ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১

৫৪ ও ১৬৭ ধারা নিয়ে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় শীঘ্রই

প্রকাশিত: ০৫:২৫, ৭ আগস্ট ২০১৬

৫৪ ও ১৬৭ ধারা নিয়ে আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় শীঘ্রই

বিকাশ দত্ত ॥ বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার (৫৪ ধারা) ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ধারায় (১৬৭ ধারা) আপীল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায় লেখা শুরু হয়েছে। শীঘ্রই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হবে বলে সংশ্লিষ্ট পক্ষের আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল-ইসলাম জানিয়েছেন। সুপ্রীমকোর্টের সিনিয়র আইনজীবী ব্যারিস্টার এম আমীর-উল-ইসলাম জনকণ্ঠকে বলেছেন, বিচারপতি রায় লিখছেন, আশা করছি শীঘ্রই এ মামলার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হবে। উল্লেখ্য, ২৪ মে প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যবিশিষ্ট আপীল বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন, বিচারপতি সেয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার। ব্যারিস্টার এম আমীর-উল-ইসলাম আরও বলেছেন, পূর্ণাঙ্গ রায়ে হাইকোর্টের রায়ের নির্দেশনাগুলোতে কিছু পরিবর্তন আসতে পারে। আদালত তার সংক্ষিপ্ত রায় ঘোষণার সময় বলেছিল, পূর্ণাঙ্গ রায়ে কিছু মডিফিকেশন থাকবে। কিছু গাইডলাইন দিয়ে দেয়া হবে। গাইড লাইনে কি থাকবে পূর্ণাঙ্গ রায় পেলে তা পরিষ্কার হবে। হাইকোর্টের রায়ে ১৫ দফা নির্দেশনা ও সাতটি সুপারিশ করা হয়েছিল। এর বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপীল করলে আপীল বিভাগ সেই আপীল খারিজ করে দেয়। ফলে হাইকোর্টের রায়ই বহাল রয়েছে। অন্যদিকে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেছেন, আমাদের পূর্ণাঙ্গ রায় বের না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তবে আমি আশা করি বর্তমান প্রেক্ষাপটের আলোকেই কিছু দিকনির্দেশনা দিয়েই রায় প্রকাশিত হবে। তিনি আরও বলেন, দেশে যেভাবে জঙ্গী উত্থান হয়েছে, শিক্ষক, ব্লগার, ধর্মগুরু হত্যা করা হচ্ছে, দেশী-বিদেশী ষড়যন্ত্র চলছে, নির্বাচিত সরকারকে উৎখাত করার যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে, তাতে করে দাগী আসামিদের গ্রেফতার ও তাদের অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ৫৪ ধারায় গ্রেফতার ও ১৬৭ ধারায় জিজ্ঞাসাবাদের পদ্ধতি ক্ষেত্র বিশেষে রাখা প্রয়োজন। এখন বড় বড় অপরাধীকে জিজ্ঞাসাবাদের ফলে অনেক তথ্য বেরিয়ে আসছে। তবে যত্র তত্র এই ক্ষমতা ব্যবহার করাটা ঠিক হবে না। ব্লাষ্ট্র সূত্রে জানা গেছে, এ মামলায় ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় সন্দেহবশত বিনা পরোয়ানায় কাউকে গ্রেফতার এবং ১৬৭ ধারায় অধিকতর তদন্তের নামে গ্রেফতারকৃত ব্যক্তিকে রিমান্ডে নিয়ে আইনের অপপ্রয়োগের মাধ্যমে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের ফলে পুলিশ হেফাজতে মৃত্যু ঘটানোর সাংবিধানিক বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিট দায়ের করা হয়। বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড এন্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) ছাড়াও, আইন সালিশকেন্দ্র, সম্মিলিত সামাজিক আন্দোলন এবং আরও কতিপয় ব্যক্তি ছিলেন ঐ রিট দায়েরকারীর মধ্যে। ঐ রিটে আইন মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পুলিশের মহাপুলিশ পরিদর্শক, সহকারী পুলিশ সুপারসহ ৫ জনকে বিবাদী করে এ পিটিশন দায়ের করা হয়। রিট পিটিশনে গ্রেফতার ও তদন্ত সংক্রান্ত প্রচলিত আইন ও সাংবিধানিক বিধিবিধান (অনুচ্ছেদ ২৭, ৩১, ৩২, ৩৩ ও ৩৫) যথাযথভাবে পালন এবং গ্রেফতারের পর আসামিকে আইনজীবীর সঙ্গে যোগাযোগ করার সুযোগদানের জন্য আবেদন করা হয়। হাইকোর্ট ১৯৯৮ সালের ২৯ নবেম্বর সন্দেহবশত কাউকে গ্রেফতার এবং তদন্তের নামে রিমান্ডে এনে আসামিকে শারীরিক নির্যাতন করা থেকে নিবৃত্ত করার জন্য আইন প্রযোগকারী স্স্থংাকে কেন নির্দেশ দেয়া হবে না, সে ব্যাপারে সরকারের উপর রুলনিশি জারি করেন। রুলের শুনানি শেষে ২০০৩ সালের ৭ এপ্রিল বিচারপতি মোঃ হামিদুল হক এবং বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ও ১৬৭ ধারা সংশোধনের জন্য এক যুগান্তকারী রায় প্রদান করেন। উক্ত রায়ে হাইকোর্ট বেঞ্চ ফৌজদারি কার্যবিধির ৫৪ ধারায় গ্রেফতার ও ১৬৭ ধারায় রিমান্ডে নিয়ে প্রচলিত বিধানপরবর্তী ৬ মাসের মধ্যে সংশোধন করার জন্য সরকারের প্রতি নির্দেশ দেন। পাশাপাশি এই ধারাগুলো সংশোধন না হওয়া পর্যন্ত রায় ঘোষণার পর থেকেই সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও কর্তৃপক্ষকে ১৫ দফা নির্দেশনা মেনে চলতে নির্দেশ দেন। ২০০৪ সালে আপীল বিভাগ সরকারের লিভ টু আপীল (আপীলের অনুমতি চেয়ে আবেদন) মঞ্জুর করেন। হাইকোর্টের রায় কার্যকর রেখে আপীল বিভাগ আইন সংশোধন করতে কোন নির্দেশ দিতে পারেন কিনা সে বিষয়টি শুনানির জন্য অপেক্ষায় রাখা হয়। এরপর ২০০৭, ২০০৮ ও ২০১০ কার্যতালিকায় আসে। এর ধারাবাহিকতায় ২০১৬ সালের ২২ মার্চ আপীল বিভাগে রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের ওপর শুনানি শুরু হয়। দুই কার্যদিবস শুনানি করে গত ১৭ মে আদালত রায়ের জন্য ২৪ মে দিন ঠিক করে দেয়। ২৪ মে প্রধানবিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্য বিশিষ্ট আপীল বেঞ্চ বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার (৫৪ ধারা) ও হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের ধারা (১৬৭ ধারা) সংশোধনে হাইকোর্টের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপীল খারিজ করে দেন। কিছু সংশোধন সাপেক্ষে হাইকোর্টের রায়ই আপীল বিভাগ বহাল রাখেন । পুলিশ ফৌজদারী কার্যবিধির ৫৪ ধারায় যুক্তিসংগত সন্দেহের ভিত্তিতে যে কোন ব্যক্তিকে বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার করতে পারে। যদিও যুক্তিসঙ্গত এর কোন ব্যাখ্যা নেই। এর ফলে এ ধারায় কোন ব্যক্তিকে গ্রেফতারের নিয়ন্ত্রণহীন (ঁহভবঃঃবৎফ) ক্ষমতা প্রয়োগ করে। যা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অপব্যবহার করে থাকে। ক্ষমতার অপব্যবহার সবচেয়ে বেশি দেখা যায় যখন কোন ব্যক্তিকে ৫৪ ধারায় গ্রেফতার করে নির্বাহী বিভাগ কর্তৃক ১৯৭৪ সালের বিশেষ ক্ষমতা আইনের ৩ ধারায় নিবর্তনমূলক আটক (ঢ়ৎবাবহঃরাব ফবঃবহঃরড়হ) আদেশ প্রদান করা হয়।
×