ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

নানা আয়োজনে বিনম্র শ্রদ্ধায় জাতির পিতাকে স্মরণ

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ১৬ আগস্ট ২০১৬

নানা আয়োজনে বিনম্র শ্রদ্ধায় জাতির পিতাকে স্মরণ

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একজন মানুষ হিসেবে সমগ্র মানবজাতি নিয়েই আমি ভাবি। একজন বাঙালী হিসেবে যা কিছু বাঙালীদের সঙ্গে সম্পৃক্ত তাই আমাকে গভীরভাবে ভাবায়। এই নিরন্তর সম্পৃক্তির উৎস ভালবাসা, অক্ষয় ভালবাসা, যে ভালবাসা আমার রাজনীতি এবং অস্তিত্বকে অর্থবহ করে তোলে। অসমাপ্ত আত্মজীবনীতে এভাবেই নিজেকে উপস্থাপন করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বাঙালীর রাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার এই মহান স্থপতির ৪১তম শাহাদাতবার্ষিকী ছিল সোমবার। পঁচাত্তরের রক্তস্নাত এই দিনে ঘাতকের বুলেটে নিভে যায় জাতির পিতার প্রাণপ্রদীপ। বাঙালীর অবিসংবাদিত নেতা ও তাঁর পরিবারের ওপর রক্তগঙ্গা বয়ে যাওয়া বেদনাময় দিনটি পঞ্জিকার হিসাবে পনেরোই আগস্ট। শোকের আখরে লেখা দিনটি ছিল জাতীয় শোক দিবস। শোকের সেই রূপান্তরিত শক্তিতে স্মরণ করা হলো হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালীকে। রক্তঋণ শোধের দিবসটিতে রাজধানীর সংস্কৃতি অঙ্গনে ছিল নানা আয়োজন। কণ্ঠশিল্পীর গানের সুরে, বাকশিল্পীর কবিতার ছন্দে, বক্তার কথায়, শিল্পীর আঁকা চিত্রকর্মে, নৃত্যশিল্পীর অভিব্যক্তির সঙ্গে মুদ্রার প্রকাশে ইতিহাসের মহানায়ককে জানানো হয় শ্রদ্ধাঞ্জলি। শিল্পকলা একাডেমির স্মরণে শেখ মুজিব ॥ জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে চলছে শিল্পের আলোয় বঙ্গবন্ধু শীর্ষক মাসব্যাপী অনুষ্ঠানমালা। এর অংশ হিসেবে সোমবার ছিল আলোচনা, নাটক মঞ্চায়ন ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিকেলে জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে মঞ্চস্থ হয় লোকনাট্যদলের প্রযোজনা ‘মুজিব মানে মুক্তি’। লিয়াকত আলীর লাকীর গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় এটি ছিল নাটকটির ১০১তম মঞ্চায়ন। নাট্যমঞ্চায়ন শেষে ছিল আলোচনাসভা। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন অর্থ বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মাহবুব আহমেদ। মুখ্য আলোচক ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। সভাপতিত্ব করেন একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সম্মেলক সঙ্গীত পরিবেশ করে ঢাকা সাংস্কৃতিক দল। অনেকগুলো কণ্ঠ এক সুরে গেয়ে শোনায় ‘ধন্য মুজিব ধন্য’ ও ‘বাংলার হিন্দু বাংলার বৌদ্ধ’। ‘দুঃখিনী বাংলা জননী বাংলা’ এবং ‘সাড়ে সাত কোটি মানুষের’ গানের সুরে সম্মেলক নৃত্য পরিবেশন করে একাডেমির রেপার্টরি নৃত্যদল। ‘যতদিন রবে পদ্মা মেঘনা’ শীর্ষক নৃত্যনাট্য পরিবেশন করে ধৃতি নর্ত্তনালয়। একক কণ্ঠে আকরামুল ইসলাম ‘ও আমার দেশের সোনা’, মনোরঞ্জন ঘোষাল ‘ও দরদী নাইয়ারে’, বুলবুল মহলনবীষ ‘ভালবাসি ভালবাসি’, ইয়াসমীন আলী ‘মুজিব আছে বাংলার ঘরে ঘরে’ শিরোনামের গান পরিবেশন করেন। কবিতা পাঠ করেন কবি কামাল চৌধুরী ও আলম তালুকদার। আবৃত্তি করেন ঝর্ণা সরকার ও ডালিয়া আহমেদ। এছাড়া প্রতিবন্ধী শিশুদের বিশেষ পরিবেশনা। এছাড়া শিল্পের আলোয় বঙ্গবন্ধু শীর্ষক কর্মসূচীর অংশ হিসেবে একাডেমির জাতীয় চিত্রশালার ৩ নম্বর গ্যালারিতে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে রচিত কবিতা ও গল্পের ওপর ভিত্তি করে ১৪৮ শিল্পীর সৃজিত শিল্পকর্ম প্রদর্শনী। এছাড়া চিত্রশালায় চলছে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে শিশুদের আঁকা চিত্রকর্ম প্রদর্শনী। আয়োজন করা হয়েছে সংবাদচিত্রে বঙ্গবন্ধু শীর্ষক আলোকচিত্র প্রদর্শনী। আলোকচিত্রী মোহাম্মদ শুকুর মিয়া ও খন্দকার মুফিদুল ইসলামের ধারণকৃত ছবিতে ঠাঁই পেয়েছে বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত ও রাজনৈতিক জীবনের নানা ঘটনাচিত্র। বাংলা একাডেমির আয়োজন ॥ জাতীয় শোকদিবস উপলক্ষে স্বরচিত কবিতা পাঠ, আবৃত্তি, সঙ্গীত পরিবেশনায় সাজানো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। সঙ্গে ছিল প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনী। বিকেলে একাডেমির আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ মিলনায়তনে আয়োজিত অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান। বঙ্গবন্ধুকে নিবেদন করে আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী মাহিদুল ইসলাম মাহি। সঙ্গীত পরিবেশন করেন গীতিকার, সুরকার কবি অসীম সাহা পরিচালিত সাংস্কৃতিক সংগঠন সহজিয়া। প্রদর্শিত হয় ম. হামিদ প্রযোজিত প্রামাণ্যচিত্র ‘সেই অন্ধকার’। স্বাগত বক্তব্যে অধ্যাপক শামসুজ্জামান খান বলেন, বঙ্গবন্ধুর উদারতা, মহানুভবতা, ধর্মনিরপেক্ষতা ও মানবকল্যাণধর্মী চিন্তায় উজ্জীবিত হয়ে দেশের সাম্প্রতিক জঙ্গীবাদ প্রতিরোধ করা সম্ভব। উপমহাদেশে ধর্মনিরপেক্ষতা মুসলমান সুলতান ও সম্রাটদের সৃষ্টি এবং ভারতীয় ঐতিহ্যের অংশ। বঙ্গবন্ধু ইতিহাসের ধারা সম্পর্কে জেনে-বুঝেই বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় মূলনীতিতে ধর্মনিরপেক্ষতা প্রতিষ্ঠা করেন। তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুকে ব্রিটিশ সাংবাদিক ডেভিড ফ্রস্ট প্রশ্ন করেছিলেন আপনার যোগ্যতা কী, উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন, ‘আমি জনগণকে ভালোবাসি’। তিনি আবার প্রশ্ন করেছিলেনÑ আপনার দুর্বলতা কী, উত্তরে বঙ্গবন্ধু বলেন, ‘আমি জনগণকে খুব বেশি ভালোবাসি’। সে বেশি ভালবাসাই তাঁর জন্য কাল হলো। কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা ॥ জাতীয় শোক দিবসে কেন্দ্রীয় কচি-কাঁচার মেলা সেগুনবাগিচা কার্যালয়ের মিলনায়তনে আয়োজন করে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। এতে বঙ্গবন্ধু, শেখ রাসেল ও অন্য শহীদদের স্মরণ করে বক্তব্য রাখেন সংসদ সদস্য কবি কাজী রোজী, কবি স্থপতি রবিউল হুসাইন, মেলার সহ-সভাপতি ড. রওশন আরা ফিরোজ, মেলার প্রবীণ সদস্য শাসমুল হুদা প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেন মেলার সভাপতি খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ। আলোচনা শেষে কচি-কাঁচার মেলা পরিচালিত কথাবিতান ও সুরবিতানের শিশুশিল্পীরা বঙ্গবন্ধুর জীবনীভিত্তিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশন করে। অনুষ্ঠানের শেষাংশে ‘পলাশী থেকে ধানম-ি’ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। শিশু একাডেমি ॥ বাংলাদেশ শিশু একাডেমির শোক দিবসের কর্মসূচীর অংশ হিসেবে চলছে বঙ্গবন্ধু ও মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক আলোকচিত্র ও পুস্তক প্রদর্শনী। ফিল্ম আর্কাইভ ॥ শোক দিবস উপলক্ষে সুফিয়া কামাল কেন্দ্রীয় গণগ্রন্থাগারের শওকত ওসমান স্মৃতি মিলনায়তনে ফিল্ম আর্কাইভ এবং চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন ইনস্টিটিউটের আয়োজনে ছিল তথ্যচিত্র ও পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। তথ্যচিত্রগুলোর মধ্যে প্রদর্শিত হয় ‘বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ’, ‘বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন’ ও ‘ঢাকা স্টেডিয়ামে মুক্তিযোদ্ধাদের অস্ত্র সমর্পণ’। আরও প্রদর্শিত হয় হুমায়ূন আহমেদ নির্মিত মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমনি’।
×