গোটা রিও যেন দখল করে নিচ্ছে চীনারা। বিপ্লব ঘটিয়ে দিয়েছে অলিম্পিকসে। জলে-স্থলে সর্বত্রই চীনের দাপট। ক্রীড়াবিদদের সাফল্যে চীনা দর্শকদের মধ্যে বসন্তের আমেজ। অদ্ভুত ভাষায় চীনা দর্শকের চিৎকার আর করতালিতে মুখরিত গেমসের প্রায় সব ভেন্যু। ইতোমধ্যে ১০ স্বর্ণপদক জিতে ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে শীর্ষে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের। মার্কিনীরা এগিয়ে একটি মাত্র স্বর্ণপদক বেশি নিয়ে। গত কয়েক দশক ধরেই অলিম্পিকের শ্রেষ্ঠত্ব আমেরিকার দখলে। এই আসনে কি এবার ভাগ বসিয়ে দেবে ২০০৮ অলিম্পিক গেমসের আয়োজক চীন? বাংলাদেশের অবশ্য এ নিয়ে মাথা ঘামানোর কিছু নেই। পদক দূরের কথা। ক্রমেই বড় হচ্ছে ব্যর্থতার মিছিল। ভাবাচ্ছে কেবল মার্কিনীদের। চীনের দাপটে বেশ শঙ্কিত তারা। যদিও আয়োজক হওয়ার আগেও সফলভাবে গেমস শেষ করতে দেখা গেছে চীনকে। কিন্তু আসরে শুরুতেই এমন আধিপত্য এই প্রথম। বিকিনি খ্যাত সুন্দরীদের কোপাকাভানা বিচে পশ্চিমাদের ভিড় চোখে পড়ত বেশি। স্বল্পবসনার পোশাকে তারা বেশি অভ্যস্ত। চোখে রঙবেরঙের সানগ্লাস পরে বালুচরে প্রায় নগ্ন শরীরে শুয়ে থাকা, সৈকতে খেলাধুলা করা, আর আটলান্টিকের উত্তাল ঢেউয়ের ওপর গা ভসিয়ে দিয়ে উৎসব করেন সবাই। সে তুলনায় চীনা বা এশিয়ানদের উপস্থিতি অনেকটাই নগণ্য। কিন্তু রিওর বিখ্যাত এই বিচের চিত্রও পাল্টে দিচ্ছে চীনারা। তবে অর্ধনগ্ন হয়ে নয়। মজবুত অর্থনৈতিক ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে থাকা সমৃদ্ধ চীন থেকে উড়ে এসেছে হাজারেরও ওপরে দর্শক। বেশিরভাগ খ- খ- দলে বিভক্ত হয়ে চলাফেরা করেন, গায়ে চীনের জাতীয় পতাকা জড়িয়ে। চীনাদের উজ্জ্বল উপস্থিতি কোপাকাভানার ঔজ্জ্বল্য বাড়িয়ে দিয়েছেন বিকিনি সুন্দরীদের ভিড়ের মাঝে।
ব্রাজিল সময় রাত ১২টা পর্যন্ত চলে বিভিন্ন ইভেন্টের খেলা। আর কোপকাভানা তো ২৪ ঘণ্টাই উৎসবের সৈকত। আর তাই খেলা শেষে ফুরফুরে মেজাজে দল বেঁধে আটলন্টিক বিচের অপরূপ সৌন্দর্য উপভোগ করতে ছুটে আসেন চীনারা। ক্রমেই পদকের ভা-ার বড় হওয়ায় দারুণ খুশি, ব্রাজিল সফরটা তাদের জন্য স্বার্থক হয়ে উঠেছে ক্রীড়াবিদদের ক্রমাগত সাফল্যে।
রিও এ্যাকুয়াটিক সেন্টারে জলক্রীড়ায় চীন কুড়িয়ে নিয়েছে চার স্বর্ণপদক। এরমধ্যে দৃষ্টিনন্দন ডাইভিংয়ে তিন। অন্যটি ২০০ মিটার সাঁতারে। তবে চীনারা এবার বাজিমাত করে দিয়েছে ভারোত্তোলনে। চার স্বর্ণপদক গলায় ঝুলিয়ে উঠে এসেছে পদক তালিকার দ্বিতীয়স্থানে। শূটিং-টেবিল টেনিসে একটি করে স্বর্ণ। সব মিলিয়ে দশটি। ভারোত্তোলনে রাশিয়া ভেঙ্গে বেরিয়ে আসা তাজিকিস্তান, কাজাখস্থান ছাড়া মধ্য এশিয়ার ইরানের পদক জয়ের রেকর্ড রয়েছে। পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া, কিউবার দাপটও কম ছিল না অতীতে। কিন্তু এখনও পর্যন্ত সেই রাজত্বের সিংহাসনে রয়েছে চীন।
দেখতে দেখতে রিও গেমসের পদকযুদ্ধ সপ্তাহ গড়িয়ে গেছে। এখনও অনেক সময় বাকি। ২১ আগস্ট সমাপনীর দিন পর্যন্ত চলবে পদকের লড়াই। নতুন ইতিহাস গড়তে রিওতে চীনের সংগ্রাম নাকি চলবেই। বুধবার ডাইভিলিং পুলে এমন আভাসই দিলেন চীনের এক সাংবাদিক। ভাঙ্গা ভাঙ্গা ইংরেজীতে বলছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রকে হটিয়ে শীর্ষ আসনটার দিকেই নাকি দৃষ্টি চীনের। এই আত্মবিশ্বাসের পারদ কতটা ওপরে উঠে সেটাই এখন দেখার। তবে একথা অনস্বীকার্য যে, ডোপ কেলেঙ্কারিতে অলিম্পিকের পরীক্ষিত শক্তি রাশিয়া ছন্নছাড়া হয়ে পড়ায় বাড়তি সুবিধা পাচ্ছে অনেক দেশ। আর সে সুযোগটা ভালভাবেই কাজে লাগাচ্ছে চীন, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, হাঙ্গেরির মতো দেশ। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত ৬ স্বর্ণপদক নিয়ে তৃতীয় আসনে ছিল জাপান। ৫টি করে স্বর্ণ অস্ট্রেলিয়া ও হাঙ্গেরির। আর রাশিয়ার ঝুলিতে মাত্র চার। ডোপ নামক মামলা-হামলায় রিও গেমসে রাশিয়ার অংশগ্রহণ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। হতাশায় ভুগছিল ক্রীড়াবিদরা। আর এই মানসিক চাপ নিয়েই দুই শতাধিক ক্রীড়াবিদ নিয়ে রিও এসেছে রাশিয়া। মানসিকভাবে বিধ্বস্ত খেলোয়াড়রা অবশ্য ক্রমেই গুছিয়ে উঠছেন। তবে বেশ কিছু ইভেন্টে মার খেয়েছে দেশটির বড় তারকারা ডোপ কেলেঙ্কারির বেড়াজাল ছিন্ন করে বেরিয়ে আসতে না পারায়। এ কারণেই পদক তালিকায় স্থানটা অতীতের মতো নয়, বেশ হতাশার। যারা অংশ নিচ্ছেন তাদের অনেকের ওপরই নাকি নজর রয়েছে এ্যান্টি ডোপিং কর্মকর্তাদের। এটাও একটা মানসিক চাপ। সঙ্গত কারণে পিছিয়ে তারা।
আরো পড়ুন
শীর্ষ সংবাদ: