ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

অধর্মকে রুখতে হলে-

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ১৬ আগস্ট ২০১৬

অধর্মকে রুখতে হলে-

জঙ্গী হয়ে কেউ জন্মায় না। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে জঙ্গী হিসেবে গড়ে তোলা হয়। সন্ত্রাসকে ধর্ম মেনে তারা মানুষ হত্যা, সম্পদ বিনষ্ট, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করার অভিপ্রায়ে সশস্ত্র হচ্ছে। আর তাদের এই বেড়ে ওঠার নেপথ্যে আছে এক শক্তি ও গোষ্ঠী। খোদ ইসলাম ধর্মের মূল ভিত্তিকে বিকৃত করে অনৈসলামিক এক ধর্মকে প্রতিষ্ঠিত করতে বদ্ধপরিকর যারা তারা ইসলামের মিত্র হতে পারে না, বরং ইসলাম ধর্মের শত্রু। ইসলামকে সামনে রেখে তারা যা করছে বিশ্বজুড়ে তা কোন ধর্মপ্রাণ মুসলমান শুধু নয়, বিশ্বের স্বাভাবিক কোন মানুষের কাছেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। যদি তারা ইসলাম অনুসারীই হতো, তবে জঙ্গীপনাকে ব্যবহার করে একটার পর একটা মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ধ্বংসের পাঁয়তারা, অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি, হত্যাযজ্ঞ চালাত না। পৃথিবীর সবচেয়ে মানবিক ও উদার ধর্ম হিসেবে খ্যাত ইসলাম ধর্ম। কিছু ধর্মব্যবসায়ী এই ধর্মকে ব্যবহার করে সন্ত্রাসী ও জঙ্গী কর্মকা- চালিয়ে আসছে। যে ইসলাম হচ্ছে শান্তির, সৌহার্দ্যরে, সহনশীলতার, সে ধর্মের নাম ব্যবহার করে অশান্তি, হানাহানি, বিভেদ, অসহিষ্ণুতা, অগণতান্ত্রিক, অসাম্য, অনুদার ও অমানবিকতাকে লালন-পালন শুধু নয়, নির্বিকারভাবে নির্বিচারে সাধারণ মানুষকে হত্যা করে চলেছে। ধর্ম রক্ষার নামে নৃশংস ঘটনা ঘটিয়ে শুধু মানুষ হত্যা নয়, ইসলাম ধর্মের বিরুদ্ধেই তারা অবস্থান নিয়েছে। অবশ্য এটা নতুন কিছু নয়। পাকিস্তান যুগ থেকেই বাঙালী দেখে আসছে ‘মওদুদীবাদের’ নামে কীভাবে ইসলাম ধর্মকে বিকৃত করে অনৈসলামিক ধর্মের বিস্তার ঘটানো হয়েছে। আর তা করে আসছে মওদুদী প্রতিষ্ঠিত জামায়াতে ইসলামী নামক ইসলামবিরোধী রাজনৈতিক দলটি। তাই পাকিস্তান যুগে এরা একটি সম্প্রদায়কে অমুসলিম ঘোষণা করে হানাহানি চালু করেছিল। আর ১৯৭১ সালে এরা ইসলাম রক্ষার নামে সশস্ত্র অবস্থান নিয়ে পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর সহযোগী হিসেবে মুসলিম নিধনে মত্ত হয়ে উঠেছিল হিংস্র ঘাতকের মতো। আজকের যে জঙ্গীবাদ তার ধারক যেমন জামায়াত, তেমনি একাত্তর সালে গড়ে ওঠা আলবদর, আলশামস ও রাজাকার বাহিনীর স্রষ্টাও এই জামায়াত। যে আলবদর বাহিনী গঠন করা হয়েছিল জামায়াতের অঙ্গ সংগঠন ইসলামী ছাত্রসংঘের নেতাকর্মীর সম্মিলনে। মাদ্রাসা ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষিত তরুণরাই ছিল আলবদর বাহিনীর নেতাকর্মী। তাদের এমনভাবে প্রশিক্ষিত করা হয়েছিল যে, ‘ধর্ম রক্ষার’ জন্য তারা নিরীহ শিক্ষক, চিকিৎসকসহ বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করতে সামান্য কুণ্ঠাবোধ করেনি। নির্মমভাবে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছিল। তাদেরই উত্তরসূরি আজকের শিক্ষিত তরুণরাও ধর্মের নামে একই উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যে নিরীহ মানুষ হত্যা করছে। আজকের মতো একাত্তরেও তারা বলত, ‘কাফির ও ইসলামবিরোধীদের হত্যা জায়েজ। ‘মরলে শহীদ বাঁচলে গাজী’- মার্কা কল্পিত তত্ত্বকে তারা সামনে এনেছিল। তখন আলবদর পাকিস্তানকে ইসলামী রাষ্ট্র হিসেবে অভিধা দিয়ে এর বিরোধীদের জাহান্নামী হিসেবে প্রচার করত। এদেশে জঙ্গীবাদ সৃষ্টির মূলে রয়েছে একাত্তরের পরাজিত শক্তি। ইসলামের নামে যারা আজ বিপথগামী তাদের স্বাভাবিক জীবনধারায় ফিরিয়ে আনতে আগ্রহী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আলেম-ওলামাদের তিনি দায়িত্ব দিয়েছেন এ জন্য। মুষ্টিমেয় মানুষ যাতে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে সমাজ ও দেশের ক্ষতি করতে না পারে, তরুণদের ভ্রান্তপথে পরিচালিত করতে না পারে সেজন্য আলেম-ওলামাদের পাশাপাশি গণসচেতনতা সৃষ্টি যে জরুরী শেখ হাসিনা সে কথাও বলেছেন। আলেম-ওলামা সমাবেশে তিনি যেসব কথা বলেছেন, তা প্রণিধানযোগ্য। তবে জামায়াত-শিবির বহাল থাকা অবস্থায় জঙ্গী নির্মূল পুরোপুরি যে সম্ভব নয় সে কথা স্পষ্ট। ধর্মব্যবসায়ী ও ধর্মীয় নামধারী রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম চালু রেখে সঠিক ইসলামের পথে এগিয়ে যাওয়া সহজ নয়। জঙ্গী নিরোধও নয়। তাই ইসলামের সঠিক ব্যাখ্যাকে সাধারণ স্তরে নিয়ে আসা জরুরী। দেশবাসী ধর্মান্ধতা, জঙ্গীপনা ও সন্ত্রাসের ঘোর বিরোধী। তারাই পারে সঠিক দিকনির্দেশনা পেলে সবকিছু সমূলে উৎখাত করতে। দেশবাসীও তাই চায়।
×