ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পাঁচ লাখ বাংলাদেশীর কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি;###;দক্ষ, আধা দক্ষ পেশাজীবীর কর্মসংস্থান হবে;###;চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, সেবিকাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ কাজের সুযোগ পাবেন

খুলে গেল সৌদি বাজার

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ১২ আগস্ট ২০১৬

খুলে গেল সৌদি বাজার

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নিয়েছে সৌদি আরব। বুধবার সৌদি আরবের শ্রম ও সমাজ কল্যাণ মন্ত্রণালয় এই নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে। এর ফলে সৌদি আরবে গত সাত বছর ধরে চলা শ্রমিক নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা উঠে গেল। বৃহস্পতিবার ঢাকার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এবার সেখানে প্রায় ৫ লাখ বাংলাদেশী কর্মসংস্থানের সুযোগ পাবেন বলে আশা করা হচ্ছে। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত জুন মাসে সৌদি আরব সফর করেন। সেই সফরের সময় সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজ আল সৌদের সঙ্গে বৈঠকে শ্রমিক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়েছিলেন। সৌদি বাদশার সঙ্গে ফলপ্রসূ ওই বৈঠকের প্রেক্ষিতেই সেদেশে শ্রমিক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়েছে। সৌদি আরব শ্রমিক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়ায় বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে দেশটির বাদশাহ সালমান বিন আবদুল আজিজের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও বাড়বে। বর্তমানে ১৩ লাখ বাংলাদেশী সৌদি আরবে বিভিন্ন পেশায় কাজ করছেন। এর মধ্যে ৬০ হাজার নারী গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করছেন। সৌদি আরবের এই নতুন সিদ্ধান্তে ভ্রাতৃপ্রতিম দুই দেশের মধ্যে অর্থনৈতিক সহযোগিতার ক্ষেত্র আরও বিস্তৃত হবে। দেশটির নতুন সিদ্ধান্তের ফলে বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে দক্ষ- আধাদক্ষ পেশাজীবীর সৌদি আরবে কর্মসংস্থান হবে। এছাড়া চিকিৎসক, প্রকৌশলী, শিক্ষক, সেবিকাসহ বিভিন্ন পেশার মানুষ সেখানে কাজের সুযোগ পাবেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরকালে বাংলাদেশে সৌদি বিনিয়োগ ও কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনে আলোচনা হয়েছিল। সে অনুযায়ী সৌদি আরব বাংলাদেশের কর্মীদের দক্ষতা বাড়াতে ঢাকা, চট্টগ্রাম, মানিকগঞ্জ ও ময়মনসিংহে চারটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে। এদিকে আরব নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, বুধবার সৌদি আরবের শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করে নেয়। এ খবরে সন্তোষ প্রকাশ করে রিয়াদে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত গোলাম মসীহ আরব নিউজকে বলেন, বাংলাদেশ থেকে যারা কাজ নিয়ে সৌদি আরবে আসতে চায় তাদের জন্য এটি দারুণ সুখবর। তিনি বলেন, গত জুনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরের সময় বাদশাহ সালমানের সঙ্গে তার বৈঠকেই জনশক্তি রফতানির বাধা অপসারণের পথ তৈরি হয়। নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় এখন কৃষি ও আবাসন খাতের দক্ষ, অদক্ষ শ্রমিকের পাশাপাশি চিকিৎসক ও নার্সের মতো পেশাজীবীদেরও সৌদি আরবে কাজ পাওয়ার সুযোগ তৈরি হলো। সূত্র জানায়, গত জুন মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সৌদি আরব সফরকালে দেশটির শ্রম ও সমাজকল্যাণমন্ত্রী মোফারেজ আল হকুবানির সঙ্গে এক বৈঠক হয়েছিল। সে সময় সৌদি শ্রমমন্ত্রী বাংলাদেশ থেকে ৫ লাখ জনশক্তি নেয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন। সৌদি আরবে জনশক্তি নেয়ার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের পর এবার ৫ লাখ বাংলাদেশীর