ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

ড. জীবেন রায়

হাতির জন্য অশ্রুজল

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২০ আগস্ট ২০১৬

হাতির জন্য অশ্রুজল

সম্প্রতি বন্যাকবলিত ভারতীয় বন্য একটি হাতি পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই বাংলাদেশের মাটিতে এসে হাজির। মানুষও যখন দুরবস্থায় পড়ে তখন পাসপোর্ট ভিসা ছাড়াই এক দেশ থেকে অন্য দেশে পাড়ি জমায়, বেঁচে থাকার তাগিদে, জীবনের নিরাপত্তার জন্য। সেই দুর্বিষহ পরিস্থিতিতে কেউ বাঁচে, আবার অনেকেই মারা যায়। হাতিটিও নিশ্চয় বাঁচতে চেয়েছিল। বাংলাদেশের আতিথ্য গ্রহণ করেছিল। বাংলাদেশের মানুষও তাকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল, কিন্তু হাতিটি সে সুযোগ দেয়নি। খবরে প্রকাশ হৃদক্রিয়া বন্ধ হয়ে না ফেরার দেশে চলে গেছে হাতিটি। বাংলাদেশের অনেকেই কষ্টও পেয়েছে। এমনকি তার ময়নাতদন্তের জন্য লিগ্যাল নোটিস দেয়ার আবেদনও করেছেন এক ভদ্রলোক। এসব ছোট ছোট ঘটনার অনেক ইতিবাচক দিকও থাকে। মানুষের মমত্ববোধ জেগে ওঠে। হাতিটির একটি নামও (বঙ্গবাহাদুর) দেয়া হয়েছিল। শরণার্থী হাতিটির আশ্রয়, ভরণপোষণ দেয়া হতো এবং একদিন আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতে হস্তান্তরও করা হতো হয়ত। পত্রপত্রিকায়, টেলিভিশন টকশোতে আলোচনা, পর্যালোচনা হয়েছে অনেক। লক্ষণ ভাল। মানুষের সচেতনতা বাড়ছে। একটা প্রাণের প্রতি মমত্ববোধ জাগছে, তা জন্তু, জানোয়ার যাই হোক না কেন? গৌতম বুদ্ধ যথার্থই বলেছেন, জীবে দয়া করে যেইজন, সেইজন সেবিছে ঈশ্বর। হাতিটিকে বাঁচানোর জন্য অবশ্যই আন্তরিক চেষ্টা করেছে বন বিভাগ। তবে ভবিষ্যতের প্রস্তুতির জন্য শুধু হাতি নয়, যে কোন উদ্ধার অভিযান কিংবা যে কোন পরিস্থিতির সঠিক মোকাবিলার জন্য তাৎক্ষণিক সঠিক প্ল্যানিং করা প্রয়োজন। আজকাল কম্পিউটার যুগে বাংলাদেশে (সরকারী পর্যায়ে হোক আর এনজিও পর্যায়ে হোক কিংবা পাবলিক লাইব্রেরী হোক) একটা সেন্ট্রাল বিশেষজ্ঞ লিস্ট (জবংড়ঁৎপব ঢ়বৎংড়হং) থাকা উচিত এবং সেই সঙ্গে প্রতিটি অঞ্চলে স্থানীয় বিশেষজ্ঞ তালিকাও রাখা উচিত। যুক্তরাষ্ট্র প্রকৃতপক্ষেই একটি বিজ্ঞানসম্মত দেশ। এখানে স্থানীয়ভাবে বিশেষজ্ঞ তালিকা থাকে। একটা সাপকেও যদি ধরতে হয় তাহলে স্নেক ক্যাচারকেই ডাকা হবে। তাছাড়া এখানে অনেকেই লাইফ সেভিং সিপিআর (পধৎফরড়ঢ়ঁষসড়হধৎু ৎবংঁংপরঃধঃরড়হ) ট্রেনিং নিয়ে থাকে। কমিউনিটি