ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৮ বৈশাখ ১৪৩১

নারী ট্রাফিক সার্জেন্ট

প্রকাশিত: ০৪:১৯, ১৭ আগস্ট ২০১৬

নারী ট্রাফিক সার্জেন্ট

রাজধানীর যানবাহনে ভারাক্রান্ত ব্যস্ত সড়কে নীল পোশাক পরিহিতা সপ্রতিভ নারী সার্জেন্ট লাল মোটরসাইকেল নিয়ে ছুটছেন- এমন দৃশ্য চাক্ষুষ করা এখন আর কল্পনা নয়। নারীর কর্মপরিধি প্রতিনিয়ত বাড়ছে। যে সমাজ এক সময়ে নারীকে পেছনে ঠেলে রাখত এখন সেই সমাজে নারী তার নিজেরই ক্ষমতাবলে সর্বস্তরে স্থান করে নিচ্ছেন। পুরুষ-আধিপত্যের এই সমাজে পুরুষও বাধ্য হচ্ছে তার সহকর্মী হিসেবে নারীকে সমমর্যাদায় গ্রহণ করতে। নারীর জন্য এখন আর তাই আলাদা করে কোন পেশা নির্ধারণ করা হয় না। সকল পেশায়ই নারীর অংশগ্রহণ ঘটছে। নারীর ক্ষমতায়নের পথে তার অগ্রযাত্রা এখন শুধু দেশবাসীরই নয়, বিশ্ববাসীরও বিস্ময়। রবিবার ২২ নারী সার্জেন্টকে আনুষ্ঠানিকভাবে লাল রঙের স্কুটি দেয়া হলো। অনুষ্ঠানে ডিএমপি কমিশনারের এ সংক্রান্ত বক্তব্য উল্লেখ করার মতো। তিনি জানাচ্ছেন, ‘পুলিশে জেন্ডার বৈষম্য মেনে নেয়া হবে না। যে নারীরা আজ সার্জেন্ট হয়েছেন তারা তাদের মেধা ও যোগ্যতা দিয়েই সার্জেন্ট হয়েছেন। কারও দয়ায় নয়। নারী সার্জেন্টরা যে কষ্ট করে দায়িত্ব পালন করছেন, এ জন্য তাদের স্যালুট জানাই।’ বিভিন্ন দেশে ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণে স্কুটি ব্যবহার এখন স্বাভাবিক বিষয়। তবে বাংলাদেশে এই প্রথমবারের মতো পুলিশ বাহিনীতে স্কুটির ব্যবহার শুরু হলো। কিছুকাল আগে বিজিবিতে প্রথমবারের মতো নারী ফোর্স যুক্ত হয়েছে। নতুন যুক্ত হওয়া ৯৭ নারী সদস্যের অনেকেই মাদক পাচাররোধে মোতায়েন হচ্ছেন। দেশে নারীর মানবাধিকারের নিশ্চয়তা সামগ্রিকভাবে অর্জিত না হলেও তারা অর্থনৈতিক চাকা সচল রাখতে বিশেষ ভূমিকা রেখে চলেছেন। দেশের অর্থনীতির তিনটি প্রধান খাত- গার্মেন্টস শিল্প, কৃষি এবং বিদেশে শ্রমদান- তিন খাতেই সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতি সমৃদ্ধ করছেন সাধারণ নারী। সহস্রাব্দের লক্ষ্য অর্জনে বাংলাদেশ যে সকল সূচকে এগিয়ে বিশ্ববাসীর প্রশংসা কুড়িয়েছে, সেখানে নারী শিক্ষার অগ্রগতি বিশেষভাবে সমাদৃত। শত বছর আগে বেগম রোকেয়া নারী মুক্তি ও জাগরণের যে স্বপ্ন দেখেছিলেন, তার চিত্র ফুটিয়ে তুলেছিলেন ‘সুলতানার স্বপ্ন’ উপন্যাসে। সুলতানার স্বপ্ন শুধু পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ নয়, বৈজ্ঞানিক দূরদৃষ্টিসম্পন্ন; আধুনিক ও উন্নত সমাজ বা রাষ্ট্রের প্রতিচ্ছবিও এতে আমরা দেখতে পাই। রোকেয়া নারীদের অর্থনৈতিক মুক্তির বিষয়টিতে বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। সেটি বিবেচনায় রেখে আমরা বলতে পারি- আজকের বাংলাদেশে নারীর অর্থনৈতিক অবদান অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় ভাল। এক দশকে নারী কর্মী ১২ লাখ থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে সাড়ে ৪০ লাখে। লিঙ্গ বৈষম্য হ্রাসে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় শীর্ষ অবস্থানে। এ দুটি আশাজাগানিয়া তথ্য উঠে এসেছে কিছুকাল আগে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) জরিপে। বর্তমান সরকার নারীবান্ধব। নারীর অবস্থা ও অবস্থানের উন্নতির লক্ষ্যে নানা পদক্ষেপ গৃহীত হচ্ছে। নারী সাহসী হয়েছে, কুসংস্কার ঝেড়ে ফেলেছে এবং নিজের অবস্থার পরিবর্তনের জন্য নিজেও সচেষ্ট হয়েছে। পুলিশ-বিজিবির মতো চ্যালেঞ্জিং পেশায় নারীর অংশগ্রহণ আগামীতে বাড়বে বলে আশা করা যায়। সামাজিক ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে নারীর ব্যাপক উপস্থিতি প্রত্যাশিত।
×