ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

কুড়িগ্রামে বন্যায় মৎস্য খাতে ক্ষতি ॥ সাড়ে তিন শ’ কোটি টাকা

প্রকাশিত: ০৪:৩৬, ১৭ আগস্ট ২০১৬

কুড়িগ্রামে বন্যায় মৎস্য খাতে ক্ষতি  ॥ সাড়ে তিন শ’ কোটি টাকা

স্টাফ রিপোর্টার,কুড়িগ্রাম ॥ স্থায়ী বন্যায় শুধু মৎস্য খাতে ক্ষতি হয়েছে প্রায় সাড়ে তিন শ’ কোটি টাকা। এরমধ্যে এই বিশাল ক্ষতির বিপরীতে সরকারের পূুনর্বাসনের উদ্যোগ চোখে পড়ার মতো নয়। ইতোমধ্যে ক্ষতি পুষিয়ে আনতে সংশ্লিষ্ট বিভাগের পক্ষ থেকে প্রণোদনা প্যাকেজ ও প্রকল্প প্রস্তাবনা পাঠান হলেও এখন পর্যন্ত সাড়া মেলেনি। মৎস্য বিভাগ জানায়, জেলার ৯ উপজেলার ৫৭টি ইউনিয়নের ১০ হাজার মাছ চাষী ছোট-বড় প্রায় সাড়ে তিন হাজার পুকুর ও ছড়া বিলে মাছ আবাদের সঙ্গে জড়িত। এবারের দীর্ঘমেয়াদী বন্যায় শুধু ছোটবড় পুকুরের ২৩০ লাখ পোনা, ৭৩০ টন বড় মাছসহ অবকাঠামোগত ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। পাশাপাশি ৫২টি ছড়া বিলেও ক্ষতি হয়েছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে জেলা সদর, চিলমারী, উলিপুর রাজারহাট, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলায়। কুড়িগ্রাম মৎস্য বিভাগের উপ-পরিচালক জিল্লুর রহমান জানান, বন্যায় ৬৭৭ দশমিক ৬ একর জলাভূমির মাছ ও ১ হাজার ৭৮৯টি পুকুরের মাছ সম্পূর্ণ ভেসে গেছে। এতে ক্ষতি হয়েছে ৩২২ কোটি ৫০ লক্ষ টাকা। জেলায় ধরলা, ব্রক্ষপুত্র, দুধকুমোর, তিস্তা, হলহলিয়া, ফুলকুমোর, গঙ্গাধর, জিঞ্জরামসহ প্রায় ১৬টি নদ-নদী এ জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখানে রয়েছে ৫২টি ছড়া ও বিল। এসব বিলে বিভিন্ন মাছের চাষ করা হয়। এবারের দীর্ঘস্থায়ী বন্যায় এসব ছড়া ও বিলের অসংখ্য বাঁধ ভেঙ্গে গেছে। বন্যার পানিতে বিভিন্ন পুকুরের মাছ ভেসে গেছে। যারা মৎস্য চাষের ওপর পুরোপুরি নির্ভরশীল তারা একেবারে নিঃস্ব হয়ে গেছে। অনেক মৎস্য চাষী ব্যাংকের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছিল এসব চাষী সবচেয়ে সমস্যায় পড়েছে। দেশের উত্তরের সবচেয়ে শেষ প্রান্তে এ জেলা হলেও সময়ের সাথে এ জেলার মানুষও মৎস্য চাষে ঝুঁকে পড়েছে। চলতি বন্যায় এসব মৎস্য চাষীদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। টাঙ্গাইলে ভেসে গেছে কোটি টাকার মাছ নিজস্ব সংবাদদাতা টাঙ্গাইল থেকে জানান, এবার বন্যায় জেলার প্রায় ১২ হাজার হেক্টর ফসলি জমি নষ্ট হয়েছে। ভেসে গেছে রোপা আমনের বীজতলাসহ বিভিন্ন সবজি ক্ষেত। ফলে দিশেহারা এখন জেলার ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা। এদিকে বন্যায় অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে জেলার পুকুর ও জলাধারগুলোর। বানে ভেসে গেছে কোটি টাকার ছোট-বড় মাছ। দিশেহারা হয়ে পড়েছে মৎস্য চাষীরা। ভাঙ্গন ও বন্যার অতিরিক্ত পানির চাপে এসব পুকুর ও জলাশয়ের মাছ ভেসে গেছে। বন্যায় ১০টি উপজেলার ফসলি জমির বীজতলা ও সবজি ক্ষেত পানিতে ভেসে যাওয়ায় দিশেহারা হয়ে পড়েছেন এ অঞ্চলের কৃষকরা। কৃষকদের অভিযোগ, আমনের বীজতলা ও ফসলি জমি নষ্ট হওয়া সত্ত্বেও এখন পর্যন্ত কোন প্রকার সরকারী সহযোগিতা পাননি কৃষকরা। এ ক্ষতির লোকসান মেটাতে দ্রুত সরকারী সহযোগিতা এবং সুদমুক্ত কৃষিঋণের দাবি জানিয়েছেন তারা। মঙ্গলহোড় গ্রামের সবজি কৃষক কবির জানান, ৪শ’ শতাংশ জমিতে রোপণকৃত সবজি বাগান বন্যার পানিতে নষ্ট হয়ে তিনি এখন সর্বস্বান্ত। জমিতে বেগুন, ধুন্দল, লাউ, ডাঁটা, গ্রীষ্মকালীন শিম, লালশাক ও কচুশাকসহ বিভিন্ন ধরনের শাকের আবাদ করেছিলেন। এজন্য তিনি স্থানীয় এনজিও থেকে পাঁচলাখ টাকা ঋণও গ্রহণ করেন। এখন ক্ষতি ও ঋণ পরিশোধের ভাবনায় তিনি পাগলপ্রায়। সরকারী সহযোগিতা আর সুদমুক্ত ঋণ ব্যতীত তার ঘুরে দাঁড়ান অসম্ভব। এ ব্যাপারে টাঙ্গাইল কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আবুল হাশিম কৃষকের ব্যাপক ক্ষতির কথা স্বীকার করে বলেন, কৃষকের লোকসান পুষিয়ে দিতে প্রয়োজনীয় কৃষি প্রণোদনাসহ নানা রকমের সরকারী সাহায্য সহযোগিতার আশ্বাসও প্রদান করেন তিনি। অপরদিকে প্রায় এক হাজার পুকুরের মাছ বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। পুঁজি হারিয়ে এসব এলাকার মৎস্য চাষীদের এখন পথে বসার উপক্রম। এসব এলাকার মৎস্য চাষীরা নিজ উদ্যোগে ব্যাংক, এনজিওসহ স্থানীয় মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে বাণিজ্যিকভাবে মাছচাষ করেন। বন্যায় তাদের মৎস্য খামারের মাছ ভেসে গেছে। এতে প্রায় ২৭ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। জেলা মৎস্য অধিদফতর জানায়, টাঙ্গাইলে ১২টি উপজেলার মধ্যে ৮১০টি পুকুর বা জলাশয়ের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সদর উপজেলায় ২৭ লাখ টাকা, মির্জাপুরে ৪ লাখ ২৫ হাজার, দেলদুয়ারে ৩৩ লাখ, গোপালপুরে ২০ লাখ, নাগরপুরে ৪৭ লাখ ৯০ হাজার, বাসাইলে ১৯ লাখ, ভূঞাপুরে ২৬ লাখ ১০ হাজার, কালিহাতীতে ২৩ লাখ ৭৭ হাজার, ধনবাড়ীতে ১২ লাখ টাকার মাছ পানিতে ভেসে গেছে।
×