ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

ত্রিপুরায় বাংলাদেশ হয়ে জ্বালানি নিতে পারবে ভারত

প্রকাশিত: ০৬:০০, ১৯ আগস্ট ২০১৬

ত্রিপুরায় বাংলাদেশ হয়ে জ্বালানি নিতে পারবে ভারত

কূটনেতিক রিপোর্টার ॥ বন্যায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে রাস্তাঘাটের ব্যাপক ক্ষতি হওয়ায় ত্রিপুরায় জ্বালানি তেল পরিবহনে বাংলাদেশের সড়ক ব্যবহারের অনুমতি দেয়া হয়েছে। ভারতের অনুরোধের প্রেক্ষিতে সাময়িকভাবে জ্বালানি তেল পরিবহনের এই অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ। আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারত বাংলাদেশের ১৪০ কিলোমিটার সড়কপথ ব্যবহার করে ত্রিপুরায় জ্বালানি তেল সরবরাহ করতে পারবে। বৃহস্পতিবার ঢাকায় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ভারতীয় হাইকমিশন থেকে পাঠানো পৃথক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানা গেছে। ভারতের অসম ও ত্রিপুরা রাজ্য এখন ভয়াবহ বন্যাকবলিত। তবে ত্রিপুরার চেয়ে অসম অঞ্চলেই বন্যায় সড়কপথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বেশি। আর অসমের সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ত্রিপুরায় জ্বালানি তেল সরবরাহ সম্ভব হচ্ছে না। এই অবস্থায় মেঘালয় থেকে বাংলাদেশ হয়ে ত্রিপুরায় জ্বালানি তেল সরবরাহের অনুরোধ করেছে ভারত। মানবিক কারণে প্রতিবেশী দেশটির অনুরোধে সাড়া দিয়েছে বাংলাদেশ। ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ভারি বর্ষণ ও পাহাড়ে ভূমিধসে অসম হতে ত্রিপুরাগামী সড়কপথ (এনএইচ-৪৪) ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ত্রিপুরার সঙ্গে ভারতের অন্যান্য অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত হচ্ছে। ফলে ত্রিপুরায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যসহ জ্বালানি তেলের তীব্র সঙ্কট পরিলক্ষিত হচ্ছে। সাধারণ ত্রিপুরাবাসীও ব্যাপক দুর্ভোগে পড়েছে। জ্বালানির অভাবে ত্রিপুরার পরিবহন ক্ষেত্রেও দুরবস্থা বিরাজ করছে। এ অবস্থা নিরসনে ও মানবিক কারণে অসম হতে বাংলাদেশের আংশিক সড়কপথ ব্যবহার করে ত্রিপুরায় জ্বালানি তেল ও এলপিজি পরিবহনের জন্য ভারত বাংলাদেশের সহযোগিতা চেয়েছে। প্রস্তাবানুযায়ী ভারতীয় জ্বালানিবাহী ট্রাক বাংলাদেশের তামাবিল সীমান্ত চেকপোস্ট দিয়ে প্রবেশ করে সিলেট ও মৌলভীবাজারের প্রায় ১৪০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে মৌলভীবাজার জেলার চাতলাপুর চেকপোস্ট দিয়ে বের হয়ে ত্রিপুরায় ঢুকবে। ত্রিপুরায় জ্বালানি তেল সরবরাহের পর খালি যানবাহনসমূহ বাংলাদেশের চাতলাপুর চেকপোস্ট দিয়ে পুনঃপ্রবেশ করে একই পথ ব্যবহার করে ভারতে ফিরে যাবে। বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার বিদ্যমান বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক, ত্রিপুরার জনগণের সঙ্গে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক বন্ধন এবং সর্বোপরি মানবিক অবস্থা বিবেচনায় বাংলাদেশের সড়কপথ ব্যবহার করে ভারতীয় জ্বালানি তেলবাহী ট্রাক-লরি ত্রিপুরায় সাময়িকভাবে আগামী ৩০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত যাতায়াতের জন্য বাংলাদেশ সরকার অনুমোদন প্রদান করেছে। এ সংক্রান্ত একটি সমঝোতা স্মারক বৃহস্পতিবার দুই দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে। উল্লিখিত সড়কের ব্যবহার ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যয় বাবদ নির্ধারিত ফি প্রদানে ভারত সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী এবং ভারতের পক্ষে ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেডের (আইওসিএল) নির্বাহী পরিচালক চুক্তিটি সই করেন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তা, ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশন ও আইওসিএলের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে ভারতীয় হাইকমিশন থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতেও একই কথা উল্লেখ করে বলা হয়েছে, ভারত সরকারের পেট্রোলিয়াম ও প্রাকৃতিক গ্যাস মন্ত্রণালয়ের অধীন একটি সরকারী সংস্থা আইওসিএল বাংলাদেশ সরকারের সড়ক ও জনপথ বিভাগ একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছে। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী অসম থেকে ত্রিপুরায় বাংলাদেশের সীমানার মধ্য দিয়ে পেট্রোলিয়াম জাতীয় দ্রব্য (মোটর স্প্রিন্ট, উচ্চ গতির ডিজেল, উচ্চতর কেরোসিন তেল এবং তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস) পরিবহন করা সম্ভব হবে। ভারি বর্ষণ এবং জাতীয় সড়ক অত্যন্ত খারাপের (এনএইচ ৪৪) কারণে ভারতের অসম থেকে ত্রিপুরায় পেট্রোলিয়াম জাত দ্রব্য পরিবহনে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। ভারতীয় সরকারের অনুরোধে, বাংলাদেশ সরকার মানবিক দিক বিবেচনাসাপেক্ষে আগামী সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সীমানা ব্যবহার করে পেট্রোলিয়াম জাত দ্রব্য পরিবহনের অনুমতি প্রদান করেছে। পেট্রোলিয়াম জাত দ্রব্য বহনকারী ট্রাকসমূহ ডাউকি (মেঘালয়) তামাবিল (বাংলাদেশ) চাতলাপুর (বাংলাদেশ)-কৈলাস্বর (ত্রিপুরা) পথসমূহ ব্যবহার করবে। সূত্র জানায়, মানবিক কারণে ভারত ত্রিপুরায় জ্বালানি পরিবহনের জন্য বাংলাদেশের সড়ক ব্যবহারের অনুরোধ জানিয়েছিল। সমঝোতা স্মারক অনুযায়ী ভারতের সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক জ্বালানি প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশন লিমিটেড (আইওসিএল) অসম থেকে ত্রিপুরায় জ্বালানি পরিবহন করবে। বাংলাদেশের সড়ক ব্যবহার করে ত্রিপুরাসহ ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের বিভিন্ন রাজ্যে জ্বালানি তেল পরিবহনের অনুরোধ করে দেশটির কেন্দ্রীয় সরকারকে এর আগে চিঠি দিয়েছিলেন ত্রিপুরার পরিবহন ও বিদ্যুতমন্ত্রী মানিক দে। বর্ষা মৌসুমের আগেই তিনি দেশটির কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানকে এ বিষয়ে চিঠি দিয়েছিলেন। ত্রিপুরায় জ্বালানি পরিবহনে সড়ক ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশটির কেন্দ্রীয় ও রাজ্য সরকার একযোগে বাংলাদেশকে অনুরোধ করে। প্রবল বন্যায় ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের ত্রিপুরার জাতীয় সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বন্যার কারণে অসম থেকে ত্রিপুরা এখন অনেকটাই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দুই মাস ধরে এ অবস্থা চলছে। ফলে ত্রিপুরায় নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রী ও জ্বালানি তেলের সরবরাহ কমেছে। এছাড়া জ্বালানি তেলের দামও কয়েক দফা বেড়েছে সেখানে। জ্বালানি সরবরাহ স্বাভাবিক করতে রাজ্যের বিরোধী দলগুলোও রাজপথে নেমেছে। ফলে জ্বালানি তেল সরবরাহ স্বাভাবিক করতে ত্রিপুরা সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। অসমের বিভিন্ন সড়ক বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ত্রিপুরা ছাড়াও মিজোরাম ও মনিপুর রাজ্যের খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহের সমস্যা হচ্ছে বলে জানা গেছে। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে অকাতরে সাহায্য করেছিল ত্রিপুরা। সেই কৃতজ্ঞতার অংশ হিসেবে ত্রিপুরা রাজ্যে এর আগে ১০ হাজার মেট্রিক টন চাল পাঠানোর জন্য ভূখ- ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছিল বাংলাদেশ। নৌ প্রটোকলের আওতায় আশুগঞ্জ নৌবন্দর হয়ে ট্রানশিপমেন্টের মাধ্যমে ত্রিপুরায় সেই চাল পাঠানো হলেও কোন মাশুল নেয়নি বাংলাদেশ সরকার। তারও আগে ২০১১ সালে আশুগঞ্জ নৌবন্দর দিয়ে ট্রানশিপমেন্টের মাধ্যমে ত্রিপুরার পালাটানায় বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণে ভারি যন্ত্রপাতি পরিবহন করেছিল ভারত। কোন রকম মাশুল ছাড়াই ভারি ওই যন্ত্রপাতি পরিবহনের জন্য দুই দেশ সে সময় একটি সমঝোতা স্মারক সই করেছিল।
×