সেখানে কর্মসংস্থানের সুযোগ হতে পারে। সৌদি আরবে গত সাত বছর ধরে শ্রমিক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা থাকলেও নারী গৃহকর্মীর ক্ষেত্রে সেটা প্রযোজ্য ছিল না। গত বছর দুই দেশের মধ্যে এক চুক্তির মাধ্যমে সেদেশে নারী গৃহকর্মী পাঠানো শুরু হয়। বর্তমানে সৌদি আরবে ৬০ হাজার নারী গৃহকর্মী কাজ করছেন। সৌদি আরবই বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার। ২০০৮ সালে নিষেধাজ্ঞা আরোপের আগে বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে প্রায় দেড় লাখ শ্রমিক নিত সৌদি আরব। সৌদি আরবে বাংলাদেশী শ্রমিকরা বিভিন্ন অপরাধে জড়িয়ে পড়ার অভিযোগে দেশটি শ্রমিক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। সে সময় থেকে মূলত নির্মাণ ও কৃষি শ্রমিক নিয়োগ বন্ধ রাখে দেশটি। এর পরও চিকিৎসা ও প্রকৌশল খাতে কিছু পেশাজীবী সেদেশে গিয়েছেন। চলতি বছরের জুন মাসে সৌদি সফরের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৯ সালে সৌদি আরব সফরে গিয়ে বাদশাহকে পুনরায় কর্মী নেয়ার, ইকামা ও পেশা পরিবর্তন এবং সাধারণ ক্ষমার সুযোগ দেয়ার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। তখন আশ্বাস দিলেও তাৎক্ষণিক সাড়া পাওয়া যায়নি সৌদি সরকারের। তবে তার পর থেকেই সৌদি আরবে শ্রমবাজার খুলে দেয়ার বিষয়ে দীর্ঘদিন ধরে কূটনৈতিক তৎপরতা চলছিল। বিভিন্ন সময়ে সৌদি আরবের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে বৈঠকে শ্রমবাজার খুলে দেয়ার বিষয়ে অনুরোধ জানিয়েছিল বাংলাদেশ। এছাড়া পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী ও প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম একাধিকার সৌদি আরব সফর করে সৌদি আরবে বাংলাদেশের জনশক্তি নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের আহ্বান জানিয়েছেন। সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত জুন মাসে সৌদি আরব সফর করে সেদেশে জনশক্তি নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে আলোচনা করেন। তারই অংশ হিসেবে সৌদি আরবে জনশক্তি নিয়োগের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করা হয়। বাংলাদেশ থেকে শ্রমিক নিয়োগে নিষেধাজ্ঞা আরোপের বিষয়ে তৎকালীন সৌদি শ্রমমন্ত্রী গাজি আল-গোসাইবি জানিয়েছিলেন, আমরা শুধু চিকিৎসা এবং প্রকৌশল খাতে বাংলাদেশী জনশক্তি নিয়োগ করতে চাই। তবে রক্ষণাবেক্ষণ ও স্বাস্থ্য খাতেও আমরা শ্রমিক নেব এই শর্তে যেন সব খাত মিলে মোট শ্রমিকের সংখ্যা ২০ শতাংশ ছাড়িয়ে না যায়। সৌদি আরবে শ্রমবাজার খুলে যাওয়ার পর এখন আবার আগের মতোই সেখানে শ্রমিক পাঠানো যাবে। স্টাফ রিপোর্টার, রাজশাহী থেকে জানান, সরকারের কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় সৌদি আরব বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রফতানির নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করেছে বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। বৃহস্পতিবার রাজশাহী নগরভবন চত্বরে বিভাগীয় বন বিভাগ আয়োজিত পক্ষকালব্যাপী বৃক্ষমেলার উদ্বোধন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি। তিনি বলেন, গত ছয় বছর শুধু গৃহকর্মী ছাড়া অন্য কোন পেশার জনবল নেয়নি সৌদি আরব। কিন্তু সব পেশার জনশক্তি রফতানি করতে বাংলাদেশ এই দীর্ঘ সময় থেকেই সৌদি আরবের সঙ্গে কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছিল। অবশেষে বুধবার দেশটির শ্রম ও সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয় বাংলাদেশ থেকে সব পেশার জনবল নেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, বুধবার রাতেই দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি অবহিত করেছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশ থেকে যে কোন পেশার মানুষ এখন সৌদি আরব যেতে পারবেন। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে বাংলাদেশ আরও সমৃদ্ধ হবে।
×