ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

পঞ্চগড়ে থানায় গণঅভিযোগ

কখনও জিনের বাদশা কখনও পীর সেজে প্রতারণা

প্রকাশিত: ০৪:১৩, ১১ আগস্ট ২০১৬

কখনও জিনের বাদশা কখনও পীর সেজে প্রতারণা

স্টাফ রিপোর্টার, পঞ্চগড় ॥ কোথাও জিনের বাদশা, কোথাও তিনি পীর সাহেব। কোথাও আবার কবিরাজ। নানা পরিচয় আর মামলাবাজিই তার পেশা। সদর উপজেলার হাড়িভাষা এলাকার নাককাটিপাড়া গ্রামের বাদশা মিঞা নতুন নতুন প্রতারণার ফাঁদ তৈরি করে সহজ-সরল মানুষের টাকা পকেটে ভরছেন। তার মামলার ফাঁদে প্রতিবন্ধী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, মসজিদের ইমাম কেউই বাদ যায়নি। হাড়িভাষা এলাকার শত শত মানুষ তার বিরুদ্ধে সদর থানায় পর পর দুবার গণঅভিযোগ করেছে। তার বিরুদ্ধে কেউ কথা বললেই মামলায় জড়িয়ে দেয়া হয়। কথিত এই পীর বিয়ে করেছেন চারটি। জানা গেছে, নিজে এবং বিশ্বস্ত লোকজনকে দিয়ে তিনি অর্ধশতাধিক মামলা করেছেন। অভিযোগে জানা গেছে, জিনের কাছ থেকে সোনার পুতুল এনে দেবে বলে এলাকার বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে তিনি মোটা অংকের টাকা নিয়েছেন। ডাঙ্গাপাড়া গ্রামের টুনু মিঞা জানান, ‘বাদশা আমাকে তার বাড়িতে ডেকে নিয়ে সোনার পুতুলের ছবি দেখাত। এই পুতুল আমাকে দেবে বলে আমার কাছ থেকে প্রায় ১২ লাখ টাকা নিয়েছে। বাদশা মিঞা আমাকে কি যেন খাওয়ায়। তারপর থেকে সে যা বলে আমি তাই করি। ২০০৪ এবং ২০০৫ সালে পাঁচ বিঘা জমি বিক্রি করেছি, গাছ পালা, গালামালের দোকান বিক্রি করে তাকে টাকা দিয়েছি। আজ আমি নিঃস্ব। এলাকার সবাই সাক্ষ্য দেবে।’ হাড়িভাষা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জশিমউদ্দিন ঘটনার সত্যতা তুলে ধরে বলেন, ‘বাদশা মিঞা নিজেকে পীর দাবি করে। সে জিনের টাকা দেবে বলে বহু মানুষকে সর্বসান্ত করেছে। সে ভুয়া কবিরাজিও করে।’ একই ইউনিয়নের পুলিশিং কমিটির সাধারণ সম্পাদক এটিএম আক্তারুজ্জামান ও প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল গাফ্ফার জানান, ‘প্রতারণার নানা কৌশল অবলম্বন করে এই এলাকার বহু মানুষকে ঠকিয়েছে বাদশা মিঞা। কেউ তার এসব অপকর্মের প্রতিবাদ করলে তার বিরুদ্ধেই মিথ্যা মামলা দিয়ে বাদশা হয়রানি করে। ২১০ জনের স্বাক্ষরিত গণঅভিযোগে জানা যায়, পাহাড়বাড়ি গ্রামের প্রতিবন্ধী মৃত আব্দুল কাদেরের প্রতিবন্ধী ছেলে জাহাঙ্গীর হোসেন। তার মা রহিমা খাতুনও প্রতিবন্ধী। প্রতিবন্ধী ভাতা আর বয়স্ক ভাতা নিয়েই তাদের সংসার চলে। কথিত পীর বাদশা মিঞা তার স্কুল পড়ুয়া ভাতিজি আখিমনিকে প্রতিবন্ধী জাহাঙ্গীরের সঙ্গে বিয়ে দেয়। নাবালিকা বলে রেজিস্ট্রি করার নাম করে জাহাঙ্গীরের মা রহিমা খাতুনের জমানো ৫০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়। আঁখিমনি ও জাহাঙ্গীর ১৮ দিন সংসার করে। এর পর নতুন চক্রান্ত শুরু করে বাদশা মিঞা। আঁখিমনিকে বাড়ি নিয়ে এসে নতুন করে অপহরণের মামলা দায়ের করে। মামলায় জাহাঙ্গীর, চাচা মোস্তফা এবং ফুপা হরমুজ আলীকে আসামি করা হয়। এই মামলায় জাহাঙ্গীর এখন পলাতক। এর মধ্যে মোস্তফা ঢাকায় গার্মেন্টসে কর্মরত। জানা গেছে, মোস্তফাই বাদশার টার্গেট। কারণ মোস্তফা অনেক টাকার মালিক। এলাকাবাসী মামলাটি মিথ্যা এবং ষড়যন্ত্রমূলক বলে দাবি করে সদর থানায় গণঅভিযোগ করেছে।
×