ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১

১৪ আগস্ট মন্ত্রণালয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক

দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চায় উদীয়মান অর্থনীতির অগ্রনায়ক চীন

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১১ আগস্ট ২০১৬

দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চায় উদীয়মান অর্থনীতির অগ্রনায়ক চীন

এম শাহজাহান ॥ বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় মুক্তবাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহী চীন। অর্থনীতির নেতৃস্থানীয় এই দেশটির আগ্রহ বিবেচনায় নিয়ে মুক্তবাণিজ্য (এফটিএ) আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করতে যাচ্ছে সরকার। মুক্তবাণিজ্যের দ্বার উন্মুক্ত হলে বাংলাদেশের লাভ কী এবং এতে কি ধরনের আর্থিক ঝুঁকিও রয়েছে সে হিসাব পর্যালোচনা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন সংস্থা বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশন। আগামী ১৪ আগস্ট রবিবার চীনের সঙ্গে এফটিএ সংক্রান্ত একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হবে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চীনের আগ্রহে এফটিএ সংক্রান্ত বিষয়ে আলোচনা শুরু হলেও শীঘ্রই চুক্তিটি করতে আগ্রহী নয় বাংলাদেশ। চুক্তির বিষয় নিয়ে আরও গভীর পর্যালোচনা করতে চায় সংশ্লিষ্টরা। আর চীনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, দুই দেশ এফটিএ সই করলে তাদের অনুকূলে থাকা বৈষম্যমূলক বাণিজ্যে যৌক্তিকভাবে ভারসাম্য আনা যাবে। গত এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে ঢাকায় দুই দেশের ১১তম পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠকে চীনের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী কং ঝুয়ানু এফটিএ করার ব্যাপারে আনুষ্ঠানিক প্রস্তাব দেন। এর আগে চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে এফটিএ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন। এছাড়া এফটিএ করার ব্যাপারে বর্তমান চীনা দূতাবাস থেকেও সরকারের সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। চীনের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে-আসিয়ানের (দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর সংস্থা) সদস্য স্বল্পোন্নত দেশগুলোর (এলডিসি) সঙ্গে এফটিএ চুক্তি সইয়ের ফলে ওই দেশগুলো থেকে চীনে রফতানি বেড়েছে। এতে বাণিজ্যবৈষম্য কমেছে। চীনের সঙ্গে বাণিজ্যের কারণে সস্তা পণ্যে সহযোগী দেশের বাজার সয়লাব হয়ে যাবে-এ আশঙ্কা ঠিক নয়। আসিয়ানের অভিজ্ঞতা দেখিয়েছে, এফটিএর কারণে দুর্বল অর্থনীতির দেশের রফতানি বাড়ে। জানা গেছে, চীনের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে এফটিএ করার বিষয়টি বিবেচনায় নেয়াসহ আরও কিছু পদক্ষেপের কথা ভাবা হচ্ছে। তবে চীনের দেয়া এ চুক্তি প্রস্তাবের প্রভাব সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে বাংলাদেশ কোন সিদ্ধান্ত নেবে না। বর্তমানে প্রচুর চীনা পণ্য বাংলাদেশে ঢুকলেও মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি হলে এর পরিমাণ বাড়বে কি না, কী ধরনের পণ্য বাংলাদেশে আসবে এবং এর ফলে স্থানীয় উৎপাদনকারীদের ওপর কী প্রভাব পড়তে পারে তা বিশ্লেষণ করা হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব হেদায়েতুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, চীনের সঙ্গে বিরাট বাণিজ্য বৈষম্য রয়েছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ভারসাম্য দেশের অনুকূলে নেই। এফটিও করার ফলে বাংলাদেশ কতটুকু লাভবান হবে সেটা গভীরভাবে পর্যালোচনা করা হচ্ছে। তবে এ ধরনের চুক্তি দীর্ঘ প্রক্রিয়ার মধ্যদিয়ে সম্পন্ন হয়। স্টেক হোল্ডারদের মতামতের বিষয় রয়েছে। তিনি বলেন, চীনের আগ্রহ রয়েছে এফটিএ’র ব্যাপারে। তাদের আগ্রহের বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কাজ করা হচ্ছে। এদিকে, বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ২০১৪-১৫ অর্থবছরে বাংলাদেশ ও চীনের মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৮ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু এর মধ্যে বাংলাদেশের রফতানি মাত্র ৬শ’ মিলিয়ন ডলারের একটু বেশি। এ হিসেবে পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য ঘাটতি সবচেয়ে বেশি। আর তাই বাণিজ্য ঘাটতি কমানোর জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বিবেচনা করা হচ্ছে। যদিও চীনের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের বিশেষায়িত অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের মাধ্যমে এখান থেকে আশপাশের দেশে রফতানি বাড়ানোর আভাস দেয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে একটি সমন্বিত শিল্পব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্যও চীনের আগ্রহ রয়েছে। সেই সঙ্গে চীনের শ্রমঘন শিল্প বাংলাদেশে স্থানান্তরের বিষয়ে আভাস দেয়া হয়েছে। এদিকে, চীন বাংলাদেশের ৪ হাজার ৭৮৮ পণ্য রফতানিতে শুল্ক ও কোটামুক্ত সুবিধা দিলেও এতে প্রধান পণ্যগুলো নেই। ফলে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ কমছে না। এরই প্রেক্ষিতে ওই সুবিধার বাইরে থাকা প্রধান প্রধান রফতানি পণ্যের মধ্য থেকে ১৭ ক্ষেত্রে শুল্ক কোটামুক্ত রফতানি সুবিধা চেয়ে আসছে বাংলাদেশ। কিন্তু এখনও তা উন্মুক্ত করা হয়নি। এই ১৭ পণ্যের মধ্যে দেশের প্রধান রফতানিপণ্য গার্মেন্টস, চামড়া, পাটজাতপণ্য ও কৃষিজাতপণ্য রয়েছে। রফতানিতে সুবিধা পাওয়াসহ চামড়া, ওষুধ, একই সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমিয়ে আনতে চীনকে আরও বেশি বাংলাদেশী পণ্য আমদানিতে উৎসাহিত করা হবে।
×