সার্ভিস দেয়ার জন্য নোটারী পাবলিক হিসেবে সার্টিফাইড হয়ে থাকে। হাতিটিকে রক্ষা করার জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটির প্ল্যান বা প্রটোকলমাফিক কাজ করলে আরও ভাল ফল পাওয়া যেত। ষোলো কোটি মানুষের মাঝে হাতি বিশেষজ্ঞ নিশ্চয়ই আছে। কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিশেষজ্ঞ যেমন পাওয়া যেত, তেমনি রয়েছে চিড়িয়াখানায় বিশেষজ্ঞ, এমনকি রয়েছে যারা হাতি চড়িয়ে বেড়ায় অর্থাৎ মাহুত। বিশেষজ্ঞ লিস্ট থাকলে মোবাইল ফোনের যুগে, স্কাইপের মাধ্যমে আলোচনার ভেতর দিয়ে সঠিক প্ল্যানটাই বেরিয়ে আসত। এক একটা ঘটনা দিয়ে এক একটা সিস্টেমের উন্নয়ন ঘটে। প্রায় ৫০ বছর আগে অস্টিনের টেক্সাস বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্যাম্পাস শূটিং ঘটনার পর যুক্তরাষ্ট্রে ঝঢ়বপরধষ ডবধঢ়ড়হং অহফ ঞধপঃরপং ঞবধস (ঝডঅঞ) গঠন করা হয়। সে ধরনের কমান্ডো বাহিনীই ঢাকায় হলি আর্টিজান বেকারিতে সন্ত্রাসীদের মোকাবেলা করেছিল। যুক্তরাষ্ট্রের ৯-১১ ইমার্জেন্সি কলিং সিস্টেমটা এককথায় অনবদ্য সিস্টেম। বাংলাদেশে এমন একটা সিস্টেম কিভাবে গড়া যায়, এখনই ভাবা উচিত। পুলিশ বাহিনীতে নানাবিধ ট্রেনিংয়ের মাধ্যমে এক একজনকে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। দারোগা শুধু চোর ধরবেÑ এমন ভাবলে চলবে না। বন্যা থেকে মানুষও বাঁচাবে। নৌকা বাইতে জানতে হবে। সাইকেল চালাতে, গাড়ি চালানোতেও পারদর্শী হতে হবে। তেমনি দমকল বাহিনীকে শুধু পানি দিয়ে আগুন নিভাতে জানলেই হবে না। তাদের আগুন থেকে জীবন বাঁচানোর কায়দাকানুনও জানতে হবে। জানতে হবে পেট্রোলের আগুন কিভাবে নিভাতে হয়। কিভাবে ক্যামিকেলের আগুন নিভাতে হয়। ধাতব সোডিয়ামে আগুন লাগলে কি করতে হবে। তবে বিশেষজ্ঞ না হয়ে বিশেষজ্ঞভাব দেখানো উচিত নয়। বাংলাদেশে অনেকেই নিজেকে সর্বজান্তা ভাব দেখায়। নিজেকে প-িত মনে করে। ওখানেই হলো বড় সমস্যা। ক্যান্সার নিরাময়ে অনকোলজিস্টদের কাছেই যেতে হবে। জিপি দিয়ে হবে না। তবে জিপির ক্যান্সার রোগ সম্পর্কে প্রাথমিক ধারণা থাকতে হবে। তাকেই তো অনকোলজিস্টদের কাছে রেফার করতে হবে। সেদিন সিবিএস চ্যানেলে সায়েন্স প্রোগ্রামে দেখলাম, একটি অসুস্থ গোল্ড ফিসের ওপর সার্জারি করে টিউমার মুক্ত করা হয়েছে। চেতনা ফিরে আসার পর দিব্যি মাছটি পানিতে সাঁতার কাটছে। সে জন্যই তো মানুষ সর্বশ্রেষ্ঠ জীব। লেখক : আমেরিকান প্রবাসী অধ্যাপক ৎড়ুলরনবহ@ুধযড়ড়.পড়স
×