ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতেই সুপরিকল্পিত সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২৩ আগস্ট ২০১৬

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতেই সুপরিকল্পিত সাম্প্রতিক হত্যাকাণ্ড

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাম্প্রতিক বিদেশী হত্যা ও বিভিন্ন ধর্ম সম্প্রদায়ের ধর্মগুরুদের হত্যাকা-ের ঘটনা তুলে ধরে বলেছেন, সুপরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট ও সংঘাত সৃষ্টি করতেই এ ধরনের হত্যা ও হামলার ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কিন্তু জঙ্গীবাদ-সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে দেশব্যাপী অভূতপূর্ব গণজাগরণের সৃষ্টি হয়েছে। দেশবাসী জানিয়ে দিয়েছে তারা সংঘাত, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ চায় না। মানুষ শান্তি চায়, এদেশের মানুষ সন্ত্রাসবাদে বিশ্বাস করে না। সোমবার গণভবনে শ্রীকৃষ্ণের জন্মাষ্টমী উপলক্ষে হিন্দু ধর্মাবলম্ব^ীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী ঐক্যবদ্ধভাবে সব ষড়যন্ত্র প্রতিরোধের জন্য দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, নিজ নিজ ধর্ম পালনের অধিকার সবার রয়েছে। আপনারা আপনাদের অধিকার নিয়ে বসবাস করবেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় সব ধর্মের মানুষের রক্ত এক হয়ে গেছে। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ষড়যন্ত্র থাকবে। নানা কিছু থাকবে। তা ঐক্যবদ্ধভাবেই মোকাবেলা করা সম্ভব। শেখ হাসিনা বলেন, সব ধর্মের মধ্যই সহনশীলতা ও শান্তির কথা বলা রয়েছে। কিন্তু কিছু মানুষই ধর্মের নামে অশান্তি সৃষ্টি করছে। অথচ কোন ধর্মেই অশান্তির কথা বলা নেই। ঈদ, পূজা, বড়দিনসহ সব ধর্মের উৎসবেই বাঙালী জাতি অংশ নেয়। কারণ ধর্ম যার যার, উৎসব সবার। তিনি বলেন, সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদীরা কখনও সফল হবে না। এই দেশে সব ধর্মের মানুষই সমান অধিকার নিয়ে থাকবে। তিনি বলেন, সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদ শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারাবিশ্বব্যাপীই এসব ঘটছে। সারাবিশ্বে এসব অশান্তি চলে আসছে। সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একজন ইমাম ও অপর এক মুসল্লিকে হত্যা করা হয়েছে। সেখানে আমাদের অনেক বাঙালী হত্যার শিকার হয়েছেন। তবে বাংলাদেশে সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে অভূতপূর্ব সাড়া পাওয়া গেছে। দেশের মানুষ এ ব্যাপারে এখন অনেক সজাগ ও সচেতন। অনুষ্ঠানে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টাম-লীর সদস্য সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ, রামকৃষ্ণ মঠের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেষানন্দ মহাদেব, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি জয়ন্ত সেন দীপু, সাধারণ সম্পাদক তাপস কুমার পাল, জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের সভাপতি দেবাশীষ পালিত, সাধারণ সম্পাদক চন্দন তালুকদার, মহানগর সার্বজনীন পূজা উদযাপন পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রমেশ ঘোষ, মহানগর সার্বজনিন পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি ডি এন চ্যাটার্জি প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, এই দেশের সব ধর্মের মানুষ এক হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করেছে। এখানে ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবার বসবাস করার অধিকার আছে। সবাই অধিকার নিয়ে বসবাস করবেন। এটাই আমরা চাই। সরকার দেশকে উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, উন্নয়নের ছোঁয়া তো সব ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সবাই পাচ্ছে। কেউ তো আর ভাগ করে নিচ্ছে না। তাহলে এ নিয়ে ভেদাভেদ থাকবে কেন? আগামী বৃহস্পতিবার শ্রীকৃষ্ণের জন্মদিনের উৎসব শান্তিপূর্ণ হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, মুসলিম-হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টান মিলেমিলে বসবাসের ঐতিহ্য আছে এখানে। এটাই বাংলাদেশের শক্তি। এখানে সব ধর্মের মানুষ সব সময় সবার উৎসবে শামিল হয়েছে। এখানে দুর্গাপূজা, ঈদ, মহররম সবাই একসঙ্গে মিলে উৎযাপন করে। ধর্ম যার যার উৎসব সবারÑ এটাই বাংলাদেশের চেতনা। ধর্মের নামে জঙ্গী তৎপরতা প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা এসব ঘটনা ঘটায় তাদের কোন মানবতাবোধ নেই। তারা আসলে কোন ধর্ম বিশ্বাস করে না। তাদের ধর্ম নেই, রাষ্ট্র নেই। জঙ্গীবাদই তাদের কাজ। সব ধর্মে সহনশীলতা, ভাতৃত্ববোধ, শান্তির কথা বলা আছে। কিছুদিন আগে একটার পর একটা ঘটনা ঘটে গেল। আমরা সবাইকে আহ্বান জানালাম, সবাই এক হলেন। ঐক্য গড়ে উঠলো। শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রীর কাছে বেশ কিছু দাবি তুলে ধরেন হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরা। দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, আপনারা কয়েকটি বিষয় উল্লেখ করেছেন। আপনাদের দাবি দাওয়া করতে হবে না। আমরা এমনিতেই সবার কল্যাণে কাজ করি। যখন ইমামদের জন্য কল্যাণ ট্রাস্ট করেছি, তখন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রীস্টানদের জন্যও করে দিয়েছি। প্রধানমন্ত্রী বলেন, হিন্দুদের সম্পত্তি উত্তরাধিকারকে দিয়ে যেতে অনেক কর দিতে হতো। আমরা সেটা থেকে রেহাই দিয়েছি। এখন যে কেউ চাইলে সম্পত্তি দিয়ে যেতে পারে। হিন্দু উত্তরাধিকার আইন না থাকার বিষয়টিও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, অনেক সময় স্বামী মারা গেলে স্ত্রী করুণ অবস্থায় পড়ে যায়। সন্তানরাও দুর্দশায় পড়ে। এটা তো হতে পারে না। এর কারণ উত্তরাধিকার আইন নেই। আমরা এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছিলাম, কিন্তু আপনাদের কাছ থেকে বাধা এসেছিল আর আমরা থেমে গিয়েছিলাম। এখন আপনারা যদি চান এই আইন হবে, তবে এই আইনের খসড়া আপনারাই তৈরি করে দেন। আমরা পাস করে দেব। আপনারা নিজেরা তৈরি করলে সেটা সবচেয়ে ভাল হবে।
×