ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

নবেম্বরে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সুপার স্ট্রাকচারের কাজ শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ১৯ আগস্ট ২০১৬

নবেম্বরে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সুপার স্ট্রাকচারের কাজ শুরু

স্টাফ রিপোর্টার ॥ অনিশ্চয়তা কাটিয়ে রাজধানীর যানজট নিরসনে বহুল প্রতীক্ষিত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের (উড়াল সড়ক) নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। প্রায় চার বছর পর আবারও প্রকল্পটি নতুন করে আলোর মুখ দেখল। ইতোমধ্যে প্রথম ধাপে মূল অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। সংযোগ সড়কসহ ৪৬ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সড়কের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয়েছে ১২ হাজার ২০০ কোটি টাকার বেশি। যা শেষ হবে ২০১৯ সালে। বিলম্বিত কারণে ব্যয় বেড়েছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা। এই প্রকল্পের মূল অবকাঠামো নির্মাণ হলে নগরীর উত্তর-দক্ষিণে যানবাহন চলাচলে বিকল্প সড়ক সৃষ্টি হবে। ফলে নগরবাসীর ভ্রমণ সময় কমবে। ভোগ্যপণ্য বাধাহীনভাবে চলাচল করতে পারবে। অর্থাৎ নগরীর যোগাযোগের ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তন আসবে। বিমানবন্দর থেকে কুতুবখালী যেতে সর্বোচ্চ সময় লাগবে ২০ মিনিট। তবে টোল ছাড়া নতুন এই উড়াল সড়ক ব্যবহার করা যাবে না। আগামী নবেম্বরে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের সুপার স্ট্রাকচারের (উপরি কাঠামো) কাজ শুরু হবে। ২০১৮ সালের মধ্যে বিমানবন্দর এলাকার কাওলা থেকে কমলাপুর পর্যন্ত অংশের কাজ শেষ হবে বলে জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এমপি। বৃহস্পতিবার বনানীস্থ সেতু ভবনে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইটাল থাই কোম্পানি লি.-এর প্রেসিডেন্ট মি. প্রেমচাই কর্ণসূতার সঙ্গে সভাশেষে মন্ত্রী এ কথা জানান। এ সময় সেতুমন্ত্রী বলেন, যোগাযোগ খাতের অগ্রাধিকারভিত্তিক প্রকল্প এটি। আমরা সময়মতো কাজ শুরু করে তা শেষ করার চেষ্টা করব। এ প্রকল্পের কাজ শেষ হলে রাজধানীতে চলাচলে নতুন মাত্রা যোগ হবে। কমবে যানজটের ভোগান্তি। এ সময় সেতু বিভাগের সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম, প্রকল্প পরিচালক কাজী মোঃ ফেরদৌস উপস্থিত ছিলেন। প্রকল্পের আওতায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মহাখালী হয়ে তেজগাঁও-মগবাজার-কমলাপুর-কুতুবখালী পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার মূল উড়াল সড়ক নির্মিত হবে। রাজধানীর কুড়িল, মহাখালী, মানিক মিয়া এ্যাভিনিউ, পলাশী ও মগবাজারে বাইলাইন নামবে। প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে উত্তরাঞ্চলের প্রায় ২১ জেলার যাত্রী থেকে শুরু করে বৃহত্তর ময়মনসিংহের সড়কপথে আসা যাত্রীরা দ্রুত সময়ের মধ্যে কুতুবখালী পৌঁছতে পারবেন। এর মধ্যে বৃহত্তর চট্টগ্রাম থেকে শুরু করে পূর্বাঞ্চলের যাত্রীদের ক্ষেত্রেও নতুন দিগন্তের সূচনা হবে। যদিও প্রথম ধাপে সংযোগ সড়ক ছাড়াই ২৬ কিলোমিটার সড়ক নির্মাণের কথা ছিল। তিন ধাপে হবে নির্মাণকাজ ॥ সরকারী-বেসরকারী অংশীদারিত্বের এই প্রকল্প তিন ধাপে বাস্তবায়ন হবে। প্রথম ধাপ বিমানবন্দর থেকে শুরু হয়ে বনানী পর্যন্ত ৭ দশমিক ৪৫ কিলোমিটার। দ্বিতীয় পর্যায়ে বনানী থেকে মগবাজার পর্যন্ত ৫ দশমিক ৮৫ কিলোমিটার এবং শেষ পর্যায়ে মগবাজার থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ৬ দশমিক ৪৩ কিলোমিটার উড়াল সড়ক নির্মাণ করা হবে। ২০১১ সালের ১৯ জানুয়ারি এ প্রকল্পের প্রথম চুক্তি হয়। একই বছর ৪ এপ্রিল ভিত্তিস্থাপন করা হয়। তবে নক্সা পরিবর্তন ও মূল্যস্ফীতির কারণে প্রকল্প ব্যয় বেড়ে যায়। ২০১৩ সালের ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান ইটাল থাই ডেভেলপমেন্ট কোম্পানির সঙ্গে নতুনভাবে চুক্তি করে সরকারের সেতু বিভাগ। ২০১২ সালের ৩০ অক্টোবর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেছিলেন ওবায়দুল কাদের। সেতু বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এই প্রকল্পের জন্য অধিগ্রহণের কারণে মোট ১৫৭ জন তাদের ব্যক্তিগত জমি হারিয়েছেন। পদ্মা সেতু প্রকল্পের আদলে এই উড়াল সেতুর কারণে ক্ষতিগ্রস্ত ভূমি মালিকদের পুনর্বাসন করা হবে। এ জন্য ইতোমধ্যে ৪০ একর জমির সংস্থান করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এই প্রকল্পে এরই মধ্যে ১৩৫ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়া হয়েছে। সেতু বিভাগের তথ্যমতে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েটি নির্মাণে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের ব্যয় হবে আট হাজার ৯৪০ কোটি ১৮ লাখ টাকা। আর সরকারের ব্যয় ধরা হয়েছে দুই হাজার ৪১৩ কোটি টাকা। এছাড়া এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ তদারকিতে স্বাধীন পরামর্শক নিয়োগে ব্যয় হচ্ছে ৫২ কোটি ৮০ লাখ টাকা। এটিও সরকারের তহবিল থেকে বহন করা হবে। প্রকল্পে মোট ব্যয়ের ৭৩ শতাংশ বিনিয়োগকারী ও ২৭ শতাংশ সরকারের বহন করার কথা ছিল অথচ উদ্বোধনের পরও দীর্ঘ সময় প্রকল্পের কাজ শুরু সম্ভব হয়নি। এ বিষয়ে সেতু বিভাগের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের বক্তব্য, চুক্তির পর এক্সপ্রেসওয়েটির এ্যালাইনমেন্ট ও নক্সায় কিছুটা পরিবর্তন আনা হয়েছে। ২০১২ সালের ১৭ মে সড়কের নক্সায় কিছুটা পরিবর্তন এনে দৈর্ঘ্য কমানো হয় চার কিলোমিটার। ওঠানামার র‌্যাম্পের অবস্থানের কিছুটা পরিবর্তন হয়েছে। এ জন্য বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ফের চুক্তি করা হয়েছে। মূলত এসব কারণে কিছুটা বিলম্ব হওয়ার কথা জানান তারা। সংশোধিত নক্সায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে বিমানবন্দর সড়ক থেকে শুরু হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত বিদ্যমান রেললাইনের ওপর দিয়ে এবং কমলাপুর থেকে সড়ক ও জনপথ অধিদফতরের (সওজ) অতীশ দীপঙ্কর সড়কের ওপর দিয়ে সায়েদাবাদ পর্যন্ত এবং পরের অংশটি গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভার অংশের ওপর দিয়ে যাত্রাবাড়ী অতিক্রম করে কুতুবখালী পর্যন্ত যাবে। প্রকল্পের কর্তাব্যক্তিরা জানিয়েছেন, চলতি মাসের শুরুতে নির্মাণকাজ শুরুর পর এ পর্যন্ত ৩৩৮টি পাইল ও ৯টি পাইল ক্যাপ সম্পন্ন হয়েছে বলে জানা গেছে। এছাড়া বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান কর্তৃক ১৫ দশমিক ৯৫ একর জায়গা মাটি ভরাট করা হয়েছে। যেখানে প্রকল্পের সাইট অফিস, স্ট্যাকইয়ার্ড, কনস্ট্রাকশন ইয়ার্ড নির্মাণ করা হয়েছে। এছাড়াও ব্যাচিং প্যান্ট স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে।
×