মোড়ে কাঁটাতারের স্টিলের ব্যারিকেড দেয়। সকাল দশটার দিকে আন্দোলনকারীরা পুলিশের ব্যারিকেড ভেঙ্গে বংশাল মোড়ে গিয়ে হাজির হয়। সেখানে রাস্তা অবরোধ করে মিছিল করতে থাকে। এদিকে বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাস থেকে বের হওয়ার পরেই যাত্রাবাড়ী, মাওয়া, সদরঘাট ও গুলিস্তানে যাতায়াতের রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এতে শত শত যানবাহন সেখানে আটকা পড়ে। যানবাহনের যাত্রীদের দুর্ভোগ ছিল চরমে। সোমবার সকাল দশটার দিকে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বংশাল মোড়ে রাস্তা অবরোধ করে হল পুনরুদ্ধার ও নতুন হলের দাবিতে মিছিল শুরু করে। গরমে অতিষ্ঠ হয়ে ওঠেন যানজটের কবলে পড়া মানুষজন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উর্ধতন কর্মকর্তারা বিক্ষোভকারীদের রাস্তা থেকে সরে যাওয়ার অনুরোধ করে। কিন্তু বিক্ষোভকারীরা অনুরোধ উপেক্ষা করে রাস্তা অবরোধ করেই বিক্ষোভ শুরু করে। এক পর্যায়ে বিক্ষোভকারীরা রাস্তায় সব যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দিয়ে মিছিল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের দিকে যেতে উদ্যত হয়। পুলিশ বাধা দিলে আন্দোলনকারীরা নয়াবাজার মোড়ে অবস্থান নিয়ে টায়ার জ্বালিয়ে দুপুর দুটা পর্যন্ত বিক্ষোভ প্রদর্শন করে। শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ টিয়ালশেল, রাবার বুলেট ও মৃদু লাঠিচার্জ করতে বাধ্য হয়। এ সময় কয়েক দফায় পুলিশের সঙ্গে বিক্ষোভকারীদের ইট-পাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটে। ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়ার ঘটনায় ইকরা, মহসিনা, মিথুন, অনিমেষ, মাহিম, সাব্বির, সফিকুল, প্রসেনজিৎ, রাজীবসহ অন্তত ১০ শিক্ষার্থী এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য ও পথচারীসহ অন্তত ২০ জন আহত হয়। দুপুর বারোটার দিকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এসএম সিরাজুল ইসলামের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের নেতা সাইফুল্লাহ ইবনে আহমেদ সুমন, হারুন উর রশিদ, তানভীর রহমান খান, শামিম রেজাসহ অনেকেই যোগ দেন। ২০০৫ সালে অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে যাত্রা শুরু করা প্রতিষ্ঠানটির ১১ হল প্রভাবশালীদের দখলে চলে যায়। ২০০৯ সালে হল উদ্ধারের ঘটনায় বড় ধরনের আন্দোলনের ফলে সরকারের উচ্চপর্যায়ে নাড়া পড়ে। ওই সময় একাধিক হল বিশ্ববিদ্যালয়কে বুঝিয়ে দিতে ভূমি মন্ত্রণালয় সুপারিশ করে। কিন্তু আজও তা কার্যকর হয়নি। ২০১১ ও ২০১৪ সালে জোরালো আন্দোলনের মুখে দুটি হল পুনরুদ্ধার হলেও তা ব্যবহার উপযোগী হয়নি। এমনকি আগে থেকেই বিশ্ববিদ্যালয়ের দখলে থাকা একটি হলও আজও তেমন বসবাসের উপযোগী হয়নি। দুই নতুন হল নির্মাণেও দীর্ঘসূত্রতার অভিযোগ উঠেছে। বিক্ষোভকারীরা বর্তমানে নাজিম উদ্দিন রোডে পরিত্যক্ত ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের জমিতে হল নির্মাণের দাবি করে আসছে। জমিটি পেতে ২০১৪ সালের মার্চে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন স্বরাষ্ট্র সচিবের কাছে আবেদন করেছিল। তারই ধারাবাহিকতায় জায়গাটি পেতে গত ১৪ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট উচ্চপর্যায়ে আবেদন করেছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
×