ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

বঙ্গনারীর ম্যারাথন

প্রকাশিত: ০৩:৫৮, ১৫ আগস্ট ২০১৬

বঙ্গনারীর ম্যারাথন

আন্তর্জাতিক যুব দিবস উপলক্ষে শুক্রবার দেশে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হলো নারীদের ম্যারাথন। ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে এভারেস্ট একাডেমি আয়োজন করে এই দৌড় প্রতিযোগিতার। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ও বিভিন্ন পেশাজীবী মিলে ২৮৯ জন নারী স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন এই ম্যারাথনে। দূরত্ব ছিল ১০ কিলোমিটার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি থেকে শুরু হওয়া ম্যারাথন দৌড়টি রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে পুনরায় শেষ হয় টিএসসিতে। নির্ধারিত ১ ঘণ্টা ২৫ মিনিট সময়ের মধ্যে দৌড় শেষ করেন ২০৩ প্রতিযোগী। সবার জন্য সম্মাননা সনদসহ প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় স্থান অধিকারীর জন্য নগদ অর্থ ও ট্রফির ব্যবস্থাও ছিল। রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে বিপুল সংখ্যক দর্শক উৎসাহ জুগিয়েছেন প্রতিযোগীদের। প্রধানত দুর্যোগ মোকাবেলাসহ নারীর ক্ষমতায়নে আয়োজন করা হয় নারীর জন্য এই ম্যারাথনের। প্রতিপাদ্য ছিল ‘যুবা-নারী মিলেমিশে, দুর্যোগে লড়ব একসাথে।’ তবে প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি সাম্প্রতিককালে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘটিত সন্ত্রাসী জঙ্গী হামলা প্রতিরোধের কথাও উচ্চারিত হয়েছে প্রতিযোগীদের কণ্ঠে। ১৯৬৭ সালে বোস্টন ম্যারাথনে অংশ নেয়া প্রথম নারী ম্যারাথন দৌড়বিদ ক্যাথরিন সুইজার ঢাকার এই নারী ম্যারাথনের অনুপ্রেরণা। পুরুষসর্বস্ব ওই দৌড়ে অংশ নিতে গিয়ে তিনি হামলার শিকার হলেও দমে যাননি কখনও। ঢাকার ম্যারাথনেও নারীর প্রথম অংশগ্রহণের মাধ্যমে দায়িত্ব শেষ নয়; বরং শুরু হলো মাত্র। ম্যারাথন দৌড়ের ইতিহাস অতি প্রাচীন। ম্যারাথন নামটি এসেছে গ্রীক বার্তাবাহক ফেইডিপ্পিডেস নামীয় ব্যক্তির সৌজন্যে। লৌকিক উপাখ্যানে বর্ণিত আছে যে, তাকে ম্যারাথনের যুদ্ধের ময়দান থেকে প্রেরণ করা হয়েছিল এথেন্সে। পারস্যদের পরাজয়ের সংবাদ দেয়ার জন্যই যুদ্ধরত অবস্থায় প্রেরণ করা হয় তাকে। অনুমিত হয়, খ্রিস্টপূর্ব ৪৯০ সালের আগস্ট অথবা সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হয়েছিল এই যুদ্ধ। বলা হয়ে থাকে তিনি ম্যারাথন থেকে এথেন্স পর্যন্ত ৪২ দশমিক ১৯৫ কিলোমিটার বা ২৬ মাইল ৩৮৫ গজ কোথাও না থেমে এক দৌড় বিজয় বার্তাটি পৌঁছে দেন এথেন্সে। এথেন্সবাসীর কাছে তিনি কেবল এক নিশ্বাসে ‘আমরা জয়ী হয়েছি’ এই বাক্যটি উচ্চারণ করতে পেরেছিলেন। সংবাদটি প্রদান করেই মহাবীর ফেইডিপ্পিডেস ভূপতিত হন এবং মৃত্যুবরণ করেন। ঐতিহাসিক ও প্রাচীন এই বীরের সম্মানেই পরবর্তীকালে বিশ্ব অলিম্পিক ও অন্যত্র দূরপাল্লার ম্যারাথন দৌড়ের সূত্রপাত। ১৮৯৬ সালে অনুষ্ঠিত প্রথম আধুনিক অলিম্পিক অন্তর্ভুক্ত করা হয় ম্যারাথন। তবে ্এতে নারীর অংশগ্রহণ দীর্ঘদিন পর্যন্ত একরকম নিষিদ্ধ ছিল। ১৯৮৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের লস এ্যাঞ্জেলেসে অনুষ্ঠিত অলিম্পিক গেমসে মহিলাদের প্রথম ম্যারাথন অনুষ্ঠিত হয়। যে কোন দুর্যোগের প্রথম শিকার হয়ে থাকে নারী ও শিশুরা। সে ক্ষেত্রে দুর্যোগ মোকাবেলায় নারীর চ্যালেঞ্জই তুলনামূলকভাবে বেশি। ঘর-সংসার-শিশু সামলানোসহ খাদ্যের যোগান ও খাবার পানি আহরণের দায়-দায়িত্ব প্রধানত নারীদের ওপরই বার্তায়। সে অবস্থায় শারীরিক সুস্থতা ও সক্ষমতা অর্জন অবশ্যই প্রত্যাশিত। ম্যারাথন এক্ষেত্রে প্রভূত সহায়ক হতে পারে। এটি তাদের মধ্যে আত্মবিশ্বাস ও প্রত্যয় সংযুক্ত করে। দেশ ও রাষ্ট্র পরিচালনার শীর্ষ পদে নারীর ক্ষমতায়নে অবস্থানের দিক থেকে বাংলাদেশ বর্তমান বিশ্বে একটি রোল মডেল। এত কিছুর পরও থেমে থাকার অবকাশ নেই। রাজধানীর রাজপথে নারীর প্রথম ম্যারাথন এরই একটি সুস্পষ্ট নিদর্শন মাত্র।
×